একা

ফেসবুকে তখন ডেয়ারের চল ছিল। কমেন্ট/লাইক দিলেই ডেয়ার। তখন তার পোস্টে লাইক দিলে সে টেক্সট দিয়ে বলে তোমার ডেয়ার হচ্ছে In a relationship with someone স্ট্যাটাস দেয়া। আমিও না ভেবে তাকে ট্যাগ দিয়েই পোস্ট দেই। সবার সেখানে Congratulations টাইপের কমেন্ট দেখে মজা পাচ্ছিলাম, তাকে সেগুলোর স্ক্রিনশট দেই। দুজনে হাসাহাসি করছিলাম। এভাবেই চ্যাটের শুরু। কদিন যাওয়ার পর ফোনে কথা বলার প্রস্তাব পাই। তখনো কেউ কাউকে দেখিনি। ঠিক হল WhatsApp এ কথা হবে, সেইরাতেই প্রথম কথা হয়। তারপর সেখানেই ডিপি দেখে দুজনের একে অপরকে দেখা। দুজনেরই ভালো লাগে। রাত জেগে কথা হত। ভালোই কাটছিল। ফাল্গুনের প্রথম দিনে দেখা করবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।ফাল্গুনে ঢাকায় কেমন জ্যাম হয় জানেন নিশ্চয়ই । ও ওর ফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত ছিল আমি আমার। দেখা হতে গিয়েও হয়নি। খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিল না।

কিছুদিন পর আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়। আমি মানুষের সাথে মিশতে চাইতাম। কিন্তু ওর পছন্দ ছিল না। তাই আমি দু-তিনজন বাদে কারো সাথে কথা বলতাম না। সেও তাই করত। এরমাঝেও আমাদের একদিন দেখা করবার কথা ছিল, কিন্তু তার সময় হয়নি। সে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর কথা হয়নি অনেকদিন। এরপর একদিন সে বলে মুভ অন করতে। মানতে পারিনি। তাই তাকে সবখানে ব্লক দেই। ওই সময়টা আমার জন্য ক্রুশাল ছিল একদিকে কামিং আউট, একদিকে রিলেশন, পড়াশোনা সবকিছুতে জগাখিচুরি লাগে, বন্ধুদের সাথে মিলছিল না কিছুই। আমার সাথে ওদের মেন্টালিটি মিলত না আর যাদের সাথে মিলত ওরা আমাকে ছোট নজরে দেখত।যার ফলে সব হারাই আমি। একাকীত্বে ডুবে যাই।

সেই সময়টা আমি সাইকোথেরাপি নিই। ওই সময়টায় কারো সাথে কথা বলতাম না। ভাব দেখাতাম কিছু হয়নি। কেউ বুঝতোও না। এদিকে আমার কলেজের ফ্রেন্ড সব রিলেশনে গেছে। আমি কেন সিংগেল এটাই ওদের আড্ডার টপিক। কি করে বলতাম ছেলে হয়েও ছেলেকে ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসতাম সে আবার আমাকে বলেছে মুভ অন করতে।

এভাবে কয়েকমাস কাটে।একটু একটু করে নিজেকে সামলাই।যদিও কেউ ছিলনা আমার পাশে।কেউ বুঝতেও পারেনি আমি কিসের মধ্যে ছিলাম।অথচ ওদের জন্মদিনে উইশ করতে দেরি করলেও ওরা মন খারাপ করত।আর আমার জন্মদিন যে হাইড করে রেখেছি তা কেউ জানেওনা।ওদের বিপদে আমি পাশে থাকলেও কখনো ওদের আমাকে বলতে শুনিনি বন্ধু ভালো আছিস?রিয়েলাইজ করি আমি আসলেই একা। ফ্যামিলি থাকলেও সারাদিন এর ওর সাথে তুলনা,ওর ছেলের সিজিপিএ ৩.৯,ওর ছেলে বিসিএস ক্যাডার।আমি যে কি চাই তা কেউ জানতে চায়নি কখনো, না ফ্যামিলি না ফ্রেন্ডস না প্রেমিক।

একাকীত্ব উপভোগ করছিলাম।নিজেই ঘুরতাম,একাই বইমেলা,ব্রিটিশকাউন্সিল,চারুকলা যেতাম ,এম্নেও কারো সময় হত না আমার জন্য।এই ওই প্ল্যান করলেও ক্যান্সেল হত তা।আমিও নিজেকে গুটিয়ে নিই।একলা চল নীতিতে বিশ্বাসী হই।

দিন এভাবেই কাটছিল।তবে রাতগুলো ছিল বিষন্নতায় ভরা,কত রাত কেঁদেছি,না ঘুমিয়ে কেউ জানেনা।জানার চেষ্টাও করেনি।দুঃখ জমে পাথর হয়ে গেছে।

এখন আর কারো সাথে কথা বলতে ভাল্লাগেনা।বিরক্ত লাগে।একাই সব করি।বেশিরভাগ সমপ্রেমীদের জীবনটাই হয়তো এমন। একাকীত্বে ভরা।ক্ষনিকের জন্য কেউ হয়তো আসে,আবার চলেও যায় বেদনা দিয়ে।

অনেকেই হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চাইবেন। লাভ নেই।আগ্রহ শুরুতে সবাই দেখায় পরে মিইয়ে যায়।ঠেকে এগুলো শিখেছি আমি :))

আর রিসক নিতে চাইনা।

একা বেঁচে থাকতে শিখেছি।

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.