কষ্টের পর কিছু সুখ চাই

আমি মৃত্তিকা (ছদ্মনাম)।  মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া এক মেয়ে। থাকি বাংলাদেশের কোনো এক মফস্বল এলাকায়। (ঢাকা বিভাগেই)

ছোটোবেলা থেকেই আমার মেয়েদেরকে ভালোলাগে। এস,এস,সি পরীক্ষা দেয়ার সময় আমার প্রথম সম্পর্ক হয়। যদিও সে সম্পূর্ণ একজন বিষমকামী ছিলো। তাও ভালোবাসতে এতোটুকু কম বাসেনি আমাকে। সে আমার আম্মুর ফ্রেন্ডের মেয়ে ছিলো। ২ বছর টিকেছিলো সে সম্পর্ক। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে বললে মিথ্যা বলা হবে। তার ফ্যামিলি আমাদের ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিলো। পরে অনেক ঝামেলা হওয়ার পর ফাইনালি প্রথমবারের মতো ব্রেকাপের ধাক্কা শামলাই।

এরপর বেশ অনেকদিন একাই কেটে যায়। তারপর ফেইসবুকে একজনের সাথে পরিচয় হয়। কথা হয় চ্যাট হয় বুঝতে পারি সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে। একদিন সে প্রপোজ করার পর আর মানা করতে পারিনি। প্রচন্ড ধার্মিক ফ্যামিলির মেয়ে ছিলো সে বাসা থেকেও বের হতে পারতো না তার ফ্যামিলি এতোটাই স্ট্রিক্ট ছিলো!!

ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের সম্পর্ক। হঠাৎ একদিন কল দিয়ে বললো তারে দেখতে এসেই পছন্দ করে ছেলে পক্ষ আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর অনেক আদরের মেয়ে ছিলো সে। পরে আমি নিজেই তাকে বুঝিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট প্লাস সমাজ ব্যাবস্থা চিন্তা করে রাজি করাই। কারণ সে যে ফ্যামিলির মেয়ে কখনোই তার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা ফ্যামিলি ছেড়ে এসে আমার সাথে থাকা। সেইম আমার ক্ষেত্রেও। যাইহোক, তার বিয়ে হয়ে যায়। সমস্যা হয় সে তার হাজব্যান্ডের সাথে কিছুতেই ফিজিক্যালি জড়াতে পারছিলোনা। এদিকে অইলোক ও এভাবে আর মানে নিচ্ছিলোনা।  পরে যা হওয়ার তাই হলো কিছুদিন পরেই ডিভোর্স হয়ে গেলো তাদের। 

আমাদের সম্পর্ক যখন ৬ মাস সাডেন তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন  চলে আসে। এই যেমন, আগের মতো কথা বলেনা, সারাক্ষণ ফোনে বিজি থাকে এসব। পরে জানতে পারি সে তার প্রতিবেশী এক মেয়ের উপর ফল করেছে। এরপর অনেক কান্নাকাটি অনেক ঝগড়া হওয়ার পর সে আমার কাছে মাফ চায় আর আমার কাছেই ফিরে আসে। 

এভাবে চলে যায় আরো ২ বছর। এরপর আসে আমার বাসা থেকে চাপ দেয়া। তারে জিজ্ঞাসা করি কি করবো?  আর কি বলে আটকাবো?  (আমার বয়স তখন ২২+)। সে বলে বিয়ে করে ফেলো আমিও বিয়ে করবো বাট আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আজীবন থাকবে। ফ্যামিলির চাপ আর ওর সম্মতি দুই মিলিয়ে প্রাবাসী একজনের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরেও ওর সাথে আমার সম্পর্ক চলতে থাকে। পরে অই লোক ও বাইরে থেকে দেশে আসে আমাকেও নিয়ে যাবে এমনটাই প্ল্যান করে। প্রথম কিছুদিন তারে ইগ্নোর করে আলাদা থাকতে পারলেও খুব বেশিদিন পারিনি। এক রাতে সে জোরপূর্বক আমার সাথে মিলিত হয়। (এসব আমার গার্লফ্রেন্ড কে বলিনি) এভাবে সে প্রায়ই জোর করার ট্রাই করে। আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। বাবার বাড়ি চলে আসি। আমার উনি (গার্লফ্রেন্ড) বলে আমি আর অই লোককে মানতে পারবোনা আমি নিজেও বলি আমার পক্ষেও আর সম্ভব না। বেটাকে আমি সব বলে দেই আমি যে লেসবিয়ান।  আমাদের সেপারেশন হয়ে যায় সেও প্রবাসে ফিরে যায়।

২.৫ মাস পর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। আমার উনাকে বলি প্রেগন্যান্সির কথা। সে খুবি কষ্ট পেয়েছিলো। ভীষণ পাগলামি করেছিলো, কান্নাকাটি, রাগ, অভিমান সব।

পরে সেই বলে বাচ্চাটার তো আর কোনো দোষ নাই। ওরে আমরা দুজন মিলে পালবো। এরপর শুরু হয় আমাদের আরেক জার্নি। বাচ্চা কবে হবে, নাম কি রাখবে, তারে কি বলে ডাকবে, কতো স্বপ্ন যে তার সাথে মিলে দেখতাম। এরপর আসলো সেই সময় আমার সন্তান হলো। 

আমার বাচ্চার যখন ৪ মাস তখন থেকে বাড়তে থাকে।আমাদের দুরত্ব।  কথা বলা কমায় দিলো। হঠাৎ একদিন বললো ওর ফোন নষ্ট হয়ে গেছে নতুন ফোন কেনার আগ পর্যন্ত আর কথা হবেনা। পরে আমি বললাম একি কথা!  নিজে একটা ফোন কিনে দিতে চাইলাম বাট সে নিবেনা। তার আম্মুর ফোনে কল দিলে সমস্যা হবে এজন্য সেটাও নিষেধ করে দিলো। এভাবে এক মাস পার করে দিলো কোনোরকম যোগাযোগ ছাড়াই। 

এক মাস পরে তার বেস্টির মাধ্যমে জানতে পারি সে আরো ২ মাস আগ থেকেই একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে আর সেটা অনেকদূর পর্যন্ত গিয়েছে। নতুন একটা সিম ব্যাবহার করে সেই নাম্বার ও পেলাম আর কল দিলাম। সে খুব অবাক হয়েছে আমার কন্ঠ শুনে। পরে জিজ্ঞাসা করলাম কেনো এমন করলা?  বলেই না হয় ছেড়ে চলে যেতা। এইভাবে কেনো গেলা!

তার কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। শুধু বললো আমাদের আর কথা বলা ঠিক হবেনা ব্যাস!

এরপর অনেক ফোন অনেক কান্নাকাটি, হাতেপায়ে ধরে পর্যন্ত  রিকোয়েস্ট করেছিলাম থাকো আমার সাথে বাট সে আমার সাথে কোনো কথাই বলতে চায়নি। কেটে যায় ৩ বছর।

তারে ভুলতে অনেক সময় লেগেছিলো। পুরো এক বছর  ফোন ইউজ করিনি। 

তারপর, আবার ফোন হাতে নেই। অনেকের সাথেই পরিচিত হই। অনেকে মুখের উপর বলে দেয় যার বাচ্চা আছে সে আবার লেসবিয়ান কি করে হয়! অনেকে বলে বাচ্চাওয়ালা কারো সাথে কেউ সম্পর্কে জড়াবে নাকি! (অথচ আমি একবারো বলিনি রিলেশন চাচ্ছি)

বেশ অনেক ধরেই এই পেইজটা ফলো করছি বাট লিখার সাহস পাইনি। ভীষণ ভালো লাগে পেইজটা। মানুষ তার অনুভূতি শেয়ার করতে পারে কোনো সংকোচ ছাড়াই। তাই নিজেও লিখার লোভ শামলাতে পারলাম না।

কেউ কি আছেন যে আমার ভালো একজন বন্ধু হবেন?  যার কাছে সবকিছু শেয়ার করতে পারবো কোনো দ্বিধা ছাড়াই।

বিঃ দ্রঃ – আমি খুব সংক্ষেপেই লিখেছি আমার কথাগুলি কারণ মূল ঘটনা অনেক জটিল লিখে শেষ করা যাবেনা। কারো পড়তে সমস্যা হলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।।

কষ্টের পর কিছু সুখ চাই

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.