কারণ আমি চাই, খুব চাই

বছরের এই সময়টা সবসময় একই রকম যায়। বাংলা মাস বা ঋতু সম্পর্কে অত একটা ধারনা নেই বলে ইংরেজি মাস গুনে মনে রাখি। প্রত্যেক বছরের ফেব্রুয়ারী-মার্চে আমার জীবনে অর্থমূলক ঘটনা (পড়ুন দূর্ঘটনা) ঘটে। যেগুলোর সূত্রপাত ধরে পরের কতগুলো মাস আমি একা থাকি। একা থাকা মানে এই না যে প্রেম না করে থাকা। একা মানে একদম একা। ঘরের কোনে পড়ে থাকা একা। বিছানায় শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিক তাকিয়ে থাকা একা। বন্ধুদের এড়িয়ে চলা একা। কাউকে না বলতে পারা একা। একটা গান বারবার শূনতে থাকার মতো একা। সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া একা। এ সময়টায় খুব বাতাস থাকে। দুপুরে গুমোট একটা গরম আর রোদ। বিকেল থেকে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। রাত হতে হতে বিষন্ন এ বাতাসের সাথে যোগ হয় সোদামাটির গন্ধ। বাতাসে দাড়িয়ে সে গন্ধ নিতে নিতে কাঁদি আমি। কার জন্য জানা নেই। আমার এ কাঁদা কোনোদিন দেখে নাই কেউ। চাই না কেউ দেখুক শুধু একজন ছাড়া। বলছি সে বিষয়ে পরে। আগে বলি আমার মনের ভেতর কি হয়। এসময়টা একটা অসময়। যতজন কে ভালোবেসেছি, বাসিয়েছি, কষ্ট দিয়েছে বা দিয়েছি, মনে পড়ে তাদের সবাইকে। ইচ্ছে করে গিয়ে কষ্টের এই গল্প মুছে দেই। আবার মাঝে মধ্যে এই সাময়িক আবেগের টানেই দিয়েই শুরু হয় পুরোনো মানুষের সাথে নতুন ভাবে কথা বলা। এসময়ে হয় কারো প্রেমে পড়ি, হয় কাউকে পড়াই। ঠিক এসময়টায় আমার মন এলোমেলো লাফঝাপ শুরু করে, যেন বদ্ধ খাঁচার পাখি। প্রেমসুধা পান করতে ব্যকুল। এ তৃষ্না যে কি, যে অভাগা পেয়েছে সেই বুঝে। নতুন কারো সাথে দু-চারটে বাক্যব্যয় করেও প্রেমে পড়া যায় তখন। আশ্চর্য! আমার উপর যেন কিউপিড মহাশয় তার ঝুলির সবকয়টা তীর তাক করে বসে থাকে। এই একজনের সাথে ভালোমতো দুটো কথা বলতে দেরি নাই, আর ওমনি চোখের মধ্যে তার সাথে ভবিষ্যতে প্রেম-বিয়ে-বুড়া হওয়া সুদ্ধো সকল দিবাস্বপ্ন আসা শুরু করে। আবার ঝামেলা ও বাধে বটে। নতুন কাউকে চেনার জন্য যে সময় বা এফর্ট দেয়া লাগে, তা আর অবশিষ্ট থাকে না। এসব দিয়েও লাভ কি, নজরান্দাজ করে সবাই। সে যাই হোক, কথা বলার যে আলসেমি, বিশ্বাস করুন, সে আমার শুধু প্রেমে পরার আগ পর্যন্ত থাকে। যেই প্রেমে পড়ি, ওমনি আমার ছ্যাবলামো হয় শুরু। বুঝিনা, এতবার বেলতলায় গিয়েও শিক্ষা হয়না, বোধহয় আমি নেড়া নই। নয়তো বারবার মরেও কয়েকদিন কেঁদে টেঁদে আবার নতুন প্রেমের খোয়াইশ জাগে কি

করে। আচ্ছা এবার বলি, আমি জানি এতদিন যারা এসেছে, ভালোবেসেছে, বাসিয়েছে তারা সবই মরিচিকা। যাকে আমি চাইছি, খুঁজে ফিরছি সেই তবে থেকে, যেদিন তাকে পাবো, সামনে বসায়ে দেখায়ে খুব কানবো। যতোই বিচ্ছিরি লাগুক না কেনো, কাঁদতে থাকবো খুব। এ কান্না খুশির নাকি অভিমানের জানা নেই।

আমার এই ঋতুর এই আবেগে আজ থেকে আট-ন বছর আগে ঠিক এই সময়ে  লিখেছিলাম একটা কিছু। এরপর প্রেমে পড়েছি বহুবার কিন্তু আমার কবিতার মতো হয়নি কেউ। বিশ্বাস করুন, এই আট-ন বছরে একটুকু বদল হয়নি আমার আবেগ। একই চাওয়া বিদ্যমান এখনো। 

আমি চাই…

শিশির ভেজা স্নিগ্ধ সকালে।

রৌদ্রজ্জ্বল তপ্ত দুপুরেও

মেঘলা বিকেলের ভেজা বাতাসে…

অথবা চাঁদের রূপালি আলোয় মোড়া শান্ত রাতেও। 

হ্যাঁ, আমি চাই…

কান্নাভেজা চোখে,ব্যথিত হৃদয়ে পাশে,

আবার আনন্দ ও খুশিও ভাগ করতে চাই।

আরো চাই আমার একলা সময়ে,যখন আমি অসহায়। 

এমনি চাওয়াতেই সৃষ্টি হয় অপেক্ষার অনন্ত ধারা

অপেক্ষার অনন্ত ধারাতে কেটে যায় সময় সারা… 

অতঃপর আসে বর্ষা,

কান্নাভেজা কালো ঘনঘটা মেঘে,

অক্লান্ত বৃষ্টি পড়ে যখন আকাশের চোখ বেয়ে

আমি তখনো চাই

চাই বৃষ্টি ভেজা থমথমে সকালে

কিংবা কালো আকাশে বিদ্যুৎ ঝলকানো রাতেও… 

আমি চাই,

সে আসুক…

কোনো এক সে, যাকে আমি চাই

এবং সেও যেন আমাকে চায়।

ঠিক যেমনটা আমি তাকে চাই…অথবা তার চেয়েও বেশি। 

আমি চাই না সে আমাকে আকাশের চাঁদ এনে দিক,

কিংবা বসন্তে ফোটা হলুদ কদম।

আমি চাই সে আমাকে ভালোবাসার দীর্ঘ পথ ভ্রমন করাক.. 

দীর্ঘ পথ।

যা হবে অশেষ এবং আমরা হব অক্লান্ত।

যদি কখনো ক্লান্ত হইও, থেমে যায় যদি পথচলা,

চালিয়ো আমায়। 

আমি চাই,

তার সাথে রৌদ্রতপ্ত গ্রীষ্মে রৌদ্ররশ্মি নিয়ে খেলা করতে

বৃষ্টিময় বর্ষায় বৃষ্টিস্নান করতে,

শীতঋতুতে তুষারপাত দেখতে। 

আমি চাই,

কোনো এক ‘সে’ আসুক এবং আমার অপেক্ষার প্রহর ভাঙ্গুক।

ক্ষুদার্ত শুন্য চোখে আমি আছি অপেক্ষায়।

কারন আমি চাই, খুব চাই…

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.