
আমি একজন ftm(female to male) transgender. আমার বয়স এই মুহূর্তে ১৬। আমি যে ট্রান্সজেন্ডার এটা বুঝতে আর নিজেকে accept করতে আমার কয়েক বছর সময় লেগেছে। ছোটবেলায় সবকিছু মোটামুটি ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু মাঝে মাঝে একটা অনুভূতি হতো, আমার পায়ের মাঝখানে কিছু একটা নেই। সেই সময়গুলো খেলাধুলা আর বন্ধুদের সাথে কাটানোর সময়। তাই এই চিন্তাটা আমাকে সেভাবে প্রভাবিত করেনি। তারপর হঠাৎ একদিন বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার শরীরে বিদঘুটে নারীরূপ আসতে শুরু করলো : পিরিয়ড, বুক বড় হওয়া। আমি যেন অথৈই সাগরের মাঝখানে পড়ে গেলাম। আমি এগুলোর কোনটাই চাইনি। নিজের শরীরের দিকে তাকাতে পারিনা, ঘৃণা হতো। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না কেন এই ঘৃণা, কেন এত অনীহা আমার নিজের শরীরের প্রতি? আমি নিজেকে আর দশটা ছেলের চেয়ে কখনো আলাদা ভাবতাম না। কিন্তু আমার বায়োলজিক্যাল সেক্স যেন আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, এই যে দেখ তুমি যা ভাবছো তা শুধুমাত্র একটা কল্পনা। কেউ আমাকে মেয়ে বললে তখন আমার মাথায় রক্ত উঠে যেতো। কিন্তু এছাড়া আমি কি? আমার শরীর প্রমাণ করে দিচ্ছে সেক্স ক্রোমোজোম XX কিন্তু আমার ভেতর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলছে এগুলো সব মিথ্যে, তুমি কোনভাবেই মেয়ে না। এই পর্যায়ে আমি আমার বন্ধুদের বলতে শুরু করলাম আমি ছেলেও না মেয়েও না, আমি মানুষ। ব্যস এখানে কাহিনী শেষ ( আরো পরে আমি জানতে পারলাম এরকম জেন্ডার এক্সপ্রেশনকে non-binary বলে)। ক্লাস নাইনে থাকতে প্রথমবারের মতো আমি ইন্টারনেটের জগতে আসলাম। একদিন ইউটিউবে ঢুকে দেখলাম আমার রিকোমেন্ডশনে একজন বিদেশি ftm transgender এর coming out and transition এর ভিডিও। জীবনে কখনো কোনকিছু দেখে সেই দিনের মতো এতটা উত্তেজিত হইনি। মনে হলো আমার সামনে স্বর্গীয় দুয়ার খুলে গেলো। আমি অবশেষে বুঝতে পারলাম এই পৃথিবীতে তাহলে আমি একলা না, আমার মতো আরো অনেকেই আছে। আমি বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার পর থেকেই ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। পৃথিবীর অনেক কিছু আমাকে ভাবাতো, অনেক বই পড়তাম। তবে সেই সাথে আমার সুইসাইডাল চিন্তাও বেড়ে যাচ্ছিলো। যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি একজন পুরুষ ট্রান্সজেন্ডার, আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে তার মানে আমি সার্জারি করে একদম বায়োলজিক্যাল ছেলে হয়ে যেতে পারবো। কিন্তু পরে জানতে পারলাম চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো অতটা উন্নত হয়নি যে আমি সেক্স ক্রোমোজোম চেঞ্জ করতে পারবো, হয়তো কিছু শারীরিক পরিবর্তন আনতে পারবো তবে সবকিছু পাল্টাতে পারবো না। যেভাবে আমি আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই আমি যন্ত্রণায় ভেঙে পড়লাম। এবার আমি আর কোন বাঁধা মানতাম না। চরম পর্যায়ের সুইসাইডাল হয়ে গেলাম, প্রতিদিন প্রতিটা দিন সুইসাইডের চেষ্টা করতাম। আমার বাবা মা নানা ডাক্তারের কাছে আমাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। কত ওষুধ দিলো, কত কাউন্সেলিং করালো। তবে এগুলো অবশ্য সেরকম কোন কাজে দেয়নি। যারা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে তারা হলো আমার বন্ধুরা। আমার জীবনের অন্যতম বড় আশীর্বাদ আমার বন্ধুরা। যদি ওরা না থাকতো আমি জানতাম না আমি আজ কোথায় থাকতাম। আমি যেমন ওরা আমাকে সেভাবেই মেনে নিল। কেউ দূরে সরে যায়নি বরং আমাকে আরো আগলে রেখেছে। আমিও ধীরে ধীরে মানসিকভাবে নিজেকে একটু একটু করে শক্ত করা শুরু করলাম। আমার বাবা মা আমাকে খুবই ভালোবাসেন, কিন্তু তাদের মেয়ে ছেলে হয়ে যাবে এরকম কঠিন বাস্তবতা তারা এখনো মেনে নিতে পারছেন না, আমি জানি তারা আমার ভালো চান বলেই মেনে নিতে পারছেন না, কারণ আমি যে পথে যাচ্ছি সে পথটা মোটেই সহজ না। তারা চান না আমি এত কষ্ট পাই। তারা আমাকে এখন মেনে না নিলেও আমি জানি তারা কখনো আমাকে ভালোবাসা বন্ধ করবেন না, আমিও না।
আমি এখন আগের চেয়ে ম্যাচিউর হয়েছি। নিজের গণ্ডির বাইরেও আমি এখন অনেক অনেক চিন্তা করি। পৃথিবীর এত কষ্ট, সমস্যা আমাকে খুব ভাবায়। ভাবতে কষ্ট লাগে যে আমি এ দেশে থাকতে পারবো না। আমি খুব খুশি হতাম যদি এখানে সার্টিফিকেটে জেন্ডার চেঞ্জের কোন উপায় থাকতো। কিন্তু আমি সেটা বাংলাদেশে পারবো না। হয়তো একদিন এদেশের মানুষরা বুঝবে জেন্ডার আর সেক্স এক জিনিস না। আমি এখনো অনেক সমস্যার মাঝে আছি কিন্তু আমি একা না। আমার বন্ধুরা আছে, আমার বাবা মা আছে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমি নিজে নিজের সবচেয়ে বড় বন্ধু। যত সমস্যাই আসুক আমরা কেউ থামবো না। Happy new year everyone! Be proud to be yourself!
Source: BAH (Bangladesh Against Homophobia)