খোদা যেন আমাকে মেয়ে বানিয়ে দেন

বায়োলজিকালি আমি পুরুষ,কিন্তু মনে-প্রাণে নিজেকে নারী ভাবতেই ভালো লাগে।ছোটবেলায় ছেলেরা যখন ক্রিকেট-ফুটবল খেলত আমি তখন পুতুল খেলতাম,মায়ের শাড়ি-হিল পরে বউ সাজতাম।নারী-পুরুষের পার্থক্য বুঝতাম না।আস্তে আস্তে যখন বড় হই সবাই আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় এসব মেয়েদের কাজ,ছেলেরা হবে শক্ত-সামর্থ্য! বয়েজ স্কুলে পড়াশোনা, সারাদিন ছেলেদের সাথেই ওঠবস।সুযোগ পেলেই আমাকে মারতে ছাড়ত না কেউ।মাগি-হিজড়া বলে গাল দেয়া ছিল নিত্য-নৈমিত্যিক ব্যাপার।জবাব দিতাম না, সয়ে যেতাম।ক্লাস নাইনে ওঠার পর ভয়েস চেঞ্জ হয়,দাড়ি গজানো শুরু হয়।তখন থেকেই নিজেকে পুরুষ বানানো শুরু করি।

কলেজ ছিল দেশসেরা, তাও সেই বয়েজ কলেজ।লাইব্রেরিতে পড়তে গিয়ে একদিন এক ছেলের দিকে চোখ যায়।মুগ্ধ-দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম।প্রতিদিন সেই সময়ে লাইব্রেরি যেতাম শুধু তাকে দেখবার জন্য।এক ক্লাবের নবীনবরণে গিয়ে দেখি সে ঐ ক্লাবের জি.এস।তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেই।এক্সেপ্ট করেনি।ক্লাসে প্রায় ই শুনতাম ফেক আইডি খুলে প্রেম করার কথা।অনেক দ্বিধা নিয়েও মেয়ের নামে ফেইক আইডি খুলি।আর সেই ছেলেকে রিকুয়েষ্ট দিই।সে এক্সেপ্ট ও করে।কথা চলতে থাকে,এভাবেই আরো অনেককে রিকুয়েষ্ট দেই যাদের ভালো লাগত।আমার আইডি যে ফেইক বোঝার উপায় ছিলনা,আমার বোন বিখ্যাত গার্লস কলেজে পড়ত তাই ওই কলেজের টিচার থেকে করিডোর সব ই আমার নখদর্পনে ছিল।কেউ জিজ্ঞেস করলে সাথে সাথেই উত্তর দিতে পারতাম।তাই তেমন কেউ ঘাটাত না।আর ঘাটালেও ব্লক! এভাবেই সেই সিনিয়রের সাথে কথা চলতে থাকে।আইডিতে অন্যরা যে মেসেজ দিত না তা নয় কিন্তু আমার মন পড়ে থাকত ওই সিনিয়র এর প্রতিই।কয়েক মাস চ্যাটের পর সে নিজে আমাকে প্রপোজ করে, সেদিনের মত আনন্দ জীবনে কখনো আসেনি।তবে ভয় ছিল সবসময়ই আমার আসল পরিচয় জানলে কি হবে?এই ভয়েই তার সাথে কথা বলা এড়িয়ে যাই,সে মনঃক্ষুণ্ন হয় অনেক।তার সাথে বিনা কারণেই ঝগড়া করতাম যাতে সে নিজে থেকেই চলে যায়।একসময় সে বিদেশে পড়ার সুযোগ পায় আমাকে অনুরোধ করে একটিবারের মত দেখা করতে।আমি গিয়েছিলাম ঠিক ই,সে কল্পনা করেছিল কোন মায়াবতীর কিন্তু আমি তো নর! আড়াল থেকেই তাকে দেখি ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে। তাকে বিরসবদনে চেয়ে থাকতে দেখে খুব কেঁদেছি।সেই ঘটনার পর তাকে ব্লক দিই আর আইডিও ডিএক্টিভ করি।

এই ঘটনার পর অনুশোচনা হয় অনেক।নামাযে খুব করে চাইতাম যেন আমাকে খোদা মেয়ে বানায় যাতে আমি ওর সামনে যেতে পারি অন্তত একটিবারের জন্য হলেও,কিন্তু তা তো সম্ভব না।তাই স্বপ্ন দেখি।স্বপ্নে আমি এক সাদা শাড়ি পরা এক মায়াবতী যে কিনা তার প্রেমিকের হাত ধরে হাঁটছে!

বাস্তবে এক না হলেও স্বপ্নে আমরা এক।

এটিই আমার জীবনের কাহিনি,অনেকের কাছে মিথ্যে মনে হতে পারে।কিন্তু আমি সত্যিটাই লিখেছি, মিথ্যা লিখে এটেনশান কেউ পেতে চায়না এই প্ল্যাটফর্মে। বাংলাদেশে এটাই একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যেখানে নাম -পরিচয় গোপন রেখে নিঃসঙ্কোচে কনফেস করা যায়।সে কারণেই এই কনফেসন।আমি জানি আমার মত আরো অনেকেই ফেইক আইডি খুলে এরকম করে।শুরুটা মধুর হলেও শেষে বিষন্নতা ছাড়া কিছুই নেই!

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.