দূর থেকে

দেবযানী মোদক 

বেনামে কথা গুলি লিখা ছাড়া আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়েই লিখছি। জানেন ই তো সমকামী হইলে আর সেটা প্রকাশ করলে এ দেশে সমাজের চোখে কতোটা ছোট হইতে হয়। অপমানিত হইতে হয়। আমি জানি না আদৌ এই পেইজে আপনি আছেন কি না। যদিওবা সামনাসামনি আপনারে বলার মতো সাহসটা ও আমার নাই। কেনোনা আমি খুবই ভীতু একটা মানুষ। এবং এতোটাই ভীতু যে আমি ডিটেইলসে কিছু বলবোনা যদি আমাকে চিনে ফেলেন ।

কোনো একদিন টিএসসির বাইরে আপনাকে প্রথম দেখি মাস্ক পড়া।অদ্ভুত ভাবে আমি আপনার চোখের দিকে চেয়ে আছি চোখ দুটোতে যে কি মায়া। 

মনে হলো এই আমি কোথাও আটকা পরে গেলাম।আমি দু বারের বেশি তাকানোর সাহস করলাম না। আমার সীমা টুকু ওটুকুই,কারণ এর পর যে আপনার সাথে আর কোনোদিনই দেখা হবেনা।চোখের ভাষা আমাকে কেনো জানি বেশি আকৃষ্ট করে।  ভালো আর্টিস্ট হইলে আপনার চোখ দুটো আগে একেঁ ফেলতাম। এরপর আস্তে আস্তে ভুলেও গেলাম কবে প্রথম দেখেছিলাম আপনাকে। কিন্তু একদিন রাতে আমি আবার আপনাকে দেখতে পাই তখন প্রায় রাত ১১:২২-১১:৩০ এর মতন বাজে মনে হয় ।

দোতালায় আলোচনা হচ্ছিলো সেখানে ঠিক আমার ডান দিক থেকে এসে ভীড়ে দাড়ালেন।গায়ে গাড়ো গোলাপি রঙের চেক শার্ট পরা। মুখে কালো মাস্ক পরা। সেই চেনা চোখ জোড়া দেখে একটু চমকেই গিয়েছিলাম। এমন একটা সময়ে আপনাকে দেখতে পাবো ভাবিনি। আমি খানিকটা দূরে গিয়ে দেখছিলাম আপনি ই সেই কি না। শিওর হবার পর  ঠিক দু-চারবার  তাকাই এরপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আর তাকাইনি কারণ ঐ যে আমি জানি ওই মুহুর্তের পর পরই আপনি আবার মিলিয়ে যাবেন আমি আবার ভুলতে বসবো। কিন্তু সেদিন যে শেষ রাত অব্দি আপনার আশেপাশেই থাকার সৌভাগ্য হবে জানা ছিলো না। আবার ঐ মুহুর্তের পর আপনারে আদৌ আর দেখবো কি না এই ভেবে অনেক মন খারাপ হচ্ছিলো। আপনি রাতের সড়কে সাইকেল চালালেন, একা একা এদিকে থেকে সেদিক হাটাহাটি করলেন। দূর থেকে দেখেই যাচ্ছি। ইচ্ছে ছিলো গিয়ে কথা বলি আপনার সাথে। কিন্তু এতো ভয় আর ধকধকানি শুরু হয় যে আমি দমে যাই। আপনার কন্ঠ টাও ঠিক ঠাওর করতে পারছিনা এখন আর। কারণ এতো দূর থেকে আর কত টুকুই বা আপনার কথা শুনতে পেলাম বলেন? আপনারে আমার আর জানা হলোনা, আপনাকে বাড়ি ফিরতে দেখা হলো না, শুধু আপনার একটুখানি গুনগুন করে গান গাওয়া শুনলাম। ব্যাস ওই চোখের মায়া আর গুনগুন নিয়ে আমি রোজ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। আপনি আমার এই অবস্থা কে যা ইচ্ছা তা নাম দেন না কেনো। প্রেমে পড়া বলেন/ক্রাশ বলেন/লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলেন যা ইচ্ছা কন না ক্যান। কিন্তু-

প্রিয় দেবজানি , আমি আসলেই আপনার মায়ায় আটকা গিয়েছি।আমি জানি মনে প্রশ্ন জাগে যে না জাইনা না চিইনা আবার কেমনে মানুষ মায়ায় জড়ায়? কিন্তু আমার মনে হয় আপনার চোখের দিকে চাইয়া থাকলে অন্তরে শান্তি লাগবে। ঠান্ডা বাতাস বইবে। যাউকগা এই কথা গুলান থাক। ফেসবুকের কল্যানে কোনোমতন আপনার নাম টা জানতে পারলাম। আমি দুঃখিত আমি খুবই ভীতু এবং পরাজিত আত্মা বলা চলে যে কি না সবখানে হেরেই যায় হারিয়ে যায়। আপনার কাছেও হেরেই যাবো। যখন আপনাকে ভুলতে বসবো আস্তে ধীরে তখন আমি আবার আমার একলা পথে হাটা ধরবো।আপনাকে ভেবে ভেবে ভালোই আছি আজকাল ধন্যবাদ ।

আর যদি পারেন একটা উপকার করলে ভালো হয়।প্রায় শুক্রবার শুধু টিএসসি তে একটু আইসেন প্লিজ? দূর থেকে দেখতে পেলেই হলো।আর কিছুর চাওয়ার নাই মনে হয়।

কন্ঠ ভালো হইলে ইবনে শামস এর এই কাব্যাংশ টুকুন আবৃত্তি করে শুনাইতাম, তাই লিখতেছি আরকি 

-প্রবীণ অন্ধকারের ভিতর আবিষ্কার করি

শিশিরাক্রান্ত মাকড়শার জালের মতো আয়ুরেখা ধরে ফুটিতেছিলো আলো- আমার চোখেজুড়ে বিষণ্নতার সমারোহ ঠেলে জাগিতেছিলে তুমি – এক অনিন্দ্য সুন্দর মায়া। 

রােদের ভিতর জড়াে হচ্ছে ঝিরঝিরে হাওয়া

কোয়াশাতে ভিজে যাচ্ছে আকাঙ্ক্ষার অসুখ

কাঠের মতাে সুষ্ক হৃদয় থেকে বের হয়ে এসে যে চোখ শান্তির

পয়গাম এনেছে তােমার বুকে তাকে পাহাড় ভ্রমণে সঙ্গে নিয়ে।

হাতের আঙুলে নিয়ে অন্ধকারের আগুন- তাকে দেখায়াে

সুন্দরতম মিম্বরের ধ্বনিতে কিভাবে সৃজে অনন্য জীবনের রূহ।

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.