পথচলা

আমার বয়স এখন ২৫। বায়োলজিকালি একজন মেয়ে৷ তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে Queer বলতে পছন্দ করি৷ পড়াশোনা শেষ করেছি। চাকরির চেষ্টা চলছে।

আমার ভাললাগা টা মেয়েদের প্রতি। আমি তাদের প্রতিই আকর্ষিত হই৷ ২০১৫ সালে আমি আমার সেস্কুয়াল অরিয়েন্টেশন আমার পরিবারের সামনে তুলে ধরি। যদিও আমার পরিবার আমার চালচলনের জন্য আগে থেকে কিছুটা বুঝতো। সেদিক থেকে মেয়ের হাবভাবও নেই আমার ভিতর৷ এটা নিয়ে প্রথমে অনেক অশান্তি হতো। সেই সময়টায় অনেক বাজে ছিল। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। আমার পরিবার এখন সম্পূর্ণ ভাবে আমাকে সমর্থন করে। এইদিক থেকে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি।

আমি সব ধরনের সেস্কুয়ালিটিকে সমর্থন ও সম্মান করি। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আমি একগামী৷ সম্পর্কের মূল্য আমার কাছে অনেক। আমি খুব সহজেই সম্পর্কে যেতে পারি না৷ সময় নেই অনেক। বাংলা সাহিত্য প্রেমী আমার মন যদি কোন কিছুর উপাসনা করে তো সেটা হচ্ছে ভালবাসা। কিছুটা বাংলা সিনেমার ওই গানের মত, “যেই প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়” সেই প্রেম চাই আমি।

আমি প্রচন্ড রোমান্টিক একটা মানুষ। আমি ভালোবাসতে খুব ভালবাসি৷ আমার মতে ভালবাসার মত সুন্দর জিনিস খুব কমই হয়। কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া। এই ভালবাসার কাছেই আমি হেরে গেছি অনেক বার। আমার অনেক দীর্ঘ সময়ের ভালবাসা পূর্নতা পায়নি৷ এ-যুগে ভালবাসার পূর্ণতার আশা করাই মনে হয় ভুল৷ শেষের কবিতার মতই আমার ভালবাসার শেষ পরিনতিটা ছিল৷ মানসিক ভাবে ভেঙে পরি। তবুও হাসি মুখে সব কিছু লুকিয়ে রাখতাম। মুখে হাসি রেখে চলা মানুষ গুলোর কাতারে আমিও পরি। সবাইকে হাসিয়ে বেড়াই। যখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় তখন সেটা দেখা যায় না। দেখে কেউই বুঝবে না এই মানুষটার রোজ রাতে মৃত্যু হয়। বিচ্ছেদের পর মানুষ যত রকম বিপদজনক কাজ করতে পারে সবই আমি করেছি। নিজেকে আটকাতে পারিনি। আমার সেই অভিশপ্ত রাতের সাক্ষী শুধু আমি। হাসি খুশি মানুষ বুকে কত ভাড়ি পাথর রেখে চলতে পারে সেটা সেই বুঝবে যে সেই অবস্থার শিকার। সেদিন গুলো ভাবতেও ভয় করে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে অনেক কষ্টে ভালভাবে পড়াশোনাটা শেষ করি।

সখী, ভালোবাসা কারে কয়?

সে কি কেবলই যাতনাময়।

সে কি কেবলই চোখের জল?

সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?

লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ?

আমার মত ডিপ্রেশনে থাকা মানুষ গুলোর প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। মনের ভিতরে কি চলে তারাই ভালো জানে। আমি চেষ্টা করি সেই মানুষ গুলোর মনের কথা জানতে তাদের সময় দিতে। মানসিক ভাবে সাহায্য করতে।

আমি মনে করি কোন সম্পর্কের যদি অনাকাঙ্খিত শেষ পরিনতি হয় তবে তার জন্য ভালবাসা একদমই দায়ী নয়। ভুল হয় মানুষ গুলো৷ ভালবাসা নিস্পাপই থাকে৷ তাই জীবনের এত খারাপ অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্বেও ভালবাসার প্রতি আমার সম্মান এতটুকু কমেনি। কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে ভয়ের জন্ম। আমি এতই খারাপ সময়ের ভিতর থেকে বের হয়ে এসেছি যে সেই খারাপ সময়ের পুনরাবৃত্তি হলে আমি পাকাপাকি ভাবে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাবো। হ্যা সবাই এক না। সব সম্পর্ক এক না। এই কথা গুলো আমিও জানি৷ কিন্তু “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়” এই উক্তিটিরও বাস্তবতা আছে। খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিয়েছি। এখন আমি নিজের ভবিষ্যৎ টাকে নিয়ে চিন্তা করছি। আমি জানিনা কখনো মনের মানুষ খুঁজে পাবো কিনা৷ জানিনা বোঝার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ভালবাসার মানুষের হাত ধরে সারাটা জীবন চলার যে সাদামাটা স্বপ্নটা দেখতাম সেটা কখনো পূর্ণ হবে কিনা। তবুও আমি আশা রাখি। 

Rumi said, As you start to walk on the way, the way appears”

I am still walking. Hoping for the best.

জানিনা বিরক্ত করলাম কিনা সবাইকে। মনের কথা গুলো বললাম। সকলের জন্য শুভ কামনা।

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.