প্রতারনার প্রেম

আমি নিজের সত্তাকে জানার জন্য ইন্টারনেটে লেসবিয়ান/ সমকামীতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি!

কারন এক কালো অতীত আমার জীবনে আসে! আমাদের হোস্টেলে সিনিয়র মেয়েরা থাকতো, তার মধ্যে একটা মেয়েকে আমার ভালো লাগতো কিন্তু প্রেমের সম্পর্কের জন্য না। ভালো লেগেছিল এই কারনে আমি ছোট বেলা থেকেই অনেক রাগী, তোহ একদিন কোনো কারনে পরিবারের সাথে রাগ করে ছিলাম, তখন ঐ মেয়েটি আমাদের ঘরে ছিলেন কারন সব মেয়েরা আমাদের বাসায় টিভি দেখতে আসতো, আমার মাথায় হাত দিয়ে আমাকে অনেক বুঝাতে লাগলো মূলত সেই থেকেই আমি তার দিকে চোখাচোখি হতে থাকি,কারন তার দিকে কখনো আমি কোনো ভাবে তাকাইনি কোনোদিন! যে কোন মেয়ে আমার ঘরে আসে বা কে না আসে এই নিয়ে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলোনা।

তোহ এরকম করে থাকলে,আমি মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতাম তাকিয়ে থাকতাম। একদিন হোস্টেলে মেয়েদের ভিতর গন্ডগোল হলো,ঝগড়া হলো! আমার মা তখন রাগ করে সবাই কে বলে যারা এখানে ভদ্র ভাবে থাকলে থাকো আর না-হয় হোস্টেল ত্যাগ করো! তো সবার মধ্যে আমি দেখলাম ঐ মেয়েটা কাঁদছে আর বলতেছে আমার মাকে যে আন্টি আমরা ২ জন থাকবোনা এখানে তখন মা বললো আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো শুনে তখন মাকে বললাম মা ওরা থাকুক, তখন মা ওদের ডেকে বলে আমার মেয়ে চায় তুমি থাকো তখন ও অবাক হয়ে আমায় দিকে তাকিয়ে থাকে। আর এই থেকেই গল্প টা শুরু হলো ওই সিনিয়র মেয়ে আর আমার! ও আমাকে অনেক টেককেয়ার করতো, খাওয়াতে দিতো ঘুম পাড়িয়ে দিতো, আমি কোনো কারনে রাগ করলে রাগ ভাঙ্গাতো রাগ ভাঙ্গা না অবদি চেষ্টা করে যেতো! ওর এত এত কেয়ারে আমি উইক হয়ে পরি দিন দিন ওর উপর। আমি তখন পড়তাম ৮ এ আর ও অনার্সে! এভাবে ৩বছর কেটে যায় কিন্তু এর মধ্যে একদিন খেয়াল করলাম সে আমাকে ফিজিক্যাল attraction করানোর চেষ্টা করতো! যার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না! সে নানা অঙ্গ-ভঙ্গি করতো। আমি উইক যেনো না হয়ে পরি তাই শুধু এই ব্যপার টা এড়িয়ে চলতাম। একদিন রাতে সে আমাকে উইক করার চেষ্টা করে! কিন্তু আমি চুপ ছিলাম বুঝতে দেয়নি তখন রান্না ঘরে গেলো কি জানি করতে আমি বসে ছিলাম আর তার ফোনটা আমি ধরে গান খুজতে ছিলাম আর তখনি দেখি একটা ছেলের টেক্স ভিতরে গেলে বুঝতে পারি অনেক বছরের সম্পর্ক চলছে তার, বয়ফ্রেন্ড এর এডাল্ট ম্যাসেজ সিনিয়র মেয়ের এডাল্ট ম্যাসেজ মানে বয়ফ্রেন্ড আর গার্লফ্রেন্ডের যা থাকে! তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। অসহ্য রাগ যন্ত্রণা আমার বুকের ভিতরটায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি কোনো মতে আমার রুমে চলে আসি। এবং সিনিয়র আপুকে এভয়েড করতে থাকি। কিন্তু আমি ওকে যত এভয়েড করতে থাকি ও তত আমার আশেপাশে আসতে থাকে। আর ফিজিক্যাল অঙ্গ ভঙ্গিমা তো আছেই! তারপর আমি বলতে লাগলাম তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? যা সবাই জানে কিন্তু আমি জানিনা? লুকোচুরির কি আছে? তখন সে তাদের দীর্ঘ ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্কের কথা আমাকে বলতে লাগলো। কিন্তু আমার অনেক কষ্ট লাগলো। যার বয়ফ্রেন্ড আসে তাহলে আমার সাথে বউয়ের মত বিহেভিয়ার করে কেনো? আর তখন থেকেই মূলত আমার মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে থাকলো, যে এই মেয়েটা কেনো আমার সাথে এরকম করছে। আমি ভাঙ্গাচুর করতাম সব। কিন্তু ও বুঝলেও আমার পরিবার কেউ কিছু বুঝতে পারলোনা আমি কেনো এরকম করছি।

কিন্তু এটা সবাই বুঝতে পেরেছিলো সিনিয়র আপুকে আমি পছন্দ করি! কিন্তু কেনো? আর তখনি সিনিয়র আপু আর অনেকেই আমাকে ডাক্তার দেখানো কথা বলে। আমাকে ডাক্তার দেখানো হতো যা কিনা জোরাজোরি করে। কিন্তু আমি বলতে পারতাম না কিছু এই কষ্টের কথা। ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো,তুমি কি এই মেয়েটাকে ভালবাসো? আমি বলেছিলাম হ্যাঁ এবং অনেক প্রশ্ন করা হলো। যা কিনা আমি বলতে চাইনি। তারপর আমাকে যেতে বলা হলো। তারপর সিনিয়র আপুকে ডাকা হলো,কিন্তু সে কান্না করে ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে আসলো, কিন্তু আজো বুঝতে পারলাম কেন কান্না করেছিলো? কি জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তাকে?

এরপর অনেক ডাক্তার দেখানো হয় আমাকে। তোহ আমি যখন আমার আশপাশে থেকে সমকামী শব্দ টা শুনতে লাগলাম। তখম বুঝতে পারতাম না মানুষ আমাকে কি কানাঘুষো করছে। মা আমাকে বলতে লাগলো ডাক্তার হোস্টেলর মেয়েরা এইসব কি বলা বলি করছে? সমকামী কি? মেয়ে মেয়ে ভালবাসা মানে কি এগুলা? আমি তখন বলতে লাগলাম এগুলা কি আমি জানিনা আমাকে আর এইসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করবানা।

কারন আমি সত্যিই জানতাম না সমকামী কি

মেয়ে মেয়ে প্রেম ভালবাসা কি

তাই গায়ে লাগাতাম না।

সিনিয়র আপুর কাছে জিজ্ঞাস করি,কিন্তু সে আমাকে ব্যবহার করার জন্য হয়তো বলেছিলো এগুলা কিছুনা মানুষ কত কি বলে।

([আজ তাকে বলতে ইচ্ছে করে তাহলে তোমার মনে কি ছিলো? তুমিও বা কি? তোমার উদেশ্য ও বা কি ছিলো?])

কিন্তু আমি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর পেলাম না। যাই হোক , দিনের পর দিন হাই ডোজার ঘুমের ঔষধ চলতে থাকে। একদিন হোস্টেল ছেড়ে চলে যায় সিনিয়র আপু ডাক্তারাই তাকে যেতে বলেছে ও আমার পরিবার। আমি কান্নায় ফেটে পড়েছিলাম তার রুমে গিয়ে দেখি সত্যি তার কোনো জিনিস নেই, সেও নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হয়তো ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিয়ে রাখা হয়েছিলো আমাকে। এরকম ঔষধ আর পড়াশোনা নিয়ে চলতে থাকে আমার জীবন যখনি ঔষধের রেস কমতে থাকতো শরীর থেকে তখনি ওর কথা বেশি মনে পড়তো আর কান্না করতাম, এরকম কয়েকমাস চলতে থাকে।

কিন্তু তার নাকি আমার পরিবারের সাথে কনটাক্ট থাকতো আমার খোঁজখবর নিতো। কিন্তু পরিবার কখনো চাইতো ওর সাথে আমার আবার দেখা হোক আবার আমার সমস্যা প্রকটিত হোক। একদিন আমার আমাকে ওর বয়ফ্রেন্ড কল দেয়, সিনিয়র আপুও কনফারেন্সে ছিলো আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে বুঝায় আমরা ৩ জন্য লাইফে থাকবো কেউ কাউকেই ছাড়বো না কেমন? আমি বললাম না। ওর বয়ফ্রেন্ড কে ও কি বুঝাতো আমাকে নিয়ে তা ওরা জানে আমি জানিনা। কিন্তু সিনিয়র আপুর মনে কি ছিলো জানিনা।আমি যেখানে প্রাইভেট পড়তাম একদিন ও আমাকে জোরে নাম ধরে ডাক দেয়। আমি ভাবতে লাগলাম এটা সিনিয়র আপুর ভয়েজ না? কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। আরো একদিন এরকম ডাকলো তখন ওকে আমি দেখে ফেলি আর ফেল ফেল করে হাসিঁ দিলো। আমি তখন আমার মধ্যে ছিলাম না। সত্যি সিনিয়র আপু আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে থাকলো। এরকম করে আবার ওর সাথে আমার মিলতে থাকলো।কিন্তু ওর আর আমাদের বাসায় উঠে নাই ও যে বাসায় থাকতো ওই বাসায় আমি প্রায় থাকতাম, এবং বলতে লাগলো আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই

(যা ছিলো ২য় সর্বশেষ মিথ্যা কথা)

আমিও বিশ্বাস করি এবং ওকে জড়িয়ে ধরি। আর তখন আমাদের মধ্যে নানার আদর হয়। ডিপ না কারন আমি মানসিক ভাবে এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আর বয়স অল্প বিশ্বাসও বেশি ছিলো ।

আমার মাথায় থাকতো যে না ও আমাকে আর ছেড়ে যাবেনা। এটা ছিলো প্রতারণা ১ম ২য় ৩য় ধাপ।

এরপর এরকম আরো কয়েন দিন চলতে থাকলে।

ও আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করতে লাগলো হয় তুমি আর আমায় বয়ফ্রেন্ড থাকো নাহলে আমি চলে যাবো তোমার লাইফ। এটা ওর ব্যবহারে বুঝতে পারি। কারন এই অফার টা ওর বয়ফ্রেন্ড কে দিয়ে আমাকে ফোনে বুঝিয়ে ছিলো ।

দিন দিন ও আমাকে ইগনোর করতে লাগলো একদিন সত্যিই ছেড়ে চলে যায় তারপর আমার কি হলো তা হয়তো আপনিই বুঝতে পারবেন সুইসাইড ও করতে গিয়েছিলাম কিন্তু নিজেকে বুঝিয়ে নেই নাহ আমার পরিবার আমাকে এত আদর করেছে আমার সব সহ্য করেছে তাদের তো আমি কষ্ট দিতে পারিনা।

আমি শান্ত হয়ে গেলাম কিন্তু ভিতরে ভিতরে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে যেতে লাগলাম।

আজকে এই টুকু বলে বিদায় নিচ্ছি

জীবনের ২য় প্রেমের কথাও বলবো পরের পোষ্টে

ধন্যবাদ

তখন

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.