ফিরে আসবে

হ্যাঁ আমি একজন মেয়ে কিন্তু এমন একজন মেয়ে যে কিনা মেয়ে হয়ে মেয়ে কে পছন্দ করে মেয়েকে ভালোবাসে

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কখনো নিজেকে মেয়ে হিসেবে দেখতাম না আমি তো দেখতাম এই খোলসের পেছনে লুকিয়ে থাকা অন্য এক সত্তাকে ।মনে হয় এইবুঝি কোনো এক মেয়ের শরীরে এক ছেলের বাস।

এবার কথাই আসা যাক আমি ছোটবেলায় থেকে ছেলেদের পোশাক পরতাম আচরণ ভাবসাব ও ছেলেদের মতো তবে তখন এত কিছু বুঝতাম না । আমি যখন ক্লাস  3 তে পড়ি তখন কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে এক বড়আপুর উপর ছোট্ট একটা ক্রাস খায় বিষয়গুলো তখনও বুঝতাম না ।হয়ত সেটা শুরু ছিল আমি কেমন তা প্রকাশের নিজের কাছে। যখন আমি ক্লাস  4 এ পড়ি তখন আমাদের স্কুলে একটি মেয়ে ভর্তি হয় ।ওর সাথে এমনভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম যে ওর সাথে ক্লাস না বসলে ভালো লাগে না ওর সাথে কথা না বললে ভালো লাগে না।তখন জানতাম না ভালোবাসা আসলে কী জিনিস তবে হ্যাঁ না জেনেই ভালোবেসেফেলেছিলা বুঝতে পারি তখন যখন সে অন্য স্কুলে পরের বছর চলে যায়।তারপর থেকে অনেক  মিস করতাম তাকে এও জানতাম না যে কখনো তার সাথে ভালোভাবে কথা হবে ও কিনা। রাতদিন উঠতে বসতে তার কথা মনে পরতো।রাস্তায় কখনো তাকে দেখলে কেন জানি সামনে যেতে পারতাম ।সত্যি বলছি হার্টবিট বেড়ে যেত প্রচুর ।অনেক প্রার্থনা করতাম যাতে কোনোভাবে আবার যেন এক হওয়া যায় ।একদিন সেই প্রার্থনা বাস্তবে রূপ নিল ।হাই স্কুল লেভেল এ একই স্কুলে 2 জনের এডমিসন হলো ।আবার ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম । একদিন হঠাত করে সে আমাকে চিঠি দেয় যদিও সে মজা করে দিয়েছিল ।আমি সে সুযোগ এ চিঠির উত্তর দিতে গিয়ে আমার মনের সত্যিকার ভাবনা গুলি লিখে ফেলি 2011 এসব চলে সে সবকিছু মজা ভাবেই নিত।আফটার 10 মনথস যখন বুঝলাম সে কিছুটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে তখন সাহস করে একদিন সব বলে বসলাম আমার মনে আছে কি কাঁপাটায় না কাঁপছিলাম।তবে অবিশ্বাস্য ভাবেই সব কিছু নরমালি নিয়ে আমাকেও বলে ফেলে আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তারপর শুরু হলো প্রেম নিয়মিত চিঠি দেওয়া শুরু হলো স্কুল বন্ধ থাকলে কোনো না কোনো বাহানায় তাকে দেখতে যেতাম।প্রতিটি দিন তাকে দেখার জন্য সবার আগে স্কুল যেতাম সবার পরে বাড়ি ।তখন পোশাক স্বাভাবিক মেয়েদের মতো কারন হলো ফ্যামিলি।2014পর্যন্ত তার হাতটা ধরতে আমার ভয়লাগতো ।আমরা অনেক ঝগড়া করতাম তবে একে  অপরকে অনেক ভালোবাসতাম।মাঝে মাঝে মনে হতো আমার থেকে বেশী ও আমাকে ভালোবাসে 2015 থেকে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং অনেক স্ট্রং হয়।পাড়ার লোকেরা জানত as a bestfriend আমরা একে অপরকে  অনেক ভালোবাসি কারন তারা কোনো এক জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে গল্প করছি তো করছি রোজ। লেখাপড়াতে আমার অনেক মনোযোগ ছিল অনেক কারনটাও হয়ত সে হয়তো তাকে সারাজীবন পাশে রাখার চেষ্টা। অনেক বেশি ভালোবাসতাম একে অপরকে ।  jsc ssc hsc GPA 5 2018 পর্যন্ত তার সাথে আমার অনেক স্ট্রং একটা সম্পর্ক।এরপর 2019 এডমিশন টাইমে একটা কথা শুনতে পেলাম যেটার ভয় আমার অনেক নির্ঘুম রাতের সাক্ষী ।তার মতের বিরুদ্ধে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।ও অনেক সুন্দরী নারী ছিল যে কেউ এক দেখাতে পছন্দ করবে।তাকে বললাম আমি কিছু করি যাতে বিয়েটা ভেঙে যায় ।আমাকে ও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেছিল কিন্তু বিয়েটা ঠিক হবার  2 দিনের মাথায় বিয়ে হয়ে যায় ।আমার আজও মনে আছে বিয়ের আগরাতে সে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল সে শুধুই আমার সে কখনো মেনে নেবে না অন্য কাউকে।ফিরে আসবে আমার কাছে।আমাকে বলা সম্ভবত সবথেকে বড় মিথ্যা কথা।বিয়ে আর পরবর্তী আমার অবস্থা এককথায় বলতে গেলে পাগল।আর সে সে তো একেবারেই চেন্জ।সবার ফন রিসিভ করবার সময় হয়, নেই শুধু আমার ফোন কলটি রিসিভ করার সময় ।শুরু  হলো আমাকে দূরে সরিয়ে রাখার সকল চেষ্টা।লাইফে ঐ মুহূর্তে যতঅপমানিত হয়েছি আর কখনো হয় নি।বেঁচে থাকার সকল ইচ্ছে ত্যাগ করে একদিন ডিসিশন নিয়ে ফেলে পা এগিয়ে দিয়েছিলাম ঠিক সে মুহূর্তে 2 জন খুব কাছের মানুষ মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরিয়ে।তার পর তার বলা কিছু কথা আমাকে করা কিছু অপমান আমাকে বাধ্য করেছিল তাকে ছাড়া সামনে আগাতে।  পরবর্তী সময় আমার জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়েছিল।এরপর এডমিশন শুরু হলো ।লেখাপড়া তো কিছুই করিনি ।যাই হোক শুরু করলাম লেখাপড়া প্রথম পড়তে এত কষ্ট হয়েছিল ।পরীক্ষা দেই আর ব্যর্থ হয়।শেষ মুহূর্তে কপালে জুটল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সে সময় যে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম আর বাসা থেকে যে চাপ ছিল সত্যি সবথেকে তাকে বেশী প্রয়োজন ছিল।কিন্তু পাশে তো তাকে পাওয়া দূরের কথা বরং আরো অপমানিত হতে হয়েছিল।এর পর ডিসিশন নিলাম যেহেতু সে চায় না আমি তার জীবনে থাকি আমি আর কখনো তার পথের কাঁটা হব না । আর যে ভালোবাসার সাথ সবথেকে যখন প্রয়োজন ছিল তখনি যেহেতু পায়নি সেহুতু আজ থেকে আমার ভালোবাসা আমার কাছে থাকবে আর কোনোদিন তা তাকে শুনিয়ে তার বিরক্তির কারন হবো না।লাস্ট 6 ইয়ারে আমার মনে পড়েনা এমন একদিন নাই যেদিন আমরা কথা বলিনি যতই যাই হোক না কেন ।আর এখন জাস্ট সম্পূর্ণ ভাবে বের হওয়ার সর্বোত্তম প্রয়াস চলছে।ক্যাম্পাসে যত বেশি পাড়ি সময় দি

।যদিও বলার আরও ছিল কিন্তু আর সম্ভব হলো না।কিন্তু নিজেকে নিয়েও ভয় লাগে যদি আমি কিছু না করতে পারি তবে বিয়ের সময় কিছু করার থাকবেনা।

মাঝে মাঝে মনে দুনিয়াকে চিল্লাই বলি আমি কেমন ।ভালো লাগে না নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে। জানি কেউ মেনে নিবেনা।আমি জানি না কি দোষ আমার যে নিজের পছন্দের কথা কাউকে বলতে পারব না।কখনও পরিবারের সাপোর্ট ও পাবো না।আসলে আমাদের জীবন অনেক কঠিন।

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.