
আমি বিবাহিত,দুইটা বাচ্চা আছে। ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ারের পরে কিছু সমস্যা আর বাবার ইচ্ছের কারণে বিয়ে করে নিতে হয়। বিবাহিত জীবনে আমি নিজেকে সুখী বা অসুখী কিছুই দাবী করতে পারিনা। আমার সন্তানদের বাবা জিনি তাঁকে আমি ভালোবাসি না। শারীরিক মিলন আমাকে যন্ত্রণা দেয়। তিনি ভালো মানুষ, আমাকে কখনো সেক্সের জন্য জোর করেন নি। প্রায় পাঁচ বছর আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি৷ তিনি যখন বুঝতে পারলেন আমি শরীরি কিছুই অনুভব করিনা,এর পর তিনি আমাকে আর জোর করেননি এবং আমরা এটা নিয়ে কখনো কথাও বলিনি। বিয়ের পর মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো,তাঁকে মেনে নিতে সংসার মেনে নিতে পারছিলাম না। তখন মা,আপু বললেন বাচ্চা নাও,সব ঠিক হয়ে যাবে। বাচ্চা নিয়েছি,দুই বার কিন্তু ঠিক কিছুই হয়নি। এত ভালো একটা মানুষ আমি তার প্রতি কোন আকর্ষন অনুভব করিনা৷ আমি ছোটবেলা থেকে জানতাম আমি ছেলেদের না মেয়েদের প্রতি আকর্ষন অনুভব করি৷ কিন্তু সমাজ, সম্মান আর সোকলড ভালো আছির ট্যাগ লাগানোর জন্য আমাকে বিয়ে করতে হয়। সব সময় বাধ্য বাচ্চা ছিলাম বলে বাবা-মায়ের অবাধ্য হতে পারিনি।
২০১৯ এর আগস্টের একদিন। মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসলো। শুধু হাই লেখা। আমি ক’দিন পরপরই রিকুয়েষ্ট মেসেজ চেক করতাম। ওই আইডিতে গেলাম,নাম দেখলাম এবং লক আইডি। জরুরি মনে হয়নি। ওভাবেই রেখে দিয়েছিলাম। তার দু’দিন পর আবার মেসেজ। “আপনার সম্পর্কে অনেক শুনেছি,অনেক বই পড়েন,যদি সময় হয় তো একটু কথা বলিয়েন”। এবার মনে হলো জবাব দেওয়া উচিত। লিখলাম ” কি কথা বলতে চান বলুন,কার কাছে শুনেছেন আমার সম্পর্কে? ” সে যার নাম বললো তারপর তাঁকে আর কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজন ছিলোনা। তাঁকে আমার আইডি এমন একজন দিয়েছিলো যাকে আমি আমার ভাগ্য বিধাতা বলি।
কথা শুরু হলো। আমি আজীবন নিজেকে অসামাজিক হিসেবেই জানতাম। তার সাথে সেদিন সকালে আমার প্রথম কথা। তারপর আমরা পুরো দিন মেসেজে কথা বলেছি,বলেই গেছি। সে আমাকে প্রশ্নও করেনি কিন্তু আমি বলে গেছি নিজের সম্পর্কে। পছন্দ অপছন্দ এমনকি বর্তমান ক্রাশকে নিয়েও। কাজ ছিলো,ব্যস্ত ছিলাম। সব ছাপিয়ে আমি তার কথার জালে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সময় তার মতো যাচ্ছিলো। সব বলার পর মনে হলো এতোকিছু বলা কি ঠিক হলো!তাঁকে দিয়ে মেসেজ ডিলিট করালাম। আরেক জনের নাম্বার চাইতে গিয়ে সেই মেসেজ ভুলে তার ইনবক্সে চলে গেলো,এবং সেও কিছু চিন্তা না করে তার নাম্বার আমাকে দিয়ে দিয়েছিলো। একজন তার নাম্বার দিয়েছে এখন নিজের নাম্বার না দিলে কেমন হয়! তখন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিই। তখনো তার আসল নাম কিংবা তার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না বলা চলে। হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে পিঠের দিকের একটা ছবি আর ফেসবুকেও তেমন একটা ছবি আর কিছু লেখা। প্রথমবার দেখার পর অদ্ভুত একটা ইচ্ছে হলো “তাঁকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিই,তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি”। সে একটা সম্পর্কে আছে জেনেও আমার ওই ইচ্ছে তখনো গায়েব হয়নি। কিছু না,কিচ্ছু না শুধু ওর চোখ গুলো দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। হয়ত তার চোখে আমার মৃত্যু দেখবো বলে।।
তাঁকে জানতে শুরু করে জানলাম তার একটা ইবাদতের মতো প্রেম আছে,তার আরো অনেক গুলো প্রাক্তন আছে। সে কোন সম্পর্কে স্হায়ী হতে পারেনা। সে স্মোক করে,ডিঙ্ক করে, উড়নচণ্ডী, বেখেয়ালি, উদাসীন। তার কোন ইমোশন কাজ করেনা,মানুষের প্রতি কোন প্রকার দয়া তার নেই। সে জানালো এবং আমি জানলাম সে এমন একজন মানুষ যাকে কোন ভাবেই “আমি” পছন্দ করতে পারিনা। আমি তার আইডিতে গিয়ে তার প্রাক্তনদের নিয়ে লেখা,তার বর্তমান প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা গুলো পড়তাম। বুঝার চেষ্টা করতাম। খেয়াল করলাম আমার মধ্যে ঈর্ষা কাজ করছে। দু-এক দিনেই! অবাক হলাম নিজেকে দেখে। আমি দুর্বল হচ্ছি দেখে। আমি পালাতে চাইলাম। তাঁকে ব্লক করলাম,তাঁর নাম্বার ডিলিট করলাম। সে কারণ জানতে চাইলো। বললাম মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। আমি মায়া, সম্পর্ক এসবে ভয় পাই। থাকতে পারলাম না। নিজেই আনব্লক করলাম। নিজের সাথে যুদ্ধ করছিলাম। আপু আমার অস্হিরতা দেখে প্রশ্ন করছিলেন। আমি তাঁর সামনে থেকেও পালাচ্ছিলাম। আমি আজীবন পালিয়ে এসেছি। পনেরো বছর বয়স থেকে পালাচ্ছি। যখন নিজেকে জেনেছি,যখন জেনেছি আমি মেয়ে হয়ে মেয়েদের প্রতি আকর্ষন অনুভব করি। আমি তাঁর থেকে পালাতে পারিনি।
রুটিন বদলে গেলো। পড়ার,খাওয়ার, কাজের,আড্ডার। যে বই পড়ি বলে তার সাথে কথার শুরু সে আসার সাথে সাথে বইয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব ঘুছলো। অফিস কামাই দিতে লাগলাম। বাড়িতে যাওয়া কমিয়ে দিলাম, কারণ ওর সাথে কথা বলতে পারিনা বাড়িতে গেলে। তার সাথে সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে লাগলো। আমি পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা হতে শুরু করলাম। সম্পর্কের পনেরো দিনের মাথায় আমি ব্রেকাপ করলাম। নিজের দায়িত্ব মনেপড়ে গেছিলো। আমার বিয়ে,বাচ্চারা,ভাই-বোন বাবা-মা,আপুর প্রতি দায়িত্ব। আমার চারপাশের এতোগুলো মানুষ,যাদের জীবন আমি কেন্দ্রীক,সবার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো। পনেরো দিনই আমাদের উথাল-পাতাল প্রেম ছিলো। সে তার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে বলেছিলো “তার সাথে ওরকম সম্পর্ক নেই এবং সে যে আমার সাথে কথা বলে এটা তার গার্লফ্রেন্ড জানে এবং সেটা কোন স্ট্যাবল সম্পর্ক না…ব্লা ব্লা ব্লা।” পরে জেনে ছিলাম ভুল তথ্য। যাই হোক, এরপর তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হলো। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হলো কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য আমার তার প্রতি কোন নেতিবাচক চিন্তা আসলো না। আসার সুযোগ ছিলো না। সে জানিয়েছিলো তার স্বভাব এমন৷ সে এভাবেই জাম্প করে। সব জেনে আমার যৌক্তিক মন তাঁকে অপরাধী ভাবতে পারেনি। ফাঁকি বাজি হয়ে গেলো না? ওর সব ব্যাপারে আমার মন আবেগী আর এখানে যৌক্তিক। আমার আপু বলেন ওর ব্যাপারে আমি পক্ষপাতিত্ব করি। আমিও এখন স্বীকার করে নিই। জানি করি।
প্রায় একযুগ থেকে আরেকজন আমাকে ভালোবাসে।দশ বছর আগে একজন দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে চলে এসেছিলো সব ছেড়ে আমার সাথে থাকবে বলে। একজন ছিলো যে আমার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো।বলতো “আপনার পাশে থাকলে আমি জুঁই ফুলের গন্ধ পাই অথচ দেখুন আশপাশে কোন জুঁই ফুলের গাছ নেই।” আমি তাদের কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। তাদের কারো প্রতি কোন ফিলিংস আসেনি কখনো। বিন্দু পরিমানও না। কেউ একজনের প্রতি একবিন্দু পরিমান অনুভূতি আসলেও আমি তাঁকে ফিরিয়ে দিতাম না। যাকে আমার ভাগ্যবিদাতা বলে সম্বোধন করেছি, আমি তার সব কথা, সব সিদ্ধান্ত, সব আদেশ চুপচাপ মেনে নিতাম। কখনো তার অপোজ করা আমার সাধ্যের বাইরে ছিলো। পারতাম না কিন্তু তার প্রতি আমার কখনো প্রেমের অনুভূতি আসেনি। সে আমাকে ভালো বাসতো। প্রায় এক যুগ থেকে ভালোবেসেছে। আমি ভুল না হলে তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম “কাউকে ভালোবাসা আমাকে দিয়ে হবেনা,ভালোবাসা নামক বস্তু আমার জন্য না,ওই অনুভূতি আমার মধ্যে কখনো তৈরি হয়নি,হবে না।” আমি ভুল ছিলাম। আমি এমন একজনকে ইবাদতের মতো ভালোবাসলাম তাঁকে সে আমাকে এনে দিয়েছে, যার কাছে আমি তাঁর ইবাদতের মতো প্রেম ছিলাম।
আমি ওর সাথে রীতিমতো উড়ে বেড়াচ্ছিলাম। মা,আপু জানলেন। সে জানলো। আমি একজনকে ভালোবাসি। তারা বাঁধা দিলোনা। তাঁকে আমার জীবনে মেনে নিলো তাদের শুধু শর্ত ছিলো “নিজের অনুভূতির প্রতি সৎ থাকবে এবং তাঁকে গোপন রাখবে”__আমি মেনে নিলাম। সব ভালো চলছিলো,ঠিক ছিলো সব। ভাঙনের শুরু হলো তখন যখন সে( আমার ভাগ্যবিধাতা) আমার জীবন থেকে চলে গেলো। বুঝতে পারছিলাম ভাঙছিলো,ক্ষয় হচ্ছিলো। আমি ঠিক করার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আর সে তার উদাসীনতার চরম রূপ আমাকে দেখাচ্ছিলো। তার পরীক্ষা,পড়াশোনার এসব। এসব অজুহাত ছিলো না,সত্যিই ছিলো এসব। আরেকটা সত্যি ছিলো যেটা আমি জানতাম কিন্তু ঠিকঠাক জামতাম না। জেনেও আমার কিছু করার ছিলোনা অবশ্য। সে তার প্রাক্তনের সাথে কথা বলছিলো তখন। সেই প্রাক্তন যাকে সে তার জীবনের সত্যিকারের প্রেম বলে দাবী করে। সাধারণ কথাবার্তাই কিন্তু ঠিক হয়নি বালাটা। আমাকে পুড়াচ্ছিলো তবে তার কোন কিছুতে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা আমার তখনো ছিলোনা, এখনো নেই।
আমার ভালোবাসা একতরফা ছিলোনা। ও আমাকে ভালোবাসেছে। যতটা আমি বাসি ততটা বা তার চেয়েও বেশি। ওই মুহুর্তের জন্য সে আমাকে ভালোবেসেছে। আমার জন্য তার ওই মুহুর্তের অনুভূতি গুলো সত্যি ছিলো। নয়ত আমার তার সাথে কাটানো সময় গুলোতে নিজেকে এতটা জীবন্ত লাগতো না। প্রথম প্রেম বা একমাত্র প্রেম বলে কিছু হয় কি-না আমার জানা নেই এখনো। কাল হয়তো আমার হার্টও অন্য কারো জন্য বিট করতে পারে। একদিন সে জানালো তার প্রাক্তন ফিরে এসেছে। সে থাকতে পারবে না,তাঁকে যেতে হবে। জানতাম আটকাবো না,আটকাইনি কিন্তু চাচ্ছিলাম থেকে যাক। সে তার মতো চলে গেলো। আমি ভাঙবো না, ভাঙবো না করেও ভেঙে গেলাম। খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেলাম। কারণ ওর চলে যাওয়া না শুধু আরো একটা কারণ ছিলো। আমি মানসিক কষ্ট সম্পর্কে পরিচিত ছিলাম না বলে। আমি বুঝতেই পারিনি কিভাবে সমালাবো। বুঝতেই পারিনি কিভাবে রিএক্ট করবো। বাবার অসুস্থতা,বিজনেসে লস, কিছু ফ্যামিলিগত প্রবলেম সাথে তার চলে যাওয়া আমাকে গুঁড়িয়ে দিলো। প্রায় তিন মাস আমি পুরো পৃথিবী থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। নেশায় ডুবে ছিলাম। তাঁকে ভুলতে আরেকজনের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করলাম। ওই মানুষটাও আমাকে ভালোবাসে। সাতাশ দিনের মাথায় আমার তাঁকে জানানো লাগলো “আমি পারবো না,আমাকে দিয়ে হচ্ছে না”। এর ওর নাম্বার থেকে তাঁকে কল করতাম। মেসেজ করতাম ব্লক লিস্টে জেনেও। পড়েনা জেনেও। সব নষ্ট হচ্ছিলো। বাচ্চারা সাফার করছিলো। আমাকে ভয় পেতে শুরু করেছিলো। আপুকে কষ্ট দিচ্ছিলাম। মা কষ্ট পাচ্ছিলেন। বাবা চিন্তা করছিলেন। একদিন খুব ভোরে মনে হলো আর নিশ্বাস নিতে পারছিনা। চলে গেলাম নদীর পাড়ে। পানিতে পা নামিয়ে মনেপড়লো আমি কী করছি! আমি আপু বাবা মা’র জন্য বেঁচে থাকতে পারি। আমি আমার ইশ্বরদের জন্য বাঁচতে পারি৷ ফিরে আসলাম। তাঁকে এক এক করে মুছতে শুরু করলাম। তার চিঠি,টি-শার্ট পুড়িয়ে ফেললাম,ছবি ডিলিট করলাম। পুরাতন মেসেজ,তার নাম্বার সব। সব মুছে ফেললাম। অফিস যেতে শুরু করলাম। বাবা-মা বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে লাগলাম। একটু একটু করে সব ঠিক হচ্ছিলো।
প্রায় মাস খানেক পর একদিন জানলাম,সে আমার সব মেসেজ পড়তো। অপেক্ষা করতো মেসেজের জন্য। শান্তি পেলাম,আপুর ভাষায় ইগো সেটিসফাই হয়েছিলো আমার। কিন্তু আমি জানি এটা সত্যি না। ওর সাথে আমার কখনো ইগোর খেলা ছিলোই না। ইগো হলে ও যখন আমাকে ছেড়ে গেলো,তখনই আমি তাঁকে ভুলে যেতাম। যখন জানতে পেরেছিলাম আমাকে বলা ওর মিথ্যা গুলো, তখনই ওঁকে ভুলে যেতাম। তার সব অন্যায়, অপরাধ ছাপিয়ে আমি তাঁকে ভালোবেসে যেতাম না। সত্যি বলছি আমি যদি ওকে ভালো না বেসে থাকতে পারতাম তাহলে কখনো ভালোবাসতাম না। আমি তাঁকে ভালো না বেসে থাকতে পারিনা,তাই ভালোবাসি। মজার ব্যাপার হলো ও কষ্ট পেলে কোন এক ভাবে আমি বুঝতে পারতাম। জানিনা কি হতো,আমার যখনই মনে হতো ও ভালো নেই,ও তখন সত্যি ভালো থাকতো না। ও আসলেই ভালো ছিলো না। ওর ইবাদতের মতো ভালোবাসার সাথে ও ভালো ছিলো না। আমি কষ্ট পেতাম,ও ভালো ছিলোনা বলে আমি কষ্ট পেতাম। আমাদের কন্টাক্ট তো ছিলোনা কিন্তু কানেকশনটা রয়ে গেছিলো। তাই তো ছয় মাস পরে যখন আমাদের প্রথম কথা হওয়ার স্মৃতি স্মরণ করে আমি ওকে কল দিলাম,মনেই হয়নি আমরা ছয় মাস পর কথা বলছি। মনেই হয়নি আমরা আলাদা,মনেই ছিলোনা আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
জানলাম সে বিরতি নিয়েছে তার গার্লফ্রেন্ডের থেকে। জানলাম সে আসলেই ভালো ছিলোনা। আমরা সেদিন সারারাত কথা বলেছিলাম। মজার ব্যাপার হলো সে মাত্র একবার বললো আমি তার প্রাক্তন,তাও মজার ছলে। বুঝতে পারছিলাম তার আমাকে প্রাক্তন বলতে বাধছিলো। “ভালোবাসি” বলার জন্য মরে যাচ্ছিলো কিন্তু বলতে পারছিলো না। আর আমি তার অবস্থায় খুশি হয়ে,মজা পেয়ে মিটিমিটি হাসছিলাম। তার মনে হচ্ছিলো সে আজ অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুমাবে আর আমার মনে হচ্ছিলো দীর্ঘ মান অভিমানের পালা শেষে এখন প্রেম হচ্ছে। ওর প্রতিটা কথা,দুষ্টুমিতে আমার অভিমানের পাহাড় গলে গলে যাচ্ছিলো। ছাই চাপা প্রেম মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিলো। চাপা না আসলে,আমাদের মধ্যের প্রেম কখনো চাপা পড়েনি। আমি তাঁকে আমার অনুভূতি লিখেছি,সে পড়ে মনে মনে জবাব দিয়েছে। আমার মন হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছে নয়ত দ্বিতীয়বার লিখতাম না। আমি ওকে কখনো ঘৃণা করতে পারিনি,আসেনি। শুরু থেকে ওর প্রতি আমার যা এসেছে সেটা ভালোবাসা।
আমার মায়ের ওকে পছন্দ,আমি বুঝতে পারি সেটা। কেনো পছন্দ জানিনা,আমার ভালোবাসা বলে না কি ও আমাকে ভালো রাখতে পারে বলে! কখনো জিগ্যেস করা হয়নি। সাহস হয়না। মায়ের সামনে তার নাম নেওয়া বারণ। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে খবর নেন, সে কেমন আছে। আমি তাঁকে কখনো বলিনা। তারা কেউ কখনো কারো সাথে কথা বলেনন না কিন্তু দু’জন দু’জনকে পছন্দ করেন। আমি এই ব্যাপারটায় মজা পাই। আমি ওর থেকে ছয় মাস আলাদা ছিলাম। ওই ছয় মাস আমার নিজেকে মৃত মনে হতো। রোবট টাইপ। এখন ভালো আছি। ওর সাথে আছি। হ্যাঁ সে ফিরে এসেছে। আমরা এক সাথে আছি। ও আমাকে ভালোবাসে, আসলেই ভালোবাসে। আমি যতটা বাসি ততটাই বা তার চেয়েও বেশি তার ভালোবাসার ধরন একটু আলাদা। আমার বাবার মতো। ওই যে সে একটু উদাসীন। ভালো না বাসলে সে আমার সাথে থেকে ভালো থাকতো না,শান্তি পেতো না। যেমন টা আমি পাই। আজ আমরা আবার এক সাথে আছি,দুজনেই দুজনের সাথে থাকতে চাই। আমাকে নিয়ে সে তার এক বন্ধুকে বলেছিলো “এমন প্রেম বহুজন্ম হয় না”। আমি তার তেমন প্রেম। পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের কতদিন এক সাথে থাকতে দেবে জানিনা। ওর অনুভূতি আমার জন্য কতদিন থাকবে আমি সেটাও জানিনা। আমি ওর সাথে থাকতে চাই। যতদিন আমি জানবো আমি ওকে ভালোবাসি আমি ততদিন ওর সাথে থাকতে চাই। যতদিন ও আমাকে ভালোবাসবে আমি ওর সাথে থাকতে চাই।
আমি আমার গল্প লিখলাম, সে হয়তো কখনো তার গল্প লিখবে।
Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)