বিদেশ যাও গিয়া

বাংলাদেশে সমকামী অধিকার নিয়া আর্টিকল লেখা হইলেই কমেন্টস সেকশনে দেখবেন মাইনষে নানা জাতের গালিগালাজ, সমকামীদের অত্যাচার কইরা হত্যা করবার বিচিত্র সব উপায়ের আইডিয়া আর হাদিস শরীফের উদাহরণ (যা দুনিয়া আর পরকালের ভয়ানক নানবিধ শাস্তির কথা উল্লেখ করে) লেইখা এক্কেবারে ভইরা ফালাইছে। এর মইধ্যে আবার আরেক জাতের কমেন্টও আছে, সেইটা হইলো “বাংলাদেশে ‘এইসব’ চলবে না, ‘এইসব’ করতে চাইলে বিদেশে গিয়া করেন।”

আমি গালিগালাজ নিতেও পারি, দিতেও পারি। বর্বর অত্যাচার আর খুনের হুমকিও আমার অতটা গায়ে লাগে না। কিন্তু “বিদেশে যাও গিয়া” কমেন্টগুলা দেখলে মাথায় এক্কেবারে রক্ত চইড়া যায়।

বিদেশে যাইবার ট্যাকা আমারে কি আপনের বাপে দিবো? নাকি ভাবছেন আমরা সবাই জমিদারের আণ্ডাবাচ্চা? কান্ধে ট্যাকার পুট্টলি লইয়া ঘুরি? যে কান্ধে থাইক্কা পুট্টলি নামাইমু আর ভিসা আর পাসপোর্ট কিইন্না আপনারে শান্তি মতো রাইখা বিদেশ পাড়ি দিমু? নাকি ভাবছেন যে আমরা  সবাই বাংলা সিনেমার নায়ক জসীম? দুইদিন ফেরিওয়ালাগিড়ি কইরা আর সিএনজি চালাইয়া পরের দিন লাখপতি হইয়া যামু?

এরা আবার মাইঝে মাইঝে সংস্কৃতি মারাইতে চায়, “ইহা সব সমপ্রেম হয় গ্রামবাংলার সংস্কৃতি বিরোধী! সমপ্রেম পশ্চিমা সংস্কৃতির ফসল! আর আমি হই বিরাট দেশপ্রেমী!”

অরে আমার নবাব সিরাজউদ্দৌলা, তুমি সিরাজউদ্দৌলা হইলে আমি আলীবর্দি খাঁ। সমপ্রেম পশ্চিমা সংস্কৃতি না, সমপ্রেমভীতী হইলো পশ্চিমা সংস্কৃতির ফসল। Homophobia হইলো পশ্চিমা সংস্কৃতির ফসল। অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক আর শোষকের দল ১৮৬০ সালে বাংলার মাটিতে সমকামীতারে বেআইনী বানাইছিলো, এর আগে বাংলায় সমকামীতা বেআইনী আছিলো না। আমার কাছে আইসো না তুমার সংস্কৃতির অজুহাত লইয়া! আমরারে ঘিন্যা করো বইলাই তুমরা আমরারে ঘিন্যা করো, নাহইলে ফেইসবুক ইন্টারনেট ব্যবহার কইরা আর শার্ট প্যান্ট পইরা আর বিদেশী গান হুইন্না আর মুভি দেইখ্যা দিন কাটাও যে তুমি, সেই তুমি ধর্ম আর সংস্কৃতির অজুহাত ব্যবহার করতা না আমারার অস্তিত্বের বিরুদ্ধে।

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia )

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.