ভালোই আছি গো প্রিয়

আমি গুছিয়ে লিখতে জানি না শুধু মনের কথাটুকুই জানালাম, ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখলে খুশি হব।

প্রথমত আমি একজন মানুষ। 

আমার বয়স ২২ বছর। আমি বায়োলজিকালি একজন মেয়ে। কিন্তু আমার মন আর মস্তিষ্ক আমাকে কখনোই একজন মেয়ে হিসেবে মেনে নেয়নি। আমি নিজেকে ছেলে হিসেবে ভাবতে থাকি অনেক ছোটবেলা থেকেই। আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় একবার বেড়াতে যাবার সময় আমাকে মেয়েদের জামা পড়ানো হবে আর আমি সেই জামা না পড়ার বাহানা হিসেবে বলেছিলাম “মেয়েদের জামা পড়ে বের হলে মানুষ আমাকে দেখে হাসবে।” এটা ছিলো আমার প্রথম পদক্ষেপ নিজেকে ছেলে বলে জাহির করার।

শারীরিক পরিবর্তন আসার আগ পর্যন্ত দিনকাল ছেলেদের মতই যাচ্ছিলো। সমস্যা হলো পরিবর্তন আসার পরেই, ধরা বাধা নিয়মের মাঝে আটকে দেওয়া হলো আমাকে। মেয়েলি পোশাক পড়তে হবে, চুল বড় রাখতে হবে, অঙ্গভঙ্গি মেয়েদের মতো করতে হবে, যেকোনো অনুষ্ঠানে সো কলড সাজ সাজতে হবে। যা আমার মনের বিরুদ্ধে। 

বলা হয়নি, আমার পরিবার যে খুব একটা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে ঠিক তেমনটাও সেই সময় ছিলো না, তবে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে ভয় করে (নামে মাত্র মুসলিম)। সকলের কথা মেনে চলার চেষ্টা করতে লাগলাম। এইভাবে ক্লাস ৭ থেকে অনার্স ১ম বর্ষ পর্যন্ত নিজের ধৈর্যের প্রমাণ দিলাম। হাই স্কুল এর পর আমার কলেজ গার্লস কলেজ হওয়াতে ইন্টার ২য় বর্ষে থাকাকালীন একজন মেয়ে ব্যাচমেট এর প্রেমে পড়ে যাই। তাকে নিজের ব্যাপারে সবকিছু জানানোর পর সে জানায় তার আংটি বদল হয়ে গেছে একজনের সাথে, তাই তার পক্ষে সম্ভব না আমাকে গ্রহণ করা। তার কাছ থেকে এমন কিছু শুনতে পাবো কল্পনাতেও ছিলো না। তার কথা শোনার পর যে তার থেকে দূরে সরে যাবো সেই উপায়ও ছিলো না। মস্তিষ্ক তার থেকে যত দূরে থাকতে বলতো মন তার থেকেও হাজার গুন বেশি থেকে যেতে বলল। আমিও তখন মনের কথাই শুনলাম। থেকে গেলাম, তাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম যে আমি শুধু প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই তাকে ভালবেসে ফেলেছি। একটা সময় পর তাকে আমার ভালবাসা বুঝাতেও সক্ষম হলাম। সময় গুলো ভালই যাচ্ছিলো, এভাবে ২ বছর কেটে গেলো অনার্সে আমরা এক ভার্সিটি এক সাবজেক্ট একই ডিপার্টমেন্টে এডমিশন নিলাম। এভাবেও এক বছর ভালোই চলল, ঝামেলা হল ২য় বর্ষে গিয়ে। একদিন ফোন করেই বলে দিলো সে আর আমাকে ভালবাসে না। এটা শুনে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি কথাটা ঠিক শুনেছি। সেদিন অনেক বুঝার আর বুঝানোর চেষ্টা করেও আমি সফল হইনি। পরদিন তার বাসায় গিয়ে তার পা ধরে নিজের ভালবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলাম, আমার চোখের পানি, আমার আকুতি,  মিনতি কোনোটাই সেদিন তার মনকে গলাতে পারেনি। সে আমার কারণে জাহান্নামি হতে চায় না, এটাই ছিলো তার শেষ কথা। 

ভাঙা মন নিয়ে তার অপেক্ষায় আরো এক বছর কাটিয়ে দিলাম কিন্তু তার মন গলেনি। মাঝের সময়টুকু তার কথা ভেবে নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে রোগ বাধিয়ে ফেললাম। চিকিৎসা করে সুস্থ হবার পর ভাবলাম নিজের জন্য ভাবতে হবে। ধরা বাধা নিয়মের বাহিরে বের হয়ে পুরোনো আমিতে ফেরত গেলাম, মেয়েলি ভাব ভঙ্গি ছেড়ে নিজের পছন্দ কেই গুরুত্ব দিলাম। 

এখনো আছি নিজের মতই, এখন সমস্যা হচ্ছে আমার এমন বেশভূষা আমাদের ধর্ম ইসলাম সাপোর্ট করে না এটা নিয়ে। বায়োলজিকালি আমি একজন মেয়ে হয়ে কেন এমন বেশ ধারণ করবো সেটা নিয়ে। আমার নিজেকে নিয়ে নিজের যতটা না সমস্যা তার চেয়ে বেশি সমস্যা আমার আশেপাশের মানুষদের। 

আমি এখন নিজের পছন্দ কেই বেশি গুরুত্ব দেই, কে কি বলল না বলল জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। তবে তার কথা মনে পড়লে বুকের ভিতরটা খালি খালি লাগে আর চোখ ফেটে কান্না আসে। ভালো থাকবে বলেই তো ছেড়ে যাওয়া সেটা হোক ইহকালে অথবা পরকালে,  আমি দুআ করি সে সর্বাবস্থায় ভালো থাকুক।

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.