ভালো আছি

আমি একজন মেয়ে…. কিভাবে কি শুরু করবো বুঝতে পারছি না…!

আসলে কি নাম দিবো এইটার জানা নেই…

বলে কিছুটা হালকা হয়ে নিচ্ছি!

১০মাসে নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলি এখন!

যাইহোক শুরু করা যাক।

২০১৯ জানুয়ারিতে চুল কেটে ফেলি…একদম ছেলেদের মতো করে!

তখন হোস্টেলে থাকতাম।

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় চুল একটু কেটে আসি।

হোস্টেলে ডুকে দেখি একটা মেয়ে বসা…পিচ্চি পিচ্চি দেখতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি অতো গুরুত্ব দেই নি।

গোসল করে এসে আপুদের সাথে বসলাম ডাকা-ডাকি চলছিল।

যে মেয়েকে দেখলাম,তার পরিচয় হলো আমার ফ্ল্যাটমেট এর বয়ফ্রেন্ড এর ছোট বোন।

আমার থেকে সে ২বছরের বড়।

দেখে মনে হইনি তখন 

তার নাম ছিল অথি(ছদ্মনাম)…

ঘুরতে আসে আমাদের হোস্টেলে.. বিকেলে আবদার করে তাকে নিয়ে ঘুরার জন্য।

সারারাত আপু & অথি, আমি আড্ডা দিতাম..

সিগারেট খাওয়া জানতাম না। প্রায় প্রায় খুব কাছে এসে বুকের কাছে মাথা রাখতো… তখনি কেমন বুকটা ধড়ফড়ানি শুরু করে দিতো।

সে বলতো “জানটা বের হয়ে যাবে তোহ”।

আমি তখনো বুঝতাম না কেন এমন হতো।

তার পরেরদিন ঘটনা..

রাতে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস ছিল ঠান্ডা বাতাসে মনকে ঠান্ডা রাখার জন্য।

সে ছাদে আসে..

আমি গায়ে চাদর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম..

তখন অথি এসে বলে,”আমার শীত করছে জড়িয়ে ধরো”।

কেমন যেন আজব লাগলো।পরের দিন সে চলে যায় বাসায়…

২-৩দিন আপু আমাকে ওদের বাসায় নিয়ে যায়।

খুশিতে সে আত্মহারা হয়ে যায়…জড়িয়ে ধরে সবার সামনে।

তখনো আমি বুঝিনি।

ওইদিন রাতে সেক্সুয়াল টাচ করার ট্রাই করলে আমি বাধা দেই কারণ তার বিএফ আছে।

পরেরদিন আমাকে সরি বলে।

আমি ইগ্নোর শুরু করি…আর ও বার বার আমার কেয়ার করা শুরু করে। সে তার বিএফ এর সাথে সম্পর্ক শেষ করতে চাচ্ছিল…

আমি বললাম,”দেখো… কেন শুধু শুধু কেন কষ্ট দিতে যাচ্ছো?এরকম টা কইরো না…আমি তোমার লাইফে আসতে চাই না এভাবে”।

অথি বলে যে,”আমি রাতুল কে কখনো ভালোবাসিনি।এইটা শুধু ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রোপজ এক্সসেপ্ট করি”।

মে মাসে অথি রাতুলের সাথে সব শেষ করে।

তারপর  আস্তে আস্তে কেমন যেন দূর্বল হতে থাকি

কিন্ত তার প্রতি কেমন যেন মায়া কাজ করতো কারণ এরকম করে আমাকে কেউ ভালোবাসেনি….পরম আদরে আগলে রেখেছিল।।।যা চাইতো সবই দিতাম।এমন কিছু নাই যে দেই নি।।আমি নিজের জন্য ১০টাকা খরচ না করে ওর জন্য খরচ করতাম..যেন ওর কষ্ট, কমতি যেন না পড়ে।

কারণ বাবা নেই তার ছোট থেকে।

সে এপ্রিল মাসে এক্সিডেন্ট করে..২০দিন আমার হোস্টেলে থাকে…খাটে থেকে পা নামতে দেইনি…কোলে করে নিয়ে যেতাম বাথরুম পর্যন্ত..শুধু তাই নই,আমি তাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতাম……

সব ঠিক চলছিল…

ঝড়টা আসে আমার জন্মদিনের দিন জুলাই ৭তারিখ আমার জন্মদিনে ওর বেস্টফ্রেন্ডের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা  অথি সাথে।

ছেলেটার নাম হচ্ছে রাকিব।

রাকিব তখন একটা মেয়ের পিছনে কুকুরের মতো ঘুরতো চোখের।

ওই মেয়ে পাত্তা না দিলে  অথির বান্ধবীর উপর লাইন মারে।অথির বান্ধবী যখন পাত্তা দেয়নি তখন অথিকে লাইন মারে… আমি তখন ধানমন্ডিতে খালার বাসায় যাই…

আমি দূর থেকে পারতাম না যখন তখন ঘুরতে নিয়ে যেতে…

আমি ওই রাকিব কে বলি দেখোতো,ওদের এলাকাতে যাও ওর মন খারাপ।

আমি কি জানতাম আর? 

রাকিব প্রোপজ করে অথিকে। 

সাথে সাথে এক্সসেপ্ট করেও ফেলে। 

তারপর আমাকে ছবি পাঠিয়ে  অথি আমাকে বলে যে,কেমন হয়েছে?

আমি বললাম ভালো।

আমি ডিপ্রেশন এ চলে যেতে শুরু করি ১মাস টানা বিছানাতে ছিলাম, খেতে পারতাম না,hallucination এ ভুগছিলাম।

২দিন পর পর মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া হতো।

চোখের পানি সারাদিন রাত পড়তে পড়তে  ঘা হয়ে যায়। টেনশন এ খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়…

বমি আসতো…আমাকে ছেড়ে গিয়েছে…বলে যে আমাকে সে কখনো ভালোবাসেনি…সে আমাকে ছোট বোনের মতো দেখেছে 

আমার তখন বলার মতো ভাষা ছিল না 

তারপর ধানমন্ডি থেকে এসে আগে ওর বাসায় যাই..সেখানেও ওই রাকিব ছেলেকে দেখতে হলো…চোখের সামনে হাত ধরছে তার,কোমর ধরছে তার।

আমি রিয়েক্ট করলেই অথি আমাকে চড় মেরে বসে।

আমি আবার যখন অথিকে ভুলার জন্য  দূর হতাম তখন কেমন যেন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতো।এবং বলতো…আমি রাকিবের সাথে এই করবো..ঐ করবো।

রাকিব প্রতিদিন অনেক টাকার গিফট করতো…

আমি তখন পারতাম না।

ওর চাহিদা বাড়তে থাকলো।

আমি?

দিন দিন অবহেলা জায়গায় পড়লাম।

কত হাতে পায়ে পড়লাম…ওকে ছেড়ে দাও…

তুমি না আমাকে ভালোবাসছিলে?

আমি অনেক ভালোবাসি…

যা চেয়েছিলে কষ্ট হলেও দিয়েছি।

অনেক সুখি রাখবো।

কিন্তু সে একদিন ব্রেকাপ করতে গিয়েছিল…

ব্রেকাপ করে আমার সাথে আসছিল…

অথি বললো,”তুমি বলেছিলে ছেড়ে দিতে…নাও ছেড়ে দিলাম”

তারপর বললো,”আমার একটা হেডফোন লাগবে…”

পরের দিন সকালে অথি ঘুম থেকে উঠার আগে যাই…

পাশে হেডফোন টা রেখে দিলাম তার মাথার কাছে।

হাতে ফোন নিলাম ওর হঠাৎ দেখি রাকিবের মেসেজিং… রাতে রাতে সব ঠিকঠাক।

আমি আর আমি নাই তখন 

অথি ঘুম থেকে উঠে এমন একটা ভাব করলো যে, রাকিব তার লাইফে নাই।

পরে  সে গ্রামে যাবে তার আগে বললো,রাকিবের সাথে ফাইনাল বিদায় নিবে…

আমাকে ফোন করে আনে আমার সাথে দেখা করবে।।

গিয়ে দেখি প্রোপজ কার্ড নিয়ে লাইনে করে ছেলে মেয়ে দাঁড়ানো… বড় ফুলের তোড়া দিয়ে প্রোপজ করলো।

অথিও এক্সসেপ্ট করলো।

আগস্ট মাসে  ৮তারিখ প্রোপজ। 

চোখে সানগ্লাস, মুখে মাস্ক…অজস্র চোখের পানি ঝরছিল।

সারাদিন সাথে রাখলো।

তারপর থেকে আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার শুরু করে।

জুন মাসে হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে বাসা থেকে ক্লাস শুর করি।

সেপ্টেম্বর মাসে অথির বান্ধবী জন্মদিনে দাওয়াত করে…আমাকে,সাথে রাকিবও…

রাকিব আমার নামে ওইদিন রাতে একটা মিথ্যা কথা চাপানো চেষ্টা করে…রাগে

চলে আসার সময় সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যায় আমার তখনো বুঝতে পারিনি…

আমি যখন ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছিলাম না আমি রক্ত দেখিনি সবাই ২জন রক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়…৫সেলাই লাগে মাথায়।

তারপর কথা উঠে আমি নাকি ড্রাংক ছিলাম…

যেখানে আমি কখনো মদের সুবাস টাও কেমন সেইটা বলতে পারি না।

তারপর ২-৩দিন ভালো ব্যবহার করার পর আগের রুপ দেখানো শুরু করে…

ইগ্নোর, বাজে ব্যবহার….

টাকা, জিনিস পাওয়ার পর আমি কে সে চিনতেই পারতো না।

২০২০ জানুয়ারি তে আমার ফ্ল্যাটমেট আপুর মাধ্যমে চাকুরী পাওয়ার পর তার রঙ পাল্টাতে শুরু করে…আমার একটা বিষধর সাপ ফ্রেন্ড আসতো…তার বিএফ থাকা সত্ত্বেও আমার সাথে ক্লোজ হওয়ার ট্রাই করছে।।একদিন আমার আম্মকে ফোন করে বলে যে, আমি নাকি রাতে তার সাথে কিস করার ট্রাই করি…

আকাশ  ভেঙে পড়লো মাথার উপর।

তারপর আমার ফ্ল্যাটমেট আপুদের কাছে গিয়ে বলেছে আমি নাকি আপুদের নামে বাজে কথা বলি…ওই ফ্রেন্ড আর আপুরা মিলে অথিকে ডাকে…এবং বলে যে,আমি নাকি অথির নামে বলেছি যে অথিকে আমি চালাই আমার টাকাতে, আমি খোটা দিয়েছি নাকি…আর শারীরিক সম্পর্ক করেছি…এগুলো…

অথি ভালো মতো জানতো যে… আমি এগুলা বলার মতো মানুষ না…

তবুও সে ফোন করে আমার আম্মুর সামনে আমার মাকে তুলে গালি দিয়েছে….

কথা হলো যে,,,যেকোনো একটা বাহানা পেয়েছে সব শেষ করার।

আমি একবার explain msg kori…

tarpor সে আমাকে block and amio block dei…February 7tarikh er por r konodin nije chesta kori ni…

ওনেক তোহ হয়েছে হাতে পায়ে ধরে রাখার..আর কত?

আমিও আর তাকাইনি ওর দিকে…

১০মাস চলছে তোমাকে ছাড়া অনেক ভালো আছি।

ভালো করেছো চলে গিয়ে!

 যেদিন তুমি অন্যের কথা শুনে,সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছো! 

সেদিন থেকে তোমাকে জীবন থেকে বিদায় দিয়েছি।

তুমি আমার জীবনের একটা অভ্যাস ছিলে।

আমি পারতাম তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।

কিন্তু তুমি তোহ আমার পিছু ছাড়াতে চেয়েছিলে!

জোর করে করে হাতে পায়ে ধরে তোমাকে কত বেঁধে রেখেছিলাম আমাদের বন্ধনে।

লাভ কি হলো?

শুধু শুধু আমার আত্মমর্যাদা তোমার জন্য সবার কাছে বার বার হারিয়েছি!

কি সুন্দর করে বলেছিলে, “তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি!

তাই,আমি ওর সাথে সম্পর্ক করেছি!”

তুমি নেই আমার অভ্যাসে!

তুমি নেই আমার জীবনের অস্তিত্বে!

স্মৃতি নিয়ে পার করতে পারি!

তবে তোমাকে আর চাই না!

🥀

এখন আর ছেলেদের মতো চুলে নেই আমার… সমাজ,বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সাথে যুদ্ধ করি না।

অনেক ক্ষতি করে দিয়ে গেছো প্রিয়তমেষু!

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.