মুখোশ

যতোদিন যাচ্ছে আমার রাগ ততোই বেড়ে চলেছে। আমার সবকিছুকে দায়ী করতে ইচ্ছা করে। ঈশ্বর থেকে শুরু করে সমাজ-পরিবার-বন্ধু কিংবা চারপাশের যেকোনো অচেনা-অজানা মানুষ, সবাইকে দায়ী করতে ইচ্ছা করে।

আমি জানি না উত্তরগুলো কী? আমার শুধু প্রশ্ন আছে বিস্তর। গুগল খুঁজলে অসংখ্য উত্তর পাওয়া যায় বটে, কিন্তু সমাজ বলে ভিন্ন কথা। পাশের রাষ্ট্র বলে আরেক কথা। কারো কাছে প্রোপাগান্ডা, কারো কাছে রোগ, কারো কাছে এটি প্রকৃতি কিংবা কারো কাছে ভয়ংকর কোনো পাপ। দীর্ঘ বিশটি বছর নিজের সাথে কাটানোর পর যা বুঝলাম তা হলো, আমার রাগ একান্ত আমার নিজের উপরে। নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাভাবিক তাড়না যেকোনো মানুষ অনুভব করে, সেটি আমার কাছে এসে ব্যর্থ হয়েছে বারবার।

কারণ আমি সমাজ থেকে বাঁচতে মুখোশ পরে নিয়েছি। পরতে পরতে লাগিয়ে নিয়েছি মেইল শভিনিজম, চলন বলন পাল্টানোর সাথে সাথে চলে এসেছে পুরুষালি সকল গোঁড়ামি, যা একান্ত নোংরামি আমার কাছে। কিন্তু এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সেসব। স্বরূপ লুকাতে গিয়ে মানুষটাই বদলে গেছি আমি, হয়ে যাচ্ছি আরো নিকৃষ্ট। আর তাতেই রাগ বাড়ছে আমার।

আমিতো কেবল সামান্য কিছু অধিকার চাই, নিজের মতো করে বাঁচবার অধিকার। কারো ক্ষতি করতে চাইনা। কবি হতে চাই, মানুষ হতে চাই, কাউকে ভালোবাসার একান্ত অধিকারটুকু চাই। অতি সামান্য কিছু চাওয়ার পথে কী ভীষণ প্রতিবন্ধকতা আমাদের!

মুখোশের ভিতর দম বন্ধ হয়ে আসে আস্তে আস্তে। তবু চারপাশের বন্ধ হয়ে থাকা জানালাগুলো হয়তো কোনোদিন খুলবে না।

Source: BAH (Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.