
আমি জন্মগতভাবে পুরুষ। নন-বাইনারী, সমকামী।বাচ্চা অবস্থা হইতেই চুল লম্বা রাখার ইচ্ছা ছিলো। আব্বা আম্মা বলতো,”হাইস্কুলে গেলে চুল লাম্বা রাখতে পারবা।”হাইস্কুলে যখন গেলাম, তারা বললো, “কলেজে গেলে পরে চুল লাম্বা রাখতে পারবা।”কয়েক বছর পরে কলেজে যখন উঠলাম তখন সেইটা হইলো, “ইউনিভার্সিটিতে উঠলে চুল লাম্বা করতে পারবা।”এই রকম সময়ে হাল ছাইড়া দিলাম, তাদের বিরক্তি এবং রাগ সত্ত্বেও চুল লাম্বা কইরা ফালাইলাম। কারণ আমি জানতাম ইউনিভার্সিটিতে উঠলে তারা একই ভাঙা রেকর্ড বাজাইবে। আর এরপর আমারে যারা চাকরী দিবে, তারা আমার চুল কাটানোর ব্যবস্থা করবে, কর্মচারীদের জীবন ত্যানান্যানা না করলে এইসব পুঁজিবাদী কুত্তাদের পেটের ভাত হজম হয় না। ঠিক করছি চাকরী অবশ্য করব না। মাশরুম চাষ করবো।প্রথম দিকে অভিভাবক আর শিক্ষকরা চুল কাটতে কওয়া ছাড়া আর কিছু কইতই না। এর পরে আস্তে আস্তে তারাও হাল ছাইড়া দিছে। এখনো মাইঝে মাইঝে রাস্তা দিয়া হাইট্টা গেলে চিনি না জানি না বুইড়া লোকরা থামাইয়া আমারে চুল কাটাইতে কয়। অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার। কোনো একদিন আমি মেয়েলী কাপড় চোপড় পড়া শুরু করবো, নিজের পায়ে দাড়ানোর পর।আমি জানি সবার অবস্থা আমার মতো না। জন্মগতভাবে মাইয়ারা চুল ছোটো কইরা কাটাইলে এই দেশে এমনো পরিবার আছে যারা তারে হুতাইয়া হুতাইয়া মাইরা ফালাইবো। যাই হোক যে জিনিসটা বুঝলাম এই সবের পরে হইলো, আমকে তারা কখনো নিজ থাইক্কা আমাদের জীবন যাপনের অধিকার দিবো না। চুল লম্বা থাকা, ছোট থাকা যার যার ব্যপার, কিন্তু পরিচিত অপরিচিত সবার অমতে যেমনে চুল লম্বা করেছি, মেয়েলী পোশাক পড়া আর পুরুষদের সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়াও তেমনি সবাইর বিপক্ষে গিয়াই করতে হবে । আমারে কখনো আইন বা সমাজ আমার অধিকার দিবো না। এবং আমার অধিকার আইন বা সমাজের উপর ভিত্তি করে না। সমাজ আর আইন যদি আমারে কয় নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করতে, আমি কি আর নিশ্বাস নিব না?
Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)