
১.
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস”
স্কুলে নতুন আসা ইংলিশ ম্যাডামকে যে আমি পছন্দ করে ফেলেছি এইটা বুঝতে আমার দুই দিনও সময় লাগল না। শাড়ি পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ওই অত বড় একটা খোঁপা করে ম্যাডাম যখন লন ধরে হেঁটে আসেন, আমার বুকের ভেতরে তখন ধাক্কা লাগে। গার্লস স্কুলের লনের মাথায় বিশাল বড় একটা ইউক্যালিপটাস আছে। তার নিচে দাঁড়িয়ে উনার জন্য ওয়েট করা হয়ে গেল আমার ডেইলি রুটিন। কামিং আউট হয়নি তখনো আমার। লেসবিয়ান ওয়ার্ডটা মফস্বলের স্কুলে ক্লাস টেনে পড়া আমি জানিও না তখন। কিন্তু আমি বুঝতাম উনাকে আমার ভালো লাগে। উনাকে দেখলে আমার মন অদ্ভূত রকমের ভালো হয়ে যায়। কোন একদিন উনি স্কুলে না এলে আমার দিন কাটতে চায় না।
বান্ধবীরা খেপানো শুরু করলো কিছুদিনের মধ্যেই। তাদের খেপানোতে আমি দমে না গিয়ে উৎসাহিত হলাম। প্রথম সারির স্টুডেন্ট বলে টিচারদের কাছে স্পেশাল আদর সবসময়ই পেয়েছি। আমি গর্ব করে সবাইকে বললাম, “উনাকে পটাতে আমার বেশি সময় লাগবে না!”
অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সত্যি সত্যিই ম্যাডাম আর আমার মধ্যে অসমবয়সী অদ্ভূত এক বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমাদের ক্লাস নেয়ার সুবাদে আমার মুখ চিনতেন উনি। ক্লাসের শেষে ফোন নাম্বার দিতেও আপত্তি করেন নি। কোন এক রাতে হঠাৎ টেক্সট করে বসলাম। উনি কলব্যাক করলেন। সেদিন থেকেই টুকটাক কথা বলা শুরু। আমার পরীক্ষা সামনে। পুরো সময়টা কীভাবে আগলে রেখেছিলেন আমাকে, সেটা বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে কফি খেতে যাওয়া, উনার বাসায় দুপুরে হুটহাট গিয়ে খাওয়াদাওয়া করা, আর দিনের মধ্যে বহুবার ফোনে কথা -এটা রুটিন হয়ে গেছিল তখন। কিন্তু উনি আগাগোড়া স্ট্রেইট। প্রেম করছেন, কয়েকদিন পর বিয়েও করে ফেললেন। আমি হয়ে গেলাম হার্টব্রোকেন রোমিও। কিছুদিন দেবদাসের মত ঘুরাঘুরি করলাম। এরপর একসময় সহ্য হয় গেল সব।
প্রেমটা হত না এই কারণেই। বয়সের ব্যবধান, মানসিকতার ব্যবধান, ওরিয়েন্টেশনের ব্যবধান-সবই ছিল। কমন গ্রাউন্ড ছিল শুধু বন্ধুত্বটা। একজন আরেকজনের সবচেয়ে ছোট্ট ডিটেলটাও শেয়ার করতাম। টালমাটাল আবেগের সময়টায় যত্ন করে উনি আমাকে আগলে রেখেছিলেন। নিজেকে খোঁজার প্রথম পদক্ষেপে তাই উনাকেই সবার আগে দেখি।
বন্ধুত্বটা এখনো অটুট আছে।
(চলবে)
Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)