যে গল্প নিষিদ্ধ

লিখেছেন- সাবিল আহমেদ

ধীরে ধীরে নিজেকে একঘরে করে নিচ্ছি। সমাজের আর দশ জনের মত আমি না। তাদের সাথে আমার পছন্দ এবং অনুভূতির অনেক পার্থক্য। তাই তাদের সাথে মিশতে পারিনা বা ইচ্ছে হয়না। বাস্তব জীবনে অভিনয় করতে কষ্ট হয় অনেক। সব ছেলেরা যখন গার্ল-ফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটায় তখন আমি ছেলেদের নেশায় ঘরে বসে ফেসবুকে পড়ে থাকি। রাস্তায় বের হলে আকর্ষণীয় কোন ছেলে দেখলে প্রবল কাম জাগে মনে। ক্রিকেট খেলা, ফুটবল খেলা আমার ভাল্লাগেনা। বলিউডের কোন মুভি আমার দেখতে ইচ্ছে হয়না। বাংলা কোন নাটক কিংবা সিনেমাও আমি দেখিনা। শুধু গান শুনতে ভালোবাসি। গান আমার কাছে কিছুটা এলকোহলের মত। আমার শরীরে বস্তুত প্রবেশ না করেও আমাকে চলার শক্তি দান করে। গান শুনে আমার শরীরের পশমগুলোও শক্তিতে পরিণত হয়ে জেগে ওঠে। সিনেমা না দেখার প্রধান কারন হচ্ছে আমি সিনেমার কোন চরিত্র বা অনুভূতি বা রোমান্সকে নিজের সাথে সংযোগ বা রিলেট করতে পারিনা।এজন্য সিনেমা দেখতেও আমার ভাল্লাগেনা। যদিও কোন সিনেমা দেখি তবে সেটার নায়ককে আমার প্রচুর ভালো লাগতে হবে। তার শরীরকে আমার চোখে মাদকতা জাগাতে হবে। কিছু সময় তার সাথে নিজেকে কল্পনা করতে ভালো লাগে। তারপর আবার কল্পনার জগত থেকে ফিরে আসি। আমার কল্পনা শক্তি কম। প্রেমের উপন্যাস, সাহিত্য গল্প এসব কিছুই আমার পড়তে ভাল্লাগেনা। কারণটা ওই একটাই, সিনেমা, সাহিত্য ও উপন্যাস আমার কথা বলেনা, আমার অনুভূতির কথা বলেনা। একা থাকতে পছন্দ করি এখন। তাই ঢাকাতে নিজের মত বাসা নিয়ে একাই থাকি। ফ্ল্যাট-মেট বা রুমমেট আমার পছন্দ নয়। কারন কেনো জানিনা নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগি।বাবা মা ঢাকা ছেড়ে যশোরে চলে এসেছেন। তাই আমিও মাঝে মাঝে আসি। বাবা মার উপর রাগ অনেক কিন্তু আম্মার রান্না করা ভালো খাবারের লোভ সামলাতে পারিনা বলে সপ্তাহ-খানেকের জন্যে ছুটে আসি। নিজের এলাকায় আসলে আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই জীবন নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীনও আমাকে হতে হয়। বিশেষ করে আমার খালা এবং মামীদের থেকে আমি দূরে থাকি।কারন তারা দেখলেই আমাকে বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। আর বিয়ের কথা শুনলেই আমার হার্ট-বিট বেড়ে যায় এবং গলা শুকিয়ে আসে।যথারীতি আজকেও খালা এসেছেন। আমি রান্নাঘরে যাচ্ছিলাম তার সামনে দিয়ে, খাবারের খোঁজে। হঠাৎ খালা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন, 

“কি ব্যাপার সাবিল তোর কোন গার্ল-ফ্রেন্ড নেই? ছেলেদের কত প্রেম থাকে।”

আমার হার্ট-বিট ফাস্ট হওয়ার আগে কেমন যেনো বন্ধ হয়ে গেলো, আমি আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । খালা উঠে এবার রান্না ঘরে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। 

“তোকে কোনো মেয়ে বলেনা প্রেম করতে?” 

আমি চরমভাবে বিব্রত। চানাচুরের বয়েমটা হাতে নিতে নিতে বললাম,

” না। “

এই বলে আমি আমার রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। আম্মা বলতে লাগলেন, 

“ও লজ্জা পাচ্ছে।” 

খালা বললেন,

“ লজ্জার কি আছে? ছেলেরা ফ্রিলি কত গল্প করে মা খালাদের সাথে।” 

আমি মনে মনে বললাম, 

“কিন্তু আমার গল্প যে বলা নিষিদ্ধ ।”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.