
মুখবন্ধ
লিখেছেন ফ্লিন রাইডার
আপনারা হয়তো অনেকে জানেন যে, ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল আততায়ীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন কুইয়ার এক্টিভিস্ট মাহবুব রাব্বি তনয় এবং জুলহাজ মান্নান। আজ ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। কুইয়ার তরুণ অনেকই আছে যারা জানে না- ২০১৬ সালে ২৫শে এপ্রিল আমাদের কুইয়ার কমিউনিটির সাথে কি ঘটেছিল। এই ৫ বছরে পরে এমন একটা সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে, যেখানে কিছুটা জানতে পেরেছি তনয় এবং জুলহাজের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পরে তাদের কাছের মানুষদের অনুভূতি কেমন ছিল, তাদের জীবনে কি হয়েছিল। জুলহাজ-তনয়ের আশেপাশের মানুষ পরিচিত যারা বেঁচে আছেন, তারা অনেকেই প্রতি বছর এপ্রিল মাস এলেই সেই স্মৃতির কথা ভেবে মুষড়ে পড়েন। PSTD-সহ নানান রকম মানসিক ট্রমায় থাকেন, অনেকে এই ঘটনা ভুলে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কেউ কেউ মানসিক সেই স্ট্রাগল কাটিয়ে উঠবার ব্যাপারে অনেকটাই সফল,তবে সবাই তেমন সৌভাগ্যবান নয়। নতুন যারা কমিউনিটিতে এসেছে, তারা যখন প্রথমবার হত্যাকাণ্ডের শোনে, তখন এই ঘটনা তাদেরকে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করে। কুইয়ার কমিউনিটিতে তাদের মৃত্যুর সংবাদ সবাইকে ছুয়ে গেছে। আমাদের কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষকে কমবেশি নানারকম সংকট এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, এমনকি আমাদের এলাইদেরকেও নানান ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে দিয়ে যেতে হয়েছে। এই ৫ বছরে কমিউনিটি ধীরে ধীরে সেই কালেক্টিভ ট্রমা থেকে বের হবার চেষ্টা করছে।
২৫শে এপ্রিল শুধু তাদের দুজনের উপর হামলা হয় নি, হয়েছিল পুরো বাংলাদেশের সকল লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর উপর। ২৫শে এপ্রিল শুধু দুজন মানুষের মৃত্যু হয় নি, তাদের সাথে আমাদের কমিউনিটির এক প্রতীকী মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে। এই একটা সংবাদ আমাদের কুইয়ার কমিউনিটির মানুষদের জীবনের গতি প্রবাহ বদলে দিয়েছে। অথচ ২৫ এপ্রিলের কারণে কুইয়ার কমিউনিটির মানুষেরা কিভাবে স্ট্রাগল আর সার্ভাইভ করছে সেই গল্পগুলো এখনও আড়ালে রয়ে গেছে। মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, পেশাজীবন সহ নানান স্তরে ২৫ এপ্রিল নিয়ে আমাদের কুইয়ার কমিউনিটির মানুষদের বিভিন্ন রকম অনুভূতি অভিজ্ঞতার ইতিহাস তুলে আনবার জন্য আমাদের এবারের এই প্রয়াস। এখানে বলে নেই ২৫ এপ্রিল উপলক্ষে আমাদের কমিউনিটির কণ্ঠস্বরগুলো তুলে আনার ব্যাপারে আমি মোটেও সফল নই। অনেক লেখক তাদের কথা গুলি লিখতে চেয়েছিলেন। অনেকে ২৫শে এপ্রিলের কারণে তাদের জীবনে আসা সেই অনুভূতি আর ঘটনাগুলো মনে করে লেখার চেষ্টা করেও, শেষমেষ মানসিক ট্রমার কারণে লিখতে পারেননি। আর কেউ কেউ করোনা অতিমারি আর জীবনের চাপে লেখা দিতে চাইলেও দিতে পারেননি। জীবনের এমন একটা সময়ে সেই স্মৃতিগুলো মধ্য দিয়ে বিচরণ করাও তাদের জন্য খুবই কঠিন।
আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা হাতে পেয়েছি, যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অল্প কিছু হলেও জানতে পারবে যে ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিলের তনয় এবং জুলহাজ হত্যাকাণ্ড-এ আমাদের কুইয়ার কমিউনিটির মানুষদের জীবনে কি প্রভাব ফেলেছিল। ২৫শে এপ্রিলের নিদারুণ প্রেক্ষাপট হয়তো কুইয়ার কমিউনিটির সেই রুদ্ধকণ্ঠে কিছুটা হলেও উঠে আসবে। অনেকেই হয়তো এই লেখাগুলোর পিছনের মানুষদের মত একই অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে একা একা গিয়েছে। আশা করা যায়, এই লেখাগুলো পড়বার মাধ্যমে সেই ভয়ংকর একাকী অনুভূতির অবস্থান হতে কিছুটা হলে বেরিয়ে আসার ক্ষুদ্র চেষ্টা করতে দেখতে পারে।