
অরিত্র হোসেন
আজ হয়তো গুম হবো, নাহলে খুন হবো নাহলে বিরাট এক ধরা খাবো। এই তিনটার একটাও যদি আমার সঙ্গে না ঘটে তাহলে একুশ শতাব্দীর প্রযুক্তির যুগের এক অনন্য রূপকথা নাযিল হবে। তবে আমি এক কট্টর বাস্তববাদী যুবক, আমার পক্ষে রূপকথা কোনভাবেই হজম হবে না। বরং সেই রূপকথা যে কালি দিয়ে লেখা হয়েছে তা ফ্লুয়িড দিয়ে মুছতে দ্বিধাবোধ করবো না।
তবে আজকে একটা অঘটন ঘটবেই। অবশ্য অঘটন নিশ্চিত জেনেই এসেছি, এখন পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। আমি নিজেই সবাইকে বলে বেড়াই, ‘তোমরা ডেটিং অ্যাপে সাবধানে যোগাযোগ করবে। দুনিয়া হল বড্ড বেঈমান। কিতে কি হয়ে যায় তার ঠিকঠিকানা নেই’। নিজের দেওয়া উপদেশ উপেক্ষা করে মাত্র বিশ মিনিটের হালকা কথাবার্তায় এক লোকের সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছি যমুনা ফিউচার পার্কের ঠিক সামনে। লোকটি নিজ থেকেই আমাকে বার্তা পাঠিয়ে বলল, খুব সুন্দর চুল। কিভাবে পারো? এই কথা শুনার পর আমার আর মাথা ঠিক থাকে? এই ঘাড় অবধি কেশ নিয়ে আমার বড়াই থামছে না। তবে কিছু মানুষের গালমন্দ আর কিছু মানুষের প্রশংসা দুই মিলে এক বিদঘুটে আনন্দ-বেদনার সম্মিলন হয়েছে এই যুবকের মনে। কিছুক্ষণ মনে মনে খুশিতে খাবি খেয়ে লিখে পাঠালাম, ধন্যবাদ। পরিচিত হতে পারি? তবে এই পরিচয় হবার প্রক্রিয়া মাত্র তিন-চার লাইনেই শেষ হয়ে গেলো। আর পঞ্চম এবং ষষ্ঠ লাইনে কোথায় দেখা হবে এবং কখন হবে সেটা নির্ধারণ হয়ে গেল। কিন্তু কেন এতো দ্রুত? জানতে হলে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।
না থাক কারণটা বলেই দেই। পরে যখন নায়ক বা খলনায়কের আগমন ঘটবে তখন হয়তো আমাকে এক নির্দিষ্ট ছকের অনুসারী বলে গালমন্দ শুরু করে দিতে পারেন। অবশ্য গালমন্দ এখনও যে করছেন না তা বলবো না তবুও বলতে কি আর সমস্যা?
বিগত কয়েকদিন ধরে বেশ মন খারাপ আমার। নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। তাও আবার কর্পোরেট দুনিয়ায়। পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তার উপর কাজের ভয়ানক চাপ। যেন কেউ পিস্টন দিয়ে চাপ দিচ্ছে। একটু সময়ের জন্য মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাগিদে আমোদ ফুর্তি করার জন্যে ডেটিং অ্যাপে মাঝে মাঝে মানুষ খুঁজতে লাগলাম। তবে আমার যে কপাল না! একদম টিনের তৈরি! সেই টিনে ধরেছে মরিচা, ঝনঝন করে বাজলেও কোন চাকচিক্য নেই। মরিচা পড়া কপাল নিয়েও যা একটুআধটু চেষ্টা করি তাও হাতে ধরা দিলেও নিজেকেই হাত ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হয়। না আছে কথা বলার কোন স্টাইল, না আছে ঘোটে বুদ্ধি। এক পা আগাতে গেলেই প্রত্যেকটা নার্ভ যেন হাত জোর করে মিনতি করে পিছপা হতে। তবে এরই মধ্যে এক ছেলেকে মনে ধরেছিল কিন্তু জানতে পারলাম তার সঙ্গী আছে। আমার ভাগ্য! যাকেই মনে ধরে সেই যেন হাত নাড়িয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আমার এই মরিচা পড়া টিনের জীবনে আর কেউ আসবে না। তাই আজ পণ করেছি বাছবিচার বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করে যাকেই পাবো তার সঙ্গে লম্ফঝম্ফ করবো। যা হবার হবে!
তাই আজ কোনধরনের চিন্তাভাবনা না করে দেখা করার জন্য চলে এসেছি। কপালের লিখন তো আর খণ্ডানো যায় না! যা আছে কপালে তাই হবে। অতশত চিন্তা করলেও বিপদ আসবে, না করলেও আসবে। কারোর হস্তক্ষেপের শক্তি নেই স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া।
যমুনা ফিউচার পার্কের গেটে সামনে পাইচারি করছি তিন মিনিট ধরে। জানুয়ারি মাস। হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। একটা কালো রঙের বস্তার মতো জ্যাকেট পরে বেক্কেলের মতো একবার উত্তর দিকে আরেকবার দক্ষিন দিকে তাকাচ্ছি। আজকে মানুষের ঝাঁক অনান্য দিনের তুলনায় কম। বরঞ্চ কম মানুষের মধ্যে এই বিশাল শপিং কমপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় করছে। অবশ্য ভয়ের বীজ একবার বপণ করে ফেললে সেটা অল্প কয়েক সেকেন্ড ও মিনিটের সমন্বয়ে বৃহৎ বিটপীতে পরিণত হয়।
হঠাৎ করে চোখ পড়ল লম্বা এক মহাশয়ের উপর। তিনি রুমাল দিয়ে অর্ধেক ঢেকে রেখেছেন। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। হলুদ আর কমলার সংমিশ্রণে স্ট্রীট লাইটের আলোতে একদম সিনেমার ভিলেনদের মতো লাগছে। এখুনি পকেট থেকে বোম বের করে চট করে মাটিতে ফেলে এক দৌড় দিয়ে পুরো বিশ্বরোড পারিয়ে কোন এক ঝোপে লুকিয়ে পড়বে। কোনকিছু ভেবে উঠার আগেই লোকটি আমার দিকে হন্তদন্ত করে ছুটে এলো। কথা বলতে গিয়ে দেখলাম ঠোঁট খুলছে না নিশ্চয় কোন নিউরন বারণ করেছে। লোকটি এক ঝটকায় রুমাল খুলে ঠোঁট টিপে হাসল। আমার চোখ তার দুটো আকাশের মতো গাঢ় নীল মণির দিকে রুদ্ধ হয়ে গেলো। লোকটি হাতের ইশারায় আমাকে ইংরেজিতে বললেন, কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলেন জনাব? কথাটা শুনে সাধারণত আনন্দে খাবি খাওয়াই জায়েজ তবে আমার গা গুলিয়ে উঠলো। প্রথম দেখায় এমন ন্যাকামো সহ্য না করার পিছনে হয়তো ক্ষতবিক্ষত মন দায়ী থাকতে পারে। যতটুকু ইংরেজি পারি তা দিয়েই সামাল দিতে প্রস্তুত হলাম। যাত্রায় অনেক খাঁদে পড়তে হবে, কোমর আস্ত থাকবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে।
-হারিয়ে যাইনি তবে তব্দা খেয়েছি। রুমালটার জন্য আপনাকে চিনা যাচ্ছিল না।
-হা হা! রুমাল না পরে এই শহরে হাঁটাহাঁটি করা যায় নাকি? কি ধুলো! তোমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে- তাই পাত্তা দাও না।
-অভ্যাস হয়নি, মাস্ক পরতে মানুষের অলসতা কাজ করে।
-তাই বুঝি তুমিও অলসতা করে মাস্ক পরনি?
নিজের কথার প্যাঁচে নিজেই ধরা খেয়ে গেলাম দেখি। যুতসই একটা উত্তর না দিলে এই শ্বেতাঙ্গের কাছে বাজেভাবে পরাজিত হবো। এমনেই এদের যা দেমাগ!
-আসার পথে মাস্ক হারিয়ে ফেলেছি। ভুল করে ফেললাম কি? মাস্ক ছাড়া তুমি কথা বলবে না?
-হা, হা। তা বলিনি। এখানে আমরা দাঁড়িয়ে থাকবো? শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
-কোন রেস্টুরেন্টে বসতে চাও?
-বসলে খারাপ হয় না।
বনানীতে ছাদের উপর এক পছন্দের রেস্টুরেন্ট আছে আমার। ভাবলাম ওই জায়গায় তাকে নিয়ে যাওয়া যায়। হয়তো নানা ভণিতা করবে, তবে এছাড়া আমি তাকে আর অন্যকোনভাবে তুষ্ট করতে পারবো না। আমার দায়িত্ব নয়।
সিএনজি ঠিক করার সময় দারুণ সার্কাস হল। সব চালকরা বিদেশিকে নিতে দারুণ ইচ্ছুক। বেচারা লোকটা কাকে রেখে কারটা উঠবে, কাকে খুশি করবে তা নিয়ে বিচলিত হয়ে উঠলো। শেষমেশ আমাকেই রাবণের মতো হানা দিতে হল। ভাড়া ঠিক করে উঠতেই লোকটা বলল, আমার নাম তুমি এখনও জিজ্ঞেস করনি।
থতমত খেয়ে বললাম, ম্যাট তোমার নাম না?
-হ্যাঁ, আমার নাম ম্যাট। তুমি তো দেখি বেশ বুদ্ধিমান।
-সঠিক বুঝলাম না, বুদ্ধিমানের কি হল…
-না, মানে- সাধারণত ডেটিং অ্যাপে মানুষজন নিজের নাম দেয় না। তুমি নিজেও দাও নি…
-আমার স্পষ্ট মনে আছে তুমি দ্বিতীয় মেসেজে তোমার নাম আমাকে লিখে পাঠিয়েছ।
-ও! তাই নাকি! ভুলেই গেছি আসলে। কি যে বলবো, যখন থেকে ঢাকায় পা ফেলেছি কতো যে মেসেজ পাচ্ছি। নিজেকে প্রিন্স লাগছে। প্রিন্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।
মনে মনে বললাম, ওরে ককেশিয়ান! কলনিয়াল ফেভারে ভোগা এই জাতি তোমাকে প্রিন্স না দেবতা বলে স্যার স্যার করবে। উনারা চলে গেছেন কিন্তু কৃষ্টি রেখে গেছেন।
সিএনজির পুরো যাত্রায় কথা হল আমরা কি করি না করি, তা নিয়ে। ম্যাট আমেরিকার ছেলে, থাকে অস্ট্রেলিয়াতে। দাদি বিশাল বড়লোক, পড়ালেখা করতে তাই বিদেশ গেছে। মাঝেমধ্যে ফুর্তি করতে নানা দেশ ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে যেই দেশগুলো পর্যটনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত না। তারমানে এই নয় সে বাংলাদেশকে ওইভাবে নির্বাচন করেছে। বিমান ভাড়া কমে পেয়েছে, উড়ে চলে এসেছে বার্মা থেকে। বাংলাদেশ থেকে এবার যাবে নেপালে। তারপর বাড়ি।
একটা মানুষের সঙ্গে দেখা হলে সাধারণত সে কেমন দেখতে তা খুঁটিয়ে দেখা হয়- তবে আমি সেই রীতিটা একদমই পালন করি না। নিজের শরীর নিয়ে যে হীনমন্যতা কাজ করে তা এ জন্য দায়ী নয় তবে বেমালুম ভুলে যাই। আর আট দশটা আমেরিকান ছেলেদের মতো ম্যাট। ওয়েস্টের গেরা খুব জাঁকজমক থাকে বলে পুঁথি শুনানো হয়, সে অনুযায়ী ম্যাট তার ধারের কাছেও নেই। জিম করে কিনা, পিটানোর শরীর কিনা আন্দাজ করতে পারছি না। থাকলেও কি, না থাকলেও কি- আমার যায় আসে?
রেস্টুরেন্টে বসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ার দূষণনামা। কোন থামাথামি নেই, কোন বিষয় থেকে কোন বিষয় চলে যাচ্ছে আমি নিজেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। এরপর এলো ডেটিং কালচার নিয়ে বয়ান। খাবার অর্ডারও ঠিকমতো মনোযোগ দিয়ে করা হল না। হঠাৎ ম্যাট বলল, তুমি একটু জিম করলেই পারো।
আমি ভুরূ কুঁচকে বললাম, মানে?
-মানে, জিম! এক্সারসাইজ! অ্যাই মাস্ট সে- অন্যান্য সাউথ এশিয়ানদের মতো তুমি দেখতে না, কিছু কিছু ফিচার সেইম, কিন্তু একটা আলাদাবাহবে আছে। তবে কি জানো- অনেক চিকন তুমি। হাতের হাড্ডিগুলো জ্বলজ্বল করছে।
প্রচন্ড রাগে আমি টইটুম্বর, তারপরও স্বাভাবিক গলায় বললাম, যেমন আছি খারাপ নেই তো।
-তোমাকে খারাপ বলছি না। বলবনা তুমি আমার টাইপ তারপরও চলবে।
-টাইপ নিয়ে কথা হচ্ছে কেন?
ম্যাট কথার জবাব না দিয়ে দুই পা আয়োজন করে ছড়িয়ে বসলো। মোবাইল টিপায় মগ্ন সে। আমি বাইরে তাকালাম। এই পুরো মোলাকাত আয়োজনটাই ভুল ছিল।
-কাকে রেখে কাকে হ্যাঁ বলবো বুঝলে! উফ, মানুষজন পাগল হয়ে গেছে।
-হু
-সবাইকে হ্যাঁ বলাও যায় না। আমার তো টাইপ আছে।
-হু
খাবার খাওয়ার সময় কোন কথা হল না। দুইদিকে একধরণের টেনশন কাজ করছে। দুজনই কোন না কোনোভাবে বিরক্ত, বা কোন না কোনোভাবে হতাশ। আমি খাবার শেষ করে চেয়ারে নেতিয়ে পড়লাম। আজ সারাদিন বহুত খাটনি গিয়েছে, এরমধ্যে এই মোলাকাতের সংযোজন মোটেও সুখকর না।
রেস্টুরেন্টের পর্ব চুকিয়ে দিয়ে ম্যাটকে এবার বিদায় দেবার পালা। আমি নিজের কাঠিন্যকে ঠেলে দিয়ে, সব প্রকার দুশ্চিন্তা উহ্য রেখে বললাম, দুঃখিত আরও ভালোভাবে খাতির করা উচিত ছিল।
-আরে না, ইট ওয়াজ ফাইন। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
-হ্যাঁ ক্লান্ত তো বটেই। আগামীকাল অফিস আছে। ঐযে এই বিল্ডিংটা দেখছ না? ওটা আমার অফিস।
-এতো কাছে? আগে বলো নি কেন?
-আলাপে আসেনি, তাই বলা হয়নি।
মুহূর্তেই ম্যাট আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। পিছনে হাত দিয়ে থাপড়াতে থাপড়তে বলল, ইট ওয়াজ গুড ম্যান। ইট ওয়াজ গুড।
অনেকদিন পর কোন শরীরের সংস্পর্শ পেয়ে আমি কিঞ্চিৎ শিহরিত। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, নট অ্যা প্রবলেম।
-নিজের প্রতি সহজ হও। এতো কঠিন হলে চলে? চিল!
থাপড়া-থাপড়ি, কচলা-কচলি পর্ব সমাপ্তি টেনে ম্যাট বিদায় নিল। আমার মন খানিকটা মলিন হয়ে গেল। আমি এমন জবুথুবু হয়ে গিয়েছি কেন? সুন্দর একটা দিন বানানোর জন্য হয়তো আমারই ঘাটতি ছিল। এক গ্যালন অনুশোচনা নিয়ে ম্যাটকে মেসেজ দিতে গেলাম।
ওহ খোদা- ব্যাটা আমাকে ব্লক করেছে!
পরদিন অফিসে নিজেকে আনতে ভীষণ কাঠখড় পুড়াতে হল। বসের ঝাঁঝালো বকা না খেলে বিছানা থেকে নামা হতো না। কোনমতে মন শান্ত করে, একগাঁদা বিষণ্ণতা নিয়ে শীতের কোমল দুপুরে অফিসের গেইটের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম। সেই ব্যাটা দাঁড়িয়ে আছে। উষ্কখুষ্ক অবস্থায়। পরনের শার্ট কুঁচকানো, হাঁটুর অনেক উপরের প্যান্টটা টাইট- যা ভিতরে আছে বের হয়ে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
-অ্যাই অ্যাম সো সরি। প্লিজ আমাকে হেল্প করো।
-কিসের হেল্প? আর আমার অফিসের সামনে কি করছ?
-আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তুমি ছাড়া এই শহরে আমার পরিচিত সৎ কেউ নেই।
-যা বলার বলে ফেলো তো।
-তুমি কি আমার উপর রেগে আছো? সরি ব্লক দিয়েছিলাম আমি হতাশ হয়ে।
-হতাশ হয়ে ব্লক?
-হ্যাঁ, হতাশ হয়ে ব্লক। বলছি, কিন্তু আমাকে হেল্প করো।
-কি হয়েছে?
-কালকে থেকে এখন পর্যন্ত অনেকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু শেষেরটা আমার সব নিয়ে গেছে।
-অনেকজনের সাথে? কোন কিছু বিবেচনা না করেই দেখা সাক্ষাত করেছো?
-সবাই যদি আমাকে চায়, আমি কি করতে পারি?
-কি করতে পারো? লেটস সি, সাফার?
-মশকরা করছ? দেখো, আমি তো তোমাকে সুযোগ দিয়েছিলাম!
-কিসের সুযোগ?
-গতকাল কতবার ইঙ্গিতে বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু তুমি আর তোমার দাম্ভিকতা কিছুতেই সাই দিল না।
-তোমাকে বুঝার চেষ্টা করছি, স্যাড বুঝতে পারছি না। কি চাও বোলো।
-শেষ যার সাথে দেখা করলাম সে আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। মোবাইলও নেই।
-সেইফ ডেটিং সম্পর্কে কিছুই পড়ো নাই? মানে, শুধু তো বাংলাদেশ না- এরকম র্যান্ডমভাবে যার তার সাথে করতে যাবে, কোন কিছু চেক করবে না আর এক্সপেক্ট করো তোমাকে মাথায় তুলে রাখবে?
-খোটা দিচ্ছ? সবার অ্যাটেনশনে ওভারওয়েলমড হয়ে আছি। আমাকে হোটেলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে? ট্রাস্ট মি- আমি তোমাকে সব ব্যাক করবো।
আমি ঠাণ্ডা গলায় বললাম, উবার ডাকছি। আশা করি এতে কোন সমস্যা হবে না।
-গ্রেট! তুমিও আসো।
-আমি অফিসে ঢুকবো।
-কালকে থেকে সংকেত দিচ্ছি তুমি পাত্তাই দিচ্ছ না। আসলে কি জানো, আমি সাউথ এশিয়াতে কাউকে অ্যাপ্রোচ করি না কারণ সবাই আমাকে করে। আমি জাস্ট সিলেক্ট করি। তুমি তো দেখি আমাকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছ। আসো, আসো- আমার সঙ্গে আসো।
-ওহ, মানে আমাকে অ্যাপ্রচ করতে হবে? তুমি নিজেকে কি মনে করো?
-আমি? আমি তো আমেরিকান। মানে, তোমরা তো আমাদেরকে নিয়ে অনেক লাফালাফি করো। আমি তাই ভাবলাম…
কথাটা শেষ না হতেই উবার চলে এসেছে। আশেপাশেই ছিল। ম্যাটকে উঠে যাওয়ার সংকেত দিলাম। সে দরজা খুলে ভিতরে বসলো, সঙ্গে সঙ্গে আমি দরজা ধরে বললাম, সম্মান বাজারে সের দরে বিক্রি হয় না। আমেরিকান হয়েছ, এখন মানুষ হও! গাড়ির দরজা সজোরে বন্ধ করে অফিস গেইটের দিকে পা বাড়ালাম। আমি জানি আমার এই কথায় ওর কোন যায় আসবে না। মানুষজনের কুঁদাকুঁদি থামাবেও না।
যুগের পর যুগ চলতে থাকবে এক পক্ষের আত্মসম্মানের বিসর্জন, আরেক পক্ষের আদিখ্যেতার অর্জন।