
মনিকণ্ঠ
লোকে বলে ভালোবাসা নাকি বুঝে শুনে হয়না। তবে এই হেটারোনরমেটিভ সমাজে আমাদের একটু সাবধান হয়েই এদিকটায় পা বাড়াতে হয়।
যৌনতা বিষয়টি এ “সভ্য” সমাজে একইসাথে খুব লজ্জার আবার তারসাথে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়ও বটে।আর এর সূচনা হয় বয়ঃসন্ধিতে।এসময় যৌন অনূভুতির আগমনের সাথে আসে নতুন নতুন প্রশ্ন, নতুন বিষয়ে জানার নিষিদ্ধ আগ্রহ।
সেক্স এডুকেশনের অভাবে এসময় তারা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বন্ধুদের থেকে। বন্ধুই হয় সে বয়সে সবথেকে বিশ্বস্ত, সবথেকে কাছের যার সাথে “নিষিদ্ধ” বিষয়ে আলেচনা করা যায়।
কি হয় যদি হঠ্যাৎ সেই ছোটবেলার বন্ধুকে ভালোলেগে যায়?
যার সাথে ছোট থেকে ছোটাছুটি, একসাথে ঘোরাঘুরি হঠ্যাৎ যদি তার এলোমেলো চুলকে ভালোলাগে, হঠ্যাৎ যদি তার অর্ধপরিবর্তিত হওয়া কণ্ঠস্বরকে ভলোলাগে!
একদিক থেকে কাওকে ভালোবেসে যাওয়ার মতো কষ্টের অনুভূতি ,আর একে আরো একধাপ বাড়াতে তার সাথে যোগ হয় নিজেকে নিষিদ্ধ, অস্বাভাবিক আর পাপী মনে হওয়ার অনুভূতি।
কেউবা নিজের অনুভূতির তীব্রতাকে সহ্য করতে না পেরে বলে ফেলে বন্ধুকে। আবার কেউবা নিজের পরিচয়কেই গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করে ট্যাবুর চাপে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বন্ধুর কাছে কনফেশন করার পর তাদের সম্পর্ক আর আগের মতো থাকে না। অপর পক্ষ থেকে আসে ঘৃণা। যার সাথে সকল গোপন কথা অনায়াসে শেয়ার করা যেতো সেই তার গোপন সত্ত্বাকে হেটারোনরমেটিভ সমাজে সবার সামনে নিয়ে আসে।শুরু হয় বুলিং, শেমিং।যার থেকে সহানুভূতি, অভয় পাওয়ার কথা তার থেকে পাওয়া হয় শেমিং। এ চিত্র একদমই কম না, সকলের স্কুলেই হয়তো এমন চিত্র দু একটা থাকবে।
নিলয় নামের এক ছেলে আমার স্কুলেই পড়তো, তার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে লেখা কনফেশন লেটার তার বন্ধু সবার সামনে পাবলিশ করে দেয়, আর তারপর থেকেই তাকে বুলি করা শুরু হয়, কোন সার্কেলেই আর বন্ধু তৈরী করা হয়ে ওঠেনি তার,অবশেষে স্কুল পরিবর্তন করে সে। শ্রাবণ নামের এক ছেলে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ভালেবাসার কথা কনফেস করার পর তার বন্ধু তা সকলকেই জানিয়ে দেয় আর তারপর যা হওয়ার তাই! শেমিং, বুলিং,পার্সোনাল এট্যাক! এরকম ঘটনা কিন্তু কম নয়!
মানুষ সাধারণত মনের কথা যা পরিবারের সাথেও শেয়ার করা যায় না তা বন্ধুদের কাছে বলে,তাদের থেকে এমন আচরণে ছোট বেলা থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্কের কাজ করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে ।পরবর্তীতে তার কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা, একাকীত্বে ভোগা সহ বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দেয়।বর্তমান সময়ে সামাজিক,ধর্মীয় নানান প্রতিবন্ধকতার জন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে সেক্স এডুকেশন চালু করা বা সরাসরি সামাজিক সচেতনতা চালু করা হয়ত সম্ভব নয়।তবে আমরা চাইলেই কিন্তু পরিচিত এমন কিশোর-কিশোরীদের সহায়তার হাত বাড়াতে পারি,তাদের জন্য সেফ ইনভায়রনমেন্টের জন্য নিজের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব নিজে সেফ থেকে অন্যকে সচেতন করতে পারি।
তবে শুধু বয়ঃসন্ধিতে নয় এরকম ঘটনা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রও অনেক রয়েছে,পরবর্তীতে তাদের অনেক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের এজন্য হেটারোনরমেটিভ সমাজে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
মনিকণ্ঠ একজন সমকামী পুরুষ। তিনি মিথোলজিক্যাল বিষয়ে আগ্রহী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি চিত্রশিল্প চর্চা করছেন ।