
জায়েন মাহমুদ
আমার হেটারোনর্মেটিভ বন্ধুদের কাছ থেকে আমাকে একটি কথা প্রায়ই শুনতে হয়, “আমার কোন ধারণাই ছিল না তুমি গে!” এই অভিজ্ঞতায় পুরো দশটি বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর এটুকু অন্তত জানি, “টাইপ অফ গে” বলে কিছু হয় না। এটি না কোন প্রশংসা, না তিরস্কার। এর অর্থ সোজা বাংলায় যা দাড়ায় তা-ই। প্রথম দেখায় অধিকাংশ মানুষই ভাবে আমি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ইউএসএতে অনেক মানুষই জানে না বাংলাদেশের অবস্থানটা আসলে কোথায়। ঠিক সেরকমই, টেলিভিশনে পাওয়া ধারণা থেকে তৈরি হওয়া বদ্ধমূল ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা দিয়েই তারা মনে মনে একজন সমকামী পুরুষের চিত্র এঁকে নেয়।
এই হেটারোনর্মেটিভ পৃথিবীতে প্রচলিত চালচলনের বাইরে যেয়ে ভিন্ন কিছু না করলে বা না পরলে এটি ধারণাই করে নেওয়া হয় যে আপনি বুঝি স্ট্রেইট। তারওপর আমার যেহেতু দুইটি ফুটফুটে পরিণত সন্তানও আছে; আমার ওরিয়েন্টেশন নিয়ে লোকের সন্দিহান হবার ফুরসত বাড়ে বৈ কমে না। একবিংশ শতাব্দীর একুশতম প্রাইডে আসুন আপনাদেরকে আমি আমার কামিং আউটের গল্পটি শোনাই। কথোপকথনের মধ্য দিয়ে গল্প বলার প্রতীকীরূপে বেরিয়ে আসুক গত আট বছরে আমার দিকে বারংবার ধেয়ে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তরও।
আপনি কখন জানলেন যে আপনি গে?
আমার তখন হয়তবা ১২ বছর বয়স। ১৯৭৯ সালে সমকামিতার নিয়ে প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের একটি প্রচ্ছদের মাধ্যমে প্রথমবারের মত সমকামিতার সঙ্গে আমার পরিচয়। এক বন্ধুর জন্য আমার ভাললাগা কাজ করত যার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে ছিল না। সেসময় বাংলাদেশে একজন টিনেজার হিসেবে বেড়ে ওঠাকালীন গে হবার কোন প্রেক্ষাপট সেখানে ছিল না। কোন রোল মডেল, টিভি অনুষ্ঠান অথবা কোন বইও ছিল না যা পড়ে আমি সমকামিতার ধারণাটা বুঝতে পারব। আমি নিজেই নিজেকে বলতাম- এটা নিশ্চয়ই পাপ এবং আমার নিজের মধ্যেই কোন সমস্যা আছে। আত্মান্বেষণ এবং থেরাপিতে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। একপর্যায়ে বুঝতে পারলাম পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তেই আমার প্রজন্মের ছেলেমেয়ে; সকল তরুণদের মধ্যে নিজেদের সেক্সুয়ালিটি গোপন ও অস্বীকার করার প্রবণতা বেশ সাধারণ একটি বিষয়।
আমার বিভ্রান্তির আরও একটা কারণ হয়তবা পাঁচ-ছয় বছর বয়সে আমার সঙ্গে ঘটে নিদারুণ এক ঘটনা। আমাদের পরিবারের অস্থায়ী একজন ড্রাইভার আমার ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। এই ঘটনা আমি আমার বাবা-মাকে কখনই বলে উঠতে পারিনি। কারণ, আমি নিতান্তই লজ্জিত ছিলাম। ভেবেছি হয়ত আমার মধ্যেই কোন সমস্যা আছে। ছেলেবেলার এই স্মৃতি কৌশলে আমাকে আমার সেক্সুয়ালিটি অস্বীকার করতে বাধ্য করত। আমি নিজেকে বলতে থাকতাম, ছেলেদের প্রতি আমার আকর্ষণের কারণ এই ঘটনাটি এবং একসময় আমি এই আকর্ষণ থেকে বেরিয়ে যাব! আবারও, বহু বছরের থেরাপির ফলস্বরূপ আমি নিজেকে এই দোষারোপ করা থেকে বেরোতে পেরেছি। আমি যে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুঃসহ ঘটনাটির জন্য কোনভাবেই দায়ী নই এবং নিজেকে রক্ষা করবার মত সামর্থ্য যে আমার ছিল না তা বুঝেছি এবং মেনেও নিয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই ঘটনার সঙ্গে আমার সেক্সুয়ালিটির কোন সংযোগ নেই।
আপনার পরিবার আপনার গে হবার ব্যাপারটিকে কীভাবে নিয়েছে?
আমার সবচেয়ে বড় আফসোসের একটি হল আমার মায়ের কাছে আগেই আত্মপ্রকাশ না করা। আমার মা মনে হয় আগেই জানতেন আমি গে। এক পর্যায়ে এসে যখন আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মপ্রকাশ করি, একথা তার কানে যায়। তখন তিনি অন্যদের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু, আমাকে কখনও সরাসরি জিজ্ঞেস করেননি।
আমি নিশ্চিত তিনি আমার ছেলেবেলায়ই জানতেন যে আমি গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে মেয়েদের কাপড় পরিয়ে মেয়ে সাজিয়ে রাখা হত। আমাকে বলে রাখা হয়েছিল পাকিস্তানি ঘাতকরা জিজ্ঞেস করলে আমি যেন বলি আমার নাম ইয়াসমিন। ক্লাস টু-থ্রিতে আমি পুতুল খেলতাম, শাড়ি পরতাম। একবার দ্বিতীয় শ্রেণির একটি নাটকে আমি মেয়ে চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলাম। আমার মা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু মনোবিজ্ঞানী হওয়ায় তিনি কখনও আমার চাওয়াগুলোতে বাধা দেননি। বরং, যেকোন কথা, চিন্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমার ছিল। তারপরও তিনি কখনও সরাসরি আমাকে আমার যৌন পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করেননি। আমার জীবনের বিশ আর ত্রিশের দশকে যে “স্ট্রেইটনেস”র প্রদর্শনী আমি করে গেছি তিনি তা-ই মেনে নিয়েছেন।
আমার বাবা আমার ছেলেবেলার আচার আচরণ পছন্দ করতেন না। মনে পড়ে, একদিন কাজ থেকে ফিরে আমাকে মেয়েদের পোশাকে দেখে তিনি আমার পরিচারিকাকে বকাঝকা করেছিলেন। ছোট্ট বয়সের এই ট্রমা বাবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবার আশায় আমাকে নির্দিষ্ট একভাবে আচরণ করতে বাধ্য করেছিল। আমার খেলাধুলার দিকে কখনই বিশেষ মন ছিল না। বরং, ঝোঁকটা ছিল ছবি আঁকা, গান শোনা বা গাওয়ার প্রতি। আমার মনে হয় না আমার বাবা জানতেন কী করে আমার মত “আলাদা” বাচ্চাকে গ্রহণ করে নেওয়ার মত বাবা হতে হয়। তিনি ওরকম একাডেমিক বাবা ছিলেন যিনি আমাকে মজা করে অংক করাতেন ঠিকই কিন্তু কখনও খেলতে নিয়ে যেতেন না। অথবা সক্রিয়ভাবে কোন প্রকার হস্তকৌশল শেখান বা মাছ ধরতে নিয়ে যাওয়া এরকম কোন “পুরুষ প্রধান” ধরণের কাজে কখনও সহযোগিতা করেননি। আমার যখন আঠারো বছর বয়স, দুর্ঘটনাক্রমে তার মৃত্যু হয়। এসব বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কথা বলবার সুযোগই আমাদের হয়নি।
আমার বড় সৌভাগ্য যে আমি স্নেহপরায়ণ, যত্নশীল ও খোলা মনের একজন বোন পেয়েছি। যেদিন আমি টেক্সট করে তাকে জানিয়েছি যে আমি গে, তার পুরো পরিবার; আমার বোনজামাই এবং বোনের ছেলে, সবাই আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। সে সবসময় আমার পছন্দগুলো সমর্থন দিয়ে এসেছে। বস্টনে আমার প্রথম প্রাইডেও সে এসেছিল।
আমার খালা, ফুপু, চাচা এবং ভাইবোনেরা প্রত্যেকেই আমার কামিং আউটের সিদ্ধান্তকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করেছে যেন আমি আমার প্রকৃত ও নিরাপদ জীবনটি কাটাতে পারি। অধিকাংশেরই বক্তব্য আমার সেক্সুয়ালিটি তাদের কাছে কোন পার্থক্য গড়ে দেয় না। কেউ কেউ ধর্মকে সামনে এনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা অবশ্য করেছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
সমকামী হবার প্রহেলিকা হচ্ছে আমাদের প্রতিদিন নতুন করে নতুন নতুন মানুষের কাছে আত্মপ্রকাশ করতে হয়। ব্যাপারটা বিরতিহীন এবং দুঃসাধ্যও বটে। নানান গে ইস্যুতে এত মিডিয়া অ্যাটেনশন থাকা সত্ত্বেও আমি সবাইকে পৃথিবীর এই ভিন্ন দিকটি নিয়ে জানাতে জানাতে মাঝেমাঝে অবসন্ন হয়ে পড়ি।
আপনার বাচ্চারা এটাকে কীভাবে নিয়েছে?
আমি আত্মপ্রকাশ করবার পর থেকে আমার বাচ্চারা আমার এক নাম্বার সমর্থক হয়ে থেকেছে। তখন আমার বড় মেয়ের বয়স ষোল। ও ঘটনাক্রমে ব্যাপারটা জেনে যায়। ভয়েসমেইলে জানায় যে সে আমাকে ভালবাসে এবং তথ্যটা হজম করতে ওর কিছুদিন সময় লাগবে। কিছুদিন পর আমরা একসঙ্গে বসে খোলাখুলি আলাপ করি। আমি কবে আমার সেক্সুয়ালিটি বুঝতে পারলাম এবং তার মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন ছিল সেসব নিয়ে তার কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছিল। এরপর থেকে সে আমার জীবনকে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছে। আমরা প্রায়ই বিভিন্ন গে ইস্যু ও পলিটিকস নিয়ে কথা বলি। সে নিজেও আমার আত্মপ্রকাশকে সমর্থন জানিয়ে ব্লগ লিখেছে। তার সব বন্ধুদেরকে আমার সঙ্গে খোলামেলাভাবেই আলাপ করি দেয়।
আমার মনে পড়ে, কয়েক বছর আগে আমি ‘চিক-ফিল-এ’ নামে ইউএসের একটি ফাস্ট ফুড চেইন থেকে খাবার কিনতে নারাজ ছিলাম। কারণ, এই ফুড চেইনটি অ্যান্টি গে ইস্যুতে ভীষণভাবে অবদান রাখত। প্রথমদিকে সে আমার এই অস্বস্তি বুঝত না। প্রাকৃতিক একটি বিষয়কে দমিয়ে রাখতে কর্পোরেশনদের অর্থশক্তির ব্যবহার অথবা বৈষম্য তৈরি করতে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা ব্যক্তি বা সংগঠনদের প্রতি আমাদের ক্ষোভটা এখন সে বোঝে।
আমি যখন আত্মপ্রকাশ করি আমার ছোট মেয়ের বয়স তখন ছয় কি সাত। সে বেড়েই উঠেছে একজন গে বাবার সঙ্গে। সে সমকামী অধিকার ও প্রাইডের কঠোর সমর্থকদের একজন। ২০১৭ সালে আমি যখন বস্টনের প্রাইডে যাই, সে তার বন্ধুদের নিয়ে আমাকে সমর্থন দিতে চলে এসেছিল।
আগামীতে আমার যখন আবার বিয়ে হবে, ওরা দুজনেই দুই ধারে আমার হাত ধরে আমায় মঞ্চে নিয়ে যাবে। এখানে কন্যা সম্প্রদান নয়, বাবাকে ওরা পৌঁছে দিচ্ছে তার নতুন পৃথিবীর ধারে।
আপনি তো জানতেন আপনি গে। তাহলে বিয়ে করলেন কেন?
আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৯৩ সালে। ওহাইওর টলেডোতে। কফি ডেটের সেই প্রথম দেখায় আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলি। আমাদের মধ্যে অসংখ্য মিল ছিল। একটা সম্পর্ক তৈরি করবার জন্য এসব মিল ছিল যথেষ্ট। নয় মাস লং ডিসট্যান্স ডেটিংয়ের পর আমরা নিজেদের পরিবারের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করি আমাদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিতে। বিয়ের পর আমরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করি। আমি বিশ্বাস করতাম যে ছেলেদের প্রতি আমার আর্কষণের “অসুখ” সেরে গেছে এবং আমাদের দীর্ঘ পনের বছরের সংসারে আমি আমার স্ত্রীকে ও পরিবারকে ভালবেসেছি।
আমাদের অসাধারণ দুইটি সন্তান হয়েছে, আমরা পাঁচটি স্টেটে সাতটি বাড়িতে থেকেছি। আমি এখনও বিশ্বাস করি আমরা একে অপরকে ভালবাসতাম। কিন্তু, সব রূপকথার অন্তিমে “তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল” বলা যায় না। আমার স্ত্রীর ডিপ্রেশন ও বাই-পোলার ডিজঅর্ডারের নেতিবাচক প্রভাব আমাদের বিয়ের ওপর পড়ে। সে আমার কাছে ডিভোর্স চেয়ে বসে। আমি একইসঙ্গে হতবাক এবং বিমর্ষ হয়ে পড়ি। দীর্ঘ ১২ মাস আমি ডিভোর্সটি ঠেকিয়ে রাখি। একা ও দুজনে একসঙ্গে কাউন্সেলিংও নিই। ২০১৩ সালের মে মাসে যখন আমার ও বাচ্চাদের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে, আমি ডিভোর্সে সম্মত হই এবং নিজের জীবন নিয়ে সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিই।
ডিভোর্সে সম্মতি দেওয়ার পর আমি টানা দুই বছর থেরাপি নিই। এরপরই একপর্যায়ে আমি আমার সেক্সুয়ালিটি মেনে নিয়ে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের কাছে আত্মপ্রকাশ করি। অবশ্য কর্মক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করতে আমার আরও দীর্ঘ তিন বছর লেগেছিল!
আত্মপ্রকাশের কোন ব্যাপারটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে?
নিজেকে খুঁজে পাবার এত বছরের এই যাত্রায় আমার পরিবারের সমর্থন ও ভালবাসায় আমি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ এবং কৃতজ্ঞ।
থেরাপি নেওয়ার শুরুর দিকে আমি অন্তত দুবার ক্লজেটে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। এই “নতুন” গে দুনিয়া এবং অস্বীকৃতির জটিলতায় আমি দ্বিধান্বিত ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম। আমার পুরো জীবনে আমি কখনও অত একা বোধ করিনি। সময়ের পরিক্রমায় এবং অত্যধিক থেরাপির সাহায্যে আমি নিজের জন্য একটি নিরাপদ দুনিয়ার খোঁজ পাই এবং একটি কমিউনিটি তৈরি করে নিতে সক্ষম হই যেখানে আমি আমার মত থাকতে কোন বাধা নেই। এখন আমি এমন কিছু গে এবং স্ট্রেইট অ্যালাইদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যারা আমাকে বহু বছর ধরে চিনে আসছে। আমার ছোট্টবেলার বন্ধুদের সঙ্গে এখনও আমার বেশ ভাল সম্পর্ক। ওরা সবাই আমাকে এবং আমার ভালবাসার মানুষটিকে নিজের মতই আপন করে নিয়েছে।
এই সাত বছর আগেও যদি কেউ বলত যে কয়েক বছর পর আমার আত্মপ্রত্যয়ী রূপ একজন গে-আউট-বাংলাদেশি-সিঙ্গেল ড্যাড হিসেবে নিজেই নিজের কামিং আউট স্টোরি লিখবে, আমি নিজেই সেটা বিশ্বাস করতাম না।
যারা আত্মপ্রকাশ করবার কথা ভাবছেন তাদের জন্য কী বলবেন?
আত্মপ্রকাশ পুরোপুরিভাবে একটি নিজস্ব যাত্রা এবং এর নিখুঁত কোন উপায় বাতলে দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে আপনার সিদ্ধান্ত এবং এই যাত্রায় কেউই আপনাকে বিচার করতে পারবে না। কামিং আউটের যথার্থ কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই। যখন আপনার মনে হবে যে বেঁচে থাকার জন্য বের হওয়াটাই যথার্থ, তখনই প্রফেশনাল হেলপ নেওয়া জরুরি।
দিনশেষে সুখ, অভিব্যক্তি এবং নিজের প্রতি সৎ থাকাই আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্য। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সেক্সুয়ালিটি নিয়ে লুকোচুরি খেলায় এবং নিজেকে নিজের ছায়ায় আবদ্ধ করে রাখায় যে পরিমাণ জীবনীশক্তি খরচ হয়, খেলাটা থেকে একবার বেরিয়ে গেলে এই মূল্যবান জীবনীশক্তি কত নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করা যায়! এবং জীবন তখন অন্যরকম মাধুর্যে ভরে যায়।
স্ট্রেইট অ্যালাইদের প্রতি আপনার কী বলবার আছে?
আজকের দিনে প্রত্যেকেরই একজন গে বন্ধু, কাজিন, সহোদর বা সন্তান আছে। তাদের কেউ হয়ত আত্মপ্রকাশ করেছেন আবার কেউ কেউ গোপনেই নিজেদের ব্যাপারটা লুকিয়ে রেখেছেন। তাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করে আপনি এমন একটি পৃথিবী তৈরিতে অবদান রাখতে পারেন যেখানে সবচেয়ে সহজাত মানবীয় কামনাটি স্বীকৃত ও উদযাপিত হয়। আহ্বান জানাই, অসম্মানজনক শব্দ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন: গে লাইফস্টাইল; লাইফস্টাইল এমন একটি ব্যাপার যা মানুষ সক্রিয়ভাবে বেছে নেয়। অথবা “দ্যাট’স সো গে!” সত্যিই? এসব কথা এই আজকের পৃথিবীতে মানায়? গে হওয়াটা কোন পছন্দ-অপছন্দ বেছে নেওয়ার ব্যাপার নয়। ভেবে দেখুন, যদি গে হওয়া অথবা না হওয়া বেছে নেওয়াই যেত তাহলে কে চাইত এত কষ্ট করতে? সামাজিক অসম্মান এবং ধিক্কার নিতে?
কিছুদিন আগে আমার এক চল্লিশ বছরের স্ট্রেইট বন্ধু হাস্যকরভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ, সে ভেবেছে আমি তাকে জড়িয়ে ধরলে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব! আমার স্ট্রেইট বন্ধুদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা যেমন বিপরীত লিঙ্গের প্রত্যেকের প্রতি আকৃষ্ট নন, তেমনি সমকামীরাও সমলিঙ্গের প্রত্যেকের প্রতিই আকৃষ্ট নন!
আগত সকল প্রাইড মাসে আমি আমার প্রতিটি বিষমকামী বন্ধু ও তাদের পরিবারকে আহ্বান জানাই যেন তারা স্বেচ্ছায় তাদের পরিবার-পরিজনকে প্রাইডের শুভেচ্ছা জানান। এত ক্ষুদ্র একটি ব্যাপার। ঠিক মেরি ক্রিসমাস/ঈদ/ইস্টার/পূজা/দিপাবলী মতই; এই ছোট্ট শুভেচ্ছা জানানোয় আপনার কোন ক্ষতিই হয়ে যাবে না। অথচ একজন গে নারী বা পুরুষের জন্য এটি হতে পারে আশ্বস্ততা যে, আপনি তাকে সম্মান করেন এবং তাদের বৈচিত্রকে উদযাপন করেন। এটি নিঃসন্দেহে তাদেরকে একাত্মতার সুখানুভূতি এনে দেয়। জীবনের এই চলমান সমীকরণে তারা যে “আলাদা” কেউ বা বাইরের কেউ নন – এটাই তাদের জীবনে চলবার গতি এনে দেবে।
অনুবাদঃ মন্দ্র আর্কাইভ টিম
মূল লেখা: https://zainmahmood.wordpress.com/2020/06/13/pride-2020-my-coming-out-story-some-questions/