মৃত্যু এবং চাঁদের রূপকথা

মনিকণ্ঠ

ফিলিপাইন বর্তমান এশিয়ার একমাত্র খ্রিস্টান প্রধান রাষ্ট্র। তবে প্রাক-ঔপনিবেশিকতার পূর্বে এখানে আধিক্য ছিলো “ভিসায়ান” নামক জনগোষ্ঠীর। আর এই ভিসিয়ান পৌরাণিক কাহিনীতে রয়েছে দু’জন দেবতার পরস্পরের প্রতি গভীর প্রণয়ের কথা। গল্পটি মৃত্যুর দেবতা এবং চন্দ্র দেবতার কথা বলে।

মাউন্ট মাডজাসে বসবাস করতেন দেবতা সিডাপা, যিনি পরিচিত মৃত্যুর দেবতা নামে। মৃত্যুর দেবতা হলেও তিনি ছিলেন দয়ালু এবং ভালো মনের।

তিনি হঠাৎ একদিন মাডজাস থেকে দেখতে পান অনিন্দ্যসুন্দর সাত জন চাঁদের দেবতাকে। যারা প্রত্যেকেই চাঁদের এক একটি পর্বের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তার চাঁদের প্রেমে পড়তে।

তবে শুধু সিডাপা ই নন, বাকুনাওয়া নামক সামুদ্রিক ড্রাগনসহ অনেক দেবতাই বিমোহিত হয়েছিলেন চাঁদের এই অপরুপ সৌন্দর্যে।

সিডাপা আর অপেক্ষা না করে পাখি এবং মৎস্যকন্যাদের বললেন তার হয়ে চাঁদের প্রতি ভালোবাসার বার্তা বহন করে গান করতে এবং আদেশ দিলেন ফুলগুলিকে সবচেয়ে মিষ্টি সুগন্ধি তৈরি করতে, যা আকাশে ভেসে গিয়ে পৌঁছাবে স্বর্গে। সেই সাথে জোনাকিদের বললেন আকাশে আলোর পথ তৈরী করতে, যাতে চাঁদের দেবতারা সহজেই তাকে খুঁজে পেতে পারেন।

এই চাঁদের দেবতাদের মধ্যে একজন হলেন লিবুলান, যিনি সিডাপাকে দেখতে এই আলোর পথে নেমে এসেছিলেন। সিডাপা তাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন গান গেয়ে, দিয়েছিলেন বিভিন্ন উপহার, আর সাথে ছিল তার সেই কাঙ্খিত ভালোবাসার আহ্বান, যার জন্য সিডাপার এতো আয়োজন।

কিন্তু তাদের এই ভালোবাসা প্রস্ফুটিত হওয়ার সাথে সাথেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাকুনাওয়া, আক্রোশে সমুদ্র থেকে উঠে এসে গ্রাস করে নিতে চায় চাঁদকে। কিন্তু সিডাপা এই আক্রমণ থেকে তার ভালোবাসা লিবুলানকে রক্ষা করেন। কথিত আছে যে, পরে তারা মাডজাস পর্বতে পরস্পরের স্বামী হিসেবে বসবাস করতেন। কিছু ফিলিপিনো আজও চাঁদের দেবতা লিবুলানকে সমকামিতার প্রতীক এবং পৃষ্ঠপোষক দেবতা হিসেবে উল্লেখ করেন।

মনিকণ্ঠ একজন সমকামী পুরুষ। তিনি মিথোলজিকাল বিষয়ে আগ্রহী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি চিত্রশিল্প চর্চা করছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.