কবিতা গুচ্ছ- ২

রুদ্রনীল

কবিতাঃ অবহেলা

———-

তোমার অবহেলা আমাকে পোড়ায়, আমাকে কাঁদায়,

আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।

তোমার নীরবতা আমাকে ভাবায়, আমাকে নিঃস্ব মনে হয়,

আমাকে কষ্টের অতীত কষ্ট দেয়।

তোমার উপহাস আমাকে তুচ্ছ করে, আমাকে ধ্বংস করে,

আমার আমাকে মৃত্যুযন্ত্রণা দেয়।

তোমার দূরে সরে থাকা আমাকে একাকী করে,

আমার হৃদয়ে হাহাকার তোলে।

তুমি তো বুঝেই সব করো,

বুঝেই কি তবে তিলে তিলে যন্ত্রনা বাড়াও আরো!

কেন? কেন? কেন?

কাছে নাই বা টানলে দূরে সরিয়ে দিয়োনা।

কিছু মানুষ জীবনে থাকুক না স্রোতহীন পুকুরের মত,

যেখানে জীবন স্থির, কেবল মাঝে মাঝে প্রবল বাতাস,

এসে ঢেউ তোলে, উদ্বেলিত করে, দোলা দেয় জীবনে।।

হোক না! ক্ষতি কী?

হোক না!

———-

কবিতাঃ চার দেয়াল

———-

চারদেয়ালের মাঝে বন্দী আমার এ জীবন।

এ কি জীবন?

আলো আছে, তবে তা কখনোই প্রখর নয়।

বাতাস ও বয়ে চলে তবে তা প্রবল নয়।

বৃষ্টি হয় তবে তা ছুঁতে পারি না আমি,

বৃষ্টি আমার নাগালের বহু বাইরে।

আমার চোখে প্রবল ধারায় জোয়ার আসে,

তবু চেনা জনকে প্রবোধ দেই, ও আমার চোখে সমস্যা।

আমার যখন খুব ঘুম পায় তখন চোখে জল আসে,

কি যে উদ্বেল গতিতে হাহাকার হৃদয়ে তা কেউ জানে না ।

ইদানীং আমার এই চার দেয়ালের বন্দি জীবনের

দেয়ালগুলোর রঙ কেমন ফিকে হয়েছে,

দেয়ালের পলেস্তারা কেমন ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে!

চার দেয়ালে কেমন অক্সিজেনের অভাব আজকাল,

নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে।

———-

কবিতাঃ যাহা দেখি তাহা সত্যি নয়

———-

আমার কোনো কষ্ট নাই,

এই কথাটার মাঝে যে কত কষ্ট লুকিয়ে আছে,

তা কি কেউ কখনো খুঁজে দেখেছে?

আমি খুব ভালো আছি,

এই ভালো থাকার মাঝে যে কত অসুখ বাসা বেঁধে রয়েছে,

তা কি কেউ কখনো জানতে চেয়েছে?

আমার অনেক সুখ,

সেই সুখ পাখিটা কেউ খাঁচায় বন্দি করে রেখেছে কি না,

তার হিসেব করেছে কেউ কখনো?

এই যে আমার মুখের অট্টহাসি!

সেই হাসির আড়ালের কান্নাগুলোর কিনারা,

পেয়েছে কি কেউ?

যা দেখি, যা ভাবি তা সবসময় কি সত্যি হয়?

আড়ালের সুখ কিংবা দুঃখ কি কেউ দেখে না?

জগতের সবাই মাতোয়ারা কি হাসি-খুশি নিয়ে?

কষ্টের সারথি কি কেউ নয়?

আর এর জন্যই বোধহয় কষ্ট চাপা, অসুখ লুকোনো,

কান্না আটকে রাখার।

এত্ত আনন্দ, হাসি, উচ্ছলতা।

এই কি জীবন, এই জীবন!

এই কি তবে জীবনের মানে?

———-

কবিতাঃ তোমার-তোমারই জন্য

———-

তুমি শুভ্র চাঁদ,

আর আমি তোমার সাথে তারা জ্বলা রাত।

আমি রাত জাগা পাখি,

আর তুমি আমার জাগরণের সাথী।

তুমিই তপ্ত রবি ,

সাথে আমি হব মেঘের মালা গাঁথা কবি।

আমি ধু ধু বালুচর,

আর তুমি সবুজ প্রাঙ্গণ, উন্মুক্ত অঙ্গন।

তুমি নীরব স্বপ্ন, আমি নীরবতার ভাষা,

আমি রঙ্গিন স্বপ্ন, সাথে তুমি আশা।

মায়াবী এ রাতের বেলায়,

মন চায় ছুটে যেতে নিঝুম নিরালায়;

তোমারই টানে।

আমার সকল কাজে তোমারই ছায়া,

পড়ে আছে, চেনা সুখের মায়া।

চলার পথে পাই তোমার প্রেরণা,

পাই শক্তি, পাই সাহস-উদ্যম।

এ যে সবই তোমার-তোমারই জন্য।।

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.