
Divuninun Kites
সহস্র কবিতার ভিড়ে আজ আমি নিরস্ত্র সুকান্ত
বিশ্বাস কর, আমি ভুলতে পারি না তোমার অজস্র চাহনি
কখনো রাগে, কখনো দুঃখে কিংবা কখনো একান্ত সুখের
পাতায়।
তুমি আমার অসুখ, সুকান্ত; পাতায় পাতায় পরে রয়
আমাদের চিটাগাং এর ট্রেনে গভীর রাতের ঝুমঝুম শব্দে
তোমার কোলে মাথা রেখে সারা রাত ‘তিন গোয়েন্দা’
পড়া
ভুলতে পারিনা আমি, সে রাতে আমার মাথায় তোমার
বিলি কেটে দেওয়া।
ভুলতে চাইওনা কখনো তোমার বুকের মাঝে সে লাল
তিলটা।
আমি শুধু ভালোবেসে যাবো যেমন বেসেছিলাম তোমার
জীবনের সবচেয়ে
সুখের দিনটিতে, তোমার নতুন জীবনে পা দেওয়ার
দিনটিতে।
চারিদিকে সহস্র সোডিয়াম বাতি জ্বলছিলো অজস্র
মানুষের ভিড়ে, সুকান্ত!
আমি কথা দিয়েছিলাম যে সে রাতে আমি একটুও কাঁদব না
আমি কথা রাখতে পারিনি, সুকান্ত!
আমি ভেঙ্গে ফেলেছি তোমাকে দেওয়া আমার হাজারটা পুরনো কথার মত, সুকান্ত।
আমার বারান্দা থেকে প্রায়ই দেখি তোমাকে অফিসে
যেতে, বেশ দিব্বি লাগে তোমায়
হয়ত আগের থেকে চুলের সিথিটা একটু বদলেছে; তাই না, সুকান্ত?
জানো, ইদানিং আমার খুব হাসি পায় যখন তোমার ছেলেটা তোমার পিঠে
উঠবার জন্য দিব্বি আবদার জুড়ে দেয়, আমার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়!
সত্যি বলছি সুকান্ত তোমার কাঁচাপাকা চুলে দারুণ দেখায়
তোমাকে।
আচ্ছা, সবাই তো কলপ করে, তুমি কর না কেন?
ভুলেই গেছি, এ প্রশ্ন তোমায় করিইনি কখনো।
তোমার ছেলে ক্লাস এইটে উঠেছে শুনেছি, কিন্তু তোমার
মতই
বিড়ি টানা ধরেছে শুনেছি, তবে ডাক্তার হবে কেমন করে!
তুমি নাহয় নাই দেখলে, নীলিমা কিছু বলে না বুঝি!
সুকান্ত কি বলব আর আমার চুলেও ইদানিং পাক ধরেছে
চশমাটা বদলিয়ে কতো নিয়েছি জানো? না, জানো না।
জানাইনি কখনো! মাইনাস ফাইভ পয়েন্ট ফাইভ।
তোমার ছেলের চলন বলন তোমার মতো হলেও হয়েছে সে ডাক্তার!
কিন্তু, একী সুকান্ত! ডাক্তার হয়েও তোমাকে বাঁচাতে
পারলো না?
ভেবেছি হাসপাতালে একদিন দেখতে যাবো তোমায়,
কিন্তু কী এক অভিমান নিয়ে যাওয়াই হয়নি, পাছে নীলিমা কী না ভাবে।
চিন্তা কর না সুকান্ত, আমিও তোমার কাছেই আসছি।
আজ ডাক্তার বলেছে আমার কিডনিগুলো বড়ই দুর্বল হয়ে পড়েছে
আজকাল লাংসেও সমস্যা বেড়েছে খুব। কী বলব, সুকান্ত!
গল্পের বইগুলো পড়েও আজকাল সময় কাটে না।
তাই ভাবছি বাড়ি চলে যাবো, আমাদের বাড়ি, নীল
দেয়াল আর সবুজ
জানালার পর্দা দেওয়া বাড়ি, সুকান্ত!
তুমি বলেছিলে আমাদের বাড়ি।
আমি আসছি, সুকান্ত! আমি আসছি!
উৎসঃ অন্য ভুবন