
অন্য ভুবন
১…
আজ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল চয়ন। কারণ আজ তার জীবনের প্রথম চাকরীতে জয়েন করতে যাওয়ার কথা। তাই সে তাড়াতাড়ি স্নানটাও সেরে এসেছে। চয়নের মা উষা দেবী ছেলের জন্য ভাত মেখে রেডী করে রেখেছেন। তার আজ ভীষণ মন খারাপ। আজ প্রথম বারের মতো ছেলে যাবে চাকরী করতে এতো দূরে, তাও আবার একা। পোড়া অশ্বত্থতলা থেকে খড়ঙ্গপুর তো আর একটু আধটু পথ না। বেশ দূরেই বলা যায়। গাড়িতে প্রায় চার – পাঁচ ঘন্টা লাগে। চয়ন ঠিক করেছে এখন থেকে ওখানেই থাকবে সে। তাই তল্পি তল্পা আগেই গুছিয়ে নিয়েছে। চয়ন শার্ট প্যান্ট পরে রেডী হচ্ছে আর মা ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন। মা বললেন,,,,,হৃদয়ের কি খবর? ঘুম থেকে উঠেছে? জানিনা!! আমি যখন দেখেছি তখন তো ঘুমানোই ছিলো, বললো চয়ন। কিন্তু চয়ন তো জানে হৃদয় এখন তো দূরের কথা সারা রাতেও ঘুমায়নি। বুঝলেন না তো?? আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। আমাদের আজকের কাহিনীর মূল চরিত্রে আছে চয়ন ও হৃদয়। আর তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে রয়েছে শতদল। চয়নেরা দু ভাই-বোন। ও বড় এবং বোন ছোটো। গ্রাজুয়েশন সদ্য শেষ হয়েছে। তাই চাকরীর জন্য তাকে কলকাতা ছেড়ে যেতে হবে খড়ঙ্গপুর। চয়ন থাকে কলকাতার ঠাকুরপুকুর থানার পোড়া অশ্বত্থতলায়। এলাকার নাম জ্যাতিন্ময়নগর। চয়নের বাবা একটি ফার্মেসী চালান। পোড়া অশ্বত্থতলাতেই তার ফার্মেসী। এবং মা গৃহিণীই বলা যায়। আর হৃদয় হলো চয়নের প্রাণের সখা। তারা একে অপরকে ভালোবাসে। চয়নের দাদু এবং হৃদয়ের দাদু দুই মিতা ছিলেন। সেই সূত্র ধরে চয়নের বাবা এবং হৃদয়ের বাবা দুই বন্ধু। পর্যায় ক্রমে আজ হৃদয় এবং চয়ন। কিন্তু ওদের বন্ধুত্বটা আজ শুধু বন্ধুত্বেই থেমে থাকেনি। তারা হয়ে উঠেছে একে অন্যের পরিপূরক। হ্যা তারা দুজনেই সমকামী। দুজনেই সমসত্বার মানুষ। তারা শপথ নিয়ে নিয়েছে, তারা সারাজীবন একসাথেই থাকবে। থাকবে সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে। কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। কালের গতি বড়ই খারাপ। কোন দিক থেকে যে কি হয়ে যায় বলা বাহুল্য। সে যাই হোক,,, মুল কথায় ফিরি। চয়ন ভাত খাচ্ছে। মা নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই মা ছোটোবোন নেহাকে পাঠিয়েছে হৃদয়কে ডাকতে। কিন্তু হৃদয় ওঠেনি। চয়ন খাওয়া শেষ করে গেল নিজের রুমের দিকে। এসে দেখে হৃদয় ঘুমাচ্ছে। বড্ড নিষ্পাপ লাগছে ওকে। চয়ন মুগ্ধ হয়ে দেখছে। চুল গুলো এলো মেলো হয়ে আছে। ফ্যানের বাতাসে একটু একটু করে চুল গুলো উড়ছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সাদা টি-শার্ট এবং ব্লু রঙের একটি প্যান্ট পড়া। বা হাতটা বালিশের উপরে মাথার নীচে দেওয়া ডান হাতটা সামনের দিকে একটু প্রসারিত হওয়া। চোখ গুলো বন্ধ, ওষ্ঠ যুগল যেন গোলাপের আধা শুকনা পাঁপড়ী। চয়নের ইচ্ছা করছে একটু জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু ধরলো না। কারন এমনিতেই সে চয়নকে যেতে দিতে নারাজ। চয়নেরও যেতে ইচ্ছা করছে না। দীর্ঘ অনীচ্ছা সত্বেও সে চাকরী করতে যেতে রাজি হয়েছে। কারন সে তার হৃদয়কে নিয়ে ছোট্ট একটি সুখের ঘর বাঁধতে চায়। যেটা তার পরিবার ,তথাকথিত সমাজ, আত্মীয়-স্বজন কেউই মেনে নেবে না। তা সে পূর্ব হতেই জানে। তাই চয়ন এখন থেকেই প্রস্ততী নিচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে বেঁচে থাকার মতো একটা অবলম্বন থাকে তাই। আর তাছাড়া চয়ন কোলকাতার বাইরে তেমন যায়নি। শুধু উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের পুরীর জগন্নাথ মন্দির আর দীঘার সমুদ্র দেখতে যাওয়া ছাড়া। তাই এই সুযোগটা হাত ছাড়া করলো না চয়ন। একবারে চাকরীও করা হবে এবং ঘোরা ফেরাও হবে। মাঝে মাঝে হৃদয় গিয়ে চয়নের সাথে একটু একাকিত্বে সময়ও কাটাতে পারবে। হৃদয় চয়নকে বিদায় জানাতে গতকাল বিকালেই চলে এসেছে চয়নদের বাসায়। কিন্তু হৃদয় শেষ মূহুর্তে এসেও চয়নকে যেতে দিতে অনিচ্ছুক। কিসের যেন এক অজানা ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে হৃদয়কে। চয়ন কিছুটা আঁচ করতে পেরে বিকালে হৃদয়কে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হয়েছিল হৃদয়ের মন ভালো করার উদ্দেশ্যে। পোড়াঅশ্বত্থ তলায় বসে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছে তারা। মাটির পেয়ালায় চা খেয়েছে দুজন। জয় নগরের মোয়া খেয়েছে। যেটা হৃদয়ের ভীষণ প্রিয়। অবশেষে তারা বাবার ফার্মেসীতে একটু দেখা দিয়ে সোজা চলে এসেছে বাসায়। রাতে বাসায় ফিরে চয়ন এবং হৃদয় দুজনেই ফ্রেশ হয়ে ডিনার শেষ করলো। তারপর দুজনে মিলে চয়নের রুমে এসল শুতে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে চয়নের। কিন্তু হুদয়ের
চোখে ঘুমের ছিটে ফোটাও নেই। হৃদয় চয়নকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।। চয়নের ঘুম যেন নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। কি হয়েছে বাবু? এতো মন খারাপ করার কি আছে? আমি তো মাঝে মাঝে আসবো। আর তাছাড়া আমি তো আর সারা জীবনের জন্য যাচ্ছি না। হৃদয় হুড়মুড় করে উঠে চয়নের মুখে হাত দিয়ে বললো,, একদম চুপ!! ওই কথা আর কোনোদিন মুখে আনবা না। বাবাহ্ আমাকে নিয়ে মহারাজের এতো চিন্তা? তাহলে এতো মন খারাপ কিসের শুনি? হৃদয় এই কথার কোনো জবাব না দিয়ে —– আচ্ছা বাবু তুমি যে কোলকাতা ছেড়ে এতো দূরে জব করতে যাচ্ছো, সেখানে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে নাতো? কোলকাতা এবং খড়ঙ্গপুর, পশ্চিমবঙ্গের দুটি মানচিত্র। এই মানচিত্র আমাদের মনের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে নাতো?? কথাটা শুনে কেন জানিনা চয়ন চমকে উঠল। মনে হলো যেন কথাটা চয়নের বুকে এসে বিঁধেছে। তবুও হৃদয়কে শান্ত্বনা দিয়ে টেবিল ল্যাম্পশেড টা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল দুজনেই। কিন্তু কারো চোখেই ঘুম নেই,,,, হৃদয় চয়নের বুকের উপড় মাথাটা দিয়ে শুয়েছে। এবং চয়নের মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। তুমি ঘুমাও তোমার সকালে উঠে আবার
অনেক জার্নি করতে হবে। চয়ন অবাক হয়ে গেল ওর কথায়। কি দিয়ে গড়া ওর ওই দেহ মন? নিজের কাঁদছে, আবার মাথায় হাত বুলিয়ে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আবার চয়নকে ঘুমাতেও বলছে। নাকি চয়নকে জার্নি করতে হবে তাই। কি করে পারিস তুই? কেন এতো ভালোবাসিস? পারবো তো তোর ভালোবাসার মান রাখতে,,,!!
২…
চয়ন হৃদয়কে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করলো। দেখি তোমার ঘুম ভাঙ্গে কিনা। ছাড়ো!! প্লিজ ছাড়ো। পড়ে যাবো তো! পড়ে গেলে আর কি হবে? আমি আছি কি করতে। এতক্ষণে হৃদয় একটু হাসলো। হা হা হা হাসলে আমার বউটাকে কি সুন্দরই না লাগে। হয়েছে আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। বাজে কতো দেখেছো? হুম দেখেছি। প্রায় আটটা। এতক্ষণ পর হুঁশ হলো? আমার সাথে কে যাবে এগিয়ে দিতে? তুমি তো এখনও শুয়ে ছিলা। আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। সবাই অপেক্ষা করছে। নেহাটা ( চয়নের ছোটো বোন) এসে কখন যেন দাড়িয়ে ছিলো দরজার সামনে। চয়নের চোখে চোখ পড়তেই হেসে দৌড় দিলো। চয়নকে ফ্রেশ হতে বলে চয়ন ছুটলো নেহার পিছু পিছু। চয়ন যা ভেবেছিলো তাই। নেহা মাকে বলছে জানো মা চয়ন দাদা না হৃদয় দাদাকে নিয়ে ঘুরেছে। একটা চুমুও দিয়েছে?? কি???? তবে রে,,,,,,, কিরে তোরা কি শুরু করলি!! একটা শুভ কাজে যাচ্ছিস কোথায় একটু ঠাকুর দেবতার নাম করবি তা না,,,,, শুধু গোলমাল করিস তোরা।
আরেকজন কই উঠেছে ঘুম থেকে? হ্যা উঠেছি মা! টাওয়াল দিয়ে নাক-মুখ মুছতে মুছতে বললো হৃদয়। উঠেছেন তো বুঝলাম। সারারাত নাকি ঘুমিয়েছেন, তা চোখগুলো এতো লাল কেন? বলতে বলতে মা হৃদয়কে নাস্তা খেতে দিলেন। চয়নের বাবা ফার্মেসীর উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বের হলেন। যাওয়ার আগে চয়নের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,, সাবধানে যাস বাবা। কোনোদিন বাড়ীর বাইরে থাকসনি। আচ্ছা বাবা,,,, বলে চয়ন হাঁটু গেড়ে বসে বাবাকে প্রনাম করল। বাবা চয়নের মাথায় রেখে আশির্বাদ করলেন। উষা দেবী জিজ্ঞাসা করলেন কিরে চয়ন তোর বাস কয়টায়?
এগার টায়। কি? এগারটায়? সাড়ে নয়টা তো বাজে। এখান থেকে শিয়ালদাহ্ স্টেশনে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগবে। তাড়াতাড়ি বের হ। হৃদয় সামান্য একটু খেলো। তারপর মাকে প্রনাম করে ও নেহাকে আদর করে পড়াশুনা ঠিক মতো করার নির্দেশ দিয়ে রওনা হলো দুজনে শিয়ালদাহ্ ষ্টেশনের দিকে। এক ঘন্টা লাগেনি, তার আগেই শিয়ালদাহ্ পৌঁছে গেছে দুজন। সময়ের আগে পৌঁছেছে বলে দুজনে মিলে একটু চা খেল। যথা সময়ে বাস এসে উপস্থিত। চয়ন হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে বললো,,, ভালো থেকো। আর একদম মন খারাপ করবা না। আমি মাঝে মাঝে আসবো। সামনে গরমের ছুটিতে
তুমি যেও। চয়ন এতোক্ষণ ঠিকই ছিলো। কিন্তু এখন চয়নের যেন বুক ফেটে কান্না আসতেছে। কিন্তু চয়ন নিজেকে সামলে নিলো। যদি এখন চয়ন কান্না করে ফেলে তবে হৃদয় আরো ভেঙ্গে পড়বে। কি দাদা যাবেন না? নাকি এভাবেই ওনাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবেন? কন্টাক্টর বললেন,,,, চয়ন তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠলো। C সারির জানালার পাশে বসল চয়ন। বাস ছেড়ে দিয়েছে। চয়ন তাকিয়ে আছে জানালার ফাঁক দিয়ে, যতক্ষণ হৃদয়কে দেখা গেছে।
হৃদয় হাত নেড়ে বিদায় জানালো। চয়নও ডান হাতটা নাড়িয়ে টাটা দিলো। বাস ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। চয়ন অনুভব করলো দু’ফোটা জল চোখের কোনা দিয়ে বেয়ে পড়ল। পকেট থেকে হৃদয়ের দেয়া রুমালটা দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিলো।।
৩…
দীর্ঘ আট মাস পরে……. চয়ন শুয়ে আছে স্বদেশ হাসপাতাল নামে কোনও এক হসপিটালে। চোখ থেকে অশ্রু বেয়ে পড়ছে। আজ চয়ন আর সেই চয়ন নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পাল্টে গেছে তার জীবন। বদলে গেছে তার অনুভুতি। এতো পরিবর্তন মনে হয় অনেকের জীবনেই আসে না। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি হৃদয়। সে আজও তেমনটাই আছে। যেমনটা খড়ঙ্গপুর যাওয়ার আগে রেখে গেছিলো। সে বসে আছে চয়নের মাথার কাছে,,,,,,,
খড়ঙ্গপুর যাওয়ার পরে চয়ন খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়ে নিজের কর্ম জীবন নিয়ে। হৃদয় তো দূরে থাক পরিবারের লোকদের সাথেও তেমন কোনো যোগাযোগ হয়না চয়নের। হৃদয় একটা ফোনের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে কিন্তু চয়নের তেমন সুযোগ হয় না। হৃদয় নিজে ফোন দেয় তাও ঠিক মতো রিসিভ করেনা। প্রথম দিকে চাকরীতে কাজের চাপ বেশী থাকলেও পরে তা ধীরে ধীরে কমে যায়। সেই সাথে সাথে কমতে থাকে হৃদয়ের প্রতি চয়নের ভালোবাসার টান। যাই হোক,,,,, কথা কম হয় বলে চয়ন হৃদয়কে একটা আইডি খুলতে বলে এবং সে নিজেও একটি ফেসবুক আইডি খোলে। যাতে কথা না হলেও চ্যাটিং – এর মাধ্যমে একে অন্যের কুশল বার্তা পায়। এখন কথা না হলেও মাঝে মধ্যে একটু আঁধটু চ্যাট হয়। এভাবে চলে গেল প্রায় মাস তিনেক। ধীরে ধীরে চয়নের ফেসবুকে বিচরন বাড়তে থাকে। ফেসবুকে আস্তে আস্তে বাড়তে
থাকে তার বন্ধুর সংখ্যা। চয়ন সমকামী গল্প পড়তে অনেক ভালোবাসে। গল্প পড়ে বরাবর মন্তব্য করা তার একটি অভ্যাস। সেখানেই একজন লেখকের সাথে পরিচয় হয় চয়নের। হাই, হ্যালো থেকে শুরু হয় তাদের আলাপন। নাম তার শতদল। তিনি সমকামী গল্প লেখার বাইরেও অনেক লেখালেখি করেছেন এবং করছেন। অনেক ভালো লাগে চয়নের শতদলের লেখা এবং কথা বার্তা। ফেসবুকের মাধ্যমেই তাদের নাম্বার আদান – প্রদান হয়। শুরু হয় ফোনে কথা বলা। শতদল চয়নকে নিয়ে একটি গল্প লেখেন। যেটা পড়ে চয়ন পুরোপুরি মুগ্ধ হয়ে যায়। এদিকে হৃদয়ের সাথে শুরু হয় মনমালিন্য। একটু একটু করে কথা কাটাকাটিও হয়। যেটা হৃদয় কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। হৃদয় ফোন দিলে চয়ন হাজার ব্যাস্ত। কিন্তু তার ফোন বেশীরভাগ সময় থাকে ওয়েটিং। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দুরত্ব। কিন্তু এদিকে শতদলের সাথে চয়নের সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। কিন্তু ছবি লেন- দেন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো জুলাই মাসের তেইশ তারিখ চয়ন এবং শতদল দিন ঠিক করে দেখা করার জন্য। দেখা হবে খড়ঙ্গপুর পঞ্চানন তলা শিব মন্দিরের সামনে ঠিক সন্ধ্যে ছয়টায়,,,,,
কথা অনুযায়ী চয়ন অটো থেকে পঞ্চানন তলা নেমে সোজা চলে যায় শিব মন্দিরের সামনে। মন্দিরের বা পার্শ্বে পুকুর পাড়ে সিঁড়ির উপর লাল টি-শার্ট পড়া একটি ছেলে বসে আছে। চয়ন এগিয়ে গেল,,, আপনি শতদল? হ্যা। তুমি চয়ন। রাইট? হা হা হ্যা। ভালো আছেন? হ্যা, তুমি? আমিও আছি মোটামুটি। এভাবেই কথা হলো অনেক সময়। সে শোনাল তার জীবন কাহিনী। চয়নও বললো তার সব কথা। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উঠে বাইরে বের হলো তারা। মাটির পেয়ালায় চা খেল। এদিকে বৃষ্টি পড়ছে ঝিরিঝিরি করে। চয়নের কাছে কোনো ছাতা নেই। শতদলের কছে আছে। কিন্তু চয়নের কাছে ছাতা নেই বলে সেও ছাতা খুললো না। এটা চয়নকে অনেকটাই মোহিত করেছে। চয়ন তার ডান হাতের আঙ্গুল গুলো শতর বা হাতের আঙ্গুলের মাঝে ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে রাস্তার পাশে হাটতে লাগলো সামনের দিকে। দুজন দুজনকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরতে চাইল চয়ন। কিন্তু শত যেতে দিল না। আস্তে আস্তে হেটে চলেছে চয়নের গন্তব্যের দিকে। এদিকে বৃষ্টির ফোটা একটু একটু বরে বড় হতে লাগলো,,,,,, রবীন্দ্রসঙ্গীত চয়নের খুব প্রিয়। চয়ন গলা ছেড়ে গান ধরলো,,,,,, শ্রাবনের ধারার মতো, পড়ুক ঝড়ে (২)
তোমারই সুরটি আমার মুখের পরে বুকের পরে,
পোড়াবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই
নয়ানে
নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে, বলুক
প্রাণে (২)
নিশীদিন এই জীবনে সুখের পরে দুঃখের
পরে,,
শ্রাবনের ধারার মতো, পড়ুক ঝড়ে (২)
যে শাখায় ফুল ফোটে না ফল ধরে না
একেবারে,
তোমারই বাদল বায়ে দিক জাগায়ে সেই
শাখায়ে,
যা কিছু জীর্ন আমার দ্বীর্ন আমার জীবন
হারা,,,
তাহারই স্তরে স্তরে পড়ুক ঝড়ে সইয়ের ধারা,,,
নিশীদিন এই জীবনে তৃষার পরে, ভুখের পড়ে,,,
শ্রাবনের ধারার মতো, পড়ুক ঝড়ে (২)
রাস্তার লোকগুলো তাকিয়ে ছিলো। শতের হাত তালিতে ধুম পড়ে যাচ্ছিল। বৃষ্টি আরও জোরে নামলো। দুজনে হেটে যাচ্ছে রাস্তার ধার দিয়ে। শত দেখলো চয়নের চোখ লাল। চয়ন গান গাইতে গাইতে কান্না করছিল। বৃষ্টির জল ধুইয়ে দিচ্ছিল চয়নের কান্না। শতের চোখ সেটা এড়াল না। শত চয়নকে জড়িয়ে ধরলো,,,, কি হয়েছে চয়ন? চয়ন হৃদয় এবং ওর কথা সব খুলে বললো শতকে। শত,,, তাতে কি হয়েছে? সে যখন এখন কাছে নেই আমি তো আছি। আমি তোমার কষ্টের ভাগ নেব। চয়ন একটা হাসি দিলো,,,,,,,,
৪…
এতোক্ষণে চয়ন ও শত দুজনেই কাক ভেঁজা ভিজে গেছে। চয়নের বাসার কাছেও চলে এসেছে ওরা। চয়ন শতকে বললো তার বাসায় যেতে, কিন্তু শত গেল না। চয়নকে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে চলে আসলো শত। চয়ন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শতের যাত্রা পথের দিকে। কিন্তু বিদায়ের পর শত একবারও পিছনে ফিরে তাকায়নি। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর চয়ন ফোন দিলো কিন্তু ধরলো না। চয়ন মনে মনে একটা কবিতা বানিয়ে শতকে টেক্সট করলো,,,, ” যাই বলে চলে গেলা একটি বার ফিরেও তাকাওনি, পিছন ফিরে কি দেখেছিলে আমি যে যাইনি? মনটা তোমার বড় শক্ত বোঝ না কারো মন, সীমিত এই ক্ষণে তোমায় করেছি যে আপন। ফোন দিলাম, ধরলা না যে তুমি? তুমি কি বুঝেছো? কষ্ট পেয়েছি যে আমি!! স্বল্প দিনের স্বল্প সময়ে স্বল্প আলাপন, তাতেই আমি মুগ্ধ হয়েছি, তুমি কি বুঝবে কখন? করবো নাকো যাচাই বাছাই চাই যে তোমাকে,
দোটানায় ভুগছি আমি, তুমি পথ দেখাবে কি আমাকে? লিখতে আমি পারি না গো পড়তে পারি বেশ, নিজের মতো বুঝে নিও নাড়তে নাড়তে কেশ।” মেসেজ পড়ে ফোন করলো চয়নকে। দুজনে বেশ খানিকটা সময় কথা হলো। ঠিক মতো যে যার বাসায় পৌঁছেছে কিনা জেনে নিল। কিন্তু চয়নের মন অশান্ত থাকে প্রায়ই। কারন সে বলতে গেলে এক প্রকার দোটানায় ভুগতে থাকে। কিন্তু শতর কথা বার্তা, আচার আচরন চয়নকে এতটাই টানে যে হৃদয়ের কথা তেমন মনেও পড়তে দেয় না,,,,,,,, এভাবেই চলতে থাকে দিন। শত আর চয়নের মাঝে বন্ধনটা শক্ত থেকে আরও শক্ত হতে থাকে। কিন্তু হৃদয়ের সেখানে কোনো অস্তিত্ব নেই। হৃদয় সেপ্টেম্বরের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু চয়নের যাওয়ার সুযোগ হয়নি। হয়নি নাকি হওয়ায়নি সেটা চয়নই ভালো বলতে পারবে। হৃদয় সবই বুঝতে পারে, কিন্তু সে কিছুই বলে না। কারন তার ভালোবাসায় যে কোনো খাঁদ নেই। সে জানে সে যদি নিঃস্বার্থ ভাবে চয়নকে ভালোবেসে থাকে, তবে অবশ্যই চয়ন হৃদয়ের হবে। কারন তারাই তো হৃদয়-চয়ন। অক্টোবরের দশ তারিখ। রাত প্রায় নয়টা। শত ফোন করে চয়নকে। হ্যালো,,,, হ্যা হ্যালো,, আজ পঞ্চানন তলা আসতে পারবে? কেন? আজ তুমি আমার সাথে থাকবে। চয়ন একটু ইতস্তত বোধ করলেও মনে মনে খুশি হলো। চয়ন রাজি হয়ে গেল। চয়ন তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে চলে গেল নির্দিষ্ট স্থানে। যথা সময়ের আগেই চলে
আসলো চয়ন। কিন্তু শত এখনও আসছে না কেন? অপেক্ষার প্রহর যেন সত্যিই কষ্টের। রাত প্রায় এগারটা বাজতে চললো কিন্তু শত -এর দেখা নেই। চয়নের রাগ হতে থাকলো শত এর উপরে। ঠিক এগারটা দশ এ শতদল আসলো।
এসেই চয়নকে জড়িয়ে ধরলো। সরি সোনা দেরী হয়ে গেল একটু। চয়নও পরমানন্দে জড়িয়ে ধরলো শত কে। চয়নের কপট রাগ নিমেষেই উবে গেল। দুজনে কাছেই একটা হোটেলে উঠল। এক রাতে পাঁচশ টাকা ভাড়া এক রুম। ভাড়া
অগ্রিম দিতে হবে। টাকাটা শতই দিলো। হোটেলের লোক এসে ১০২ নম্বর রুম খুলে দিলো। রুমে এসে ঢুকলো দুজনেই।
ব্যাগ দুটো রেখে ফ্রেশ হয়ে বের হলো দুজনে কিছু খাওয়ার উদ্দেশ্যে। রাত প্রায় বারটা, তাই রেষ্টুরেন্ট গুলো প্রায় সব বন্ধ হয়ে গেছে। শেষে শিব মন্দিরের কাছে একটা রেষ্টুরেন্ট পাওয়া গেল “ জামাই আদর ” নামে। হাল্কা পাতলা কিছু খেয়ে বের হলো দুজনে। বিলটা চয়নই দিলো। ফিরে এলো হোটেলে। হোটেলে এসে যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। শত টিভি বন্ধ করে লাইটটা বন্ধ করে এলো। রুমে দুই পাশে দুটি বেড। শত শুয়েছে পশ্চিম দিকের বেডে। তাই অপর প্রান্তের বেডে চয়ন শুতে গেল। শত বাঁধা দিয়ে বললো, তার সাথেই শুতে। চয়ন আপত্তি জানায়।
শত বিভিন্ন দিক দিয়ে বোঝালো, দুই বন্ধু একসাথে শুলে কি হবে? তারা তো বন্ধুই। চয়ন অবাক হয়ে বললো, বন্ধু? শুধুই বন্ধু? আর কিছু না!! যদি অন্য কিছুও ভাবো তবে অসুবিধা কোথায়? আমরা তো একসাথে শুতেই পারি। অবশেষে চয়ন রাজি হয়। চয়ন ও শতদল শুয়ে আছে পাশাপাশি। হঠাৎ করে শত চয়নকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে একটা কিস বসিয়ে দেয়। কিন্তু চয়ন মুখ সরিয়ে নেয়। শত বার বার তার গরম নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে চয়নের ঘাড়ে। চয়নের শরীর ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। হঠাৎ কেন জানিনা হৃদয়ের কথা মনে পড়লো চয়নের। চয়নের চোখ থেকে জল বেড়িয়ে আসলো। শত লাইট জ্বালালো। আমাকে কি তুমি পছন্দ করো না? না করি তো,,,, তাহলে? তাহলে কেন এমন করছো? পছন্দ হলেই হলো? আমাকে কি তুমি পছন্দ করো? কই একবারও তো নিজের মুখে বলোনি আমি তোমাকে পছন্দ করি বা আমি তোমাকে ভালোবাসি? সবটা কি করে আন্দাজ করে নেব? ও আচ্ছা এই কথা? আরে পাগলা সব কথা কি মুখে বলতে হয়? কিছু কথা বুঝেও নিতে হয়। আমি তোমার আছি তোমারই থাকবো,,,, চয়নের চোখ থেকে পানি পড়ে গেল,,,, জড়িয়ে ধরলো শতকে।
৫…
দুজন আদিম মানব মেতে উঠলো তাদের আদিম
খেলায়। যেন যুদ্ধ চলছে বিছানার ময়দানে।
একে অন্যকে হারানোর প্রানপণ প্রচেষ্টা।
প্রায় ঘন্টা দেড়েক এরকম চললো। এক পর্যায়
হাঁপিয়ে গেল দুজনেই। পড়ে রইল নিথর দুটি
উন্মুক্ত দেহ। সারা শরীরে ঘাম্রস্নান।
রাত প্রায় তিনটা বাজে। শত ঘুমিয়ে পড়েছে।
চয়ন শত – এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নিজের গায়ের চাঁদরটা এনে শতর গায়ে
দিয়ে দিলো।
এভাবেই কেটে গেল সারা রাত।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে যে যার গন্তব্যের
উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
চয়ন বাস স্ট্যান্ড আসলো শতকে উঠিয়ে
দিতে। শত বললো,, তোমার কাছে কিছু টাকা
হবে?
লাগবে? কতো??
এমম ধরো হাজার পাঁচেক।
পাঁচ হাজার???
হ্যা হবে? আচ্ছা দাড়াও দেখছি।
চয়ন মানি ব্যাগ বের করে পাঁচ হাজার টাকা
দিলো শত – এর হাতে।
শতকে বিদায় জানিয়ে চয়ন চলে এলো তার
কর্মস্থলে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফোন
দিল শতকে। ঠিকঠাক মতো পৌঁছেছে কিনা
জানতে। কিন্তু শত ফোনটা ধরলো না। চয়ন
আবার ফোন দিলো তাও ধরলো না।
সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হলো তাও কোনো খবর
নেই। এতোক্ষণে প্রায় পঞ্চাশ বার ফোন
দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু কেউ ধরলো না।
ফেসবুকে ঢুকে মেসেজ দিলো চয়ন। কিন্তু
তারও কোনো রিপ্লে নেই।
রাত দশটার দিকে একবার ফোন ধরলো শত,,
কি হলো ফোন কেন ধরছো না? চয়ন কেঁদে
দিলো,,
ব্যাস্ত ছিলাম। আর মেয়েদের মতো এতো
ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদো কেন? কথায় কথায়
ন্যাকামি,,,
অবাক হয়ে গেল চয়ন। এ হেন আচরণ কেন
করছে চয়ন?
মানে? আমি ন্যাকামি করছি?
ধুর,,,, ছাড়ো তো!! পরে কথা বলবো। আমি
ব্যাস্ত আছি।
আচ্ছা শোনো, তুমি ঠিকঠাক মতো
পৌঁ,,,,,টুট,,,,টুট,,,,টুট,,,
ফোনটা কেটে দিল শত। কি হচ্ছে এসব? হঠাৎ
কেন শতর এতো পরিবর্তন? এর আগে তো
এরকম কখনও করেনি!! এতো ব্যাস্ততা তো
কোনোদিন দেখায়নি। তবে কি আমি ভুল
করলাম?? মনে মনে বললো চয়ন।,,,,,
এভাবেই কেটে গেল এক মাস। শত পুরোপুরি
বদলে গেছে।।সে এখন আর চয়নের সাথে
ক্রতা বলতে চায় না। যদিওবা বলে তাও
অনেক বিরক্তির সঙ্গে।
আজ কাল চয়ন হৃদয়কে খুব মিস করে। মাঝে
মাঝে হৃদয়কে ফোনও দেয়। কিন্তু এখন আর
হৃদয় ফোন ধরে না।
আজকাল নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় চয়নের।
বড্ড অপরাধী লাগে নিজেকে।
এটা আমি কি করলাম!! আজ আমি সব
হারালাম। আর হবেই না বা কেন? কাউকে
কষ্ট দিয়ে অবহেলা করে কি আর নিজে সুখী
হওয়া যায়?
হৃদয়ের কথা মনে হতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে
চয়নের। কেন আমি এমন করলাম!! খাঁটি হীরা
ছেড়ে শেষে কিনা আমি কয়লার প্রেমে
নিমজ্জিত হলাম। এসব মনে মনে বলে
আর্তনাদ করছে চয়ন।
নভেম্বরের সাত তারিখ,,,, চয়ন নিজের রুমে
বসে টিভি দেখছে। চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে
দেখলো শতকে টিভতে দেখাচ্ছে ন্যাশনাল
চ্যানেলের খাস খবরে। শত জাতীয় পুরষ্কার
পেয়েছে। স্বয়ং মুখ্য মন্ত্রীর হাত থেকে।
তার একটা কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।
যেটা পাঠকদের মন কাড়তে সাহায্য করেছে।
তাই তার এই এ্যাওয়ার্ড।
শত খারাপেের মাঝেও চয়নের মনটা ভালো
হয়ে গেল।
কি করে সম্ভব? চয়ন কিছুতেই বিশ্বাস করতে
পারছে না যে এতো বড় মাপের একজন মানুষ
তার সাথে এমনটা করতে পারলো??
চয়ন আর সাত পাঁচ না ভেবে শতকে একটা
ফোন দিয়েই ফেললো। কিন্তু চয়ন যতবার
ফোন দিচ্ছে শত ততোবার ফোনটা কেটে
দিচ্ছে।
চয়ন ভীষণ রকমের কষ্ট পেল। নিজের প্রতি
ঘৃনা জন্মাল চয়নের।
৬…
কি করলাম এটা? একটা মানুষরুপী শয়তানকে
ভালোবাসলাম আমি? প্রকৃত ভালোবাসা
মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আমি ছুটলাম
মরীচিকার পিছনে?
এরা তো এক একজন নামি দামী মুখোশ ধারী
শয়তান। নিজ স্বার্থ সিদ্ধি হয়েছে তো কাজ
শেষ। এরা এক একজন সমাজের শত্রু। মুখোশের
আড়ালে।
চয়ন এখন নিঃশ্ব। একূল ওকূল দুকূলই হারালো
সে। এমতাবস্থায় মাথায় খারাপ বুদ্ধি আঁটলো
চয়নের। বেছে নিল সে আত্মহত্যার পথ।
রাত আটটা বাজে। শেষ বারের মতো হৃদয়
এবং শত দুজনেই ফোন দিলো। কিন্তু কেউই
ধরলো না।
চয়ন প্রায় সত্তর টা মিডোজোলাম খেল এবং
নিজের হাতর কব্জি বরাবর রগের উপড় ব্লেড
দিয়ে মোট ছয়টা কাটা দিয়েছে।
শুয়ে পড়লো দরজা বন্ধ করে। ঘরের টিউব
লাইটটা জ্বালানো। অন্ধকারে চয়নের বড্ড
ভয় করে কিনা!!
চয়ন দেখছে ডান হাতটা বুকের উপরে সাদা
গেঞ্জিটা রক্ত বর্ণ ধারন করেছে।
ডান হাতটা বেডের উপর দিয়ে ঝুলে আছে
নিচের দিকে। মধ্যমা দিয়ে ফোটা ফোটা
করে লোহিতকণা মেঝেতে বেয়ে পড়ছে।
চয়নের বড্ড ঘুম পাচ্ছে। চারিদিক কেমন
অন্ধকার হয়ে আসছে।
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। চয়ন চোখ খুলে
দেখে সে বিছানায় শোয়া। বেডটায় সাদা
রঙের চাঁদর বিছানো। বেডটা বেশ ছোটো।
বুঝতে পারলো সে তার বিছানাতে নেই।
তবে সে কোথায়? বিছানা ছেড়ে উঠতে গেল।
হাতটা কেমন ভারি ভারি। দেখে হাতে
ব্যান্ডেজ করা। মাথার উপরে রডের সাথে
ঝোলানো একটা প্যাকেট। সেই প্যাকেটের
একটা তার ওর হাতের সাথে জোড়া দেওয়া।
এতোক্ষণে বুঝলো সে হাসপাতালে। আস্তে
আস্তে মনে পড়ে গেল তার আগের ঘটনাগুলি।
তার মানে সে মরেনি। তা কি করে সম্ভব?
আর ওকে হাসপাতালেই বা কে আনলো? তাও
এই স্বদেশ হাসপাতালে,,,,।
চয়ন সেলাইনের তারটা টেনে খুলতে গেল।
পিছন থেকে কে যেন এসে হাতটা ধরে
ফেললো।
কি করছো এগুলো?
মানে? তুমি? তুমি এখানে কেন? কিভাবে
এলে?
আমি এখানে কেন তুমি জানোনা?
তুমি এরকম করলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো
বলো?
এরপরও তুই এসব বলবি?
তো কি করবো বলো? তুমি ভুল করতে পারো,
কিন্তু আমি তো পারিনা!! কারন আমি
তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।
মানে? কি বলছো তুমি? আমি তো তোমাকে
ঠকিয়েছি।
না তুমি ঠকাওনি। ওটা আমার নিয়তির দোষ।
আমি জানতাম বাবু,,, আমার ভালোবাসা যদি
সত্যি হয় তবে একদিন না একদিন তুমি আমারই
হবে।
তুমি জানলে কি করে আমি এভাবে করবো?
তোমার পাশের রুমের মৃদুল দাদার সাথে
আমার কথা হতো। আমি সেখান থেকেই
তোমার খবরাখবর নিতাম। তোমার ফোন
ধরতাম না। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম,
আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস করো বাবু আমি এরকমটা
তোমাকে দেখতে চাইনি। হৃদয় বললো,,,,,।
চয়ন হৃদয়কে জড়িয়ে ধরলো,,, I LOVE YOU বাবু।
I LOVE YOU SO MUCH…..
হৃদয়ও চয়নকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও
তোমাকে ভালোবাসি বাবু, অনেক
ভালোবাসি।
হৃদয় বাইরে গেছে চয়নের জন্য জল আনতে।
সেই ফাঁকে চয়ন ফোন করলো শতদলকে।
হ্যালো,,,, এতো রাতে ফোন করেছো কেন?
শত আমি হাসপাতালে।?
মানে? কেমন করে??
আমি সুইসাইড করতে গেছিলাম।
কি? এসব পাগলামো ছাড়ো। আমি এসব পছন্দ
করিনা।
টুট,,,,,,,টুট,,,,,,,,,টুট,,,,,,,,,,,,,টুট
চয়ন মোবাইল থেকে সিমটা খুললো। সিমটা
খুলে ভেঙ্গে বেডের নীচে ডাস্টবিনে ফেলে
দিলো। আজ থেকে শতদল নামটা জীবন থেকে
মুছে ফেললো হৃদয়। পাঁচ হাজার টাকা তুই খা।
সুখী হ তুই। আজ আমিও সুখী।
হৃদয় জল নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। জলটা
টেবিলে রেখে হৃদয়কে আবার জড়িয়ে ধরলো
চয়ন। ভালোবাসি তোকে খুব ভালোবাসি,,,,
আমিও তোমাকে ভালোবাসি, বড্ড
ভালোবাসি।
রাত ফুরিয়ে দিনের আলো দেখা দিয়েছে।
পূর্বাকাশে দেখা দিয়েছে নতুন রবি। রাতের
নিকষ কালো তিমির কাটিয়ে উঠে পড়েছে
রক্তিম আভা ছড়িয়ে ভানু মহাশয়।
সেই সঙ্গে কেটে গেছে চয়ন ও হৃদয়ের
জীবনের সব আঁধার।
নব প্রভাতে দেখা দিয়েছে নতুন আনন্দধারা।
নতুন করে বয়ে এনেছে সুখের আলো হৃদয়-
চয়নের জীবনে।
** শেষ ভালো যার, সব ভালো তার**
উৎস: অন্যভুবন
প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ০৮, ২০১৬