অতিপ্রাকৃত

রিয়েল ফ্রেন্ড

ভৌতিক বিষয়ে সবার একটু আগ্রহ বেশি থাকে বলে ভাবলাম এই বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখে ফেলি। আজ আমি যে ঘটনার বিবরণ দিব তা ভৌতিক না বললেও অতিপ্রাকৃত বলা চলে।

লোকচক্ষুর অন্তরালে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা কেবল সবার কাছে রহস্যের আড়ালে থেকে যায়। যার কারণ কেউ ব্যাখ্যা করতে পারে না। বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়টাতে পিছিয়ে নেই। যা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে বিজ্ঞান তা মেনে নেয় না। কারণ বিজ্ঞানের চাই উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। বেশি কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় ফিরে আসি, কী বলেন?

১। প্রথমেই শুরু করা যাক আমার জন্মের সময়ের ঘটনা দিয়ে। আমার জন্ম হয় ৩০ অক্টোবর দিবাগত রাত ১ টার পর। দাই মা আমার ভূমিষ্ঠের পর সবাইকে খুশীর খবর দিয়ে যখন আবার আঁতুড় ঘরে যায় তখন নাকি তিনি আমার মাথার পাশে মিষ্টি দেখতে পান, যা কিনা গরম তৈরি করা ছিল। মিষ্টিটি নাকি একদম অক্ষত ছিল। বিড়াল বা অন্য কোন প্রাণী এনে থাকলে অক্ষত থাকার কথা না। যাই হোক সে ঘটনার পর থেকে আজ অবধি সবাই আমাকে বিশেষ কিছু মনে করে থাকে।

২। তখন আমার বয়স সবে মাত্র ৩ এর কিছু বেশি। আমার কিছু অদ্ভুত গুণাবলীর জন্য এর মধ্যে আমি অনেকের কাছে বাবা সমতুল্য হয়ে যাই। সে সময় আমি আমার বাবা-মা এর সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে যাই। বাড়িতে যাওয়া মাত্র আমার মায়ের চাচী-মা এসে বলে- “আমাগো রাসেল (মায়ের চাচাত ভাই) কেমন পাগলামি করতাছে কয়দিন যাবত। তোর ছোট পোলাডারে দিয়া একটু ঝাড়াইয়া দেস না।’’ যদিও এসবের আমার কিছু মনে নেই সবই মায়ের কাছ থেকে শোনা। আমি নাকি সে সময়ে নানুকে বলি রাসেল মামা আর আমাকে একটা ঘরে রাতে তালাবন্ধ করে রাখতে। আমার কথা মত তাই করা হল। সকাল বেলা রাসেল মামা সুস্থ ভাবে আমাকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। এই ঘটনার পর আমার কদর আকাশচুম্বী হয়ে যায়।

৩। এর কিছুদিন পর এক বৃদ্ধ বাসার দরজায় সাহায্যের জন্য টোকা দিচ্ছিল। মা আমাকে কোলে নিয়ে তাকে বাটিতে করে কিছু চাল দিতে গেলে সে বৃদ্ধ নাকি আমার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকেন। তারপর মা কে বলেন- “তোমার ছেলের উপর উপরিভাব আছে। একটা সময় সেটা চলে যাইব। ওর (আমার) যখন ভারী বয়স আসব তখন আবার আসব। শনিবার আর মঙ্গলবার ওরে তিন রাস্তার মুখে বা গাছের নিচে যাইতে দিবা না। ওর মাথার চুল কখনো ন্যাড়া করবা না। আর ওরে কখনো দরজা বরাবর ঘুমাতে দিবে না।’’ তার কথার পর সে কাজগুলি পালন করা হয়। এর পর কখনো আমার মাথা ন্যাড়া করা হয়নি। মজার বিষয় হল আমি এখনো ঘরের দরজা বরাবর ঘুমাতে পারি না। প্রচণ্ড সমস্যা হয়। কিছুদিন আগের কথা। প্রচণ্ড গরম পড়ায় আমি ঘরের দরজা খুলে দরজার পাশে নিচে বিছানা পেতে ঘুমাই। এর কিছুক্ষণ পর ঘুমে দেখতে পাই যে দুইটা চিকন টাইপের সাপ ধেয়ে এসে আমার নাক দিয়ে ঢুকছে। আমি তখন ঘুমে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম আমার গলায় কিছু নামছে। তখন আমি দ্রুত ঘুম থেকে জেগে উঠে বসি। দেখি আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। দ্রুত নিজেই নিজের গলা চেপে ধরে আয়াতুল কুরসি মনে মনে পড়তে থাকলাম। তখন খেয়াল করলাম আমার নাক দিয়ে গরম ধোঁয়ার মত দ্রুত গতিতে বের হয়ে গেল। এখন ভুলেও আমি দরজা বরাবর ঘুমাই না।

৪। আমি সাইকিক টাইপের ছেলে। আল্লাহ আমাকে হয়ত এই বিশেষ গুণটি দিয়েছেন। ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কিছু আমি অনেক আগেই স্বপ্নে দেখতে পেতাম। এখনও হয়ত মাঝে মাঝে দেখি। অনেক ঘটনাই ঘটেছে এমন সব লিখে বলা সম্ভাবনা বিধায় দুটি ঘটনা বলছি।

(ক) আমি সবে মাত্র ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। ‘৮৯ সালের কথা। আমি রাতে ঘুমে স্বপ্ন দেখি আমার বয়সী আমার ছোট মামার মেয়ে আমাদের বাড়ির আমার কোন এক ভাইয়ের বৌ। আমি স্বপ্নের কথা সবাইকে বলতেই হাসতে থাকে। এর কয়েকবছর পর ১৯৯৯ সালে সেই মামাতো বোনের সাথে আমার মেজ ভাইয়ের বিয়ে হয়।

(খ) তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। এসএসসি এর প্রিপারেশন নিচ্ছি। টেস্ট এক্সাম শেষ। সবাই তখন স্যারদের কাছে ইম্পরট্যান্ট সাজেশনের জন্য যাওয়াতে ব্যস্ত। আমাদের সময় অনেকেই ভূগোল বিষয়টাকে ভয় পেত। তেমনি আমিও। একদিন রাতে ঘুমে স্বপ্ন দেখি আমি ভূগোল পরীক্ষা দিচ্ছি। রচনামূলকে ক-সেট প্রশ্ন আর নৈর্ব্যক্তিকে গ-সেট প্রশ্ন পড়েছে। মজার বিষয় সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি সেরকম একটা প্রশ্ন করে আমার সাথে যার সম্পর্ক খারাপ ছিল তাকে সাজেশন হিসাবে দেই। আশ্চর্যজনক ভাবে হুবহু সেই প্রশ্ন আসে যার দাড়ি কমা পর্যন্ত ঠিক ছিল। পরীক্ষা শেষে সেই বন্ধুটি আমাকে বলেছিল- তুই যে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দেস তা আমি জানতাম না।

৫। এতক্ষণ যা বলছিলাম সবই নিজের গুণগানের মত। এবার আসি একটু ভুতের ফ্লেভারে। ঘটনাটি ২০০৯ সালের। সে বছর জুন মাসে একটা নতুন বাড়িতে ভাড়া যাই। যে ফ্ল্যাট ভাড়া নেই তাতে আগে সেই বাড়ির মালিকেরাই থাকত। আমরা সেই বাসায় ভাড়া যাওয়ার আগে ওই বাড়ির চিলেকোঠায় বাড়ির মালিকের একমাত্র ছেলের ত্রিখন্ড লাশ পাওয়া যায়। সেই ঘটনার পর ছেলেটির মা বাড়িতে মিলাদ না পড়িয়েই নিজ বাড়ি ছেড়ে ভাইয়ের বাসায় চলে যায়। বিষয়টা না জেনেই আমি ফ্ল্যাট ভাড়া নেই। ভাড়াও কম ছিল। ওই বাড়িতে উঠতেই দেখি শুধু দারোয়ান বদল হয়। কেউ ২ বা ৩ দিনের বেশি থাকছে না। শেষের যে চাচাটা চলে যান তিনি আমাকে বলেন- “বাবাজি ভুলেও রাত্রে ছাদে যাবেন না। আমি গিয়া দেহি চিলেকোঠার তালা খোলা। ঘরের মেঝেতে তাজা রক্ত। আর রাত্রে বেলা কে জানি সিঁড়িতে পায়চারি করে। ঘুমাইতে পারি না।’’ তার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। তারপর লোকমুখে শুনতে পাই সেই খুনের ঘটনা যা আজও অজানা। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এর দুয়েকদিন পরে রাত্রে আমি প্রস্রাব করতে উঠলে দেখতে পাই আমাদের সদর দরজা খোলা। সকালে অফিসে গেলে মা আমাকে ফোন করে বলে কেউ একজন নাকি মাছ কোটার সময় বটিতে তাকে চেপে ধরছিল। আমার ভাতিজা সেই সময় তার কাছে যেতেই সেটা মাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় মা প্রচণ্ড ভয় পায়। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরে আসি। কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসি। উদ্দেশ্য পরের দিন সকালেই সে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া। রাত্রে মা তার ঘরে শুয়ে ছিল। এমন সময় মা চিৎকার দিয়ে আমাকে বলে যে কেউ তাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। আমি মাকে আমার ঘরের পাশে নিয়ে আসলাম আর আমি আর আমার সাথের লোকজন কথা বলছিলাম। এমন সময় মা চিৎকার দিয়ে বলে কেউ তাকে তুলে নিয়ে যেতে চাইছে। আমরা দ্রুত সেখানে যাই। আমি মাকে বলি- তুমি ঘুমাও আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি মনে মনে বিভিন্ন সুরা পড়তে থাকলাম। আমি দেখতে পেলাম কেউ আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরছে প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মাঝারি গড়নের এক কালো মানব ছায়া আমার চার পাশে ঘুরছে। আমি তখন শব্দ করে আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকলাম। সাথে সাথে সেটা হাওয়া হয়ে যায়। আমি তখনি পাশের মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবকে এনে সেই রাতেই ঘরে সেই ছেলেটির জন্য দোয়া পড়াই যাতে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত হয়। পরের দিন সকাল বেলা সেই বাড়ি থেকে আমরা চলে যাই। এর পর আমি সেই বাড়ির খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমরা চলে যাওয়ার পর ২ মাসের মধ্যে ৩ ভাড়াটিয়া গেছে। সে ফ্ল্যাটে এখন বাড়ির মালিকেরাই থাকছে।

ৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.