
রিয়েল ফ্রেন্ড
শিশু নির্যাতন বা চাইল্ড এবিউজ সম্পর্কে বর্তমানে শিক্ষিত ও সভ্য সমাজে(?) কম বেশি অনেকেই জানে। প্রশ্নবোধক চিহ্ন কেন দিয়েছি তা হয়ত অনেকেই বুঝেছেন। এই প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়েই পড়ে না থাকি। যে বিষয়টা নিয়ে আমি লিখতে চেষ্টা করছি তার ভয়াবহতা যে কতটুকু তা শুধু একজন ভুক্তভোগী ভালো বলতে পারবেন। সম্মানার্থে বলা এই অর্থে কারণ এই শিশু নির্যাতন অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে এবং হচ্ছে। দেশ-বিদেশে এই বিষয়ের উপর অনেক ছবি বা ডকুমেন্টও হয়েছে। আজ আমি আসছি আমার নিজের উপর নির্যাতনের ভয়াবহতা আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিতে। এই জন্য যে, আমার এই পোস্ট থেকে যদি একজনও এর থেকে শিক্ষা নিয়ে সচেতন হয় তবেই আমার এই লেখার সার্থকতা। আমাকে নির্লজ্জ বলবেন বা হাসাহাসি করবেন, কোন সমস্যা নেই।
এবার আসি আসল ঘটনায়। যে কারো জন্য অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে উভয়ের জন্য শিশুকাল হচ্ছে নিজেকে গঠনের একটা উপযুক্ত সময়। একটা বাড়ন্ত গাছকে খুঁটি দিয়ে সোজা করে দিলে যেমন গাছটি সোজা বড় হতে থাকে তেমনি শিশুকাল হচ্ছে মানব গঠনের সময়। ফ্রেমের মত। ফ্রেম যেমন হবে আকারটা তেমনি হবে। শারীরিক বা মানসিক যে কোন নির্যাতনের ভয়াবহতাই মারাত্মক। বিভিন্ন ভাবে এসব নির্যাতন হতে পারে। সেসবের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী হিসাবে আমি বলতে পারি শিশুকালে যৌন নির্যাতন হলে তা শিশুর শারীরিক এবং মানসিক দুটারই মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সে ঘটনা বলছি যা মনে পড়লে এখনো আমি আঁতকে উঠি।
আমি যখন খুব ছোট, বয়স কত হবে ৭ কি ৮। খুব চটপটে স্বভাবের ছিলাম। রেসলিং এর দারুণ ভক্ত ছিলাম। বাসায় বড় ভাই বা কাজিনদের সাথে রীতিমত কুস্তি প্রতিযোগিতা করতাম। মাশাআল্লাহ বেশ নাদুস নুদুস ছিলাম। সেই সময় আমার এক খালাত ভাই যে আমার থেকে ১২-১৩ বছরের বড়, সে আমার সাথে বেশি কুস্তি খেলত। সে সময় সে আমাকে কুস্তি খেলার ছলে বেশ ভালভাবেই জড়িয়ে ধরত। তার সেই ধরা তখন আমি বুঝতে পারতাম না। সে আমাকে ভোগের মোক্ষম সময়ের অপেক্ষাতে ছিল যা কিনা আমার পরিবারের কেউ বুঝতেও পারেনি। তেমনি একদিন বাসার সবাই বাইরে যাবে, আমি ছিলাম স্কুলে। সেই সময় আমার সেই ভাইটি আমার মায়ের কাছ থেকে চাবি রেখে বাসায় সে অপেক্ষা করতে থাকে। আমি স্কুল থেকে ১২টার পরেই ফিরে আসি। আসলেই সে আমাকে কুস্তি খেলার আহ্বান করে। আমিতো আনন্দে রাজি হয়ে যাই। এই কুস্তির আগে সে আমাকে বুঝিয়ে বেশি করে জর্দা দিয়ে পান খাওয়ায়। যার ফলে আমার মাথা ঘুরতে থাকে। এর পর যা হবার তা হয় আমার সাথে। সে আমাকে অনেক টক খাইয়ে স্বাভাবিক করে ঠিকই, কিন্তু তখন আমার নিজেকে মৃত দেহের একজন মনে হচ্ছিলো। সে আমাকে প্রচণ্ড ভয় দেখায়। কাউকে বলতে না করে। আমাকে এমন ভয় দেখায় যে যদি কেউ এই ব্যাপারটা জানে তাহলে নাকি আমাকে মেরে ফেলবে। আমার তখন এমন ভয় ঢুকেছিলও যা আমি লেখায় সেই অনুভূতি আপনাদের বোঝাতে পারব না। সেই ভয়াবহতা আমার মনে অনেক বিষয়ে ফোভিয়া এনে দেয়। সেই ঘটনার পর থেকে আমি বাবা বাদে কারো কাছে মানে কোন ছেলেদের কাছে ঘেঁষতাম না। এমনকি আমার আপন ভাইদের সামনেও। আমার পছন্দের সেই কুস্তি খেলা সেই যে অপছন্দের হল, এখনো আছে। আমি রাতের পর রাত ঘুমাতে পারি নাই। দুরন্ত, চটপটে সেই আমি একদম মনমরা হয়ে যাই। এখনো আমি রাতে একা ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। ভীতুর ডিমে পরিণত হই আমি। আমার সাথে এমন না ঘটলে হয়তো বা এমন গোপনে লেখা লাগত না। হয়ত প্রকাশ্যেই লিখতাম। হতে পারতাম কোন বড় বিজ্ঞানী বা লেখক!
এত গেল মানসিক ব্যাপার। শারীরিক ভাবেও অনেক পরিবর্তন আসে। কথায় আছে না বাঘ একবার নরমাংসের স্বাদ পেলে বারবার লোকালয়ে ছুটে আসে, তেমনি আমিও তখন থেকেই নরদেহের স্বাদ নিতে উদগ্রীব হয়ে পড়ি। সেই শিশুকাল থেকেই আমার মধ্যে সেক্স কাজ করে। কার্বাইডে পাকানো ফল আর কত ভালো থাকে বলেন তো?
তখন যদি এই বিষয়টা বেশ আলোচিত থাকতো হয়ত আমার পরিবার সেদিন আমাকে সেই নরপিশাচ ভাইয়ের কাছে রেখে যেত না। সবাইকে বলছি, একবার ভেবে দেখুন তো! আপনি যার কাছে আপনার আদরের সন্তান বা ভাই-বোন কে রেখে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তির কাছে তারা কতটুকু নিরাপদ? যদি বাড়ির বা আশেপাশের কোন শিশুকে এমন মন মরা দেখেন বা মুখচোরা স্বভাবের তাহলে চেষ্টা করুন সেসব শিশুদের যথাযথ মানসিক সাপোর্ট দিতে। এতে সে হয়ত তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
উৎস: অন্যভুবন
প্রথম প্রকাশ: জুলাই ১, ২০১৫