দেহ

মাসুদ ইসলাম

জগত সংসার তার নিজ নিয়মে চলছে। এক মুহুর্তও থামার সময় নেই। সময় ও স্রোতের ন্যায় এর মানুষেরাও এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার মূল কারন সুখের সন্ধান। কেউ এই জগতের সত্য সুখের সন্ধান পেয়েছে, আবার কেউ খুঁজেই যাচ্ছে।

সুখের সংজ্ঞাটা একেক জনের কাছে একেক রকম।  মানব জাতির সবার কাছে সুখের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে অর্থ সম্পদ। এর বাইরে আরেকটা সুখের নিয়ামক আছে। সেটা হচ্ছে দেহের সুখ। মানব জাতি থেকে শুরু করে সকল প্রাণী জগতের সুখের অন্যতম নিয়ামক এই “দেহ সুখ”।

একেকজনের কাছে এই দেহ সুখের সংজ্ঞা একেক রকম। অনেকেই আছে যৌন ক্ষুদা মিটাতে দেহ খেলাতে মেতে উঠে, আবার কেউ আছে নিজেকে বাঁচাতে দেহের খেলায় মেতে উঠে।

এই “দেহ” গল্পটি তেমনি তিনটি অনুগল্পের সমন্বয়ে রচিত। এর প্রতিটি গল্পই বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে রচিত।

———-

১।

“আমার জীবনটা পাখির মত। কখনো এই গাছের ডালে তো, কখনো আরেক গাছের ডালে। কোথাও স্থির হতে পারিনি। জীবনের এই শেষ সময়ে এসে বুঝতে চাচ্ছি এর মানে কি? আমি কি জীবনকে অবহেলা করেছি নাকি জীবন আমাকে নিয়ে খেলেছে অবিরত? কি হবে আর এইসব ছাইপাশ ভেবে? আসলেই কি না ভেবে কোন উপায় আছে?

মানুষের জীবনটা যে ক্ষণিকের। এই বোধোদয়টা কেন আমার আগে হল না? আজ যখন আমার এই হুশ হয়েছে তখন অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। এই জীবনে টাকাও যেমন আমি কামিয়েছি, তেমনি নামযশও বেশ পেয়েছি।

আজ আমি একা। আমার এই নিঃসঙ্গতায় কেউ কাছে নেই। নেই কোন আপনজন যার কাছে চাইবো আমি আমার আশ্রয়।

হায়রে এই জীবন আমার!!”

আমার কাছে লেখা সনেটের চিঠি। আমি হচ্ছি সনেটের সেই বন্ধু যার কাছে সে আনন্দে থাকলেও এসেছে, তেমনি এসেছে তার চরম দুঃখের সময়ে। আমাকে বলা যায় সনেটের জীবন্ত ডায়েরী। ও যে ওর সব কিছু আমার কাছে শেয়ার করেছে। যেমনি একজন ডায়েরীতে লিখে।

ওর চিঠিতে লেখা “জীবনের এই শেষ সময়ে” এই কথাটা প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারি।

———-

যশোরের মনিরামপুর একটি গ্রাম। এই গ্রামের ছেলে সনেট। যদিও সনেট ওর মিডিয়ার দেওয়া নাম। পরিবারের দেওয়া নাম আশফাকুল আলম।

আমার সাথে সনেটের দেখা হয় কাজিপাড়ার এক মেসে। এইচএসসি পাশ দিয়েই ঢাকা চলে আসি। উচ্চশিক্ষা নিতে। আমাদের মত গরীব কৃষকের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা নিতে হলে একটু বেগ পোহাতেই হয়।

আমি আর সনেট একই রুমে থকতাম। আমাদের সাথে আরো দুজন থাকতো। মাস শেষে এই থাকার জন্য গুনতে হতো ৮০০ টাকা। এই ৮০০ টাকা যোগাড় করাও আমার জন্য অনেক কষ্টের হয়ে যেত।

সনেটেরও যে আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল তা নয়। কিন্তু এইভাবে গাদাগাদি করে থাকা নিয়ে ওর বাবুগিরি ভাবখানা আমাকে বেশ জ্বালাই ধরাতো।

একদিন আমি সনেটকে বলি, “কষ্ট কাকে বলে বোঝ?”

আমার কথায় সে শুধু “হুহ” বলে মৃদু হাসি দিল। কিছুসময় চুপ থেকে বললো-“কষ্টেই যে আমার নিত্য বসবাস। আর তুমি জিজ্ঞাস করছো কিনা কষ্ট কি? হাসালে আমায়।”

ওর কথায় একটু অবাকই হই। রাজপুত্রের মত দেখতে মানুষের যে কষ্ট থাকতে পারে সেকথা ভুলেই গিয়েছিলাম।

ও মনে হয় কষ্টকে ভুলে থাকতে একটা সিগারেট ধরালো। কিছুক্ষণ নিরবে সিগারেটে কয়েকটা সুখটান দিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো-

“জানো মাসুদ। আমার জন্মটাই কষ্টের। যেদিন আমি পৃথিবীর মুখ দেখি সেদিনই আমার বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। সবাই আমাকে অপয়া বলে। শুধু আমার মা ব্যতীত। আমি যে ছিলাম তার নাড়ি ছেঁড়া ধন।

জন্মের পর থেকেই বাবার আদর কি দেখতে পাই নি। এই মা ই আমাকে বাবার আদর দিয়ে বড় করে যাচ্ছেন। আমাকে লালনের জন্য তিনি তার শ্বশুরালয়ে ঝি এর কাজ করতেও দ্বিধা করেন নি। এখনো করছেন। আমি এমনি এক………”

সনেট আর বলতে পারছিলনা। আমি গিয়ে সনেটকে আমার বুকে জড়িয়ে নিলাম।

বললাম-“আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। তুমি যে নিজের মাঝে কষ্টের পাহাড় লালন করে আছ তা আমি জানতাম না। আমায় ক্ষমা করো বন্ধু।”

———-

সনেটকে দেখলে মনে হয় গ্রীক দেবতা নারসিসাসও হিংসা করতো। যেমন ছিল তার দেহাবয়ব, তেমনি তার গায়ের ত্বক। দুধে আলতা রঙ। সৃষ্টিকর্তা যেন সমস্ত সৌন্দর্য সনেটের মাঝে ঢেলে দিয়েছে।

সে সময় একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে সুপার হিরো-সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতা হয়। আমি সনেটকে অনেক উৎসাহ দেই অংশ নিতে। অনেকটা আমার জোরেই সে অংশ নেয়। এই অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তাকে যে আমি অন্ধ গলির মুখে ঠেলে দিয়েছি তা আমি বুঝতে পারিনি।

যদিও সে ঐ প্রতিযোগিতায় জিততে পারেনি, তারপরেও তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

শুরু হয় তার একের পর এক ফটোসেশনের পর্ব। অফার আসে দেশের বৃহৎ মোবাইল অপারেটরের বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার। সেই যে তার শুরু হল আর থেমে থাকতে হয় নি।

এর জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়। কম্প্রোমাইজ করতে হয় অনেকবার। সেও নিজেকে।

———-

প্রথম যখন সে নিজেকে বিকিয়ে আসে তখন সে আমাকে ধরে অনেক হাউ মাউ করে কাঁদে।

“এই অর্থের জন্যই আমার মা এখনো নিজ শ্বশুরবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছে। সুখ কি জিনিস সে দেখেনি। আমার নিজেকে দিয়ে হলেও যদি আমি আমার মায়ের মুখে হাসি আনতে পারি তাহলেও একজন সন্তান হিসাবে আমি নিজেকে সার্থক মনে করবো।”- কান্না জড়িত কন্ঠে সে বলে।

আমি সেদিন তাকে আর কিছু বলতে পারলাম না। তখন মনে হয়েছিল সে ই সঠিক।

সনেটের মিডিয়ার জগতে আসার কিছুদিনের পরই তার মা ইন্তেকাল করেন। ইহজগতে আমি ব্যতীত তার আর আপন কেউ রইলোনা। মায়ের প্রস্থানে সে প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে যায়।

আবারো প্রভাবকের ভূমিকায় আমি নামি। তাকে স্বাভাবিক হয়ে মডেল হওয়ার দৌড়ে আবার আমি তাকে নামিয়ে দেই।

———-

মায়ের প্রস্থানের পর সনেট অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠে। নেশাও শুরু করে দেয়। কাজের জন্য সে নিজে শিকার হতে হতে এখন সে নিজেই শিকারে ব্যস্ত। সেও পুরুষ মানুষের দেহ। এটাই এখন তার বড় নেশায় পরিনত হয়েছে।

ওর এই অগোছালো জীবনটা দেখে আমি অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকেই তাই সনেটের থেকে দূরে সরিয়ে নিলাম। চলে এলাম সনেটের বাসা থেকে অন্য এক মেসে। এই চলে আসা যেন বনবাসের মত লাগছে। বুঝতে পারি এই এক টান। অদ্ভুত টান। ভালোবাসার টান যাকে বলে। সনেটের প্রতি আমার এই ভালোবাসার টানে কোন দৈহিক সুখ ছিলনা। হয়তো এই দেহের টান ছিলনা বলে সে আমার অনুপস্থিতি মেনে নিতে পেরেছিল। হায়রে দেহের ভালোবাসা!

———-

২।

সমাজের অন্যতম শীর্ষ ধনীর ছেলে সোহান। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম যার। জন্মের পর থেকে এই তিরিশ বছর বয়সে এসেও সে কোন তথাকথিত অভাব দেখেনি, শুধু পিতামাতার স্নেহের অভাব ব্যতীত।

বাবা তার বিশাল ব্যবসা দেখা শুনার জন্য, আর মা সমাজ সেবার জন্য একমাত্র ছেলেকে দেখার তেমন সময় করেই উঠতে পারেনি। তাই বলে তারা ছেলের কোন চাহিদাই অপূর্ন রাখেন নি।

গোয়াল ছাড়া গরুর যেমন হাল হয়, তেমনি বাবা-মায়ের শাসন আর স্নেহ বঞ্চিত সোহান এর একই অবস্থা।

সোহানের বাবা ছেলেকে আর কোন শিক্ষা দিতে না পারলেও কিভাবে পাকা ব্যবসায়ী হতে হয় তা ছেলেকে ব্যবসায় বসিয়ে শিখিয়েছেন। আর মা শিখিয়েছেন সমাজ সেবা।

———-

ছোট থেকেই সোহান একাকিত্বে বড় হয়েছে। তার সঙ্গী ছিল ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি। এই দুই জগতে সোহানের প্রথম পছন্দ পর্ণ দেখা। পর্ণ দেখতে দেখতে সে এতই আসক্ত হয়েছে যে, বেঁচে থাকার জন্য আমরা যেমন খাবার খাই, তেমনি সোহানের পর্ণ দেখা চাই।

চাহিদার যেমন শেষ থাকেনা তেমনি সোহান পর্ণ দেখায় থেমে থাকেনি। মেতে উঠে অবৈধ দেহের খেলায়। তার প্রথম হাতেখড়ি বাড়ির ঝি কে দিয়ে।

মায়ের শেখান সমাজ সেবার জন্য সে ঝি দের সাথে দৈহিক মিলনকে একসময় তার সামাজিক অবস্থানের অবনমন বলে মনে করে। সম্মানহানির মনে করে। কারন সোহানের মাঝে আছে আধুনিকতা ও আভিজাত্যের ছোঁয়া!!

———-

সোহানের দৈহিক গড়নের চেয়ে, তার সামাজিক আর আর্থিক অবস্থানের জন্য তথাকথিত সমাজের মেয়েরা তাকে কাছে পেতে চাইত। সোহান এই বিষয়টা বুঝতে পারতো। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে সে সদা জাগ্রত। কিন্তু যারা তার বাহুবন্ধনে আসতে চাইতো তাদের অনেকেই চাইতো তেমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টিতে, যাতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা যায়।

সোহান এই সমস্যার কথা তার পার্সোনাল সেক্রেটারিকে বললে-

  • আপনি চাইলে আপনার সেইফ সেক্সের ব্যবস্থা করতে পারি।
  • কি ভাবে?
  • ভোগের জন্য দরকার দেহ। সে ছেলে হোক, আর মেয়ের। আপনি ছেলে দেহ দিয়ে উপভোগ করতে পারেন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির কোন প্রশ্নই আসবে না।
  • কিন্তু….
  • ট্রাই করে দেখেন। মজা পেলে কন্টিন্যু করবেন।
  • ঠিক আছে। ব্যবস্থা করুন।

———-

হোটেল ওয়েস্টিন। রুম নং ৭০২। এই কক্ষে ২৭-২৮ বছরের যুবক অপেক্ষা করছে সোহানের। সন্ধ্যা ঠিক সাতটার পর সোহান আসে। স্বাভাবিক হতে সোহান কিছুক্ষণ আলাপ করে নেওয়ার চিন্তা করে।

  • তোমার নাম?
  • শাতিল। আপনি?
  • আমি সফিক। (সোহান নিজের প্রকৃত নাম গোপন করে)। তুমি কি কর?
  • কি করি তা তো বুঝতেই পারছেন। (মিষ্টি হাসি দিয়ে)
  • লেখাপড়া কিছু করেছ?
  • এবছর মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম।

শাতিলের শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনে সোহান অবাক হয়ে যায়।

  • জবের চেষ্টা করছো না?

সোহানের এই প্রশ্ন শুনে শাতিল বিরক্তের বহিঃপ্রকাশ করে বলে

  • সব সময় সব কিছু জানতে নেই। থাকনা কিছু অজানা। সময় যে বয়ে যায়।

———-

শাতিলের দৈহিক সৌন্দর্য আর কথা বলার ধরন সোহানের মাঝে কামনার ভাব জাগ্রত করতে থাকে। ধীরে ধীরে সোহানের দেহ জেগে উঠতে থাকে। সোহান আঙ্গুল দিয়ে শাতিলের মুখে খেলা করতে থাকে। উষ্ণতার ছোঁয়া খুঁজে পায় নিজের মাঝে। শ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে।

শাতিলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে নিতে শুরু করলো পুরুষ দেহের প্রথম উষ্ণ ছোঁয়া।

ধীরে ধীরে সেই ছোঁয়া অগ্রসর হচ্ছে ঠোঁট থেকে বক্ষ বৃন্তে, নিতম্বে। ক্রমে সে জায়গা বিস্তৃতই হচ্ছে।

সোহানের শিশ্নে শাতিলের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় কামনার আগুন দেহের সমস্ত সুখ জাগ্রত করলো।

শাতিলের দেহে সোহান নিজেকে পুরোপুরি সমর্পন করে নিতে থাকে দেহের খেলার চূড়ান্ত সুখ।

শাতিলের মাধ্যমেই শুরু হল সোহানের পুরুষের প্রতি পুরুষত্ব দেখানো।

———-

জিনগত ভাবে সোহান পাকা ব্যবসায়ী। সেক্স এবং ব্যবসায় সে কখনো ছাড় দেয় নি। তাই সে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছে সব কর্মঠ লোক। প্রসার করেছে তার ব্যবসার।

আজ তার প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের জন্য সিলেক্টেড প্রার্থীদের চূড়ান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।

সোহান নিজেই নিচ্ছে সে সাক্ষাৎকার।

সব শেষ প্রার্থী শাফায়াৎ রহমান সোহানের কক্ষে প্রবেশ করেছে। শাফায়াৎকে দেখে অনেকটা ভূত দেখার মত চমকে উঠে সোহান। এই যে সেদিনের সেই শাতিল।

  • শাতিল কি তোমার ডাক নাম?
  • (স্মিত হাসি দিয়ে) সফিক যেমন আপনার নাম নয়, তেমনি শাতিল আমার নাম নয়।
  • তোমার আর আমার বিষয় কি এক হল?
  • ঠিকই বলেছেন। আমি টাকার প্রয়োজনে বিক্রি হই, আর আপনি টাকার আধিক্যে আমাদের দেহের কাছে লুটিয়ে পড়েন। আরো পরিষ্কার করে বললে- আপনারা টাকার বিনিময়ে দেহ সুখ কিনেন, তেমনি আমরা দেহ সুখের বিনিময়ে টাকা নেই। হিসাবতো ঐ একই হল, যাকে বলে বিনিময়।

কথাগুলো বলে শাতিল সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। কারন সে জানে সোহানের মত মানুষেরা দেহ সুখের সময় মিষ্টি কথায় ব্যস্ত থাকে। তাদের যে সব সময় রিস্ক ফ্রি থাকতে হয়।

———-

৩।

মাশিয়াত হাসান। একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত। সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ যাকে বলে তার সবটাই আছে মাশিয়াতের মাঝে।

মানুষের উপর দেখে আসলে যেমন কিছু আঁচ করা যায় না, তেমনি মাশিয়াত একজন।

মাশিয়াত একজন সিজোফ্রেনিক। মানসিক সমস্যা যাকে বলে। এই মানসিক সমস্যা তার মাঝে একদিনে গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন সময়ে নানান পরিস্থিতি তার মাঝে এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

সমাজের কিছু বিকৃত রুচির মানুষ আছে যারা এই সমস্যার জন্য প্রভাবকের ন্যায় কাজ করেছে।

———-

মাশিয়াতের বয়স যখন ১৩ তখন তার জীবনের বড় দূর্যোগ নেমে আসে। যে সময়টা তার বাড়ন্ত সময় ছিল, সেই সময়ে সে প্রচন্ড মানসিক ধাক্কা খায়।

তার এই ঘটনার জন্য দায়ী তারই খালাত ভাই আতিক। আতিক, মাশিয়াতের থেকে ১২ বছরের বড় ছিল। প্রায় সময় সে মাশিয়াতদের বাসায় আসত। খেলার ছলে সে মাশিয়াতের শরীরের বিভিন্ন অংশে হাতিয়ে দিত।

দুষ্টু আর চঞ্চল মাশিয়াত, আতিকের সেই দেহ হাতানো বুঝতে পারতো না। সে সব সময় তার বড় ভাই আর কাজিনদের সাথে তার প্রিয় খেলা রেসলিং নিয়ে মেতে থাকতো।

সে সময়কার রেসলার মিল মাসকারাস ছিল তার পছন্দের। তার পছন্দের রেসলারের আদতে সে তার ভাই আর কাজিনদের সাথে রেসলিং করতো। আর আতিকের সুবিধা হত এই সুযোগে দুরন্ত, ডানপিঠে মাশিয়াতের দেহকে বুঝার।

———-

কুকুর যেমন জবাইকৃত গরু-ছাগলের নিকট অপেক্ষা করে উচ্ছিষ্ট হাড়ের জন্য, তেমনি আতিক অপেক্ষা করেছিল মাশিয়াতের দেহকে ভোগের।

একদিন সে সেই সুযোগ পেয়েও যায়। মাশিয়াতদের বাসার সবাই বাইরে যাবে এমন সময় আতিক সেখানে উপস্থিত। মাশিয়াত তখন স্কুলে। বাসায় ফিরেনি।

আতিককে দেখে মাশিয়াতের মা তাকে বাসায় অপেক্ষা করতে বলে। এই যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। যে কাঙ্ক্ষিত সময়ের জন্য আতিকের এতদিনের অপেক্ষা তা যেন আজ না চাইতেই পেয়ে গেল।

———-

মাশিয়াত স্কুল থেকে ফিরলে আতিক তার কর্ম সম্পাদনে মরিয়া হয়ে উঠে।

সে মাশিয়াতকে বলে, “আজ তোকে নতুন ধরনের রেসলিং শেখাব”।

মাশিয়াত খুশীতে লম্ফ দিয়ে, “তাই নাকি ভাইয়া”?

“এটা খেয়ে নে।” চতুর আতিক জর্দা পুরে মাশিয়াতকে পান খাওয়াল।

জর্দা সমেত পান খেয়ে ছোট মাশিয়াতের মাথা ঘুরতে থাকে। এই সুযোগে চতুর আতিক মাশিয়াতকে বিবস্ত্র করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। একের পর এক হায়েনার থাবা পড়তে থাকে মাশিয়াতের কচি দেহে।

মাশিয়াতের শরীরকে নিয়ে ইচ্ছামত খেলে সে তাকে হুশ ফেরাতে সচেষ্ট হয়।

কিশোর মাশিয়াতের দেহ আতিককে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

মাশিয়াত কিছুটা স্বাভাবিক হলে চতুর আতিক তাকে ভয় দেখানোতে তৎপর হয়।

“এই রেসলিং এভাবেই করে। এটা দুজনে গোপনে এভাবে করে। এটা কাউকে বলবি না। তাহলে সবাই তোকে মারবে।”- চতুর আতিক মাশিয়াতকে ভয় দেখাল।

———-

যে সময় মাশিয়াতের খেলা করার, আনন্দ করার বয়স, সে সময়ে সে শিখেছে সেক্স তথা দেহ সুখের খেলা। এই খেলা তার মনে ভীতির সঞ্চার করে। সে এই বিষয়টা কারো কাছে বলতেও পারেনা। ভয়ে। এই ভয়ে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

ঘুমে চোখ বন্ধ করলেই মাশিয়াতের চোখে ভেসে উঠে সেই ক্ষণের দুঃসহ স্মৃতি। দুষ্ট, চঞ্চল মাশিয়াত হঠাৎ করেই শান্ত শিষ্ট হয়ে উঠে। বিতৃষ্ণা জন্ম নেয় তার অতি প্রিয় রেসলিং এর উপর। এক কথায় “রেসলিং” শব্দেই তার ফোবিয়া কাজ করতে শুরু করে।

বাঘ যেমন একবার নর মাংশের স্বাদ পেলে বারবার লোকালয়ে হামলে পড়ে। ঠিক তেমনি অঙ্কুরেই দেহ সুখের স্বাদ মাশিয়াতের মনে বারবার কামভাব জাগ্রত করে। সেই থেকে সে হস্ত কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে দেহের কাম জ্বালা মেটাতে থাকে। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত।

নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে সৃষ্টি করতে থাকে বিভিন্ন কামদেবের চিত্র। গড়ে উঠে তার মাঝে এক কাম জগত।

———-

সবাই যেমন মাশিয়াতের মত হতভাগা নয়, ঠিক তেমনি ভাগ্যবানও নয়। মাশিয়াতের ভাগ্য সহায় বলে তার এক মহান বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। যে কিনা ধরতে পারে, মাশিয়াত বাস্তব জগতে থেকেও বাস করছে এক কল্পনার জগতে। সেই মহান বন্ধুর সহায়তায় সে মনোজগত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

———-

পরিশিষ্টঃ

প্রথম গল্পে সনেট নাম,যশ, টাকা সবই পেয়েছিল নিজেকে সেক্রিফাইস করে। সব কিছুরই একটা সময় থাকে। তেমনি সনেটেরও। মিডিয়া জগতে সব সময়ই একজন আরেকজনের জায়গা পূর্ণ করে।

সনেটের বয়স যখন একটু ভাটির দিকে যেতে থাকে তখন তার দেহের কদর কমে যায়। কমে যেতে থাকে তার ডিমান্ড। তার স্থলাভিষিক্ত হয় অন্য কেউ। কাছের মানুষদের হারিয়ে সে যখন একা হয়ে গিয়েছিল, তখন কাজের মাধ্যমেই সে তার জীবন যাপন করেছে। যখন এই কাজও তার কমে যায় তখন সে নিজেকে নিঃস্ব ভাবা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনি।

সে বুঝতে পেরেছিল যতদিন তার দেহের কদর ছিল, ততদিন তার চাহিদা তুঙ্গে ছিল।

———-

দ্বিতীয় গল্পে সোহান বিত্ত বৈভবের মাঝে বড় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পরিবারের আদর, সোহাগ বা শাসন কিছুই পায়নি। ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে বড় করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে পর্ণ এর প্রতি। যা তাকে সেক্স ফ্রিক করে তুলে।

অপরদিকে, শাতিল ওরফে শাফায়াৎ নিজের পরিবারের হাল ধরতে দেহ বিক্রিতে নেমে পড়ে। অভাবী সংসারে একটা চাকুরীর অভাবে যখন অন্ধকার নেমে আসে, তখন শাতিল উপায় অন্ত না দেখে নেমে পড়ে দেহ ব্যবসায়।

ঘটনাক্রমে সোহানের সাথে পরিচয় হয় শাতিল ওরফে শাফায়াৎ রহমানের সাথে। যার সাথে সোহানের পুরুষ দেহের স্বাদের হাতেখড়ি।

সোহান যখন শাতিলের শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনে, তখন তাকে চাকুরী করার পরামর্শ দেয়।

শাতিল যখন চাকুরীর জন্য সোহানের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ভিউ দিতে যায় তখন সোহান নিজের সেইফটির কথা বিবেচনা করে শাতিলকে প্রত্যাখ্যান করে।

সোহানেরা শাতিলদের শুধু সহানুভূতি দিতে জানে, পাশে দাঁড়াতে জানে না।

———-

তৃতীয় গল্পে আতিক হন্যে হয়ে থাকে তার খালাত ভাই মাশিয়াতের দেহ ভক্ষণের। কাঙ্ক্ষিত সময়ে সে তার কর্ম সম্পাদন করে। যার ফলে মাশিয়াতের জীবনে নেমে আসে বিরূপ প্রভাব। শারীরিক এবং মানসিক উভয় ভাবে। একপর্যায়ে মাশিয়াত সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।

———-

তিনটি অনুগল্পেই দেখা গেছে বিভিন্ন রুচির বিভিন্ন মানুষ। কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে নিজের দেহকে পুঁজি করছে, আবার কেউ বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের দেহকে বিক্রি করছে। আবার আতিকের মত সেক্স ফ্রিক কিছু লোক আছে যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

এসব লোক বেশ ভয়ঙ্কর। তারা তাদের কার্য সিদ্ধির জন্য নিচে নামতেও দ্বিধা বোধ করেনা। এদের মত লোককে সহজে চেনাও যায় না। হয়ত এরা আমাদের আশে পাশেই আছে। পরিবারের মানুষদের উচিৎ তাদের ছোট সদস্যদের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা তৈরী করা। আতিকের মত মানুষদের কাছে কাউকে রেখে কোথাও না যাওয়াই উত্তম।

প্রত্যেকের উচিৎ যদি দেখে পরিবারের ছোট সদস্যটি মন মরা হয়ে আছে, বা ভয়ে আছে, তাহলে এর সঠিক কারন অনুসন্ধান করা।নির্যাতিত সেই কিশোর বা শিশুর সঠিক কাউন্সিলিং করা।

———-

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.