অহর্নিশ অবেলা

রুদ্রনীল

(প্রথমাংশ)

১।

এখন ভোর ৫ টা। ফজরের আজান হচ্ছে। কি মধুর পবিত্র ধ্বনি চারদিকে। তীব্র সুমধুর আজানের ধ্বনি আসছে। আনোয়ার সাহেবের অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। অবশ্য এ বয়সে আর ঘুম! কেমন যেন ঘুম আসেনা। বহুকাল হল এই ঘুম তাকে ছেড়ে পালিয়েছে। জাহানারা মারা যাবার পর থেকে একলা হয়ে পড়েছেন তিনি । স্ত্রীর অফুরন্ত ভালোবাসা রোমন্থন করেই তার সময় কাটছে এতগুলো বছর। আনোয়ার সাহেবের বয়স ৮৫ চলছে। বয়সের ভারে নুহ্য হয়ে নানারকম সমস্যায় ভুগছেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। ৩ছেলে ৩ মেয়ে। ২ছেলে, ১ মেয়ে ঢাকাতে থাকেন। আর ২ মেয়ে স্বামী সন্তান সহ লন্ডন এ থাকছে। ছোট ছেলেটাকে সেই যে পড়তে বিদেশে পাঠালেন আর ফিরলনা। কানাডাতেই নাকি ঘর সংসার করছে ।অনেকদিন কোন যোগাযোগ নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নানা স্মৃতি মনে করেই কাটে সময়। স্মৃতিরাই এখন তার সময় কাটানোর একমাত্র সম্বল।

“আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম!” ঘুম থেকে নামায উত্তম। এত জোরে মাইকের আওয়াজ তবু কারো কোন টু শব্দটি নেই এ ফ্ল্যাট এ! সবার কানেই আজান পৌঁছে, কিন্তু সেই আজানের ধ্বনিতে কেউ সাড়া দেয়না। তাদের কাছে নামায থেকে ঘুম উত্তম।

বাইরে বেশ অন্ধকার এ সময়টা। আনোয়ার সাহেবের রুম জুড়েও ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুয়ে শুয়ে ভাবছিলেন এই রুমটাই বোধয় তার কবরখানা। মৃত্যুর পরে এমন এক অন্ধকার ঘরে তাকে থাকতে হবে। এরকম একা। নিঃসঙ্গ। চারদিকে কোলাহল , মানুষজন। কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেবেনা। কেউ তাকে মনে রাখবেনা। কেবল এই অন্ধকার ঘরের কালো নিথর অন্ধকার তার সঙ্গী হবে , আলো বাতাস জানালাবিহিন সাড়ে ৩ হাত অন্ধকার কুঠুরি। ভাবতে ভাবতে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে আনোয়ার সাহেবের ।বিছানার পাশেই টেবিল ল্যাম্প! হাত বাড়ালেই সুইচ জ্বালানো যায় । বিছানা থেকে উঠে এলেন।

শরীরে এখন আর আগের মত জোর পাননা। বয়সের সাথে সাথে মানুষের সমস্ত শক্তিগুলো কোথায় যেন বিলীন হয়ে যায় কে জানে! এই যে বিছানা থেকে উঠে এলেন তাতেও অনেক কষ্ট হল যেন। অথচ এই শরীর নিয়ে কত জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি! কত পরিশ্রম করেছেন একসময়। ছয় ছেলেমেয়ে শিক্ষিত করেছেন। আজ সকলেই তারা প্রতিষ্ঠিত । তাহলে সময় বুঝি এমন ই! সময় মানুষকে অচল করে দেয় , অসার করে দেয়, সময় মানুষের সমস্ত শক্তি কেড়ে নেয়। সময় বড়ই পাষাণ! বড়ই নিষ্ঠুর!

গুটি গুটি পায়ে বাথরুম এ গিয়ে আনোয়ার সাহেব অজু করলেন। বাথরুমের টাইলস গুলো বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে । অনেক দিন ধরে রিনাকে (এ বাড়ির গৃহপরিচারিকা) বলার পরও মেজে দেয়নি। খুব ভয় করে কখন পিছলে পরে না যেন কোন বড় বিপদ ঘটে যায় আবার! তাহলে যে এই আস্তে আস্তে চলাটাও থেমে যাবে!

অজু করে এসে ফযরের নামায আদায় করলেন । মোনাজাতে এসে দু’ হাত তুলে খোদার কাছে সকলের জন্নে প্রার্থনা করলেন। মৃত স্ত্রীর মুখখানি মনে পরে গেল। স্ত্রী জান্নাতবাসী হোক, ছেলে মেয়ে প্রত্যেকে ভালো থাকুক , সুখে থাকুক, সকলের মনের আশা পূর্ণ হোক এই প্রার্থনা। দেশের জন্য, দেশের মানষের কল্যাণ হোক । সকলের জন্য মোনাজাত শেষ করে , দোয়া দুরত পড়তে পড়তে আনোয়ার সাহেব বারান্দায় এলেন।

বারান্দায় একখানি ইজি চেয়ার আছে, শীল কড়ই কাঠের তৈরি মাঝে বেতে বোনা। কালো কুচকুচে রং চেয়ারখানির। মনে পরে চাকরীর মাইনের পয়সা বাঁচিয়ে অনেক কষ্টে শখের এ চেয়ার খানি কিনেছিলেন তিনি। জাহানারার খুব শখ ছিল বই পড়ার। এ ইজি চেয়ারে দুলতে দুলতে বই পড়তেন তিনি। এক বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রীকে চমকে দেবার জন্যই চেয়ার খানির এ বাড়িতে আসা। পরম মমতায় নির্জীব চেয়ার খানিতে হাত বুলালেন আনোয়ার সাহেব। তা প্রায় ৪০ বছর হতে চলল চেয়ার খানির বয়স। অনেককিছুর সাক্ষী চেয়ার টা। জাহানারা তাকে ছেড়ে চলে গেছে তবু আজও চেয়ার টা রয়ে গেছে।

জাহানারা মারা যাবার পর থেকে এ চেয়ারে আনোয়ার সাহেব জাহানারার স্মৃতি দেখতে পান। কেবল তিনি ই বসেন এখন এ চেয়ারটায়। জাহানারার ছোঁয়া রয়েছে যে এতে।গভীর মমতা আর ভালোবাসায় জড়ানো এ চেয়ার।

বাইরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। বারান্দা হতে বাইরের রাস্তায় দু’একজন লোক দেখা যাচ্ছে মর্নিং ওয়াক করতে বের হয়েছেন। আনোয়ার সাহেবের খুব ইচ্ছে হয় বাইরে ঘুরে আসার। কিন্তু পারেন না। একা একা শরীরে তার কুলায় না।

কে তাকে নিয়ে যাবে বাইরে। তেমন কেউ ই যে নেই এ ৮৫ বছরের বৃদ্ধ কে সময় করে বাইরে মুক্ত বাতাস গ্রহণের সুযোগ দেবে, একটু সময় দেবে এমন কেউ নেই। আনোয়ার সাহেব একা, ভীষণ একা।

জাহানারা বেঁচে থাকলে এ সময়টাতে স্বামীর নামাজের পরেই তাকে চা দিত।সাথে হাতে বানানো নিমকি।খেতে অসাধারণ। আহ সে স্বাদ এখনও মনে পরে।

চা খাওয়ার সে ইচ্ছাকে মনে রেখেই এ ইজি চেয়ার এ কাটবে তার তিনটি ঘণ্টা। সকাল ৮ টার আগে চা বা নাস্তা কিছুই জুটবে না তার কপালে।এ বাড়িতে ভোরে চা করে খাওয়ানোর মত কেউ নেই তার।।

চোখ বন্ধ করেই ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে রইলেন আনোয়ার সাহেব। এক পাশে তার হাঁটার অবলম্বন লালচে রঙ্গের একখানি লাঠি। ইজি চেয়ারে মৃদু দোল, বাইরে পাখির মিষ্টি মধুর ডাক, গানের সুর, আর সুন্দর ভোরের কোমল বাতাসে কেবল অল্প শব্দ করত করত করে ইজি চেয়ার খানি দুলেই চলেছে।

২।

জাহানারার বেশ আগে থেকেই কিডনিতে সমস্যা ছিল। মাঝে মাঝে পেটের আর কোমরের ব্যথায় ছটফট করত, মুখ আর পা ফুলে যেত,দিনকে দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল। তবু মুখ ফুটে কিছু বলত না। সংসারের খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এসবের পর বাড়তি টাকা কিছু জমা রাখতে হত মেয়েদের বিয়ের খরচ যোগাবার চিন্তা করে। সামান্য আয়ের সংসারে লোক অনেক। তা থেকে ডাক্তারের ভিজিট দেবেন, চিকিৎসা করাবেন নাকি সংসার চালাবেন।

ছোট ছেলেটা পড়াশুনায় ভালো।অনেক ইচ্ছে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করবে ভালো কলেজ এ। মেধার জোরে একটা স্কলারশিপ পেয়ে গেল। তবু যাবার জন্য খরচ, সেখানে গিয়ে চলবার জন্য কিছু টাকা চাই। ব্যাংক এ জমানো ২ লাখ টাকা উঠিয়ে দিলেন জাহানারা ছেলের সুখের চিন্তা করে।

শেষ পর্যায়ে এসে ধরা পড়ল জাহানারার রোগ। আনোয়ার সাহেব কেবলি জায়নামাজে কাটান। ছেলেরা কেউ স্বাবলম্বী হয়নি ততদিনে। তবু চেষ্টা কম করেননি। কোন কিছুতেই কিছু হলনা।

শেষ দিকে এসে অবশ্য খুব বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিল অবস্থা।বিছানা থেকে উঠবার মত চলন শক্তিটুকু ছিলনা। ছেলেরা মায়ের সেবা তেমন আর কি করবে।মেয়েরাও এড়িয়ে চলেছে তাদের নানান অজুহাতে। মাকে ধরে বাথ্রুমে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, তাকে গোসল করানো, খাইয়ে দেয়া কে করবে। আনোয়ার সাহেব অফিস থেকে ছুটি নিলেন। জাহানারার পাশে তিনি ই থাকতেন সবসময়।

দিনটি ছিল শুক্রবার। প্রথম প্রহরেই জাহানারার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগলো। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল খুব , প্রচণ্ড খিঁচুনি সে সাথে। আনোয়ার সাহেব ছেলে মেয়েদের ডাকলেন। কেউ সাড়া দিলনা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তারা। মায়ের অসুখ তো অনেক দিনের ।এ আর নতুন কি! প্রতিদিন ই তো তার এমন সমস্যা হয়! প্রতিদিন ই তিনি ব্যথায় কাতরান!

আনোয়ার সাহেব জাহানারার মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর মুখে দোয়া পরে যাচ্ছেন । জাহানারা অনেক কষ্টে বললেন, ওগো আমি আসি তবে! ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিয়ো।

-জাহানারা তুমি এসব কি বলছ?তুমি আমাকে একলা ফেলে কই যাবা? তুমি আমার সাথেই থাকবে। আমি তোমাকে প্রতিদিন মাথায় বিলি কেটে দেব। প্রতিদিন খাইয়ে দেব, তুমি যেতে পারোনা জাহানারা।

জাহানারার আর কিছু বলবার শক্তি থাকলোনা। চোখ থেকে কেবল নিরব অশ্রু ঝরে পরে। কেবল আনোয়ারের ওই শুভ্র কোমল মুখখানির দিকে চেয়ে থাকেন তিনি । সত্যি এই মানুষটা তাকে অপরিসীম ভালোবাসা দিয়েছেন। আগলে রেখেছেন। কোনদিন কটু কথা বলেননাই। মানুষটার একলা অনেক কষ্ট হবে।

ভোররাতের দিকে জাহানারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

আনোয়ার সাহেব অপলক চেয়ে রইলেন কষ্টে সেই সাদা মুখ খানি কালো হয়ে যাওয়া পবিত্র ওই চেহারার দিকে। জগতের সব মায়া ত্যাগ করে নিভৃতে চলে যাওয়া একজন তার ভালোবাসার মানুষ। আনোয়ার সাহেব কাঁদলেন না।তার অনুভূতি কাজ করছে না।

সকাল পর্যন্ত এভাবেই তিনি স্ত্রীর হাত ধরে পাশে বসে রইলেন। সকালবেলা ছেলেমেয়েরা জেগে দেখে তাদের মা আর নেই। সকলে এসে কান্না জুড়ে দিল, অবশেষে জাহানারার জানাজার করতে গেল ছেলেরা।

মসজিদ থেকে খাটিয়া আনানো হয়েছে। সাদা মেটালের খাটিয়া। এ খাটিয়া বানাতে আনোয়ার সাহেব মসজিদে দান করেছিলেন,আজ তার স্ত্রী সেই খাটিয়াতে করে চিরতরে বিদায় নিচ্ছে।

বরই পাতা গরম জলে ফোটানো হচ্ছে।জাহানারা কে গোসল দেয়া হবে। স্বামীর দেয়া বিয়ের সেই নাক ফুল আর সরু চিকন চুরি খুলে আনোয়ার সাহেবের হাঁতে দেয়া হল। তিনি নির্বাক।

জাহানারাকে গোসল দিয়ে কাফনের কাপড় পড়িয়ে খাটিয়ায় তুলে রাখা হয়েছে। জানাজা হয়ে তাকে এখুনি কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হবে। ছেলেরা খাটিয়া তুলে নিল।

আনোয়ার সাহেব এবার স্তম্ভিত ফিরে পেলেন। তার আপন মানুষটা তার থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে। চিৎকার করে উঠলেন, তোরা আমার ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস। ও যেতে পারেনা। আমি যে বড় একা হয়ে গেলাম।আমার যে আর কেউ রইলনা…

৩।

আনোয়ার সাহেব চোখ মেললেন। একটা ঝটকা গেল মনে হল। জাহানারার শেষ বিদায়ের সেই দৃশ্য মনে পরে গেল আবার।

-জাহানারা তুমি সত্যিই আমাকে একা করে চলে গেছ। এই দেখ আমি কেবল একা এই শুন্য বারান্দায়। এরকম সারাটাদিন। একটা লোক ও নেই আমার সাথে বসে একটু কথা বলবে। রাত আসবে আবার পরেরদিন সকাল।। এভাবেই কতগুলো দিন যে পার হল গুনে রাখিনি। তবে অনেক বছর হবে। তুমি চলে যাবার পর অনেক কিছু বদলে গেছে। ছেলেমেয়েরা নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে। ওরা বিয়ে করেছে। ওদের সংসারে ছেলে পুলে এসছে। সুখের সংসার। কেবল আমি মানুষটা বাড়তি হয়ে গেলাম ধীরে ধীরে।

বাইরে হাল্কা রোদ উঠেছে। কোলাহল বেড়েছে লোকজনের। আনোয়ার সাহেব ধীর পায়ে উঠে এলেন ইজি চেয়ার থেকে।

সকাল ৭।৫০ বাজে এখন।

আস্তে আস্তে সামনের রুমের দিকে হাটতে লাগলেন। দরজার সামনে থেকে পত্রিকাখানা তুলে নিলেন। অলস সময় এই পত্রিকাটাই আনোয়ার সাহেবের সঙ্গী। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সারাদিন তিনি এই পত্রিকা পড়বেন। এমনকি পাত্র পাত্রী খোঁজ এর জায়াগাটাও বাদ যায় না।

পত্রিকাখানা হাঁতে নিয়ে আনোয়ার সাহেব খাবার ঘরের দিকে গেলেন ,মেজ ছেলে তারেক নাস্তা করছে। পাশে দাঁড়িয়ে এলিনা। তারেকের বউ।

আনোয়ার সাহেব কে দেখে এলিনা বলল, এই যে বাবা, আসুন তো। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে নিন। আমার আবার অনেক কাজ পরে আছে রাফিয়াকে নিয়ে স্কুল এ যেতে হবে। বসুন বসুন।

-বউমা, তোমাকে বলেছিলাম সবজি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি রান্না করতে। অনেকদিন খাইনি, খেতে খুব ইচ্ছে করছিল মা। এই শুকনা রুটি আর ভালোলাগেনা গিলতে।

– তারেক বলে উঠল, বাবা তুমি যে কিনা! এসব খাওয়া যায়? সেই আদিকালের চিন্তাধারা আর খাবারের রুচি পালটাওতো!! পানি খিচুড়ি আমরা খেতে পারিনা।

-এলিনা খেকিয়ে উঠে, দেখেন বাবা, আপানার আর চিন্তা কি? আপনিতো বলেই খালাস। যত সব কাজ , যত সব চিন্তা সব আমার উপর দিয়ে যায়। বলি, সারাদিন তো ওই চেয়ারটায় বসে থাকেন , আরামসে দোল খান আর পেপারটা হজম করেন বসে বসে। আর আপনি এই ফুট ফরমাশ কম দেবেন, আমি একলা আর পারিনা বাবা। এমনিতেই আপনার পিছনে আমার একটা কাজের লোক খাটে সারাদিন।

-তারেক যোগ করে, সত্যি বাবা, তুমি বাচ্চাদের মত কি যে বায়না কর না একেকদিন। দেখইত ও কত কাজে বাস্ত থাকে বাচ্চা নিয়ে । আমি দেখনা যা করে দেয় তাই খাই। তুমিও খাবে।

আনোয়ার সাহেব কিছু বললেননা। কিছু বলতে পারলেন না।চুপ করে রইলেন।এ আচরণ তো আর নতুন কিছু না তার জন্য। কেবল চোখের কোনে ছলছল করে উঠছে। শুকনো রুটি আর আলু ভাজি নিয়ে মুখে পুরছেন তিনি।

আনোয়ার সাহেব চোখ তুলে তারেককে দেখলেন। তার শরীরের অংশ এই তারেক। সে কি তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।

তারেকের ছোটবেলার কথা মনে পরে গেল আনোয়ার সাহেবের। তখন ছোট চাকরীতে খুব কষ্টে চলতেন। সংসারে হিমশিম করে চলতে হত। সংসারের টানাটানিতে সীমিত আয় দিয়ে সব সময় ভালো মন্দ খাওয়ার উপায় ছিল না।

তারেক কোথা থেকে যেন দেখে এসেছে কারা মুরগি জবাই করেছে,তারও আজ মুরগি চাই । সে মুরগি দিয়ে ভাত খাবে।দুপুর থেকে জাহানারার সাথে ঘ্যান ঘ্যান করা শুরু করে দিয়েছে।

তারেক শখ করে বসে আছে। নিশ্চয়ই মা তার ঘুমের মধ্যে মুরগি রান্না করে ফেলছে। রাতে খাবার সময় সবাই একসাথে বসল খেতে। তারেক তরকারী দেখে বলে, কি আজও আলু ভর্তা আর ডাল! আমি খাবনা । কচি সে ৭ বছরের বাচ্চা রাগ করে খাবার ছেড়ে উঠে গেল।

আনোয়ার সাহেব খুব কষ্ট পেলেন। খাবার ফেলে উঠে গেলেন ।পরিচিত এক ভাইয়ের কাছে গিয়ে অনেক করে বলে কয়ে ১০০ টাকা ধার করে এনে তা দিয়ে ছোট্ট একটা মুরগি কিনে আনলেন। রাতে সেই মুরগি রান্না হল তারপর তারেক ভাত খেয়ে ঘুমাল। সেদিন যে তৃপ্তি নিয়ে তারেক মুরগি দিয়ে ভাত খাচ্ছিল তা আনোয়ার সাহেবের মৃত্যু পর্যন্ত মনে থাকবে।

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.