গ্রহকন্যা (২য় খন্ড)

শাহরিয়ার সুমন

মারুফ দরজা খুলে দেখল রুদ্র হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। নীল জিন্স আর বুক খোলা কালো শার্টে দারুণ লাগছে তাকে।

রুদ্র ঘরে ঢূকেই বললো, ‘কি ব্যাপার, দরজা খুলতে এত দেরী করছিলে কেন?

– অফিস থেকে এসে শুয়েছিলাম, তাই হালকা ঘুম এসে গিয়েছিল

– একা একাই শুয়েছিলে?

– মানে কি? দোকা পাব কোথায়?

– না, এতদিন একসাথে থাকার পর তোমার হয়তো একঘেয়েমি লাগতে পারে, তাই টেস্ট বদল করতে চাইতেই পার।

– ফালতু কথা বলবা না তো, রুদ্র। তুমি জানো, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতেই পারি না আমি।

– তাহলে এতদিন পর আমাদের দেখা হল, অথচ তুমি একবারও আমাকে জড়িয়ে ধরলে না কেন? রুদ্রর কণ্ঠে অভিযোগের সুর।

– স্যরি জান, বুঝোই তো ইদানিং কাজের কিরকম প্রেসার যাচ্ছে আমার উপর। অফিস থেকে ফিরে ভীষণ টায়ার্ড হয়ে যাই।

– চলো, আমি আজ তোমার সব ক্লান্তি দূর করে দেই।

হঠাৎ অপরুপ পাথরের একটা মূর্তির সাথে হোচট খেলো রুদ্র। মুগ্ধ হয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে মূর্তিটিকে দেখতে লাগলো সে।

– অপূর্ব, এই মূর্তিটা এখানে কোথা থেকে আসলো? আগে তো দেখিনি।

-কিনেছি।

-কখন কিনলে তুমি? আমাকে তো বলো নাই?

-এম্নিতেই মনে ছিল না। সেদিনে মার্কেটে দেখে পছন্দ হল, তাই কিনে ফেললাম।

– তা হঠাৎ নারীমূর্তি কিনতে গেলে? নারীদের প্রতি আগ্রহ ফিল করছ নাকি?

– না ভাবলাম, ছেলে মুর্তি কিনলে তুমি যদি আবার জেলাস ফিল করো!

– কি যে বলো না তুমি! আমি জেলাস ফিল করব একটা পাথরের মূর্তিকে! কি আছে ওটার? তোমাকে আনন্দ দেবার কতটুকু ক্ষমতা আছে একটা পাথরের মূর্তির!

– এসব কথা থাক। তোমার কি অবস্থা সেটা বলো।

রুদ্র চিৎ হয়ে বিছানার উপর শুয়ে আছে। মারুফের আচরণে কিছুটা অবাক হচ্ছে সে। সবসময় বিছানায় বসতেই বুভুক্ষ নেকড়ের মত রুদ্রর বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে সে, অথছ আজ সে যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করছে। শুধু এটা সেটা কথাই বলে যাচ্ছে। একটু আদর করা তো দূরে থাকুক, হাতটা পর্যন্ত ধরছে না। এদিকে মারুফের অবস্থাও শোচনীয়, এতদিন পর রুদ্র সাথে দেখা, অথচ সে লজ্জায় রুদ্রর হাতটা পর্যন্ত ধরতে পারছে না। সে জানে না অরিন আসলে কে? সত্যিই কি সে ভিনগ্রহের প্রাণী নাকি কোন ভুত প্রেত অন্যকিছু। সে যাই হোক, একটা মেয়ে মানুষ তো! মারুফ ভাল করেই জানে, অরিন তার আশেপাশেই আছে। যদিও সে এখন দেখতে পাচ্ছে না তাকে। কিন্তু একটা মেয়ের উপস্থিতিতে সে কিভাবে একজন পুরুষের সাথে সেক্স করতে পারে!

– রুদ্র, আমার না ভীষণ ক্ষিধে লেগেছে, চলো আগে ডিনার করে ফেলি।

– শুধু পেটেই ক্ষিধে লেগেছে, শরীরে লাগেনি?

– শরীরের ক্ষিধে মেটানোর জন্য তো পুরো রাত বাকি আছে, এত তাড়া কিসের?

– কিন্তু আমার যে এক্ষুণি তোমাকে পেতে ইচ্ছে করছে

– একটু সবুর করো, লক্ষীসোনা।

মারুফের কথায় কিছুটা ম্লান হয়ে গেল রুদ্রর চেহারা। মারুফের তার প্রতি উপেক্ষা সে যেন কিছুতেই নিতে পারছে না। মারুফ যখন বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো, রুদ্র পেছন থেকে ওর একটা হাত ধরে ফেললো।

– মারুফ, আমাকে একটা চুমু খাবে?

রুদ্রর ঠোটদুটো মৃদু ফাক হয়ে আছে। মারুফ এগিয়ে এসে রুদ্র অধরে চুমু খেলো আলতোভাবে। তারপর মুখ তুলে বললো, খেলাম। সন্তুষ্ট?

– না। এখনো চোখ বুজে আছে রুদ্র। আশা করছে মারুফ তার আহবানে সাড়া দেবে। ধীরে ধীরে খুলে নেবে শরীরের প্রতিটা পোশাক।

– না? খানিকটা ইতস্তত বোধ করছে মারুফ।

– কি হয়েছে মারুফ? কেন তুমি আমার উপর রাগ করে আছ?

– আমি কেন শুধু শূধু তোমার উপর রাগ করব?

– তাহলে কেন তুমি আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ? আমাকে কি তোমার আর ভালো লাগে না?

-ছিছি! তা কেন হবে?

– তাহলে কেন এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছ আমার সাথে? তুমি জানো না, আমার এই শরীর, মন সবকিছুই যে শুধু তোমার।

– আসলে রুদ্র, আমার শরীরটা ভাল লাগছে না।

– কি হয়েছে তোমার? জ্বর জ্বর লাগছে নাকি? এই বলে রুদ্র মারুফের কপালে হাত রেখে শরীরের উত্তাপ অনুভব করলো।

– কই, জ্বর নেই তো, শরীর তো একদম ঠাণ্ডা। ইশ! এত ঘামাচ্ছ কেন তুমি? ঘামে তো একদম শার্টটা ভিজে গেছে। এই, ঘরের ভেতরে কেউ ফুলশার্ট পরে থাকে? খুলো এক্ষুণী।

এই বলে রুদ্র নিজেই মারুফের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো। শার্ট খুলেই রুদ্র হাত বুলাতে শুরু করলো মারুফের বুকে, পিঠে। কিস করছে তার গলায়, ঘারে, অস্থির করে তুলছে মারুফকে। শেষপর্যন্ত মারুফ নিজেই রুদ্র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, স্যরি রুদ্র, আমার পেটটা ভীষণ ব্যাথা করছে, আমি একটু টয়লেট থেকে আসি।

– তুমি না আসলেই একটা রাবিশ। এমন মুহুর্তে কেউ টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে!

– ইমার্জেন্সি, যেতেই হবে, এই বলে মারুফ বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। রুদ্র পেছন থেকে চিৎকার করে বললো, জলদি এসো বেবি, আমি অপেক্ষা করছি।

মারুফ বাথরুমে ঢুকে কমোডের ঢাকনার উপর বসে পড়ল। কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। রুদ্রকে কিভাবে সরাসরি মানা করবে সে? এমনিতেই তাদের সবসময় দেখা হয় না। তারা দুজনেই মোটামুটি ব্যাস্ত, মারুফ তার কাজ নিয়ে, রুদ্র থাকে তার ক্লাস, ভার্সিটি এসব নিয়ে। তাছাড়া সবসময় তো এমন বাসা খালি পাওয়াও ভাগ্যে জোটে না। এদিকে হোটেলে গিয়ে সেক্স করাও মারুফের একদম পছন্দ না। আজ কোথা থেকে যে এই অদ্ভুত আপদটা এসে জুটলো? এভাবে টয়লেটেই বা সে কতক্ষণ বসে থাকবে? হঠাৎ মারুফ দেখলো তার সামনে অরিন দাঁড়িয়ে আছে। মারুফ তার কপালে হাত দিয়ে বললো, এখানেও তুমি! প্লিজ, হাতজোড় করে বলছি এখান থেকে চলে যাও তুমি, আমাকে মুক্তি দাও, প্লিজ।

– চলে যাব আমি, খুব বেশিক্ষণ আর চাইলেও থাকতে পারব না। আজ রাতের মধ্যেই আমাকে ভ্যালেরিয়ায় ফিরে যেতে হবে।

– হ্যা যাও, যেখান থেকে এসেছ সেখানে গিয়ে মরো।

– এভাবে কথা বলছ কেন তুমি আমার সাথে?

– কিভাবে কথা বলব?

– কেন? ওই ছেলেটির সাথে তুমি কত সুন্দর করে কথা বলছিলে!

– কারণ ও আমার বয়ফ্রেন্ড, আমি তাকে ভালোবাসি।

– কিন্তু সে তো তোমাকে ভালোবাসে না। সে একটা লোভী, তার লোভ শুধু তোমার দেহ আর টাকার প্রতি।

-খবরদার, একদম বাজে কথা বলবে না।

– আমি সত্যি বলছি, আমি মানুষের চোখ দেখেই তাদের মনের কথা বুঝতে পারি।

– আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।

– মনে আছে, লাস্ট যেদিন তোমাদের দেখা হয়েছিল, সেদিন তোমরা বিয়ার পান করেছিলে। রুদ্রর বিয়ারের গ্লাসে একটি সোনার আংটি ছিল, তুমি রুদ্রর জন্য বানিয়েছিলে তার হাতে পরিয়ে দেবে বলে। আংটির মধ্যে ইংরেজী M অক্ষরটি খোদাই করা ছিল। রুদ্র আংটিটা বিক্রি করে ফেলেছে। তার এক বন্ধু নাম মামুন, রুদ্রর কাছে পাঁচ হাজার টাকা পেত। সেই ধার শোধ করার জন্য।

– তুমি কিভাবে এতকিছু জানলে? রুদ্র তোমাকে বলেছে?

– না, আমি ট্যালিপ্যাথির মাধ্যমে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি। তুমি আংটির কথা জিজ্ঞাসা করলে কি কৈফিয়ত দেবে সেটা নিয়ে এতক্ষণ ভাবছিল রুদ্র। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে এসব জানতে পেরেছি।

– প্লিজ, তুমি আর একটা কথাও বলো না। প্লিজ যাও, এখান থেকে।

মারুফ বাথরুম থেকেই শুনতে পেল, রুদ্র তাকে ডাকছে

‘আর কতক্ষণ লাগবে তোমার, বিশ মিনিট হয়ে গেছে।’

মারুফ রুমে এসে দেখতে পেল রুদ্র সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইলে পর্ণমুভি দেখছে। একটা সূতাও নেই শরীরে। রুদ্রর ফর্সা উন্মুক্ত নিতম্ব দুখানা যেন মারুফকে চুম্বকের মত টানছে। কান দুটো ঝাঁ ঝাঁ করছে তার। হঠাৎ বেড়ে গেছে শরীরের রক্ত চলাচল। রুদ্রর নগ্ন শরীর থেকে কিছুতেই চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছে না মারুফ। অরিনের কথা বেমালুম ভুলে গেছে সে। রুদ্র সোজা হয়ে মারুফের হাত ধরে তাকে বিছানার দিকে টানলো, ‘কই, এসো। আমাকে একটু শান্তি দাও, আমি যে সত্যিই আর পারছি না’। মারুফও আর নিজেকে বেধে রাখতে পারলো না। রুমের লাইট নিভিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল রুদ্রর শরীরে। তাকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টেনে নিলো। ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে মারুফ, রুদ্র ছেলেটা আজ তাকে পাগল করে তুলছে।

অন্ধকার ঘর। রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে মারুফ। হঠাৎ অরিনের কথা মনে পড়ল তার। সাথে সাথে রুমের লাইট জ্বালিয়ে রুদ্রর হাত পরীক্ষা করে দেখল, সত্যিই আংটিটা নেই।

– তোমার আংটিটা কোথায়?

– আর বলোনা, আজকে গোসল করতে গিয়ে আংটিটা খুলে বেসিনের উপর রেখেছিলাম। পরে দেখি নেই। অনেক খোঁজাখুজি করলাম, কিন্তু কোথাও পেলাম না।

– মিথ্যে বলছ কেন? রাগে চিৎকার করে উঠল মারুফ।

– আমি মিথ্যে বলছি? মারুফের আচরণে ঘাবড়ে গেছে সে।

– হ্যা, বলছ। তুমি আংটিটা বিক্রি করে দিয়েছ মামুনের টাকা শোধ করার জন্য।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল রুদ্র। তুমি কিভাবে জানলে এসব?

মারুফ চিৎকার করে বললো, শালা, বাস্টার্ড। তোর এতই যদি টাকার দরকার থাকত, তাহলে আমাকে বললেই পারতিস, তুই আংটি বিক্রি করতে গেলি কেন?

-প্লিজ, তুমি একটু শান্ত হও। রুদ্র মারুফকে হাত দিয়ে ধরতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইল মারুফ। আর ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিছানা থেকে সোজা মেঝেতে গিয়ে পড়ল রুদ্র। আর তখনি সে দেখতে পেল খাটের নীচে ঘাপটি মেরে বসে আছে একটি ধবধবে সাদা বেড়াল। বেড়ালের চোখগুলো যেন জ্বল জ্বল করে জ্বলছে, যেন এখনি তাকে আচড়ে দেবে।

রুদ্র চলে গেছে। মারুফ তার ছোট্ট ব্যালকনির এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ অরিন মারুফের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।

– কাঁদছ কেন তুমি?

– তোমাকে কে বললো আমি কাঁদছি?

– আমি অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখতে পাই।

– না, আমি কাঁদছি না। আমাদের গ্রহে পুরুষ মানুষরা এত সহজে কাঁদে না।

-তোমরা খুব সহজে মিথ্যে বলতে পার।

-অরিন, তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করনি

– কোন কাজটা?

– তুমি রুদ্রকে এভাবে আঁচড় দিয়েছ কেন? ওর পা থেকে রক্ত ঝরছিল।

– ঠিক কাজ করেছি।

– একদম না। সে তো তোমার কোন ক্ষতি করেনি।

– আশ্চর্য! যে মানুষটা তোমাকে ঠকিয়েছে, তাকে আঘাত করেছি বলে তোমার কষ্ট লাগছে?

– হ্যা, কারণ আমি তো সত্যি তাকে অনেক ভালোবাসতাম।

– এখন বাসো না?

-জানি না। তবে জানো অরিন, নিজের উপরই খুব ঘৃণা হচ্ছে আমার। আমার ছোটভাইটা গত তিন চার মাস ধরে একটা সাইকেলের জন্য আমার কাছে কত বায়না করছে। সামান্য একটা সাইকেল, তবুও আমি তাকে কিনে দিতে পারিনি। অথচ রুদ্রকে সাত হাজার টাকা দিয়ে সোনার রিং কিনে দিয়েছি। তার মোবাইলের খরচ, শপিং এমনকি কখনো কখনো তার ভার্সিটির সেমিস্টার ফি পর্যন্ত দিয়েছি। কেন করেছি আমি এসব? কার জন্য যার কাছে আমার ইমোশনের কোন মুল্যই নেই? নিজের ফ্যামিলি থেকেও রুদ্রর প্রয়োজনগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি আমি।

– তোমাদেরকে আমরা এখনো ভালোভাবে বুঝি না।

– কেন?

-তোমরা মানুষরা বড় বিচিত্র। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ টাকার জন্য নিজের স্বজাতিকে খুন করতেও দ্বিধা করো না। আবার সেই তোমরাই অন্যর জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করে দিতে পার।

মারুফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আচ্ছা অরিন, একটা সত্যি কথা বলবে?

– বলো

– তুমি আমার কাছে কেন এসেছ?

– এই প্রশ্নের উত্তর জানা কি খুব জরুরি?

– হ্যা, আমার জন্য জরুরি।

– সেইরাতে তুমি যখন আমার হাত ধরেছিল, কেন জানিনা সেই মুহুর্তে আমার ভেতরে একটা অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছিল। এমন অনুভুতি যা আমি আগে কখনো অনুভব করিনি। এরপর থেকেই কেন জানি বারবার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করত। তুমি জানো না, এর আগেও অনেকবার আমি তোমার কাছে এসেছি। তুমি যখন ঘুমাতে, আমি শুধু নীরবে তোমায় দেখতাম। রাতের পর রাত, তুমি বুঝতেও পারোনি। খুব ইচ্ছে করত একবার তোমায় স্পর্শ করতে, কিন্তু করিনি। যদি তুমি ঘুম ভেঙে আমায় দেখে ভয় পাও। আজ যখন শুনলাম আমাকে পৃথিবী ছেড়ে পুনরায় ভ্যালেরিয়ায় ফিরে যেতে হবে, তখনি মনে হল এই মানুষটিকে তো আমি আর কখনোই দেখতে পাব না, তাকে স্পর্শ করার সাধ যে আমার চিরদিন অপূর্ণই রয়ে যাবে।

– অরিন, তুমি কাঁদছ?

– নাহ, আমরা ভ্যালেরিয়ানরা কাঁদতে পারি না। আমরা তো পৃথিবীর মানুষের মত আবেগপ্রবণ নই। আমরা যুক্তনির্ভর, প্রগতিবাদী। মানবীয় আবেগের মত তুচ্ছ বিষয় কি আমাদের স্পর্শ করতে পারে?

-তাহলে তোমার চোখে পানি কেন?

-হয়তো চোখে কিছু পড়েছে। মারুফ, আমাকে এক্ষুণী পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। যাওয়ার আগে একটা অনুরোধ করলে রাখবে?

-বলো

– শাওয়ারের নীচে তখন তুমি গাইছিলে, আমার খুব ভাল লেগেছিল। আমার জন্য তুমি কি একটি গান গাইবে?

মারুফ চোখ বন্ধ করে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে গাইছে,

“ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো- তোমার মনের মন্দিরে। আমার পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো – তোমার চরণ মঞ্জিরে।।

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে আমার মুখর পাখি – তোমার প্রাসাদ প্রাঙ্গনে। মনে করে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী – তোমার কনক কঙ্কনে ।।

গান গাইতে গাইতে মারুফের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে তার হাত দিয়ে অরিনের একটি হাত স্পর্শ করলো। পৃথিবীর এক সাধারণ মানব পুরুষের গান শুনে ঝরঝর করে কাঁদছে পৃথিবীর গ্যালাক্সির বাইরে বহুদূর থেকে আসা একজন রুপবতী গ্রহকন্যা। তার চোখের জল বড় পবিত্র, বিশুদ্ধ। পৃথিবীর সমস্ত পাপ, মিথ্যা, লোভ, লালসার অনেক অনেক উর্ধে।

(সমাপ্ত)

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.