অতঃপর আমি একা

অতঃপর আমি একা।

উৎসর্গঃ Nil Digonto.

~[এই গল্পের সমস্ত কাহিনি, চরিত্র, বিষয়বস্তুু লেখকের একান্তই নিজের, কারও সাথে ইহার সাদৃশ্যপূর্ণতা সম্পূর্ণরূপে কাকতালীয়। এ বিষয়ে লেখক কোনভাবেই দায়ী নয়।]~

লেখকের কথা: এই গল্পটি আমার নিজের একটি ঘটনা। তা গল্পে রুপ দেয়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা করেছি, জানিনা আদৌ পেরেছি কিনা? উপরিউন্ত এটি আমার লেখা প্রথম গল্প। তাই সকল ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভূলগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাকে বাধিত করবেন।

(ঘটনার স্থানকাল সম্পূর্ন কাল্পনিক)

……………………………

কেন জানিনা এই বাক্যটা আমার অদ্ভূত ভালো লাগে। আসলে আমার মত ছেলেদের এই উদ্ভট বাক্যগুলো ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক!!! হ্যাঁ, আমি সমকামী। ঠিক সমকামী বলা ভূল হবে!!! সমপ্রেমী। কামটা খুব একটা পছন্দ করতাম না কখনই। আচ্ছা সমকামটা কি খুব খারাপ? হলেও, আমি তো এমন ছিলাম না, বা ইচ্ছে করে এমন হইনি? আমিও চেয়েছিলাম একটা মেয়েকে ভালোবাসতে, কিন্তু পারিনি, ভয় হতো, মনে হতো আমি তাকে ঠকাচ্ছি। এসবের সমাধান একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই দিত পারবেন, কেন তিনি অামাকে এমন করে সৃষ্টি করেছেন? তবে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে সে উত্তরের জন্য।

রাত, তুমিকি বলতে পারবে কেন আমি আমার বন্ধুদের মত না? চাঁদ, তুমি?!!!

*******

আজ ২৫ এপ্রিল!!! সেই সন্ধ্যে থেকে ঠাঁই দাড়িয়ে আছি রুমের ব্যালকনিতে। একা থাকলে বাকশক্তিহীন বস্তুুদের সাথে কথা বলতে থাকি! পূরোন অভ্যাস। ছোট থেকেই একা থাকতে ভালোবাসি। কারও সাথেই মিশতাম না, অাসলে মিশতে পারতাম না। সমকামীদের যা হয় আর কি!!! তবে, ১৫ বছর পর্যন্ত কি জানতাম, অামি সমকামী? তখন কারো সাথে না মিশলেও অনেক সুখী ছিলাম অামি, অনেক সুখী।

*******

আমি ঐশ্বর্য… হাহাহা! চরম একখান নাম তাইনা? নিজের নামটা আমার এতটাই পছন্দের যে, স্কুল জীবনে কারও সাথে না মিশলেও নাম নিয়ে রীতিমত এক প্রকার বড়াই করে বেড়াইতাম! তবে সহপাঠীরা কোনদিন এ নিয়ে বিদ্রুপ করতোনা। ক্লাসের ফাষ্টবয় হিসেবে সবাই একটু আধটু সম্মান দিতো। তবে, আজ আর কোন কিছু নিয়েই বড়াই করিনা, আসলে আমার বড়াই করার মত কিছুই নেই আজ। আজও সহপাঠীরা নিশ্চুপই থাকে অামার কাছে, কিছুই বলেনা। তবে পার্থক্য এটাই যে, ঐশ্বর্য আজ তার সমস্ত ঐশ্বর্য হারিয়ে নিস্তব্দ্ধ, নির্বাক। আজ আর কারো সাথে কথার কথার ফুলঝুরি ছড়াই না। একাকিত্ব আজ আমার পরম আপন, আমার সব!!!

আমি খুব ভালোবাসি রাত, চাঁদ আর বৃষ্টি। আজ অনাকাঙ্ক্ষিত এক পশলা বৃষ্টির আগমন ঘটেছিল বিকালে.. তুমি পাশে নেই তবুও আজ ভিজেছি। হতে পারে অন্যভাবে, তবুও ভিজেছি। আগে হলে হয়তো লাফঝাঁপ করতাম কিন্তু আজ ঠাঁই দাড়িয়ে ভিজেছি। যখন আকাশের দিকে তাকালাম, একাকী জল খসে পড়ল চোখ দিয়ে। হাহাকার করে অনেক কেঁদেছি আজ, তবে শুনেছে আমি আর সৃষ্টকর্তা! তুমি কি ভিজেছ? না মনে হয়। সন্ধ্যাটা আজ অত্যাধিক নিঝুম, ইচ্ছে করছে বহুদিন পর আজ একটু ফেইসবুকে বসি। কিন্তু তোমার স্মৃতি গুলো দেখতে ইচ্ছে করছেনা। জীবন সঙ্গিনীকে নিয়ে কেমন আছ তুমি? জানো? পূরোনো দিনের কথাগুলো আজ ভীষণ মনে পড়ছে। ভীষণ..

*******

সাল ২০১২ জানুয়ারি ১৩..

জন্মদিনটা ভালই কাটালাম। কিছুদিন যাবত ফেইসবুক নামক বস্তুটার প্রতি অনেক ঝুকে পড়েছি। তাই এবার একটা অ্যাকাউন্ট না খুললেই নই। অবশেষে ছোট মামাকে অনেক বুঝিয়ে (যেহেতু ক্লাস নাইনে ছিলাম) রাজি করিয়ে প্রবেশ করলাম আমার স্বপ্নের জগতে।

Email or Phone Number

************@ gmail.com

Password

********

Welcome to Facebook…

কি করি কিছুই বুঝিনা। সারাদিন শুধু সবাইকে এড দিই। কারও কোন মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারিনা। এইভাবেই কাটালাম আধা মাস। এখন আমি ফেইসবুক ব্যবহার করতে জানি। হঠাৎ একদিন Home Page এ দেখি দুইটা ছেলের অশালীন লিপ কিসের পিক। সাথে সাথে Log Out..!

এক সপ্তাহ ফেইসবুক ব্যবহার করিনি। ভেবেছিলাম আর করবোও না।

কিন্তু আমার অচেতন মনে সেই দুই ছেলের কিস করার দৃশ্য এতটাই প্রভাব ফেলেছিলো, যে প্রভাব আমাকে দ্রুতই অাবার ফিরিয়ে অানলো ফেইসবুকে।

অবশ্য অামি সাবালক হওয়ার পর কোনদিন কোন মেয়ের দিকে ভালোলাগার দৃষ্টিতে তাকাইনি, তবে কোন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে অপলক তাকিয়ে থাকতাম। তখন একটু অবাক লাগতো, অামি এমন কেন? আর সবার মত অামার GF নাই কেন? অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের কোন সুরাহা করতে পারতাম না। তখনও যদি জানতাম কি ঘটতে চলেছে অামার সাথে!!!

*******

৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২…

নীলকান্ত অামি: hi

অামি: hlw

নীলকান্ত অামি: kmn a6o?

আমি: ji vlo… apni?

নীলকান্ত অামি: vlo.. kothai thako?

আমি: Rajshahi… apni?

নীলকান্ত অামি: amio.. Rajshahir koi?

আমি: kno?

নীলকান্ত অামি: emnitey..

অামি: hmm

নীলকান্ত অামি: hmm

এটাই প্রথম কথা নীল অার অামার, তখনও জানিনা, সাধের স্বপ্নপুরুষ উঁকি দিেয়েছ অামার একাকিত্ত্ব জীবনকে কিছু দিনের জন্য সঙ্গ দেবে বলে! আর যেটুকু সুখ আছে তা শতগুনে বাড়িয়ে এক্কেবারে

নিঃশেষ করে দিয়ে যাবে?

প্রতিদিন তিন-চারবার করে নক করে, যেহেতু আমি

নতুন তাই অধিকাংশ সময় ফেইসবুকেই কাটাই।

আমার মনে এক ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে নীল।

এভাবেই দিন কাটে, মাস কাটে, আমরা অনেক

ভালো বন্ধুতে রূপান্তরিত হই, আমার ওকে অনেক

ভালো লাগতো।

ভালো কথা, ওর বয়েস ২১, পলিটেকনিক্যাল

স্টুডেন্ট..

মাঝে কিছুদিন কথা না হওয়ায় আমার সব কিছু উলট পালট হয়ে গেছিলো, অনেকবার বলবো ভেবেছি, নীল.. আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি.. অনেক.. কিন্তু তখনও জানিনা পুরুষে পুরুষে প্রেম হয়।

তখনও আমার মাঝে ওকে আপনি বলার গন্ডিটা শেষ হয়নি। আমরা নিজেদের নিয়ে আলাপ করতাম, নিজেদের চিনতাম, তবে ও কেন আমার এত কেয়ার করতো বুঝতে পারতাম না। কি করি না করি সব তার জানা চায়, অবাক লাগতো, কিন্তু পাশাপাশি ভালোও লাগতো। কিছুদিন পর যখন অনলাইনে পেলাম, অনেক বকেছিলাম, কান্নাও করেছিলাম। ও শেষে একটা কথাই বলেছিলো, ঐশ্বর্য.. তুমি কি আমাকে ভালোবাসো..? সেদিন আমি কিছু বলি নি।

বলে রাখা ভালো, প্রায় দেড় মাসেও আমরা কেউ

কারও পিক চাইনি.. বা কন্টাক্ট নাম্বার.. আমার

ইচ্ছে ছিলো ওর বার্থডেতে ওকে সরাসরি সারপ্রাইজড করা।

অবশেষে আসলো ২৫ মার্চ।

সেদিন প্রথম আমি রাত ১২ পর্যন্ত জেগেছি.. ১২.০১

এ ওর আইডি তে অনেক বড় করে উইশ করলাম।

*******

সকাল যেন আজ আর হবেনা। সময় কি থমকে গেল

নাকি। এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে অবশেষে সকাল হলো। সকালে আম্মুকে বলেই বেরিয়েছি, কখন ফিরবো জানিনা। গিফট কর্ণার থেকে বড় সড় একটা তাজমহল কিনেছি, যার গম্বুজে খোদায় করলাম দুইটি অক্ষর A N..

রাজশাহী। ২৫ মার্চ ২০১২।

বাসটা এত স্লো চলে কেন? মেজাজটা সপ্তমে..

ইচ্ছে করছে ড্রাইভার ব্যাটারে ধরে…….।

অবশেষে রাজশাহী পৌছে অনলাইনে ঢুকলাম। কিন্তু দেখি অনলাইনে ও নাই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কি করবো ভাবতে ভাবতে, আমার ফোন।নাম্বারটা ওকে মেসেজ করে রাখলাম আর ফোন দেয়ার জন্য বললাম।

ঠিক তিন মিনিট পর…

-হ্যালো (ঘুম জড়িত কন্ঠ)

-কে বলছেন?

-নীল

-আপনি কোথায়?

-রুমে, তুমি?

-রাজশাহীতে।

-কি (উচ্ছাসিত কন্ঠে), কেন?

-আপনি কি আমায় নিতে আসবেন? অনেকক্ষণ

রেলগেইটে বসে আছি।

-জাষ্ট ৫ মিনিট দাড়াও।

-ওকে।

ঠিক সাত মিনিটের মাথায়..

-হ্যালো।

-কই তুমি?

-বনফুলের সামনে..

-কি পরে আছো?

– জিন্স, আকাশি টি-শার্ট।

হঠাৎ পেছন থেকে কাধে উষ্ণ ছোয়া অনুভব করলাম।

ঐশ্বর্য?

ঘুরে দেখি মায়াবি দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে

আমার স্বপ্ন পুরুষ।

জাষ্ট ‘হু’ বললাম।

-চলো!

-কোথায়?

-আমার বাসায়।

-হু

রিক্সায় উঠে দুইজনই চুপ। আমি যেন বাক শক্তিহীন

এক জড়পদার্থ। অবশেষে ওর বাসায় এলাম,

ছোটখাটো পরিপাটি একটা বাসা। ও একাই থাকে,

ওর বাবা মা আর এক ছোট ভাই গ্রামের বাড়ীতে

থাকেন।

-হটাৎ করে না বলে চলে এলে?

-কেন আপনি খুশি হন নাই?

-কখন বললাম?

-তাহলে সমস্যা কোথায়?

-আসলে তুমি আসবে জানলে কিছু করা

যেত…….এটা আমার রুম।

.. অপূর্ব করে সাজানো পরিপাটি একটা চৌকোণ ঘর। প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে ঘরে। দেয়ালে সাটা কিছু তৈলচিত্র। সব মিলিয়ে এক অনাবিল সৌন্দর্যের বাসস্থান।

-ওহ.. many many happy returns of the day.

-thnx dear.

ওর মুখ থেকে dear কথাটা শুনে অস্বাভাবিক ভালো

লাগলো।

-দাড়িয়ে কেন? বসো।

-হু।

-কি হু হু করো? ফেইসবুকে তো কথা বলার সময়

দাওনা আমায়। আর এখন চুপ?

-কি বলবো?

-কিছুই কি বলার নাই তোমার?

-আপনি বলেন আমি শুনি?

-তুমি অনেক সুন্দর ঐশ্বর্য!!!

-এটাতো সবাই বলে।

-তারা মিথ্যা বলেনা।

-হু।

-নিচে তাকিয়ে কেন? আমার চোখের দিকে

তাকাও।

-(তাকালাম, হার্টবিট পুরা 5G গতিতে চলছে)

বলেন।

-আমাকে ভালো লাগেনি তাইনা?

-লেগেছে।

-কি এনেছো আমার জন্য?

-নিজেই দেখে নেন।

…….

-তুমি কি আমাার মমতাজ?

-আমি মমতাজ হতে যাব কেন?

-তাজমহল গড়ার কথাতো আমার?

-কেন?

-দাড়াও আসতেছি..

হুটহাট আওয়াজ করে কেউ সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে

যাওয়ার আওয়াজ পাচ্ছি..

…….

-সরি, একা একা বসিয়ে রাখার জন্য।

-it’s ok.

নীল হাতে করে কি যেন নিয়ে এসেছে (হাত পেছনে থাকায় দেখতে পাচ্ছিনা)

-(আমার সামনে ছলোছলো চোখে হাঁটু গেড়ে বসে

পড়লো নীল, ডান হাত সামনে আনলে দেখলাম

আমার প্রিয় দুইটা ফুল সাদা ও লাল গোলাপ)

ঐশ্বর্য? I love you. do u love me?

মন্ত্রমুগ্ধের মত কথা না বলে ফুল গুলো কাঁপা হাতে

ওর হাত থেকে নিলাম। বুকে হৃৎপিন্ড এত জোরে

জোরে আঘাত করছে যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে।

নীলের অশ্রু ভরা চোখে আমার জন্য পূর্ণ

ভালোবাসা দেখছি। আচ্ছা এটাই কি ভালোবাসা?

বুঝতেছি না। সব কেমন যেন শূণ্য!!!

-কন্ঠে ভরা আবেগ নিয়ে অনেক কষ্টে বললাম,

ভালোবাসি।

কখন চোখ বেয়ে একফোটা জল পড়ে গেছে খেয়াল

করিনি। অল্প অল্প করে প্রেমের যে বীজ হৃদয়ে বপণ

করেছিলাম, তা আজ পরিপূর্ণ বৃক্ষ।

এতক্ষণে আমার দুই হাত চেপে ধরলো নীল,

-আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা তো?

-না যাবোনা, তুমি কি চলে যাবে আমাকে ছেড়ে?

-কোনদিন না!

খেয়াল করিনি কখন নীলকে তুমি বলে ফেলছি..

নীল আমার দুই হাত ধরে দাড় করালো.. আমি

কাঁপছি..

-ভয় পাচ্ছো জান?

-হু

-আমি আছি না?

-তোমার থেকেই তো ভয় পাচ্ছি..

– (হেসে) ভালোবাসো না?

-অনেক..

-তবে ভয়ের কি আছে?

-জানিনা।

নীল ওর দুই হাত দিয়ে আমার কানের দুইপাশ চেপে ধরলো.. হৃৎপিন্ডের আওয়াজ এত পরিস্কার কোনদিন শুনিনি!!!

ওর মুখটা এগিয়ে আসছে আমার দিকে.. অবশেষে ওর ঠোঁটজোড়া আমার গাল স্পর্শ করলো.. আস্তে আস্তে ঠোঁটে.. এ কেমন অনুভূতি? আমি যেন শূণ্যে ভাসছি.. নীল আমার কানে মুখ লাগিয়ে বলল, তুমি শুধুই আমার.. আমিও যন্ত্রের মত জড়িয়ে নিলাম আমার নীলকে.. আজ এই গোধূলি লগ্নে আমার নিজেরা নিজেদের মাঝে বিলিন হয়ে গেলাম..

নিজের স্থাবর অস্থাবর সব শঁপে দিলাম আমার

নীলের হাতে..

*******

আজ আমি আর নীল একসাথে থাকি। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩ বছর!!!

আমি ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ.. নীল আজ একজন

ইন্জিনিয়র..

এই তিন বছরে এতটুকু ফাটল ধরেনি আমাদের

সম্পর্কে.. তবে কিছুটা ভূল বুঝাবুঝি ছিল, আমার

অভিমান বরাবরই অনেক বেশি.. কিন্তু নীল

আমাদের সম্পর্কের হাল ধরেছিল শক্ত হাতে..

আজ আমাদের ছোট্ট একটা সংসার আছে.. প্রতিটা

জন্মদিবস বা আমাদের সংসারের বর্ষপূর্তিতে

আমরা নতুন করে নিজেদের চিনতাম..!!!

আজ ২৫ মার্চ ২০১৫..

জানা ছিলোনা আজ আমার জীবনের ভয়াল রাত

হবে!!!

কিছুদিন থেকেই নীল কেমন যেন হয়ে গেছে,

অন্যমনস্ক থাকে, অস্বাভাবিক rude আচরণ করে।

আমি খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি ওকে নিয়ে।

৩ বছরে কোনদিন এতটুকু খারাপ আচরণ করেনি আমার সাথে কিন্তু কি হলো হঠাৎ ওর? এসব চিন্তা সর্বদা আমায় তাড়া করে ফিরছে..

কিছু জিজ্ঞেস করলেও পরিস্কার করে কিছু বলেনা।

সব সময় বলে কিছু হয়নি, বাদ দাও।

রাত ১১ টা

আজ ওর বার্থডে সেলিব্রেট করা হয়নি বললেই চলে। শুয়ে আছি পাশাপাশি অথচ দুজনের মনেই আজ কাল বৈশাখী ঝড় বইছে। সেই ঝড়ে কি আমার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে?

-জান?

-বলো।

-তোমাকে কিছু বলতে চাই!

-হুম জানি বলতে চাও। কিন্তু বলছোনা কেন?

হঠাৎ পেছন থেকে নীল আমাকে জড়িয়ে ধরে

বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠলো..!

-কি হলো নীল? হানি প্লিজ কেঁদোনা। কিছু

সমস্যা হলে বলো? সব সমস্যারই সমাধান আছে।

-আমার বিয়ে ঠিক করা হয়ে গেছে।

নীল আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে.. আমি

সারারাত একটা টুঁ শব্দও করতে পারিনি.. একভাবে

শুয়ে রয়েছি আর ও কেঁদেই চলেছে।

সকাল হলো…

কখন কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকেই নীল ঘুমিয়ে

পড়েছে খেয়াল করিনি.. আমার বুক ভেসে যাচ্ছে ওর

চোখের জলে..

এতক্ষণে আমার খুব কান্না পেল। বুকটা ফেটে

চৌচির হয়ে যাচ্ছে.. কেন একজন পুরুষ আরেক পুরুষকে গ্রহণ করতে পারবেনা। এই একটা প্রশ্নই বারবার উঁকি দিচ্ছিল মনে। কখন ও জেগেছে খেয়ালই করিনি।

-হানি?

-তুমি কি চাও নীল?

-জানিনা।

-এটা কোন উত্তর না।

– আব্বার অবস্থা ভালোনা। উনার কিছু হয়ে গেলে

পরিবারের সব দায়িত্ব আমার তা তো তুমি জানই।

শেষ বারের মত ওর বাহু বন্ধন ত্যাগ করে বাথরুমে

ঢুকে ঝরনা ছেড়ে বসে পড়লাম। বাইরে থেকে দরজা

নক করছে আমার নীল।

দরজা খোল ঐশ্বর্য প্লিজ..

আজ আর পৃথিবীর আলো দেখতে ইচ্ছা করছেনা।

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.