
হৃদয় হাসান
2013 সাল। তখন আমি অনার্স
তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একটা জেলা
শহরে মেসে থাকি। অনার্স লাইফের
চার বছরে অনেক গুলো মেস বিভিন্ন
কারনে চেঞ্জ করতে হইছে। কিন্তু
কখনোই কোন রুমমেটের উপর
রুমমেট ছাড়া অন্য কোন দৃষ্টি পড়ে
নাই। কেবলমাত্র একজন ছাড়া!
ওর নাম শান্ত।আমাদের সাথে তৃতীয়
বর্ষেই পড়তো। নদীর টলটলে স্বচ্ছ
শান্ত পানির মতই শান্ত।
আকর্ষণীয় ফিগারের সাথে আকর্ষণীয়
চেহারা। আর কথা বলার ধরন এতটাই
ভাল ছিল যে ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা
বললে যে কেউ ওর ফ্যান হতে বাধ্য।
এই কারণে এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিল
আকাশচুম্বী! কিন্তু আমি ওর হাতের
প্রেমে পড়েছিলাম। ঐ রকম সুন্দর
হাত আমি আর কখনোই দেখি নি।
আমি সাহস করে একদিন ওকে বলেই
ফেলেছিলাম যে আপনার হাতগুলো
অনেক সুন্দর। তারপর থেকে যখনই
দেখা হতো ও আমার হাত ধরে
হাটত, জানিনা ওর কেমন লাগতো
তবে আমার ভিতরে তুফান শুরু হয়ে
যেত। আচ্ছা থাক সে কথা!
ওর সাথে যখন প্রথম পরিচয় হয়
তখন আমরা তাবলীগে যাই তিনদিনের
জন্য। আর শান্ত পুরোনো সাথী
হিসেবে একদিন আমাদের কে দেখতে
গিয়েছিল। তারপর থেকেই আমাদের
দেখা হত, কথা হত। আমরা অনেক
কিছু শেয়ার করতাম। ও আমাকে প্রায়
সময় আতর, সুরমা লাগিয়ে দিত।
সবাইকে দেখতাম ওর সাথে কথা
বলার জন্য পাগল। ও কোন কথা
বললে কেউ বিরোধিতা করত না।
কিন্তু ও কাউকে তেমন গুরুত্ব দিত
না। পরবর্তীতে দেখি ও আস্তে
আস্তে আমার সব কথা রাখার চেষ্টা
করে। কেউ আমাকে কিছু বললে আমার
আগে ও জবাব দিয়ে দেয়। আমি দিনের
পর দিন কেবল ওর প্রতি মুগ্ধ হতে
থাকি।
এন্ড্রয়েড সম্পর্কে আমার তেমন
ধারণা ছিলনা। তখন ওর হাতেই
প্রথম এন্ড্রয়েড মোবাইল দেখি
এবং এর সম্পর্কে জানতে পারি।
পছন্দ হওয়াতে কিছু দিনের মধ্যে
আমিও একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনি।
তারপর কোন প্রবলেম হলেই ওর
কাছে ছুটে যাই। আমি বুঝতাম আমি
গেলে বা আমার সাথে থাকতে ওর ও
বেশ লাগত। আমরা ফেসবুকে ফ্রেন্ড
ছিলাম। সেই সুবাদে আমাদের
সারাদিন দেখা হওয়ার পরেও চেটে
কথা হত। একদিনের ঘটনা —-
রাতের বেলা খাওয়ার পরে ওর সঙ্গে
চেট করতেছি …….
আমি – খেয়েছেন
শান্ত – না, আপনার শুভ (আমার এক
বন্ধু)ভাইয়ের জন্য খাইতে পারি নাই!
ওই সব খেয়ে ফেলছে
আমি – আপনার শুভ ভাই মানে কি?!
শুভ তো আপনার!
শান্ত – কেন আপনিও তো আমার
আমি – কি?
শান্ত – আমি আপনাকে আল্লাহর
জন্য ভালবাসি।
তখন আমার আর বুঝতে বাকি
থাকেনা যে ও আমাকে ভালবাসে।
কিন্তু শান্ত ছিল প্রচন্ড ধার্মিক
আর আল্লাহ ভীরু। আমি কখনো
ওকে কোনো গুনাহের কাজ করতে
দেখিনি। তাই হয়তো কখনো বলেনি
ভালবাসি।
এরইমধ্যে একদিন শান্ত আমাকে
বলল যে ওর রুমমেট কি কারনে জানি
রুম চেঞ্জ করবে। আমি কি ওর সাথে
ওর রুমে উঠতে রাজি আছি কিনা।
আমি তো হাতে আকাশ পাওয়ার মত
আনন্দ অনুভব করলাম।
কোনরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই বলে
দিলাম হ্যাঁ।
আজ জুনের 31 তারিখ। কাল ওর
মেসে ওঠার তারিখ। রাত 11টায়
মেসেজ দিলাম “কি জানি এক
আনন্দে মন উচাটন “।ও মেসেজ
পাওয়ার সাথে সাথে আমাকে রিং দিল
….
ওর রুমমেট চলে গেছে আমি যদি চাই
রাতেই ওর ওখানে শিফট করতে পারি।
আমার আর তর সইলো না রাতেই
চলে গেলাম।
দুইদিন পর শুক্রবার। ও ভূত এফএম
শুনত। আমি এইসবে খুব ভয় পাই!
ওকে বারন করার পরও দুইজন ভূত
এফএম শুনলাম। তারপর আমার তো
ঘুম আসে না, সারারাত ও আমার
সাথে বসে ছিল, গল্প করতে করতে
ফজরের আযান দিল তারপর নামাজ
পরে ঘুমালাম!
স্বপ্নের মত কাটতে ছিল দিনগুলো।
ও প্রায় সময় আমার বিছানায়
শুইতো। আমাদের দুজনের মাথা
এতই কাছে থাকতো যে, আমি ওর
গরম নিশ্বাস আমার শরীরে অনুভব
করতাম।
আমরা একপ্লেটে খাবার খেতাম।
আমি ধোয়ার জন্য কাপড় ভিজিয়ে
রাখলে ও ধুয়ে ফেলত। চাল টাকা
পয়সা কোন কিছুরেই আমরা হিসাব
করতাম না। আমার কাছে মনে হইত
এটা আমার সংসার!
তারমাঝেই আমাদের তৃতীয় বর্ষ
ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে।তখন
রোজা ছিল। রোজা, পরীক্ষা আর
কিছুটা অসুস্থ ছিলাম ফলে একদিন
মাগরিবের নামাজের সময় মাথাঘুরে
পরে যাই। পরে জানতে পারি ঐ দিন
ও নাকি পাগলমন মত হয়ে গিয়েছিল।
এভাবেই আদর সোহাগ ভালবাসায়
আমাদের সংসার ভালই চলিতেছিল।
আমাদের মধ্যে কোন ধরনের যৌন
সম্পর্ক ছিলনা। এমনকি আমি ওকে
এতটা পছন্দ করি তাও কখনোই ওকে
বলিনি। তবুও শুধুমাত্র ওকে কাছে
পেয়েই আমি পৃথিবীর সুখী মানুষদের
একজন ছিলাম।
আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। ঈদ
চলে আসে আমরা বাড়ি চলে যাব
কালকে। (ঈদের পরে আমি দুইমাস এক
জায়গায় বেড়াতে যাব তা আগেই
নির্ধারিত ছিল। ) পাশাপাশি গাঁ ঘেসে
শুয়ে আছি দুজন। ও অনেক কথা বলল
আমি কেবল শুনলাম। আপনি না
থাকলে ভাল লাগবেনা, ঘরেই আসতে
ইচ্ছা করবেনা এরকম আরো অনেক
কিছু…….
ভোরে আমি বাড়ি চলে আসি।
ফোনে মোটামুটি যোগাযোগ ছিল।
তারপর আমি বেড়াতে চলে যাই।
আমার ফোন নষ্ট হয়ে যাওয়াতে ওর
সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর একদিন হঠাৎ আম্মুর কাছে
শুনি ও বিয়ে করে ফেলছে। অভিমানে
রাগে আর ওকে ফোন দেয়নি।
দুইমাস পর ফিরে এসে মেসে যাই
কিন্তু আমার ঐ মেসে আর ভাল
লাগেনা। কেবলই একলা লাগে। তারপর
ঐ মেস ছেড়ে অন্য. একটা মেসে চলে
যাই।
***************
***************
********************
আমি আমার এই অপ্রকাশিত
ভালবাসার স্মৃতি কখনোই ভুলতে
চাইনা। এই স্মৃতিগুলোকে বুকে ধারন
করে বাঁচতে চাই, হাসতে চাই, কাঁদতে
চাই ………..
উৎস: অন্যভুবন