
সোহানুর রহমান শান
১।
বাদামী রং এর একটি কাঠের চেয়ারে বসে আাছেন সেন্ট্রাল বয়েজ হাই স্কুলের অংক স্যার, শেমল বসাক। তার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। সামনে টেবিলে রাখা একটি নীল রং এর ফাইল। ছাত্র দের মোট প্রাপ্ত নম্বর ও মেধা তালিকা। চশমার গ্লাস মুছে একবার পিটপিট করে ছাত্রদের দিকে আর একবার রেজাল্ট শিট এর দিকে তাকাচ্ছেন তিনি। এবার একটা ও ফেল করেনি। ছেলে গুলা পড়াশুনা করে না কিন্তু এত ভাল রেজাল্ট করে কিভাবে? নিশ্চয়ই কাহিনী আছে । এরপর থেকে আরো কড়া গার্ড দিতে হবে। তিনি ক্লাসে বসে আছেন অথচ সবাই এমন ভাবে নিজেদের মধে কথাবার্তা বলছে যেন এটা ক্লাস না মাছের বাজার। বেশ জোরেশোরে গলা খাকারি দিলেন তিনি। ক্লাসের সবাই চুপ মেরে গেল। ভারি গলায় তিনি বলতে লাগলেন, তোমাদের ক্লাস এর রেজাল্ট এসে পরেছে। আমি পরে শোনাচ্ছি। তোমরা কেউ কোন শব্দ করবে না .. প্রথম হয়েছে আশরাফুল সাদ রোল নং এক। ২য় হয়েছে মোঃ রাফিউজ্জামান ……………………………..
সাদ ফাস্ট বেঞ্চে বসেছিল। তার চোখেমুখে গর্বের হাসি। আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিল সে। সবাই সাদ এর দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন সে এক মূর্তিমান শয়তান। সবার চোখে এনভিয়াস,জেলাসি। সাদ এর পাসের সিটে বসেছিল রাফি। রাফি সাদ এর বেস্ট ফ্রেন্ড। শুধু তাকেই হাসিখুশি দেখাচ্ছে। সাদ এর সব এর সবকিছুতেই খুশি হয় সে..রাফিকে বোকার মত হাসতে দেখে মায়া লাগল সাদ এর। সবাই ওর মত ইনোসেন্ট হয় না কেন? সব কটা হিংসুটে। আড় চোখে পিছন ফিরে তাকালো সে .. লাস্ট বেঞ্চে অভি বসে আছে। চোখে চোখ পড়ে গেল তার সাদ এর সাথে। সাদ খানিকটা এক্সপ্রেশন দিতে ট্রাই করল। সে ক্লাসে আবারও ফার্স্ট হয়েছে সেইরকম এক্সপ্রেশন। অভির মুখ নির্বিকার। এক গাদা পোলাপাইন তাকে ঘিরে আছে। মুখ নামিয়ে চাপা গলায় কি যেন কৌতুক করল সে.. সবাই এখন সাদ এর দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে ..দেখে গা জলে গেল তার। ক্লাস এর রেজাল্ট দিচ্ছে অথচ তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। একে তো টেনেটুনে পাশ করে তার ওপর ক্লাস এ বসে দুষ্টামি। জোকটাও নিশ্চয়ই তাকে নিয়েই করা হয়েছিলো.. মুড টাই খারাপ হয়ে গেল তার.. রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে রইল সে.. দুই পিরিয়ড কারও সাথে কোন কথা বলল না সে। রাফি কয়েকবার জিজ্ঞেস করে সাদ এর লুকস দেখে তাকে আর ঘাটাঘাটি করার সাহস পেল না.. টিফিন টাইমে সাদ ব্যাগ গুছাতে লাগলো। আজ ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না। ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। রাফি সাদকে ব্যাগ গুছাতে দেখে সেও বই টই ব্যাগ এ ভরে ফেলল..
কি ব্যাপার রাফি ..তুমি কই যাও?….রাফি আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
আ আ আমি কোথাও না।
তাহলে ব্যাগ গুছাচ্ছ কেন? বাংলা ক্লাস করবানা? শামিমা ম্যাডাম আজ ইম্পর্টেন্ট নোট দিবে বলেছে।
তুমি যাচ্ছ যে..
ওহ আমার তো শরীর ভাল লাগসে না। বাসায় চলে যাবো। আজ ক্লাস করব না।
আমারও তো শরীর খারাপ।
কই তোমারে ত সুস্থই দেখতেসি .তোমার আবার কি হল?
আরে না আমার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে। এই যে কপাল ধরে দেখ জর আসছে মনে হয়।
থাক থাক আর নাটক করতে হবে না। আসো।
সাদ রাফিকে নিয়ে গেইট ক্রস করছিল। এমন সময় তার চোখ মাঠের দিকে চলে যায়। স্কুল মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছে। অভি কে দেখা যাচ্ছে। ব্লু কালারের ট্রাউজার পড়া। শার্ট কোমরের সাথে টাইট করে বাধা। অভির সারা শরীর ঘর্মাক্ত। রোদের আলোয় চিক চিক করছে। আচ্ছা ওর শরীরের সাথে আমার শরীরের পার্থক্য কি? ওর বুকে হাল্কা লোম আছে, আমার নেই। ওর মাসল হতে শুরু করেছে, আর এদিকে আমাকে সবাই চিকনি চামেলী বলে খেপায়। অভির পেট এর কাছে এসে সাদ এর দৃষ্টি আটকে যায়। হালকা কালো পশমের শির টা বেশ খানিকটা নিচের দিকে নেমে এসেছে।গলা শুকিয়ে যায় তার। অদ্ভুত এক কৌতূহল ঘিরে ধরে তাকে। সাদ হঠাৎ খেয়াল করল অভি দুর থেকে ওর এদিকেই তাকিয়ে আছে। সাদ তাড়াতাড়ি তার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিল। তার হার্ট বিট বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ডটি এখনই লাফ দিয়ে বুকের বাইরে চলে আসবে। বুকের কাছে ধুকধুকানি আওয়াজ হচ্ছে। ইদানিং কি সব উল্টাপাল্টা চিন্তা আসছে তার মাথায় বুঝে উঠতে পারছে না সে। কার সাথে শেয়ার করবে কি বা আদৌ এসব ব্যাপার শেয়ার করা যাবে কিনা। সাদ এর কাছে আপাতত এর কোন উত্তর নেই।
কি ব্যাপার সাদ ?
দাঁড়িয়ে পড়লা কেন ? যাবা না ?
রাফির কথায় সাদ এর হুশ ফিরে। ও হ্যাঁ। না কিছু না। খেলা দেখতেছিলাম।
খেলা!! আর তুমি!
হুম্ম। কেন আমি খেলা দেখতে পারিনা।
হুম্ম পার তো। তুমি ত সব ই পার। চাইলে দুই তিনটা ডিম ও পেরে ফেলতে পারবা।
হ্যাঁ বলছে তোমারে। হইছে চল। এই বলে সাদ পেছন ফিরতেই তার মাথা লোহার গেইট এর সাথে লেগে যায় …টাং করে শব্দ হয় .গেইট টা পুরোটা কেপে ওঠেছে। ইয়াল্লা সাদ। পরন্ত সাদকে ধরে ফেলে সে ।সাদ এর মাথা টা ঝিম ঝিম করে উঠল। প্রচন্ড ব্যথা। উফফফফ !!
সাদ তুমি ঠিক আছ তো ?
হ্যাঁ সমস্যা নাই। এইই একটু ব্যাথা পাইছি..
একটু ব্যাথা না? কত ফুলে গেছে দেখছ। কি যে হইছে তোমার একটু দেখে শুনে চলতে পার না। ইদানিং এত কি ভাব তুমি? ঘটনা কি …
আরে না …পড়ার এত চাপ ..তারওপর ক্লাস মিস দিলাম.. একটু টেনশন হচ্ছে।
ওহ এই জন্য। তো মাঠ এ তাকিয়ে ছিলা কেন? অভি কিছু বলছে তোমারে? ঘটনা সেইরকম কিনা বল ? আমি শালারে জন্মের মত শিক্ষা দিয়ে দিব।
আরে কি বল তুমি এইসব ।অই গাধা আমারে কিছু বলার সাহস পাবে? চল আমার দেরি হয়ে যাইতেসে।
২।
এই দেখ দেখ কি সুন্দর হলদে পাখি। ঢাকা শহরে আজকাল এইরকম পাখি দেখতে পাওয়া যায় ভাবাই যায় না …
সামান্য হলদে পাখি দেখে এত লাফালাফির কি আছে ..ইউ টিউব এ গিয়ে সার্চ দিলেই তো পারিস Black-hooded Oriole
..আরে হাদারাম ! নেট এ ভিডিও দেখা আর সামনাসামনি দেখা দুইটার মধ্য বিস্তর তফাত আছে না আকাশ পাতাল টাইপের ..
সাদ বই থেকে মুখ তুলে তাকাল.. সামনে ফিজিক্স পরীক্ষা এমনিতে ..পড়াশুনার চাপ তার ওপর হরতাল তো আছেই। পরীক্ষা শেষ হতে হতেই বুঝি বছর পার হয়ে যাবে ..কিন্তু এই নিয়ে অর্পার কোন চিন্তা নেই ..মেয়েটা আছে ফুর্তিতে। মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দিয়ে নিল সাদ তাকে.. এইসব ভয়ংকর গালি সামনা সামনি রূপবতী মেয়েদের দেয়া যায় না,. অতি বদ লোক ও বোধয় পারবেনা.. সাদ তো সে তুলনায় খুবই ভদ্র ছেলে..
কই পাখি, আমি তো কিছুই দেখছি না.,শুধু পাতা দেখা যাচ্ছে..
আরে তুই ভাল করে তাকালেই দেখতে পাবি ..চশমার পাওয়ার তো দিন দিন বাড়িয়েই চলেছিস ,বইয়ের ছোট ছোট ছাপার অক্ষর ছাড়া তোর তো কিছুই চোখে পড়ে না.,
সাদ চশমার গ্লাস মুছে জানলার ফাকে দিয়ে ভাল করে তাকাল ..এই মেয়েটা আজ পাখি না দেখিয়ে ছাড়বে না মনে হচ্ছে ..নচ্ছাড পাখিটাকে দেখা গেল.. পেয়ারা গাছের একটা ডালে বসে আছে ..মুখে পোকা জাতীয় কিছু ..কিলবিল করে নড়ছে, নিকট মৃত্যু থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা ..পাখিটা পোকা মুখে দিয়ে বসে আছে ..খাওয়ার চেষ্টা করছে না কেন কে জানে, সঙ্গীকে উপহার দিবে মনে হয়, সাদের গা গুলিয়ে এল ..এইরকম কুৎসিত একটা জিনিস দেখার জন্য অর্পা তাকে এতক্ষন জোড়াজুড়ি করছিল ..বদ মেয়েটার ওপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগল ..সকাল সকাল গ্রুপ স্টাডির কথা বলে বাসায় চলে এসেছে.. আম্মা যে কেন এই মেয়েটাকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলছে কে যানে, গ্রুপ স্টাডিস শিকেয় উঠেছে ..সেই কখন থেকে একটানা বকবক করে চলেছে . মাথাটা ধরে এল ..অর্পার নাম শুনতেই যেন আম্মা অস্থির., মেয়েটা এত হাসি খুশি প্রান চঞ্চল.. বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এত বড়লোক ঘরের মেয়ে.. আম্মা মনে মনে এই মেয়েকে খুবই পছন্দ করেন সেটা সাদ খুব ভাল করেই জানে .. তাছাড়া অর্পার বাবা মায়ের এ বিষয়ে তেমন আপত্তি আছে বলে মনে হয় না …নাহলে কে এমন ধিঙ্গি মেয়েকে সারাদিন কারো বাসায় একা একা পড়ে থাকতে দিবে ,.
অর্পা শোন তুই এখন বাসায় যা …তোর আম্মু রাগ করবে…
আমার আম্মু যে রাগ করবে তাই তুই কিভাবে জানলি? তাছাড়া আজ আম্মু আব্বু কি কাজে ঢাকার বাইরে গেছে ..ফিরতে ফিরতে সন্ধা হবে.. আমাকে বলেছে আমি চাইলে সারাদিন আন্টি মানে তোদের বাসায় থাকতে পারি ..
কেন তোর নিজের বাসা থাকতে সারাদিন আরেকজন এর বাসায় গিয়ে পরে থাকবি তোর কি লজ্জা করে না .,
এতে লজ্জার কি আছে, তুই না আমার হবু বর.. তোর বাসায় আসব না তো কার বাসায় আসব ..
একদম চুপ কর ..তোর এই ধরনের রসিকতা আমার একদম ভাল লাগে না ..
আচ্ছা চুপ করলাম ..এই বলে অর্পা সাদের দিকে দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রইল.. সাদের অস্বস্তি হতে লাগল ..উফ লাইফটা ঝালাপালা করে দিল এই মেয়েটা.. তুই যা তো এখন আমার সামনে থেকে.. উহু আমি কোথাও যাব না.. তোর সাথে বসে গল্প করব.. দেখছিস না আমি পড়ছি.. আম্মা বোধয় কিচেনে আছে ..উনার সাথে গিয়ে গল্প কর.. . দুই মহিলা মিলে সুখ দুখের আলাপ করবি …
অভি দেখ আমাকে মহিলা বলবি না ..শুনতেই কেমন বিশ্রি লাগে .
.তোকে মহিলা ডাকব নাতো আন্টি বলে ডাকব নাকি ..যতসব। যা ভাগ এখান থেকে..
অর্পা কিছুক্ষন ইত:স্তত করে উঠে পড়ল ..আজ সাদের মেজাজটা চড়া … বেশি ঘাটানো যাবে না ।
সাদ বই রেখে দিল। পড়তে ইচ্ছে করছে না …টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা লাল রং এর ডায়রী বের করল ..সাদ এর জন্মদিনের গিফট ..অর্পা দিয়েছে.. ডাইরির পাতায় পাতায় গোলাপের ছবি ..ওপেন করলে টুংটাং জাইলোফোন এর মিউজিক বেজে উঠে। এখন অবশ্য হয় না.. ব্যাটারী শেষ বোধয়। ডাইরিতে কখনো কিছু লেখা হয়নি ..অর্পা দেয়ার সময় বলেছিলো শেষ পাতায় তোমার জন্য একটা মেসেজ আছে.. যখন একা থাকবা তখন খুলে দেখবা .. সাদ শেষ পাতা সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রেখেছে ..অর্পার সিক্রেট মেসেজ ডাইরির দু পাতার মাঝে আটকে গেছে ..আজ এটায় কিছু লিখলে কেমন হয়.. কি লেখা যেতে পারে ..নিজেকে নিয়ে লিখব??? আজ কি কি করলাম ..কি খেলাম এইসব। না কেমন পক্ষপাতিত্ব হয়ে যাচ্ছে.. বরং আমি বাদ এ আর সবাইকে নিয়ে লেখি.. প্রথমেই রাফি কে দিয়ে শুরু করি।
রাফি।
রাফি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বা ধরতে গেলে ঐ আমার একমাত্র বন্ধু ..ভাল বন্ধুর সব গুনাবলীই বোধহয় ওর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে ।
আমার ধারণা রাফি ছাত্র হিসেবে আমার থেকেও ভাল ..কিন্তু প্রতিবার ও সেকেন্ড হয়ে যায় আর আমি হই ফার্স্ট …ওকে এ বেপারে জিজ্ঞেস করতে হবে ।
অর্পা।
অর্পা আমাদের পাসের বাসায় থাকে ।৬ তালা বাড়ি। ওর আব্বু বিজনেস্ম্যান। বিশাল বড়লোক। বছরের ছ মাস দেশে থাকেন ছ মাস দেশের বাইরে। অর্পার আম্মু প্রায় ই এ বাসায় বেরাতে আসেন। ভদ্রমহিলা বিশেষ রকমের সুন্দরী দেখতে। অর্পার চেয়েও বয়সে ছোট মনে হয়। কিন্তু তার কথাবার্তা খুবই অশালীন। পুরান ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলেন।
বাবা পড়াশুনা কেমন চলছে ?আমাগো মাইয়ারে কিন্ত সিক্ষিত পোলা ছাড়া নিকা দিতাম না। এইসব হাবি জাবি। জঘন্য ।
অভি।
অভি কে নিয়ে কেন লিখছি বুঝতে পারছি না। অভি আমার ক্লাস মেট।
কিন্তু ওর সাথে আমার কখনো তেমন একটা কথা হয়নি। প্রয়োজন পড়েনি। অহেতুক কথা বলা আমার একদম পছন্দ না । অভি বোধহয় সম্পূর্ণ আমার বিপরীত ..ওর সাথে সারাক্ষণই কিছু না কিছু পোলাপাইন থাকে ..
গল্প আড্ডাবাজি ..অভি দেখতে খারাপ না. চোখ গুলা সুন্দর মায়াবী
অভির সাথে আমার একধরনের কম্পিটিশন চলে। ও খেলাধুলায় ভাল আমি পড়াশুনায় ….মিলল না তবু ও প্রতিবার স্কুল কাপ জিতে আমার দিকে তাকায় আর মুচকি হাসে ..আমার খেলাধুলা কম্পিউটারে প্রিন্স অফ পার্সিয়া গেম পর্যন্তই ..যাই হোক রাফি কে কল করা জেতে পারে। ওর ও গেম টা প্রিও। লেভেল 20 পার করল নাকি জানা দরকার। আমি 25 লেভেলে আছি। একটা সিক্রেট ওয়েপন খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না ।
সাদ ক্লাসের ফাকে জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল ।
অংক স্যার আসতে একটু লেট করছে ।
আজ বিশেষ কোন নোটিশ নিয়ে আসবে মনে হয় ।
এমন সময় সাদ লক্ষ্য করল অভি তার দিকে আসছে। অভি আজ স্কুল ড্রেস পরে আসে নাই ..নির্ঘাৎ স্যার এর বকা খাবে.. অবশ্য দেখতে খারাপ লাগছে না.. লাল খয়েরী রং এর শার্ট আর রিপ জিন্স …এগুলা পড়ে কেও ক্লাসে আসে হায় খোদা… অভি সাদ এর পাশে এসে বসল.. সাদ এর দিকে ঘুরে তাকিয়ে প্রশ্ন করল ..
সাদ তুমি কোন গ্রুপ নিবা? সাদ এর অস্বস্তি লাগছে। অভি তার সাথে কখনো এভাবে কথা বলে নাই ..
আমি সাইন্স তু… তুমি বলতে যেয়ে সাদ এর গলা আটকে যায় ..অভি তার দিকে চোখে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে ..সাদ মাথা হাল্কা নিচু করে ফেলে। যাতে অভির মুখ দেখা না যায় ..দাঁত দিয়ে নখ খুটতে থাকে..
কি বলবানা ও তুমি ত ভাল ছাত্র। আমাদের সাথে কথা বলবা কেন ? আচ্ছা যাই।
অভি উঠে পরে ..অভিকে যেতে দেখে সাদ বলে উঠল,
আরে অভি দাঁড়াও না। আমি তো কি জানি চিন্তা করিতেছিলাম খেয়াল করি নাই..
কি যেন বল্লা ..ওহ ..আমি তো সাইন্স নিবো. তুমি কোনটা নিবা???
আমিও সাইন্স .
জে.এস.সির পয়েন্ট কত তোমার। 3.64 ।
অভি এই পয়েন্ট এ তো তোমারে এলাও করবে না .
তাহলে কি করব?
জানিনা স্যার কে বলে দেখতে পার? তুমি ত খেলাধূলা এ খুব ভাল। বিকেস্পি তে ভতির্র জন্য এপ্লাই কর না কেন ?
হুম্ম দেখি কি হয়। তুমি আমার খেলা দেখ ?
দেখি ত সুধু কাপ নাও সেইটা দেখি ..
হাহা ভাল তো অভি হেসে দিল। তার দাঁতের কর্নারে একটা দাত উচু। হাসলে কেমন বাচ্চাদের মতো লাগে। সাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে অভির হাসি দেখতে লাগল। তার খুব ভাল লাগছে দেখতে।
আচ্ছা সাদ তোমার নাম্বারটা দিবা ?
নাম্বার? নাম্বার দিয়ে কি করবা?
ওই যে রুটিন নিব। আমারটা খুঁজে পাচ্ছিনা .
ওহ আচ্ছা লেখ … অভি নাম্বার নিয়ে পকেটে রাখল। আচ্ছা থাক তাইলে ক্যাপ্টেন। আজ একটা জটিল ম্যাচ আছে। চাইলে দেখতে পার।
আচ্ছা যাও ।
অভি চলে গেছে। সাদ জোরে একটা শ্বাস নিল। অভির সাথে দুই মিনিটের মত কথা হয়ে গেছে অথচ মনে হচ্ছে সব এনার্জি শেষ.. অজানা এক অনুভূতি কাজ করছে তার মধ্যে। এমন হচ্ছে কেন ..বাকি ক্লাস গুলা সাদ তেমন মনোযোগ দিতে পারলো না ..এমন কি রাফি ফেসবুক এ কোন মেয়ে কে দেখে রিয়েল লাভ পর্যন্ত করে ফেলেছে সেটা নিয়ে রাফি কে ফেসবুক এ টাইম ওয়েস্ট করার জন্য কোন উপদেশ পর্যন্ত দিল না ।
৩।
সাদ কাল ফোন দিলানা কেন ??
খেয়াল ছিল না অনেক প্র্যাক্টিকাল করতে দিছে। সরি। কিছু মনে করনা ।
সমস্যা নাই এখন কি কর?? এইত, বাসায়। কম্পিউটারে গেম খেলি। আর তুমি??
আমি কিছু না। বোর লাগতেছে। তোমাদের বাসায়্ আসি ??
বাসায়? আচ্ছা আস ।
সাদ এর নাম্বার নেয়ার পর থেকে দুজনের প্রায়ই কথা হত। দুজনের সম্পর্ক প্রায়ই ফ্রেন্ডশীপ পর্যায়ে চলে এসেছে.. অবশ্য সাদ অভির জন্য কেমন ফিল করে সাদ নিজেই বুঝতে পারে না.. যাই হোক সেটা সাদ এর ব্যাপার ..
কলিং বেইল বাজছে। অভি এসে পড়েছে মনে হয়। সাদ দরজা খুলে দিল। অভি আজ শর্ট প্যান্ট পড়ে এসেছে আর ব্যাট্ম্যান লোগো গেন্জি.. সাদ অভি কে তার রুম এ নিয়ে গেল।
কি দেখ?
তোমার রুম টা সুন্দর।
ও, তাই ?
হুম তোমার মত ।
সাদ অভির কথায় লজ্জা পেল। আম্মু আর অর্পা ছাড়া সাদ কে কেউ সুন্দর বলেনা। অবশ্য অর্পাকে ধরা চলেনা মেয়েটার বুদ্ধি শুদ্ধি কম..
আচ্ছা মুভি আছে নিউ ,দেখবা ?
হুম চালাও দেখি ।
সাদ ডেস্পকিবল টু অন করল। তার খুব ফেভারিট মুভি ।
সাদ এর রুমে একটাই চেয়ার।
দুজনে মিলে শেয়ার করে বসেছে ।
আচ্ছা অগুলা নাই ??
কোনগুলা ??আরে বুঝ না। সানি সানি ..
অহহ আছে। দেখবা ??অয়েট সাদ উঠে দর্জা লাগিয়ে দিল। ড্রয়ার থেকে পেনড্রাইভ বের করল। রাফি এনে দিয়েছে এইট জিবি ফুল। কম্পিউটারে লাগিয়ে অন করল ।
সাদ এর একটু লজ্জা লাগছে। সে একা দেখলে ভাল ছিল। অভি তার পাশে বসা। অভি যদি তার ইয়া হতে দেখে ফেলে? সাদ দুই পা ক্রস করে বসল ।
কি তোমার খারায় গেছে ?
হু
আমারও .
ও ।
তুমি কারও সাথে কিছু করছ কখনো??
না। তুমি ???
হুম।
কার সাথে ?
কাজিন ।
করবা?
কি ?
বুঝনা ?
না। কি করব?
তুমি চাইলে করতে পারি। মজা পাবা ।
কি করবে?
দেখ আমি জানি তুমি আমাকে চাও ।
মানে কি ..কি বল এইসব ..
মানে নাই। তুমি ওই দিন আমাকে দেখতেছিলা। প্রায়ই দেখ ।
তো কি হইছে ? তোমার খেলা দেখি। ওহ তাই আজ আমরা খেলি আস ..অভি মুখ বাড়িয়ে সাদ এর ঠোট কিস করে বসে ..
সাদ পরক্ষনেই মুখ সরিয়ে নেয়। তার ভয় লাগে। এসব কি হচ্ছে ? কিন্তু এত দিন তো সে এটাই চাইছিল। অভি কে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে ।
অভি সাদকে জরিয়ে ধরে ..সাদ এবার কিছু বলে না। অভির কাছে নিজেকে সপে দেয়। দুই কিশোর মেতে ওঠে এক নিসিদ্ধ যৌন খেলায়।
৪।
অভি বাসায় আসো ….
আমি ব্যস্ত এখন। পরে আসব পড়া আছে ।
অভি তুমি এমন বিহেভ শুরু করছ কেন ? আজ কদিন ধরে তুমি আমার ফোন ও ধর না ..
বল্লাম না আমি ব্যস্ত। পরে আসব ….
আজ এক বছর হয়ে আসছে সাদ অভির সম্পর্কের
সাদের খুব মন খারাপ ..অভি তাকে ইদানিং একদম সহ্য করতে পারে না ..সাদ রাফিকে ফোন দিল ..
রাফি কই তুই ..
বাসায় ..তুই কই ??
আমিও বাসায়. ..
দোস্ত আজ আমার মনটা খুব খারাপ রে ..
কেন কি হইছে ??
ওই যে মেয়েটার কথা তকে বলছিলাম না ..আমার খুব ভাল্লাগে ..
আজ ওরে দেখি অভি কে নিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছে। হাত এ হাত ধরে.. কিরে সাদ কিছু বলছিস না কেন?
ওহ না কিছুনা আচ্ছা তোকে পরে ফোন দিবনি আম্মু ডাকছে ..সাদ ফোন রেখে দিল ..তার খুব কান্না পাচ্ছে এই এক বছরে এমন কোন কাজ নেই যে সে অভির জন্য করে নি।..অভি তাহলে শুধু তাকে ইউজ করে এসেছে..
৫।
শোন অভি আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালবাসি ..তুমি কেন বিশ্বাস করছ না..
কে বলল বিশ্বাস করছি না ,অবশ্যই বিশ্বাস করছি ..তোমার সাথে আমার খুব ভাল মিল ও খুজে পাচ্ছি ..আমিও আমাকে খুব ভালবাসি।
তুমি আমাকে মোটেও সিরিয়াসলি নিচ্ছ না। জানো অভি তোমার কথা ভেবে ভেবে কাল সারারাত আমার ঘুম হয়নি.. জেগে জেগে রাত পার করে দিয়েছি ..
খুব ভাল করেছ রাতে ঘুমানোটা তেমন জরুরী না, আমি নিজেও মাঝে মাঝে রাত জাগি ..এতে তো খুব সমস্যা হবার কথা না ..শুধু দিনের বেলায় একটু ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে।
তোমার এই টাইপ কথাবার্তা আমার একদম ভাল লাগছে না আজ একবছর হল আমাদের সম্পর্ক। আমার প্রতি কি তোমার একটুও অনুভুতি জাগেনি?? ..তুমি কি কখনোই আমার ভালবাসা গ্রহণ করবে না?
ভালবাসা??? ছেলে ছেলে কখনো ভালবাসা হয় শুনছো …….তোমার মত কোন হিজরা খুজে তারে ভালবাস…….
তুমি খুব নিষ্ঠুর অভি।
ধন্যবাদ জানানোর জন্য ..এখন ফোন রাখ ..আমার যথেষ্ট ঘুম পেয়েছে, রাত জেগে তোমার সাথে ফোনে কথা বলার ইচ্ছে নাই।
.
৬।
সাদ ছাদ এর কোনায় দারিয়ে ছিল ..তার চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে.. অভিমানে বুক ফেটে যাচ্ছে.. মনে হচ্ছে ছাদ থেকে এখুনি লাফিয়ে পরে.. কিন্তু তা সম্ভব না সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা ….অতি দুঃখের মাঝেও তার কেমন হাসি পেয়ে গেল… শুধু মাত্র পরীক্ষা জন্য সে মরতে পারছে না.. হঠাৎ পায়ের শব্দ সাদ চমকে পেছন ফিরে তাকালো …অর্পা দাঁড়িয়ে আছে…
অর্পা তুমি এখানে কেন এত রাতে..
ছাদ এ কি করছ.. ??
কিছু না ..এমনি ছাদ এ এসেছিলাম। এসে দেখি তুমি.. তুমি বিরক্ত হলে চলে যাচ্ছি…
না না সমস্যা নাই.. তুমি থাক ..আচ্ছা দেখ .আজকের চাদটা খুব সুন্দর তাই না..
অর্পা কোন কথা বলছে না ..কি হল অর্পা ..তুমি কাদছ কেন.. অর্পার জন্য তার হঠাৎ প্রচন্ড মায়া হতে লাগলো ..মেয়েটা তাকে পাগলের মত ভালবাসে ..কিন্তু কখনো বলতে পারে নি …
সাদ তুমি আমার হাত টা একটু ধরবে??
সাদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো অর্পার দিকে এগিয়ে এল। তার হাত টা ধরে নিজের বুকের কাছে এগিয়ে নিয়ে বলল …এই মহিলা তুমি কখনো আমাকে ছেঁড়ে যাবে না তো…
অর্পা হেসে দিল …পাসের বিল্ডিং এর ছয় তলা থেকে অর্পার আম্মু সবই দেখলেন ..দীর্ঘশ্বাস ছেঁড়ে তিনি বলতে লাগলেন মাইয়া সিয়ানা হইয়া গেছে..
৭।
আব্বু ওয়েক আপ প্লেন ক্যাচ করতে হবে তো।
আর একটু ঘুমাই বেবি ..
অহ ড্যাড তুমি আর মম পার ..
মম ত সকাল থেকে কুক করছে। কুকিং ফর এন আওয়ার এন্ড ইটিং লেস দেন এ মিন্ট ট্যাটস নন্সসেন্স ..
অকে বেবি আমি শাওয়ার করে আসছি।
৮।
আমরা এখন নিউইয়র্কের হেম্পশায়ার টাউন এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছি.. এয়ারপোর্ট এর দিকে ..বাংলাদেশ এর ফ্লাইট। হাফ আওয়ার পরে। অর্পাই গাড়ি চালাচ্ছে …আমার ড্রাইভিং একটু এলার্জি আছে …বাবু টা জানালা দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ….ওর বিডি এর ওয়েদার স্যুট করবে কিনা শিওর না..একটু টেনশন হচচছে.. আসার সময় ডিল হয়েছে ওখানে গিয়ে বাংলা টা ভালমত শিখতে পারলে ইন রিটার্ন হলিডে টু ডিজনিল্যান্ড।
৯।
নিজের রুম এ পাড়া দিয়ে থমকে গেলাম .রুমটাতে তেমন পরিবর্তন হয়নি..সব কিছুই আগের মত আছে… কম্পিউটার… গেমস এর ক্যাসেট.. আমার এস এস সি এক্সাম এর রুটিন… আম্মা রুমটার কোন চেন্জ হতে দেন নি….রেজাল্টের পর আমি আর অর্পা আমেরিকা চলে এলাম… ওর আম্মুই জোর করছিল অর্পা কিছুতেই আমাকে রেখে যাবে না.. আমিও না করতে পারিনি… বিডি তে অসহ্য লাগছিল ….অর্পার আব্বুই সব ম্যানেজ করে দিল …নতুন দেশের নতুন কলেজে ভর্তি হলাম ….অর্পা আর আমার গ্রাজুয়েশন শেষে বিয়ের সিদ্ধান্ত টা নিলাম. বাবু টা এসেছে আরও পরে …নিচ তালায় সবাই গল্প করছে। আম্মু আব্বু, অর্পার আব্বু আম্মু ….রাফিও এসেছে ওর বউ কে নিয়ে ..আর তাদের ফুটফুটে মেয়েটি,নাম আদৃতা।
১০।
ড্যাড কোথায় যাচ্ছ ..টেইক মি উইথ ইউ ..এই তো একটু ঘুরে আসছি.. যাবে চল ।…আমি বাবু নিয়ে আমাদের স্কুলের কাছে চলে এলাম… সেন্ট্রাল বয়েজ হাই স্কুল… সেই একই স্কুল। একই প্লে গ্রাউন্ড। লোহার গেইট .. আমার নিজের স্কুল বুকটা হাহাকার করে উঠলো ..বেবি এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করছে.. দৌড়াচ্ছে। কোথেকে এক সঙ্গী জুটিয়েছে। দুজনে মিলে হাইড এন্ড সিক খেলছে। এই বাবু এদিকে এসো ..নাম কি তোমার? ..
সাদ ।
বাহ ভালো ত। আমার নাম ও সাদ। বাবুটা হেসে দিল ..
আব্বু ও খুব ভাল। উই ওয়ান্টস টু প্লে মোর.. বেবি কাল এসে খেল আবার.. চল চলে যাই সন্ধা হয়ে যাচ্ছে ….
আরেকটু ..ড্যাড লুক সামওয়ান ইজ কামিং টোয়ারডজ ইউ..
কে ওটা অভি না ?
..ছোট্ট সাদকে কোলে তুলে নিলো ও।
সাদ লক্ষি বাবুটা আমার। বাবাই কে একটা পাপ্পা দাও তো ..সাদ আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে ..
বাবাই জান ..
আজ আমার নতুন বন্ধু হয়েছে। ওর আব্বু এর নামও আমার মত ..
কই তোমার নতুন ফ্রেন্ড ..
ছোট্ট সাদ আঙ্গুল দিয়ে এদিক টাতে ইশারায় দেখিয়ে দিল..
আমি তখন ও দাঁড়িয়ে অভির দিকে তাকিয়ে আছি। সেই মায়াকারা চোখ। সেইমুখ। বারো বছর আগের চেনা মুখের আঁকিবুকি …এক গাদা স্মৃতির ঝর বয়ে গেল আমার সামনে দিয়ে …বেবি আমার আঙ্গুল ধরে টানছে ..ড্যাড লেটস গো ইটস গেটিং ডার্ক।
উৎস: অন্যভুবন