
সানমুন চৌধুরী
(এটা একটা কাল্পনিক গল্প বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই)
আকাশে পূর্ণ চাঁদ, চারিদিকে ঝিকিমিকি জ্যোৎস্না, চাঁদের আলো শরীরে পরতেই জয়ন্তর শরীর কেমন যেন ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো, প্রতিদিন বিকালে মল্লিক বাড়িতে কাজে যায় সে কাজ করে বাড়িতে ফিরতে রাত নয়টার মতো বেজে যায়। সংসারে অসুস্থ মাকে আর ছোট ছোট দুটো বোনকে নিয়ে টানপোরানে দিন চলে জয়ন্তের। মল্লিক বাড়ি ছাড়াও সে যখন যে কাজ পায় সেই কাজই করে। জয়ন্তের বয়স সতেরর শেষের দিকে, বারন্ত শরীরে লাউ ডগার মতো কোমল রূপে স্নিগ্ধ সে, ঠিক যেন গরিবের ঘরে রাজপূত্র। গ্রামের আট দশটা ছেলের থেকে জয়ন্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের! কিছুটা চাপা আর মেয়েলি স্বভাবের, তার জন্য দিনের পর দিন নিপীরিত হয়ে আসছে সুঠাম দেহের অধিকারী সমাজ শিকৃত পুরুষ নামের পশুদের হাতে। বিশেষ করে মল্লিক বাড়ির এমন কেউ নেই যার সজ্জা সংগি সে হয়নি, সবাই কেমন ললুপ আর হিংস্র! সুযোগ পেলেই শিকারী বাঘের মতো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজন মল্লিক! মল্লিক বাড়ির বড় ছেলে, সংসারে তার দুই সন্তান, অপরুপ সুন্দরী বউ, তারপরও জয়ন্তকে দেখলেই তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়, গত পরশু রাতেও জয়ন্তকে ছাদে ডেকে নিয়ে তার সাথে ভয়নক মানসিক নির্যাতন করেছে! অনেক জোর করে তার জয়ন্তের মুখের মধ্যেই তার কাম রস….., ছি ছি ! মানুষ এতো নোংরা হতে পারে! মান সম্মান আর অসহায় মা বোনের মুখের দিয়ে তাকিয়ে নিরবে সহ্য করলেও ভগবানের কাছে সারারাত প্রার্থনা করেছে যেন সে ঐ পাপীকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারে, কাদতে কাদতে তার চোখ দুটো ফুলে গেলেও এই দুদিনে সেটা অনেকটা মিলিয়ে গেছে। শরীরে ব্যাথার পরিমাণ অসহনীয় আকার ধারণ করেছে! কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না হঠাৎ করে তার শরীরে এমন ভয়াবহ ব্যাথার অনুভব হওয়ার কারণ কি? গত পরশু যে ঘটনা ঘটে ছিলো সেটার ফল আজ হবার তো কথা নয়! তাহলে এমন হচ্ছে কেন? মল্লিক বাড়ি থেকে জয়ন্তদের বাড়ির দুরত্ব বড় জোর বিশ মিনিটের রাস্তা, অথচো মধ্য পথে এসেই সে ধরাসাই হয়ে গেছে! ব্যাথায় পা উঠছে না! এমন একটা সময় রাস্তায় একটি কুকুরও নেই! মানুষ তো দুরের কথা, রাজন মল্লিকের বউ আজ পিঠা তৈরি করেছিলো, কিছু পিঠা দিয়েছিলো জয়ন্তর মা ও বোনদের জন্য, কিন্তু জয়ন্তর মনে হচ্ছে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানো আর হবে না, পিঠার বাটিটা হাত থেকে কখন যে পড়ে গেছে সে বুঝতে পারেনি! চোখের সামনে সব ধোঁয়াশা হয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করছে আর শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ভগবানকে ডেকে চলেছে! মুখ থেকে যে শব্দ বের হচ্ছে সেটা সে নিজের কানে শুনতে পাচ্ছে না! হঠাৎ করে সে বুঝতে পারলো তার শরীরে কিছু একটা হচ্ছে! চাঁদের আলো তখন পূর্ণরূপে ছড়িয়ে পড়েছে! শরীরে ব্যাথার পরিমাণ কমে গেলেও তার হাতের দিকে চেয়ে দেখলো অদ্ভুত ভাবে চামড়া গুলো পাল্টে যাচ্ছে! দুটো পা জোরা লেগে যাচ্ছে! শরীর কুকড়ে আসছে, কি হচ্ছে এসব! এমন সময় চাঁদের মধ্য থেকে একটা তীক্ষ্ণ আলোক রশ্মি তার উপর ঝরে পরতেই মুহূর্তের মধ্যে সে তার মানুষ রূপ হারিয়ে এক ভয়ানক রূপ ধারন করলো! স্বজ্ঞানে আছে তো সে! মানুষ হয়ে সাপে পরিবর্তন! নিজেকে নিয়ে ভাবনার শেষ নেই জয়ন্তর! এমন সময়,
-তোকে কিছু বিশেষ সময়ের জন্য এই শক্তি দান করা হলো, ভুলেও এই শক্তির অপব্যবহার করবি না, শুধু মাত্র ঐ সব মানুষের উপর এই শক্তি প্রয়োগ করতে পারবি যারা ভালো মানুষ নামের মুখোশ পড়ে পাপের দুনিয়ায় বিচরণ করছে, তোর মতো কমলমতি মানুষের জীবন কে অতিষ্ট পর্যায় নিয়ে গেছে তাদের শাস্তির জন্য! যদি কখনো এই শক্তির অপচয় করিস তাহলে এই শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। আমি তোর মধ্যে এমন শক্তি দিয়ে দিলাম যেটা তুই মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারবি। ভুলেও নিজের শক্তি অন্যকে দেখাতে পারবি না প্রমাণ করার অজুহাতে। তাহলে তখনই তোর শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে, শুধু মাত্র বিপদে পড়লেই এই শক্তি প্রয়োগ করা যাবে। তবে সাবধান থাকবি, তুই যেন কোন পাপ কাজে জরিত না হোস। যা এখন থেকে তুই ইচ্ছেধারী কাল নাগ। নিজ চেহারায় ফিরে আয়!
জয়ন্ত হতবাক হয়ে গেছে! এসব কি হলো? এটা কি তার মতিভ্রম হয়েছে! নিশ্চয়ই সে কোন ঘোরের মধ্যে রয়েছে! আচ্ছা বেশি মিষ্টি পিঠা খাওয়ার জন্য এমন হয়নি তো? নেশাটেসা হলো নাকি আমার? দেখি তো প্রয়োগ করে সত্যিই আবারও সাপ হতে পারি কিনা! না না বাবা! এমন ভয়নক কষ্টের সাক্ষী আর হতে চাই না! কিন্তু শরীরটা কেমন যেন ব্যাথা ব্যাথা করছে! আসলেই কি এমন কিছু হয়েছে আমার সাথে! যদি হয়েই থাকে তাহলে তো তোদের কারোরই রক্ষা নেই আমার হাত থেকে! আমার শরীরটা নিয়ে তোরা যেমন মজা করেছিস! অমানবিক নির্যাতন করেছিস দিনের পর দিন আমি তো সেই প্রতিশোধ নিবোই নিবো! পিঠার বাটিটা হাতে নিয়ে জয়ন্ত বাড়ির দিকে এগোতে থাকে। মনে মনে ভাবে যদি ঘটনাটা সত্যিই হতো তাহলে নিশ্চয়ই আমি প্রতিশোধ নিতাম ঐ মানুষ নামের জানোয়ার গুলোর উপর।
-বাবধন আইচোস?
-হয় আইলাম! কিছু রান্না করচো?
-হয় দেক গিয়া নুপুর ডাইল আর আনাচ কলা দিয়ে শোইল মাচ ঝোল করেছে!
-শোইল মাচ খাইমু না মা! দুডো ডাইল দিয়া খাই।
-খা বাপ।
-মা এই লও পিডা, বড় মল্লিকের বউ তৈয়ার করছে! তুমাগো লাই দিচে।
-তুই খাইচোস?
-হয়, অহন তুমরা খাও।
নুপুর আর ঝিনুক দাদার এসেছে শুনে দৌড়ে পড়ার ঘর থেকে ছুটে আসে, ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে জয়ন্ত নিজের ঘরে চলে যায়। ওদের বাড়িতে দুটো ঘর। একটাতে জয়ন্ত একাই থাকে, অন্যটায় দুটো রুম, একটায় নুপুর ও ঝিনুক থাকে অন্যটায় তাদের মা সুমতি রানী। কিরণ দাশ ছিলেন মল্লিক বাড়ির খাস কর্মচারী, তার মৃত্যুর পর জয়ন্ত সেখানে কাজ করছে। যদিও জয়ন্ত প্রথমে ঐ বাড়িতে কাজে যেতে রাজি ছিলো না, কারণ খুঁজলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে আট বছর আগে। জয়ন্ত তখন সবে দশে পা দিয়েছে। বাবাকে ডাকতে গিয়ে আটকা পড়ে যায় বড় মল্লিকের চক্রে, বড় মল্লিক ছাদে বসে বিকালের হাওয়া খাচ্ছিল, মনি দেবী বড় মল্লিকের জন্য পান বানিয়ে ছাদে যাবে এমন সময় জয়ন্তকে দেখে বললো,
-এই জয়ন্ত ধরতো, তোর কর্তাবাবু কে পানের খিলিটা দিয়ে আয়। আমি ঘরে যাই সন্ধা পুজোর যোগার করি গিয়ে!
-দ্যেন মাসিমা।
-নে, আর শোন, জিজ্ঞেস করিস আর কিছু লাগবে কি না! যদি কিছু লাগে তো তুই দিয়ে তারপর যাস, কেমন?
-আচ্চা মাসিমা!
জয়ন্ত ছোট ছোট পায়ে দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে দেখতে পায়, বড় মল্লিক ছাদের এক কোনে বসে আছে, হাতে একখানা বই, জয়ন্ত কাছে যেতেই সে তার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। তারপর খপ করে ওর হাত পেরে ধরে। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের লালসার শিকার করে ফেলে, জয়ন্ত ভয়ে আতঙ্কে চুপসে যায়, মরনের চেয়েও ভয়নক এক অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করতে থাকে। অনেক কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে কারো সাথে কথা না বলেই বাড়িতে চলে আসে। বেশ কিছু দিন স্বাভাবিক হতে পারেনা সে। ছেলে মানুষের সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটবে সে কখনো কল্পানাও করতে পারেনি, বাবা মা তাকে অনেক প্রশ্ন করলেও উত্তর করতে পারেনি। এরপর থেকে প্রায় দুই বছর সে মল্লিক বাড়িতে যেতো না, গত তিন বছর আগে তার বাবা হঠাৎ করে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যদিও চিকিৎসা করেছিলো কিন্তু এমন পর্যায়ে রোগ ধরা পড়েছে যে আর লাভ হয়নি। শেষ পর্যায় কোন উপায় না পেয়ে মল্লিক বাড়িতে সেও কাজে যোগ দেয়। তারপর থেকে বড় মল্লিক, ছোট মল্লিক, তাদের ছেলে ও ভাতিজা উপযুক্ত যারা আছে সবাই তাকে যৌনতার শিকার করেছে। বড় মল্লিক এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষ এতোটা জঘন্য হতে পারে তাকে না দেখলে বোঝা যাবে না, সবাই বলে সে নাকি আফিম খায়, আর জয়ন্ত যতোদুর শুনেছে আফিমের নেশায় নাকি যৌন উত্তেজনার শেষ থাকে না, সাপের বিষেও নাকি কোন ক্ষতি করতে পারে না! তবে কি তাকে কেউই কিছু করতে পারবে না! তার পাপের ঘড়া তো পূর্ণ হয়ে গেছে, এখন তো তাকে মরতেই হবে।
জয়ন্ত নিজ বিছানায় শুয়ে আছে, হঠাৎ করে সে বুঝতে পারলো না তার সাথে যে ঘটনাটা ঘটেছে সে সত্যি সত্যিই ঘটেছে! তা না হলে তার শরীরের মধ্যে এমন অনুভব হচ্ছে কেন? স্বাভাবিক ভাবে সে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু আজ কিছুতেই তার পা দুটো সোজা হয়ে থাকতে চাইছে না, সাপের মতো কেমন জানি গুটিয়ে আসছে, অনেক মোড়ামুড়ি করে এক পর্যায়ে গোলাকার হয়েই সে ঘুমিয়ে যায়।
সকালে উঠে সে বাড়ির সকল কাজ করে বোন দুটোকে নিয়ে স্কুলে পৌছে দিয়ে আসে, তারপর কেউ কাজে ডাকলে তার কাজে যায়, আজ কেউ আসেনি কাজে ডাকতে, তাই সে বাড়িতে এসে অসুস্থ মায়ের সেবা করতে থাকে, বিকালে বোন দুটোকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে কাজে যায় মল্লিক বাড়িতে। কাজে গিয়েই সে বড় রকমের বিপদের মধ্যে আটকা পড়ে, আজ শহর থেকে ছোট মল্লিকের বড় ছেলে ও তার একজন বন্ধু এসেছে, বড় মল্লিকের বউ তাকে বলে দিয়েছে ওদের সেবা যত্ন করতে, কিন্তু জয়ন্ত ভালোই বুঝতে পেরেছে আজও তাকে তাদের ভোগের শিকার হতে হবে! ভগবান না করুন যদি ঐ শহুরে ছেলেটাও তাকে ভোগ করতে চায় তাহলে কি হবে?? নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে তার, যদি সত্যই গতকালকের ঘটনা সত্য হতো, ভগবান রক্ষা করো! জয়ন্ত ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে করতেই তার ডাক পড়ে গেল, ভেতর বাড়ি থেকে জয়ন্ত বলে ভারী কন্ঠের ডাক পড়তেই জয়ন্ত ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে গেল! জয়ন্তর চেহারা যেন আগের থেকে শতগুন সৌন্দর্যে মহিমান্বিত হয়ে গেছে, দিলীপ মল্লিক (ছোট মল্লিকের বড় ছেলে) তার বন্ধু কল্যাণ কে ডেকে জয়ন্তর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, কল্যাণ তাকে ললুপ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো, জয়ন্তর বুঝতে বাকি রইলো না যে তিনি আসলে কেন এসেছেন এখানে, তার হাত পা কাপছে মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে, কিন্তু দিলীপ যখন জয়ন্তের হাত ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে যেতে থাকলো জয়ন্তর শরীরে আবার সেই গতকালের ব্যাথার অনুভব শুরু হয়ে গেলো!
জয়ন্ত টলতে টলতে তাদের সাথে ঘরে ঢুকেছে। ঘরের দরজা বন্ধ করেই তারা জয়ন্তকে নিয়ে মেতে উঠলো, কিন্তু একি! হঠাৎ করে জয়ন্ত সাপের মতো বড় বড় নিঃশ্বাস নিতেই চোখের পলকে জয়ন্ত উধাও হয়ে গেলো, ভয়ানক এক কালো সাপ বিছানার উপর, দিলীপের পিলে চমকে গেলো, কল্যাণ একটি চেয়ার উঠিয়ে সাপটাকে আঘাত করতে যাবে ততক্ষণে সে দিলীপের হাতে ছোবল বসিয়ে দিয়েছে! সংগে সংগে দিলীপ মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে, দিলীপের এমন অবস্থা দেখে কল্যাণ দৌড়ে পালাতে যাবে এমন সময় দেখে দরজার খিলের সাথে সাপ ঝুলে আছে, কল্যাণ তাকে হাত জোর করে মাফ চাইতে যাবে এমন সময় সাপ তার কৃত্তি দেখিয়ে দিয়েছে! মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে যা হবার নয় তা হয়ে গেছে! ঘরটা একদম বাড়ির শেষ প্রান্তে তাই বিষয়টা সহজে কেউ বুঝতে পারলো না, জয়ন্ত স্বজ্ঞানে আসার পর সেই চিৎকার করে মানুষ জরো করে ফেলেছে! জয়ন্ত নিজেও বুঝতে পারেনি এটা কি ঘটে গেলো!
যেহেতু সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে তাই ঘটনার তদন্ত বলতে সাপুরে এনে বাড়ির চারিদিকে বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ঘটনার মাস কাটতে না কাটতেই একই ঘটনা আবারও ঘটলো মল্লিক বাড়িতে, এবারের ঘটনায় শুধু মল্লিক বাড়ি নয় পুরো এলাকাতেই ছড়িয়ে পরলো, শনিবার বিকাল বেলা থেকেই ভগবান শনির পুজোর জন্য বাড়িতে বেশ বড় রকমের আয়োজন করা হয়েছে, বড় মল্লিক দোতলার দক্ষিণ ঘরে বসে টিভিতে খবর দেখছিলো, সবাই পুজোর আয়োজনে ব্যাস্তো, কিছুক্ষণ পর থেকেই পুজো শুরু হবে, জয়ন্ত দোতলায় এসেছে বড় কর্তাকে ডাকতে, আজ পুজো উপলক্ষে জয়ন্ত ধুতি পাঞ্জাবি পড়েছে, হালকা গোঁফের আবরণে জয়ন্তকে সয়ং দেবতা বলে মনে হচ্ছে, বড় মল্লিকের ঘরে ঢুকতেই জয়ন্তকে দেখে তার কামনার উদয় হয়ে যায়, প্রতিবারের মতো এবারও সে জয়ন্তকে জাপটে ধরে, তার ছোঁয়া জয়ন্তের শরীরে পরতেই জয়ন্ত সেদিনের মতো শরীরে ব্যাথার অনুভব পেতে শুরু করে, মল্লিক মহাসয় তাকে খাটে নিয়ে ফেলানোর আগেই হঠাৎ করে জয়ন্ত গায়েব হয়ে যায়, বড় মল্লিকের হাতে ঝুলতে থাকে ভয়নক এক কুচকুচে কালো সাপ! বড় মল্লিক চিৎকার করে ওঠার আগেই কাজ শেষ! মানুষজন এগিয়ে আসতে আসতে মল্লিক মহাসয়ের মুখ থেকে সাদা ফ্যানা বের হতে থাকে! সবাই এসে দেখে জয়ন্ত বিছানায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে, আর বড় মল্লিক মেঝেতে মরে পড়ে আছে, ফর্সা শরীর একদম নীল হয়ে গেছে! শনি পুজো শুরু করার আগে এমন একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেলো, পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে! এদিকে সবাই ভেবেছে জয়ন্ত সাপটাকে দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে! জয়ন্ত নিজেও বুঝতে পারছে না আসলে ঘটনা কি ঘটে যাচ্ছে, বড় মল্লিকের মৃত্যুর পর বাড়িটাই যেন মারা গেছে! কথায় আছে কারো জন্য কিছু থেমে থাকেনা, সময় তার নিজের গতিতে চলে, কিছু দিনের মধ্যে আবারও সব আগের মত হয়ে গেলো, জয়ন্ত এক এক করে তার সাথে অপকর্মকারীদের শাস্তি দিতে লাগলো, কিন্তু সবকিছুরই তো একটা পরিনতি আছে, ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে জয়ন্তর জীবনেও এমন কিছু ঘটনা ঘটলো যার জন্য তার মাঝে যে নাগ শক্তি বিরাজ করছিলো সেটার অবসান ঘটলো, কিভাবে সেটা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন! তাহলে শুনুন,
জয়ন্ত পুকুর পাড়ে বসে আছে এমন সময় এক সুদর্শন যুবক তার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো, হঠাৎ করে তার মাঝে ঘুমিয়ে থাকা কাম শক্তি জেগে ওঠে, নিজেকে ঐ পুরুষে পতিত করায়, তার প্রতি কামাতুর হওয়ার পাপের দায় সয়ং চন্দ্র দেবতা তার থেকে সকল শক্তি কেড়ে নেয়! আসলে শেষ কথাটা এই যে জয়ন্ত যৌন নিপীরণের শিকার হলেও সে তো একজন সমপ্রেমী, স্রষ্টা সয়ং তাকে এমনটা বানিয়েছে! তাই বলে তাকে এমন অমানবিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটা সে কোন ভাবেই মানতে পারেনি! তাইতো সে নিজেকে অনুভব করেছে সেই সবাই শেষ করে দেওয়ার এক অপার শক্তি “কাল নাগ”
জয়ন্তর ঘুম ভাঙতেই সে বুঝতে পারে তার সারা শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে, স্বপ্ন অবাস্তব হলেও সে দেখলো সে স্বপ্নের মতোই কেমন গুটিয়ে শুয়ে আছে, অনেকটা সাপের মতোই, ঘুম থেকে আরমোড়া দিতে গিয়ে দেখলো অনেকটা সাপের মতোই মোড়াচ্ছে! সে কি তাহলে কি মল্লিক বাড়িতে সবাই সাপের কামড়ে যায়নি তো? তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে মায়ের কাছে আসতেই তার বোন নুপুর খবর নিয়ে আসলো বড় মল্লিককে সাপে কেটে মেরে ফেলেছে! জয়ন্ত খবরটা শুনতেই আবারও ঘামতে শুরু করলো! তার মা জয়ন্তের চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে ! সেকিরে জয়ন্ত তোর চোখ এমন ঘোলাটে দেখাচ্ছে কেন? জয়ন্ত ভিমড়ি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না! স্বপ্নে কি দেখলো আর কি হয়ে গেল, আর তার মা-ই বা কেন তাকে একথা বললো……………
…………………….সমাপ্ত……………………….
উৎস: অন্যভুবন