
আঁধারের কাব্য
১
ট্রেন থেকে নামলো তনু।
এই স্টেশনে আগে কখনো আসেনি ও।
এটাই নাকি ফারহানদের বাড়ির স্টেশন।এখানে কোন লোকজনকে চেনে না তনু।ফারহান ছাড়া।ফারহান ওর কয়েক ব্যাচ সিনিয়র!
একি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে!
যে ওকে ভুল সময়ে স্বপ্ন দেখিয়েছে!
ট্রেন থেমেছে সেই কখন!এখনো ফারহানের দেখা নেই।তনু ওর ফোনের সিমটাও চেঞ্জ করেছে।এটাও ফারহানেরই প্ল্যান মতো করেছে সে।ট্রেনে উঠেই সে নতুন সিম থেকে কল করে কথা বলেছে ফারহানের সাথে!এখন দেখছে সুইচড অফ!চার্জ শেষ!তাহলে তো অন্য নং থেকে ফোন করতে পারে!উফ!এই ছেলেটা এত্ত টেনশন দিতে পারে!সারাজীবন তার জীবনটা ভাজা ভাজা করবে!এত টেনশনের মাঝেও ওর হাসি পেলো।ভালোলাগার হাসি।সে ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য দুঃসাহসী একটা কাজ করেছে।
২
ফরহানের সাথে তনুর পরিচয় ক্যাম্পাসে।দুজন আলাদা ফ্যাকাল্টির।তনু চশমা ব্যবহার করে। মোটা ফ্রেমের।একটু বোকা টাইপের!পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত!হাঁটতে হাঁটতেও বই পড়ে।অনেক মিষ্টি একটা চেহারা।একটু মেয়েলি!সেটাতে বরং ওকে সুন্দর দেখায়!কথা বলে শান্তিনিকেতনী ভাষায়্!
ফারহান একদম সাধারন একটা ছেলে।ফরমাল।বেশি উগ্র না।আবার বোকাও না!
একদিন ফারহান ক্লাস করতে যাচ্ছে তাড়াহুড়া করে।হঠাৎ দেখে একটা ভিড়।
কাছে গিয়ে দেখে নর্দমাতে একটা ছেলে পড়ে গেছে। সবাই মজা নিচ্ছে।কেউ তুলছে না!ছেলেটাও চুপ করে বসে আছে।অবাক ব্যপার তো!ফারহান এবার হাত বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটি উঠে এলো।
এতক্ষন না উঠার কারণ বুঝা গেলো।ওর দুপা দিয়েই রক্ত পড়ছে।অনেক রক্ত।হাঁটতে পারছে না।ফারহানের হাত শক্ত করে ধরে আছে।যেন ফারহান তার হাত ছাড়তে না পারে!ফারহানের সেরকম ইচ্ছে মোটেও নেই।
একটা রিক্না ডেকে তনুর ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলো তনুকে।তনুই ঠিকানা বললো।তারপর,পরিস্কার হয়ে আবার ডক্টরের কাছে।স্টিচ দিয়ে,ইঞ্জেকশন করে আবার ফ্ল্যাটে নামিয়ে দিয়ে গেলো ।
ঘরে ঢুকে তনুর মনে হলো যে ছেলেটির ফোন নং নেয়া হয় নি!ধন্যবাদও দেয়া হয় নি!
৩
পরের কয়েকদিন অসুস্থতার জন্য ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি তনু।ফারহানের সাথে দেখাও হয় নি!
একদিন রাত্রিবেলা মার্কেট থেকে ফিরছে তনু।হঠাৎ বৃষ্টি!সব রিক্সা উধাও!ও যাবে কি করে!বৃষ্টিতে ভেজাও নিষেধ!,
একটা রিক্সা এলো।পরিচিত একটা কন্ঠ।’উঠে এসো’
চমকে ফিরে তাকালো তনু!আরে!সেই ছেলেটা!
তার সব ভয় চলে গেলো।সে রিক্সায় উঠলো।তারপর,বললো, ‘ধন্যবাদ।আপনাকে এভাবে পাবো ভাবি নি ।সেদিন আপনার নামটা পর্যন্ত জানা হয় নি!ধন্যবাদ দেয়াও হয় নি!আবার নতুন করে হেল্প করলেন।আমার বিপদ হলেই আপনি উদয় হন।আর আমার ভয় নেই ।এই রিক্সা বামে যান।’
একনিশ্বাসে এতসব বললো তনু।
ওর বাসার সাসনে রিক্নে থেকে নামলো।তারপর বললো , ‘নামুন!’
-না না।আমি হলে যাবো।রাত হয়ে যাবে যেতে তাছাড়া!
-এই বৃষ্টির রাতে আপনাকে ছাড়ছে কে?আসুন তো!
অনেক আপত্তির পর ওর ফ্ল্যাটে গেলো ফারহান!
তারপরর বললো,’তুমি আমাকে চেনো না!আমি যদি দামী জিনিস চুরি করে পালাই?
-সমস্যা নেই। সাথে আমাকেও চুরি করবেন।নাকি আমি কমদামী/
-মনে ত হচ্ছে সবচেয়ে দামী । বাবা মা যেভাবে ব্রয়লার মুরগীর মতো রেখেছে!
দুজনেই হেসে উঠলো।
-হয়েছে!আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি রান্না করি।
-ওকে!
ফারহান বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো তনু রান্না শুরু করেছে।আগুনের আলোয় ফর্সা মুখে গাঢ় লাল একটা আভা পড়েছে।একটু বড় চুল কপালের সাথে লেগে আছে ঘামে ভিজে!
ফারহান ভাবছে এত সুন্দর হয় কেউ!
কেউ তাকিয়ে থাকলে নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সেটা জানান দেয়!তনুও বুঝতে পারলো।কিন্তু,ও লজ্জাতে তাকালো না।
ফারহানই কথা বললো,’পড়াশুনা কেমন হচ্ছে তোমার?’
-পড়াশুনা ভালোই করি।মুখস্থ করে ফেলি।জীবনের প্রশ্নগুলোর উত্তর ও যদি অমন মুখস্থ করতে পারতাম!আমরা তো পরিচিতই হইনি।আপনার নামটুকুও জানি না।আমি তনু।গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর।বাবা মা ঢাকাতে সেটেলড।এখানে ডিভিএম এ পড়ি।
-আমি ফারহান।বাবা অনেক আগেই পরপারে!মা আছেন।আমাদের বাড়ি ময়মনসিং।আমি সিএসই তে পড়ছি।
-অনেক ভালো।হলে থাকতে ভালো লাগে?
-না লাগলেও কিছু করার নেই।আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াচ্ছেন।অত বিলাসিতা কোথায় পাবো?
রান্না করছিলো তনু,আর বেতের সোফাতে বসে আছে ফারহান।তনু সেখানে আসলো।তারপর বললো,’দেখুন!আমি আপনার অনেক ছোট।তবুও।মানুষের জীবনে খারাপ সময় আসে।কিন্তু দেখবেন।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে!আপনি এত্ত এত্ত টাকার মালিক হবেন!’
ওর বলার ধরন দেখে হেসে উঠলো ফারহান!
আরো কত কথা হলো।রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজালো তনু।খুব গোছালো টাইপের!ফারহান অবাক হচ্ছিলো।খেতে বসে আরো অবাক!মনে হচ্ছিলো নিজের মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছে!
-তুমি এত ভালো রান্না করো?
-কচু!আপনি হলের খাবার খান বলে,এটাকে ভালো মনে হচ্ছে।
-সত্যি বলছি।তোমার হাত দুটো বেঁধে রাখা দরকার!
-হয়েছে!এখন খেয়ে নিন!বাঁধার অনেক সময় পাবেন!
তনুর চোখে জল এসেছে।কেউ তো কখনো তার এত প্রশংসা করে না!
রাতে দুজন অনেক গল্প করলো।ফারহান ওর কথা বললো।কিভাবে কত কষ্ট করে তার মা তাকে পড়াশুনা করিয়েছেন!নিজে না খেয়ে ছেলের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন!একটা কাপড় দিয়ে গোটা বছর পার করা!কত কষ্ট।তনুও আপন ভেবে ফারহান কে সব বললো।ওর বাবা মায়ের সেপারেশনের কথা।ছোট থেকেই কারো আদর ভালোবাসা না পাওয়ার কথা!কারণ,বাবা মা দুজনেরই আবার বিয়ে হয়েছে!দুজনই ব্যস্ত।তবে হ্যা।ওকে তারা টাকা দিয়ে সুখে রাখতে চেষ্টা করেন!কথাগুলো সে এমনভাবে বললো যে ফারহান অবাক হলো।কেমন আবেগহীনভাবে।
ফারহান তার একটা হাত ওর হাতের উপর রাখলো।সেখানে তনুর চোখের দুফোঁটা জল পড়লো।
রাতে শোয়ার আগে ফারহানের জন্য গরম দুধ,ঠান্ডা জল আর দুটা মিষ্টি নিয়ে এলো তনু।ফারহান আবারো অবাক!এই ছেলেটা এতো গোছানো কেন?
সে অবাক হয়ে তাকালো।
-এত অবাক না হয়ে খেয়ে নিন!
-তুমি ‘শ্রীকান্ত’ পড়েছ?রাজলক্ষীর কথা মনে পড়ছে।তুমি তো সেই চরিত্রের মতোই গোছানো।স্যরি!মেয়ে কারো সাথে তুলনা করলাম!রাগ করো নি তো!
-না!আপনি আমার সম্পর্কে বেশি জানেন না!কেউ রাজলক্ষীর সাথে তুলনা করলে আমার খারাপ লাগবে কেন!অনেক ভালো লাগে!এখন খেয়ে নিন!অনেক রাত।
চুপচাপ খেয়ে নিলো ফারহান!
এরপর,ওকে বিছানাতে শুতে বললো তনু।
-আর তুমি?
-আমি নিচে বিছানা করবো।
-আমি তো তাহলে অসুবিধা করলাম!
– বা রে!আমিই তো আপনাকে আনলাম!আর নিচে থাকতে অসুবিধা হবে না আমার!
-কেন নিচে থাকবে?আমি চুরি করে পালাতে গেলে যাতে বুঝতে পারো?
-উফ!আপনি না?আচ্ছা!
রাতে তনু ফারহানের পাশেই শুয়ে পড়লো।
তার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না।বড়লোক বাবার সন্তান হওয়াতে তবু কিছুটা বেঁচেছে।ভাইয়ার বন্ধু,নিজের বন্ধু,বন্ধুর বড় ভাই কতজনই তো তার সাথে ঘুমানোর পর সেক্স করেছে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে।সে কখনো বাধা দিতে পারেনি।তার শক্তি ছিলো না।চিৎকার করতে পারে নি সম্মানের ভয়ে!
এসব ভাবলে এখনো ভয় করে!
কাউকে সে তেমন বিশ্বাস করে না!
কিন্তু,ফারহান ভাইয়া!
ওকে যখন সবার সামনে অপমান লজ্জা থেকে বাঁচালেন ড্রেন থেকে তুলে,তখন থেকেই উনার প্রতি কেমন যেন একটা কৃতজ্ঞতা,ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছে!
কত খুঁজেছে সে উনাকে!
অনেক সিম্পল একটা ছেলে।হয়তো তাকে কখনো ভালোবাসবে না!তাতে কি!ও তো কখনো কারো ভালোবাসাই পায় নি!
তনুর চোখে ঘুম আসছিলো না!
অনেক রাতে হঠাৎ ফারহান ঘুমের ঘোরেই ওর হাত চেপে ধরলো।তনু প্রথমে অন্যরকম ভেবেছিলো।পরে ভুল ভাঙলো।ওর চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো সেই হাতে!
ফারহান চমকে জেগে উঠলো।লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিলো।
বললো-স্যরি!
-কেন?
-আমার ঘুমটা কটু গাঢ়।না জানি কি হয়েছে!কাঁদছ কেন?
-এমনি।
-ধুর বোকা!কি এত কষ্ট বলো তো তোমার!
-কোনও কষ্ট নেই।
-এত রাতে চুপিচুপি কাঁদছ কেন?
-আনন্দে।আপনি ঘুমের ঘোরে আমার হাত ধরেছেন!কেউ কখনো আমাকে ভালোবাসেনি তো!আপনার ঘুমের মাঝে ভুল করে ছোঁয়াটাই আমার অনেক বড় মনে হলো।
বলেই ও জিভে কামড় দিলো!কিন্তু,কোন কিছু করার নেই।ও সিরিয়াস ভাবেই বলেছে।
তারপরও বললো,’স্যরি ভাইয়া!আমি..’
-স্যরি কেন?সৃষ্টিকর্তা এভাবেই হয়তো দান করেন!আমরা কেউ কারো সম্পর্কে জানতাম না!অথচ,আজ আমারও কেমন যেন মনে হচ্ছে।আমি হয়তো তোমার বাবা মায়ের মতো অনেক টাকাপয়সার মালিক হবো না!কিন্দু,তোমাকে অনেক ভালোবাসবো সারা জীবন! একটা ভালো জব হবে আমার!আমি খুব বাস্তববাদী।তাই,এখনই সব বলতে চাই।আর কিছুদিন পরে আমার পড়াসুনা শেষ হবে।একটা ভালো জব অফারও পেয়েছি।তোমার পড়াশুনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তো এখানেই থাকবে! তারপর,আমরা একসাথে থাকবো।আমি কখনো কাউকে ভালোবাসি নি আগে।তাই,এটুকু বলবো আমার বিশ্বাস তুমি কখনো নষ্ট করো না!
তনু শুধু ওর হাত শক্ত করে ধরলো।আর আরো জল পড়লো সে হাতে।যা বুঝার বুঝে নিলো ফারহান!সে এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তনু কে।ফারহানের বুকে মাথা রেখে ঘুমুলো তনু।পরম নির্ভরতায়।
৪
পরদিন সকালে ফারহান জেগে উঠে দেখে নাশতা রেডি।একটা স্নিগ্ধ,কোমল মুখ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ও উঠলো।রাতের কথা মনে পড়লো দুজনেরই।
একটু সলজ্জ হাসি হাসলো
-ফ্রেশ হয়ে আসুন।ক্লাস আছে তো!
এভাবেই চলছিলো সব।
দুজন দুজনকে এত বালোবাসে।
ফারহানকে দামী দামী কাপড় উপহার দেয় তনু!
ও প্রথমে রাগ করলেও এখন আর রাগ করে না!
এরকম করে দিনগুলি চলে যেতে থাকে।
তনুর ভালোবাসাহীন জীবনে ভালোবাসার বন্যা আসে।তারা কখনো সেক্স করে নি।একসাথে থাকলেও।
ফারহানের শেষ পরীক্ষাটিও শেষ হলো।রেজাল্ট হলো।
সেই কোম্পানিতে জয়েন করবে ও।ফিউচার ব্রাইট!
ও চলে গেলো।
তনু ওকে বিশ্বাস করে!জানে ফারহান ওকে ঠকাবে না!
ঠকায় নি ওকে ফারহান।ছুটি পেয়েই ছুটে আসে এখানে।
এভাবে আরো দুবছর কেটে যায়।তনুর আর কটা সেমিস্টার বাকি।ইন্টার্নি হবে।
এদিকে তনুর বাসায় সমস্যা।
ওকে দেশের বাইরে পাঠাতে চায় বাবা মা।
অনেক প্রেশার!
ফারহানকে বললো।ফারহান প্রথমে বাড়িতে বুঝাতে বললো।কিন্তু,পরে বুঝলো পরিস্থিতি বাজে!
তাই,ওকে সব ছেড়ে চলে আসতে বললো।
সেই মতোই সব ঠিক করে তনু এখানে এসেছে।ফারহান পাশের জেলাতে জব করে।সেটা একটা ছোট শহর!
পাশের জেলাটা বড়।
তনু এখন কি করবে!
বাড়ি ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই।
কি সব লিখে চিঠি পাঠিয়েছে!
তার কাছে বেশি টাকাও নেই।
কান্না পাচ্ছে।ওর অফিসের নাম ঠিকানা এসবও জানে না!
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
এসময় একজন মানুষ এসে ওকে বললো,’আপনার কি কোনও সমস্যা?দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন কেন?’
ফারহানের বয়সী।ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।অনেক লম্বা মানুষটা।
তনু শুধু তাকালো।
কথা বলতে পারলো না।
এবার আর কান্নাটাকে আটকাতে পারলো না!
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
-এই!আপনি কাঁদছেন কেন?অদ্ভুত!কেউ দেখে ফেললে বিশ্রী ব্যপার হবে । কোথায় যাবেন?আমি নামিয়ে দিচ্ছি।আচ্ছা গাড়িতে বসেই ঠিকানা বলবেন।এখন চলুন!
বলে তনুর ব্যাগটা নিয়ে হাঁটতে থাকলো।ওর পেছন পেছন আসতে লাগলো তনু।আরেকবার অসহায়ভাবে স্টেশনের দিকে তাকালো ও।যাকে খুঁজছে সে নেই!
৫
ফারহান আজ সকাল থেকেই খুব খুশি।অবশেষে তারা ঘর বাঁধতে যাচ্ছে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রিয় মুখ দেখতে পাবে!এখন থেকে।নিজেকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। যার জিনিস সেই ভাববে।আজ দুপুরের পরে আর অফিস যাবে না ও।তনু কে আনতে স্টেশনে যাবে। ওখান তেকে সোজা ওর বাসায়।অবশ্য বাড়িতেও নিয়ে যেতে হবে।মায়ের সাথে পরিচয় করাতে!সেটা অবশ্য অনেক দুরের পথ!প্রায় সারাদিন লাগবে!
দুপুরে অফিস শেষে ও ভাবলো ট্রেনের তো অনেক দেরী।কফিশপে যাই।কফিশপ থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠার পর মনে হলো যে তনুকে ফোন করবে!কিন্তু,ফোন কোথায়?নিশ্চয় কফিশপে।
গাড়ি ঘুরালো।কিন্তু,কফিশপেও তার মোবাইলটা নেই।হারিয়ে ফেলেছে!
তনুর নতুন নং ও মুখস্থ নেই!মাত্র একবার ওই নং এ কথা হয়েছে!নিজের ফোনে কল করলো।সুইচড অফ!তনুর কাছে টাকাও নেই বেশি।ফারহানই বলেছিলো যেন সব ছেড়ে আসে ।
এখন কি হবে!ও দ্রুত স্টেশনের দিকে গাড়ি চালায়!
এবার হাতঘড়ির দিকে তাকায়।এটা তো বন্ধ!ও মাই গড!এতক্ষন সে বন্ধ ঘড়ির সময় দেখছিলো।দ্রুত স্টেশনের দিকে গাড়ি চালায়!
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।ও ভাবে!তনু নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য।ও কোথাও যাবে না!
কিন্তু,সমস্ত স্টেশন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলো না।লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো,’নীল আর সাদা পাঞ্জাবী পড়া কোনও ছেলেকে দেখেছে কি না?’
সবাই বললো, ‘হ্যা। খুব কাঁদছিলো।’কিন্তু,এরপর তার কি হলো সেটা কেউ বলতে পারলো না!
ফারহান বসে পড়লো!ভাগ্য তার সাথে এটা কি করলো!
দিয়ে আবার কেড়ে নিলো!নিশ্চয়,তনু ওকে ভুল বুঝেছে!আবার ভাবছে!তাদের প্রেম কি এত হালকা।না!তনু ওকে ভুল বুঝবে না!
৬
গাড়িতে উঠেও তনু কাঁদছে!
ছেলেটি বললো,’আমি অনিমেষ।আমেরিকাতে থাকি।ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছি।আপনি?’
-আমি তনু।
-আরে!এখনো কাঁদছেন কেন?কোথায় যাবেন?
-আমার যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
-কি!আজব!আর ইউ ম্যাড!এতদিন জানতাম মেয়েরা পালায়!আপনি পালালোন কেন?
তনু কিছু না বলে আবার কাঁদতে লাগলো।
-এখানে কাউকে চেনেন?
-না।একজনের কাছে ই এসেছিলাম।সে আসে নি।
ও আবার কাঁদতে লাগলো।
-বাড়ি ফিরে যান।
-না!বাড়িতে চিঠি লিখে এসেছি।ফিরে গেলেো ও তাঁরা নেবেন না!
-ধুর!আরে ভাই!কি এমন লিখেছেন!অদ্ভুত ! বাঙালি এত সেন্টিমেন্টাল!
এবার তনু চিৎকার করে বললো,’শুনবেন!শুনতে চান!আমি গে!সেটা বাড়িতে লিখে এসেছি।বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে এসেছিলাম!গাড়ি থামান!আমি নামব!
-স্যরি!আমি বুঝি নি।প্লিজ!ক্ষমা করবেন!
অনিমেষ আসলে মনে মনে অবাক হয়েছে বাংলাদেশেও কারও এত সাহস আছে দেখে।ওর খুবই অবাক লাগছে।প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিলো।সে নিজে গে।তািই আরেকজনকে চেনা সহজ । তবে সেন্টিমেন্টাল প্রেম হয়নি তার।বিছানা পর্যন্তই।
তনু রেগে বললো,’গাড়ি থামান!আমি নামবো!’
-কোথায় যাবেন এত রাতে?
-জাাহান্নামে।আর কিছু না থাকলেও আসার সময় নদী দেখলাম।ওটা আছে।সাঁতার জানি না।একবার ঝাঁপ দিলেই হবে।গাড়ি থামান!আমি কিন্তু লাফ দেবো তাছাড়া!
অগত্যা গাড়ি থামালো অনিমেষ!
ব্যাগ গাড়িতে রেখেই নেমে হাঁটতে শুরু করলো তনু!
অনিমেষের খুব হাসি পেলো।বুঝতে পারলো এর মাথাতে গন্ডগোল আছে হালকা।তনু হাঁটছে।পেছন পেছন গাড়ি নিয়ে আসছে অনিমেষ!
তনু দাঁড়ালো।গাড়ির কাছে গিয়ে বললো,’আপনি আসছেন কেন?’
-আপনি নদী পেতে পেতে অনেকটা হাঁটতে হবে!যদি লিফট চান টায়ার্ড হয়ে তাই!
ওর বলার ভঙ্গি দেখে তনু হেসে ফেললো।চোখে জল।ঠোঁটে হাসি।অপূর্ব!
অনিমেষ বললো,’এবার গাড়িতে উঠুন।আমাদের বাড়ি চলুন!যতদিন খুশি থাকবেন।তারপর,যা খুশি সিদ্ধান্ত নেবেন!’
তনু খুশিমনেই উঠলো গাড়িতে।আর উপায় নেই।
অনিমেষ বললো,’ও হ্যা।বাড়ি যাওয়ার পর থেকে আমাকে তুমি বলবেন।আমিও বলবো।পরিচয় দেবো আমরা বন্ধু!হবে?’
-খুব হবে!
৭
তনু কখনো পরিবার কি?তাদের আদর স্নেহ কেমন এসব জানে না!কারণ,বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বাবা মা সেপারেট।কিন্তু,ও এখন যে বাড়িতে এলো সেটা ভালোবাসায় ভরা।জয়েন ফ্যামিলি।অনিমেষ ওকে নিয়ে যখন পৌঁছালো তখন অনেক রাত।
সবাই ওদের ঘিরে ধরলো।কেউ বকছে,কেউ শাসন করছে কত কি!তনু ভয় পাওয়া চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে।কখন যে অনিমেষের হাত ধরে ফেলেছে বুঝতেই পারে নি।অনেক শক্ত করে ধরে আছে।
অনিমেষ তনুকে পরিচয় করিয়ে দিলো বন্ধু বলে।ওকে রিসিভ করতে গিয়েই দেরী হয়েছে সেটা বললো।
অনিমেষের মা বললেন,’ঠিক আছে।তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়!খাবার টেবিলে আসবি।’তারপর তনুকে বললেন,’কি মিষ্টি চেহারা!বাচ্চাদের মতো চোখ।তোমার সাথে খাবার টেবিলেই কথা হবে।কেমন?যাও ওর সাথে।তাড়াতাড়ি ফ্রেস হও।চোখ কেমন লাল হয়ে আছে!’
যাওয়ার সময় একটু দুরে গিয়ে অনিমেষ বললো,’এবার হাতটা ছাড়ো!সবাই তাকিয়ে আছে!’
তনু এতক্ষনে খেয়াল করলো।
লজ্জা পেয়ে বললো,’ওমা!তাই তো!স্যরি!’
বলেই হাত ছাড়লো।
দুজন ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসলো।
এবার প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
দুজনে বানিয়ে বানিয়ে উত্তর দিলো।
অনিমেষের বাবা জিজ্ঞেস করলেন,’তোমার বাবা মা কি করেন?’
-বাবা বিজনেস করেন।মা ডাক্তার!আমি অনেক ছোট থাকতেই উনারা সেপারেট হন।আমি কখনো বাবা মা পরিবার এসব সেভাবে পাই নি।
ওর কান্না পেলো।অনিমেষ বুঝতে পারলো।সেও এটা জানতো না।সে সবার অলক্ষ্যে তার একটা হাত তনুর হাতে রেখে চাপ দিলো।
সবাই চুপ করে আছে।
অনিমেষের বাবাই কথা বললেন,’মন খারাপ করো না।বলাটা একটু বাড়াবাড়িই হবে হয়তো!তবে,আমাদের তুমি আপন ভাবতে পারো।আজ থেকে এটা তোমার পরিবার!কেমন?আমার দু ছেলে এক মেয়ে!ছোটটাকে তো দেখছই।বড়টি বাড়ি নেই আজ।ওরই বিয়ে।আজ থেকে তুমিও আমাদের সন্তান!
এবার সত্যি কেঁদে ফেললো তনু!
অনিমেষের মা উঠে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন!
ও নতুন একটা পরিবার পেলো!
সবাই খাওয়া শেষে ঘুমুতে গেলো।
ও আর অনিমেষ এক ঘরে।পাশাপাশি শুয়ে আছে।
এতক্ষনে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার সুযোগ পেলো তনু।
সে ভাবছে ফারহানের কোনও বিপদ হয়নি তো!
৮
ফারহান সে রাতে ঘুমুতে পারলো না ঠিকমতো!
বারবার মনে হচ্ছিলো সেই বিপদে ফেলেছে তনুকে!না জানি কি অবস্থায় কোথায় আছে সে!
কি করে সে নিজেকে ক্ষমা করবে!
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।
ওদিকে তনু’র চোখেও ঘুম নেই।কেন এটা হলো।কতবার ফারহান ওর অফিসের কথা বলতে চেয়েছে!সেই শুনে নি!এখন কি করবে!কয়েকদিন পর ছুটি শেষ হবে!তখন কি ভার্সিটি থেকে ফারহানের ঠিকানা নেবে?ওর মা নিশ্চয় ওর অফিস সম্পর্কে জানেন!
কিন্তু!ফারহান যদি ইচ্ছে করেই না আসে!
না না!কি ভাবছে সে এসব!
তার ফারহান এমন হতেই পারে না!
ফারহানের মা ওর জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছেন।উনার বয়স হয়েছে।ছেলের পরিবারে সমময় কাটাতে চান!
সব মা সেটা চায়!
ফারহান তার মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না!আজ সে প্রতিষ্ঠিত!কিন্তু,এই মা যে নিজে না খেয়ে,ছেঁড়া কাপড় পড়ে তাকে বড় করেছে।
ফারহান তার মায়ের কথার প্রতিবাদ করতে পারে না!
সুন্দরী এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয় ফারহানের!তারপর থেকে ফারহান আর তনুকে খোঁজেনি।কোথায় খুঁজবে।সাধ্যমতো সব জায়গায় খুঁজেছে।ধরেই নিয়েছে ওকে আর পাবে না।
বাসর রাতে ফারহান যখন শরীরের কাছে পরাজিত হয়ে মেয়েটির বুকে সুখ খুঁজছে,তখন কে যেন বলছে কানের কাছে,’এত তাড়াতাড়ি তোর প্রেম শেষ!’
তনুর কথা মনে হলো।
কিন্তু,কামনার কাছে প্রেম পরাজিত!
ওদিকে অনিমেষদের বাড়িতে তনুর জীবন বদলে গেলো।সে কেমন দুরন্ত হয়ে গেলো!আর কদিন পরেই দাদাভাইর বিয়ে!সবাই ব্যস্ত।ও ও ব্যস্ত থাকে!ও কি জানে!কেউ একজন সবার অলক্ষে ওকে দেখে।ওর সব খেয়াল করে!যে অনিমেষ কামনা ছাড়া কিছু বুঝতো না,সেও যেন কামনাহীন প্রেমে জ্বলছে!একবিছানাতে শোয়।অথচ খারাপভাবে স্পর্শও করে না!
সেদিন সকালে তনু বাচ্চাদের গল্প শুনাচ্ছে নিচের বাগানটাতে।আর দোতলার বারান্দা থেকে হাতে কফির মগ নিয়ে দেখছে অনিমেষ!কি একটা কথায় সবাই হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে উপরে তাকিয়েই অনিমেষকে দেখলো তনু।লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!
অনিমেষ মনে মনে বলছে,’যদি জানতে এই সাদা পাঞ্জাবীদে তোমায় কতো সুন্দর লাগছে!তবে,মাটিতে পা ফেলতে না অহংকারে!’
আশ্চর্য!আমি কি তবে সত্যি প্রেমে পড়লাম!ভাবে অনিমেষ!কিন্তু,ও তো অন্য কাউকে ভালোবেসে এখানে এসেছে সব ছেড়ে!সে প্রেম কতো বড়!আমাকে তো ও কখনো ভালোবাসবেই না!
ফারহান এবং অনিমেষ বন্ধু!ফারহানের বিয়েতে অনিমেষ গিয়েছিলো!
তার বড়দার বিয়েতে ফারহান নতুন বৌ নিয়ে আসবে কথা দিয়েছে!
অনিমেষ দের বাড়ি এসে পরিবার সম্পর্কে নতুন করে ভেবেছে তনু।সে ভাবে,ফারহান যদি তার হয়,তবে এমন একটা পরিবার কখনো ফারহান পাবে না!বাচ্চা হবে না।ওর মা ওকে কত কষ্ট করে বড় করেছেন!কত স্বপ্ন দেখেন!ছেলের বৌ।নাতি নাতনী!সে কেন স্বার্থপরের মতো সব নষ্ট করবে!এবার ফারহানের সাথে দেখা হলে,বিয়ে করতে ওকে রাজি করাবে!সে নিজে সরে যাবে!
ওর চোখের কোণে দু ফোঁটা জল এলো।
৯
অনিমেষ খুব অস্থির বোধ করে!
সে না পারছে বলতে না পারছে সহ্য করতে!ও তনুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়!
তনু কিছু জিজ্ঞেস করলে কেমন করে জবাব দেয়!তনু তো অবাক!অনিমেষ কি চাচ্ছে না আমি থাকি।
রাতে ও অনিমেষকে বলে,’আমি কাল চলে যাচ্ছি’
অনিমেষ চমকে উঠলো।
-আমাকে বলছো কেন?যাবে যাও।আমি থাকতে বলার কে?
-তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি।তোমার বাড়ির সবাই খুব ভালো।আমি অনেক কিছু শিখলাম!যার জন্য এসেছিলাম,তাকে মুক্তি দিতে শিখলাম তোমার পরিবার দেখে।ও আমাকে নিলে তো এমন একটা পরিবার কখনো পাবে না!তাই,এবার ওকে বিয়ে করতে রাজি করাবো!
-ভালো তো!কখন যাবে কাল!
-সকালের ট্রেনে!
-বাবা জানে!
-পাগল?বিয়ের আগে যেতে দেয়?না জানিয়ে যাচ্ছি।
-ও।যাচ্ছ কেন?
-জানি না!কেউ হয়তো চায় না যে আমি থাকি!
-যাও!চলে যাওয়াই ভালো।এখানে তো কেউ নেই তোমার!তোমার ভালোবাসার মানুষ নেই!
-তুমি এমন করে বলছো কেন?
-কেন বলছি তুমি বুঝ না?
-না।বুঝতে চাইছি না।হঠাৎ,আমি কি অপরাধ করলাম যে তুমি কথা বলা বন্ধ করলে!
কান্নায় গলা ধরে আসে তনুর!
হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরে অনিমেষ!
তারপর,পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে।
হঠাৎ,বুঝতে পারে তনু!কেন এত কিছু!এত অভিমান!
আরও বুঝতে পারে যে কখন সে নিজেই পাগলটাকে ভালোবেসে ফেলেছে!
তা না হলে ওর জড়িয়ে ধরাতে এত ভালো লাগতো না!
সেও এবার সাড়া দিতে থাকে।
অনিমেষ বলে,’আমি কোনও মেয়েকে বিয়ে না করলে কারো কোনও ক্ষতি হবে না।বড়দা বংশরক্ষা করবে।তোমার কোনও অপরাধবোধ থাকবে না!শুধু আমার হও!এতভালোবাসবো তোমাকে!কোনও অমর্যাদা হতে দেবো না!মাথায় রাখবো দেবী করে!’
তনু কিছু বলে না!দ্বিধায় ভোগে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয় ওদের।তনুর বুকে অনিমেষের মাথা।ও উঠতে চাইতেই আবার শুইয়ে দেয় অনিমেষ!
‘আরো পরে উঠো।কি করবে এত তাড়াতাড়ি!ভালো লাগছে তো!’
-কটা বাজে দেখেছেন!আর একটু পর উঠলে সবাই দরজা ভাঙবে আমরা মরে গেছি নাকি দেখতে!
তনুর কেমন অপরাধবোধ জাগে!ছিঃ।ফারহান হয়তো এখনো তার অপেক্ষায় আছে।আর সে!এটি কি করলো!
অনুষ্ঠানে ফারহান তার বৌ নিয়ে আসলো। অনিমেষ তনুকে পরিচয় করাতে নিয়ে যাচ্ছিলো।কে যেন তনুকে ডাকলো।সে চলে গেলো।ফারহানের কাছে অনিমেষ একাই গেলো!
তনু ফিরে আসছিলো কাজ শেষে। তাকাতেই ফারহানকে দেখলো।মেয়েটা ওর হাত ধরে আছে!
যা বুঝার বুঝল।তবুও,অনিমেষকে ডাকতে পাঠালো।
অনিমেষ এলে জিজ্ঞেস করলো,’উনি কে?মেয়েটা কে সাথে?’
-আরে ও তো ফারহান!আর ওটা ওর বৌ।সেদিন বললাম না! ওদের বিয়েতেই গিয়েছিলাম!
-ও আচ্ছা।
-হঠাৎ এ প্রশ্ন!
-না!বৌটা অনেক সুন্দর!চেনা চেনা লাগছিলো!
-চলো পরিচয় করে দিই।
-না বাবা!এসব ঢং করা মেয়ে সহ্য করতে পারবো না!তুমি যাও!
-তুমি না!হা হা হা।
তনু সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে!
ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদে আকুল হয়ে!
একে ভালোবেসেছিলো সে!হায় রে! প্রথম প্রেমের ফুল এই দেবতার পায়ে রেখেছিলো!ফারহান কেন এমন কষ্ট দিলো!সে মেয়েটিকে বিয়ে করবে বললেই পারতো!হাসিমুখে নিজে বিয়ে করাতাম!আমিও তো তাই ভাবছিলাম!কেন না জানিয়ে করলো!আর আমাকে সর্বহারা করলো।মা বাবা সমাজ আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।কেন ফারহান!
বুক চিড়ে শুধু কান্না বের হয়!জবাব আসে না!
সে সিদ্ধান্ত নেয়!অনিমেষকেই নেবে।
১০
কয়েক বছর পর!আজ অনিমেষ,তনু আর তাদের পিচ্চি বেবিটা বাংলাদেশে এসেছে।অনেক বছর পর!
অনিমেষের বাবা মা মারা গেছেন।
অনিমেষ তনু আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়েছে!অনেক কিউট একটা বেবি তাদের।অ্যাডাপ্ট করা।
অনিমেষ কথা রেখেছে।আজও তনুকে আগের মতোই ভালোবাসে।মাথায় করে রেখেছে!
বাংলাদেশে এসে অনিমেষদের বাড়িতে উঠে না ওরা।চিটাগাং যায়।সেখান থেকে কক্সবাজার।
একদিন বিকেলে অনিমেষ বেবিটাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দুরে গেলো।
তনু একা দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ,পরিচিত গলায় কেউ নাম ধরে ডাকলো!
ফিরে তাকালো তনু!
ফারহান!
এত বছর পরে!কি করে চিনলো!
কি বলবে তনু!
ফারহানই বললো,’কত খুঁজেছি তোমায়!সেই স্টেশনে,সেই শহরে। কোথাও পাইনি।কেমন আছ?’
-আমি আছি।ভালো আছি।তুমি?তোমার বৌ?
-জানো দেখছি।
-হ্যা।অনেককিছু জানতে না চাইলেও ভাগ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়!
-তোমার কথা ঠিক হয়েছে!আজ আমার অনেক টাকা!জানো?আমি এখন অনেক দামী একটা ঘড়ি কিনেছি।অনেক দামী।যেটা আর বন্ধ হয়ে থাকবে না!এই দেখ!
সেদিন ঘড়িটা বন্ধ হয়ে ছিলো।আমি বন্ধ ঘড়ির সময় দেখে ভেবেছি ট্রেনের অনেক দেরী।ফোন হারিয়ে যায়!তোমার নতুন সিমের নং মুখস্থ ছিলো না।কত খুঁজেছি।পাই নি।এরমধ্যেই মা বিয়ে দিলেন!তোমাকে একটিবার জানাতেও পারি নি!ক্ষমা করেছ তো আমাকে?
তনু আর নিজেকে সামলাতে পারে না।সে বালির উপর বসে পড়ে!উফ!কি ভুলটাই না বুঝেছে ও এতবছর!তার ফারহান!তার!কিন্তু,আর কোনও উপায় নেই।আজ অনিমেষ তার মনের দেবতা।তাদের সুন্দর সংসার আছে।বেবি আছে।
আজ ফারহানেরও সংসার আছে!ওই তো!মেয়েটার সাথে বাচ্চা দুটি।আহা!কি সুন্দর!
তনু আর কিছু বলে না।শুধু হাত জোর করে বলে,’ক্ষমা করো আমাকে!ক্ষমা করো।আমি পারি নি অপেক্ষা করতে!তোমাকে ভুল বুঝে রাগ করে আরেকজনের হয়ে গেছি!’
-আমিই কি পেরেছি!এ আমাদের নিয়তি!ক্ষতি কি!বিরহ নিয়েই আমরা থাকবো!আমি এখনোও তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি।
তনু কি যেন বলতে গেলো।হঠাৎ,অনিমেষের কথা মনে হলো।
না!একজনকে ধোঁকা দিয়েছে।আরেকজনকে দিতে পারবে না।
ও তাড়াতাড়ি চলে যায় ফারহানের কাছ থেকে।অনিমেষই ওর ধ্রুব সত্য।তবুও,ফারহান তো ছিলো!অস্বীকার করবে কি করে?আজও বুকের কোন জায়গাটা যেন ফাঁকা লাগে।অনিমেষের কুল ভাসানো জোয়ারেরর ভালোবাসা যা স্পর্শও করতে পারে না!সে দুরে গেছে তবু তাকে ভুলতে দেয়নি!
এটাই বোধহয় সত্যিকারের ভালোবাসা।তাইতো,তনু কিংবা ফারহান কেউ কাউকে ভুলতে দেয়নি।
——সমাপ্ত——-
উৎস: অন্যভুবন