
অণু’র কথা-
স্টেশনে নামলাম ট্রেন থেকে।ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছিলাম।অরূপ আমার ক্লাসমেট।ঈদের ছুটিতে অরূপের ওখানে কিছুদিন থেকে ওর সাথে ক্যাম্পাসে ফিরবো।ওর মাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাড়ি এসেছিলো অরূপ।সেই থেকে একটা পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে।অরূপের তো আমার জন্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা!আশ্চর্য!ওর যদি কখনো দায়িত্বজ্ঞান হয়!ও আর আমি দুজনেই মেস এ থাকি!আলাদা মেস।কখন কি খাবে,কোনদিন কোন কাপড় পড়বে সব আমাকে বলে দিতে হবে!মুখে ঝাল লাগলে দৈ খাওয়ার কথাও আমাকেই মনে করিয়ে দিতে হবে!অদ্ভুত!
রাগে গা জ্বলছে।ফোন বের করলাম।কল করলাম।ফোন অফ!এখন কি করি?অবশ্য ঠিকানা জানি।একা একা যাওয়া যায়!লোকজন অবাক হয়ে দেখছে।কি দেখছে কে জানে!একটু মেয়েলি না হয় আমি!তাই বলে এরকম করে তাকানোর কি আছে?আশ্চর্য!
আমি একা একা যাওয়াই ঠিক করলাম।রিক্সা নিলাম!তারপর,আবার ফোন করলাম!সুইচড অফ!কোনও সমস্যা হয় নি তো!গাধা একটা!
অরূপদের বাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নামলাম!
রিক্সাওয়ালা আঙ্কলকে চেনেন।আমি নামতেই পেছনে আরেকটা রিক্সা দাঁড়ালো।মহারাজ সেটা থেকে নামলেন বত্রিশপাটি দাঁত বের করে!
বুঝলাম যে স্টেশন থেকেই ফলো করছে।
আমি কোনও কথা না বলে বাড়িতে ঢুকলাম।
আন্টিকে বললাম,’তুমি ওকে আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করো!’
-কেন রে?কি হলো?
-ওকেই জিজ্ঞেস করো।আমি যদি বাসা না চিনে ভুল পথে যেতাম!
এবার অরূপ একটা জুসের প্যাকেট খুলতে খুলতে বললো,’নো ওয়ে!আমি পেছন পেছন ছিলাম কেন?হারাবি না তুই!’
আমি হাতের কাছে একটা বই পেলাম।ওটাই মারলাম ওকে!
মাথা সরিয়ে নিলো।
আন্টি হেসে বললেন,’তোদের ব্যাপার তোরা বুঝে নে!আমি রান্নাঘরে গেলাম।অণু,তোমার মা’কে আমি ফোন করে তোমার আসার কথা জানিয়েছি।উনি নাকি আমার জন্য কি পাঠিয়েছেন।সেটা আমাকে দিয়ে ঝগড়া করো দুজন।অনেক কাজ আছে আমার!’
এই হলো আন্টি।মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের দুজনের মায়েদের বন্ধুত্ব হয়েছে আগে, না আমাদের!অদ্ভুত!
আন্টি চলে গেলেন।দুজনের কেউই কথা বলছি না।
অরূপের সাথে আমার পরিচয়পর্বটা একটু অন্যরকম।
আমাদের এমব্রায়োলজি ক্লাসে প্রথমদিন যেতে একটু দেরী হলো আমার!ক্লাসে যেতেই স্যার বললেন,’তুমি কি নেপালী?’
অরূপ হুট করে বললো,’না না স্যার!ও সোমালিয়ান!’
সবাই হেসে উঠলো।আমার খুব রাগ লাগলো।ক্লাস শেষে ওকে বললাম,’আমার মুখের দিকে তাকাও!আমি কি কালো?’
ও তো প্রশ্ন শুনে অবাক!
-আমাকে সোমালী বলেছ কোন অ্যাঙ্গেলে?
ও একটু চুপ থেকে সামলে নিলো।তারপর মজা করে বললো,’এই যে ওদের মতো তুমিও ভয়ংকর!’
এমন ভাবে বললো যে হাসি আটকাতে পারলাম না!তারপর,আমাদের বন্ধুত্ব।বেস্ট ফ্রেন্ড।কখন যে তুই বলা শুরু হলো!ওর আগের রোল আমার।গাধা।পড়েনা।আমার খাতা দেখে সব কপি করে।অনেক কষ্টে ওকে লাইনে আনলাম।এখন অবশ্য পড়ে মোটামুটি।আর যদি কোনও মেয়ে দেখে তো তার বিশ্লেষণ করতেই সারাবেলা যায়!আমার ভীষণ রাগ লাগতো।মোটা বই থাক আর পাতলা।মাথায় বাড়ি দিতাম!ও গিটার বাজিয়ে খুব ভালো গান করে।শুনতাম।ভালো লাগতো!সবাই আমাদের জুটি বলে খেপাতো।দুজনের কেউই গায়ে মাখতাম না!আমরা তো জানি!এত ভালো বন্ধুত্ব হয় না!যেদিন অরূপ জেনেছিলো আমি সমকামী,ও তেমন কিছু মনেই করেনি।শুধু বলেছিলো, ‘তুই তোর মতো করে থাকবি।এতে আমার কি সমস্যা!’
যাই হউক।আন্টি রুম থেকে চলে যাওয়ার পর আমি গোসল করে ফেললাম।দুপুরে খেতে বসেও কোনও কথা বলি নি।
আঙ্কল দুপুরে খেতে এসেছেন!
উনি বললেন,’এখনো শেষ হয় নি অভিমান!তোমরা দুজন(আন্টি আর মা) যে বলো অণু মেয়ে হলে ওর সাথে অরূপের বিয়ে দিতে!বুঝ অবস্থা!তখন কি হতো?এদের অত্যাচারে আমাদেরই বনবাসে যেতে হতো!
আমার খুবই লজ্জা লাগে এটা শুনতে।কিন্তু,মা আর আন্টি প্রায়ই এটা বলে!
আমি বললাম,’আঙ্কল!তুমিও?ও কি করছে জানো আজ?’
-তোর আন্টি বলেছে।তোকে রাগানোর জন্যই তো করেছে!আর কারো জন্য তো না!হয়েছে!আমার ছেলেটাকে একটু ভালো করে খেতে দে এখন।পরে নালিশ শুনবো!
উনার বলার ধরণ দেখে হেসে ফেললাম সবাই।
আর বিষম খেলো অরূপ!আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম জল নিয়ে!ওকে ঠিক করতে!
আঙ্কল,আন্টি আবার হেসে উঠলো।আঙ্কল বললো,’এই না হলো রাগ!নাহ্।ভালোই হতো!’
আমি লজ্জা পেয়ে বসে পড়লাম।বললাম,’ভালো হচ্ছে না কিন্তু!আর কখনো আসবো না।এটাই প্রথম,এটাই শেষ।’
আঙ্কল আবার বললেন,’আমার ছেলে কি তাহলে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকবে?ঘরজামাই?ওটা হবে না!’
এবার আবার সবাই হাসলাম।এতো ভালো মাননুষ আঙ্কল।এত ভালো হয় কি করে?
আমি লজ্জা লজ্জা চোখে অরূপের দিকে তাকালাম।গাধা!চোখ নামিয়ে নে!তা না চোখ টিপে দিলো!
অগত্যা আমিই চোখ নামালাম।
এই ছেলেটা সারাদিন ছাগলের মতো কিছু না কিছু খাচ্ছেই।বাচ্চাদের মতো।আর বাবা-মায়ের কি আদিখ্যেতা।যেন ছোট একটা বেবি!
রাতে আমাদের একসাথে থাকার ব্যবস্থা হলো।অরূপের রুমে।
আঙ্কল এটা নিয়ে কোনও মজা করলেন না দেখে বেঁচে গেলাম।
ঘুমুতে গিয়েও কেউ কোনও কথা বললাম না!
একটু পর ও বললো,’তুই রাগ করেছিস?’
-না।মজা করছিলাম!দেখলাম,তোর সাথে কথা না বলে থাকতে পারি কি না!
-কেন?কথা না বলে কেন থাকবি?
-কয়েকদিন পর যখন ভার্সিটি লাইফ শেষ হবে তখন তো তোকে আর পাবো না!
-শোন্।আমি যেখানেই থাকি তোকে কখনো ভুলতে পারবো না।
-হয়েছে!এসব সবাই বলে।
ও হঠাৎ আমার মাথায় হাত রাখে।বলে,’তোর মাথায় হাত রেখে বললাম।ভুলবো না!’
-গাধা!কি করলি এটা?তোর তো কোন ঠিক নেই!কাল যদি আমাকে ভুলে যাস,আমি তো মরে যাবো!
-যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে নিস।তোকে ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকতে পারবো না!
আমার খুব কান্না পেলো।মানুষ এত ভালো হয়?হোক না গাধা!
অনিমেষ এর কথা-
অণুকে প্রথম দেখি ওর ক্লাসরুমে।আমার তিন ব্যাচ জুনিয়র!ওদের ক্লাসে পরিচিত হতে গিয়ে কিংবা ভয় দেখাতে গিয়ে ওকে দেখলাম।খুব নিরপরাধ একটা চেহারা।কালো ফ্রেমের চশমা।থ্যাবড়ানো নাক।অনেক ফর্সা।চশমা ঠিক করতে গিয়ে ওর আঙুল চোখে পড়লো।এত সুন্দর কারো আঙুল হয়!
সবাই জুনিয়র মেয়েদের ফোন নং নেয়।আমি ওর নং নিলাম।আমি যে সবার মতো না!আমি সমপ্রেমী।পুরোপুরি না।বাইসেক্সুয়াল।তবে,অণুর প্রতি সেক্স করার বাসনা জাগেনি।আমি রাজনীতি করায়,ভোগ করতে কোনও সমস্যা হয়নি কাউকে।কি মেয়ে!কি ছেলে!কিন্তু,ছেলের ব্যাপারটা সেন্সিটিভ।তাই,বেশি সুযোগ হয় নি।একসময় প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র ছিলাম।এখন পচা একটা ছাত্র।
যা হোক।ওর সাথে ফোনে সেদিনই কথা বলেছিলাম।ও ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলো। ওর জ্বর আসে যেটা পরদিন জানতে পারি।
পরদিন ওর সাথে কথা বলি।আমাকে সবাই ভয়ংকর মনে করে।
ও ও ভয় পেলো।আমি পাত্তা দিলাম না!
অনেক কিছু জেনে নিলাম ওর কাছ থেকে।
ওকে আমি যে ভালোবেসে ফেলেছি!কিন্তু,বলবো কি করে!যদি ও ফিরিয়ে দেয়!কিংবা ও কাউকে এটা বলে দেয়!
তখন কি হবে?
কিন্তু,ওর কথা আমার সব সময় মনে হতে লাগলো।যেটা আমার পজিশনের কাউকে মানায় না!
তারপরও,আমি ওর খুব কেয়ার নিতে থাকলাম!একসাথে গিয়ে ওর মেসে রেখে আসতাম বাইকে।ও যেতে চাইতো না!
কিংবা,ফাস্ট ফুডে নিয়ে যেতাম।ও খুবই মন খারাপ করে থাকতো!
বিরক্ত হতো!কিছু বলতেও পারতো না!আমি সব বুঝতাম।কিন্তু,আমিও যে অসহায়!ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।কি নেই আমার!ও কেন আমাকে পছন্দ করে না!আমার ধনী বাবার একমাত্র ছেলে আমি!যা সবসময় প্রকাশিত হয়!চেহারা ভালো।বাইব নিয়ে ঘুরি।স্মার্ট।যে কোন মেয়ে আমার সান্নিধ্যে ধন্য।আর ও এমন করে কেন?ও কি জানে যে কত মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে?
অরূপের কথা-
আমার পরিচয় তো এতক্ষনে পেয়েই গেছেন।অণুর লেখা কথাগুলি থেকেই বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয় আমি কতটা গুরুত্বপূূর্ণ ওর জীবনে।ও আমাকে আদর করে গাধা বলতো!আমার একবারের জন্যও খারাপ লাগে নি।কেন লাগবে?আমি তো আর যেমন তেমন বন্ধুত্ব করি নি!
প্রথম দেখা থেকেই ওর সাথে ভালো বন্ধুত্ব।তারপর,কত ঝড় হয়ে গেছে।ওর মেয়েলিপনা নিয়ে কতজন কতভাবে আমাকে খারাপ ইঙ্গিত করেছে!কিন্তু,আমি গায়ে মাখি নি।কেন মাখবো?আমি তো জানি যে আমার জীবনের কতটা জুড়ে অণু।ওকে কেন ছাড়বো অন্যের কথা শুনে।তাহলে আর বন্ধু হলাম কেন?বন্ধু মেয়েলি হউক আর অন্ধ হউক,বন্ধুকেই তো সবসময় পাশে প্রয়োজন!
সেবার ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম।ওর মা-বাবা,দাদু-দিদা,বড়মা,জ্যেঠাই সবাইকে দেখেই বুঝেছি ওকেন এত ভালো।
আমাদের বাড়ি যখন ও এলো,তখন আমার কি যে ভালো লেগেছিলো!ওকে এসব কখনো বলি নি!কারণ,বললে ও যদি আমার দুর্বলতার কথা জেনে যায়?
ও হয়তো ভাববে যে ওর সব কথা জানা থাকাতে আমি ওকে নিয়ে মজা করছি কিংবা সুযোগ নিচ্ছি।
আমি কখনো চাইনি যে বন্ধুত্ব নষ্ট হউক।
বাবা যখন নাশতার টেবিলে বললো,’অণু!তুই এত সকালে গোসল করেছিস কেন?’বলেই হেসে উঠলেন!
ও লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে যখন বললো,”মাথাটা ব্যথা করছিলো তো!”
-রাতে না ঘুমুলে তো অমন হবেই!
বলেই আমাকে বললেন,’কি রে!ওকে ঘুমুতো দিস নি?’
আমার খুব ভালো লাগলো।বাবাকে বলার ইচ্ছে হলো,’কেন এসব বলছ বাবা?তোমাদের সমাজ কিংবা তুমি কেউ এটা মেনে নেবে কখনো?অণুদের ভালোবাসা একাকী শুকায়।’
অণু,তুই কি জানিস?তোর সেই একমাথা ভেজা ভেজা চুলে লজ্জামাখা মুখখানা কত সুন্দর দেখাচ্ছিলো!
মা বললেন,’এই অণু!তুই এখন থেকে আমাকে মা আর উনাকে বাবা বলবি।
আমি বললাম,’কেন?’
-তোকে কে কথা বলতে বলেছে?রুটিটা আগে গিলে ফেল।জল খা।আমাদের শুনতে ভালো লাগবে তাই এসব বলা।
আমি কখনো এর আগে এতটা ভাবি নি।অণু অনেক ভালো।কিন্তু,তাই বলে এসব ব্যাপার নিয়ে এসব কি!ও কি রাগ করছে?
মনে তো হয় না!দাঁড়াও পরে মজা দেখাবো!
মা আবার বললেন,’তোরা তুই তুই করিস কেন?এখন থেকে তুমি বলবি!’
এবার অণু বললো,’আমি কি সত্যি সত্যি এ বাড়ির বউ হলাম নাকি?’
সবাই হেসে উঠলো।
অণু’র কথা-
সেবার অরূপদের বাড়িতে কাটানো সে কয়েেকটা দিন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো হয়তো!
হয়তো কেন?সত্যি ছিলো।যে ভালোবাসা আমার পাওয়ার কথা নয়,তাই পাচ্ছিলাম।উনারা সত্যি সত্যি আমাকে ছেলের বউয়ের মতো করছেন।বিশেষ করে আঙ্কল এমন বাচ্চাদের মতো করেন না!
ছুটি শেষে ফিরবো।ছেলের বউ বিদায় করার মতোই করলেন।কয়য়েকসেট কাপড় পেলাম।মা(আন্টি) র হাতের রান্না।বাবা(আঙ্কলে)র ছলছল চোখ।মনে হলো সত্যি বুঝি শ্বশুরবাড়ি থেকে যাচ্ছি।চলে এলাম আমরা।কথা দিয়ে এলাম পরের ছুটিতে যাবার আগে এদিক দিয়েই যাবো।
অরূপ এবার বললো,’তুই এ কদিনে রাগ করেছিস না মা বাবার ব্যবহারে!:
-কি যে বলিস না!দেখ্।জীবনে আমার বিয়ে হবে না!যা পেলাম সেটার মুল্য দিতে পারবো না।
-তাহলে আমাকেও মেনে নে!
-কি?
-বুঝিস নি?
-মজা করছিস না?আচ্ছা বল্!আমি এত খারাপ দেখতে!
-কেন?
-তোর এত কাছে ছিলাম।একবারও ছুঁয়ে দেখলি না!
-আমি যদি তোকে কখনো গ্রহণ করি,তবে সাতজন্মের জন্যই করবো!
আমি হেসে উঠলাম!
আবার সেই ক্যাম্পাস!এতক্ষন অনিমেষদার কথা মনে ছিলো না!আমি জানি না উনাকে দেখলেই কেন আমার এক্ত ভয় লাগে!উনি আমার এত খেয়াল নেন!এত ভালোবাসেন!আমিও উনাকে অনেক পছন্দ করি।কিন্তু,সামনে গেলেই রাগ লাগে।বিরক্ত লাগে।
কিন্তু,উনার কথায়,আচরণে ভালোবাসা প্রকাশ পায়।আমার কথা শুনে উনি ড্রাগ নেয়া ছেড়েছেন।স্মোকিং করেন না।তবুও।কেন আমি উনাকে আপন করতে পারি না?
কখনো আপন করতে পারি নি।
সেবার ছুটি থেকে চলে আসের পর,উনি আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগলেন।উনার চোখেডোন্ট কেয়ার ভাব।আমার সম্পর্কে কেউ কিছু বললে খবর আছে তার।কেউ ভয়ে আমার সাথে মজাও করতো না!মিশতোও না তেমন।শুধু অরূপ মিশতো।অরূপ কিন্তু অনিদাকে খুব পছন্দ করতো!
অনিদা আমাকে নিয়ে প্রায় ভার্সিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতেন।
আমি দর্শক সারিতে সংরক্ষিত আসনে বসতাম।উনি স্টেজে অতিথিদের সাথে।প্রোগ্রাম শেষে ফিরতাম একসঙ্গে।সবই ঠিকঠিক চলছিলো।শুধু,সে ভয়টা কাটাতে পারি নি।
আমার ক্লাসমেটরা এখন হলের সিটের জন্য আমাকে বলে।আমি যেন অনিদাকে বলে ব্যবস্থা করি।এসব আমার বিরক্ত লাগতো!
সবাই কি ভাবছে!ছিঃ।অরূপকে বললম।ও কোনও সমাধান দিতে পারলো না।
আমি এবার অনিদাকে সরাসরি বললাম।
-দাদা!এসব কি শুরু করেছেন।সবাই আপনার সাথে আমাকে নিয়ে কি ভাবছে এসব।ছিঃ।
-কেউ কিছু বলেছে?তোমার ক্লাসমেটরা।না সিনিয়র!নাম বলো শুধু।
-অমনি শুরু হলো।গুন্ডামি করা আর যাবে না জীবনে!
-কে কি বলেছে!নাম বলো।
-কেউ বলে নি।
-আমি অরূপকে ফোন করছি।
-লাগবে না।আপনি কেন এমন করেন আমার সাথে?
-তুমি বুঝ না?
-বুঝি।তাই ভয় লাগে।
-কিসের ভয়!বুঝলে কেন সহজ হতে পারো না!
-পারি না আমি!বড়র পিরীতি বালির বাঁধ!
-যদি তোমাকে প্রমাণ দিই কত ভালোবাসি!
-প্রমাণ দিতে হয় না।আমি জানি।কিন্তু,এটা সম্ভব নয়।
-এদেশে না হোক।তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো।সেটেলড হবো।একটা মেয়ে বেবি এডপ্ট করবো!
আমি হেসে উঠলাম ।
-আাপনি এত স্বপ্ন দেখে ফেলেছেন।নিজেকে উর্বশী মনে হচ্ছে।
-তুমি যা তুমি সেটাই।উর্বশী,মেনকা,রম্ভা লাগবে না!
-আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।চলে যাবো।
-জবাব দিলে না?
আমরা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম রাস্তা দিয়ে।হঠাৎ,একসিডেন্ট হলো।অনিদার রক্তমাখা শরির!
আমি কি করবো!
আমি উনার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম।চারপাশে অনেক স্টুডেন্ট।কেউ হেল্প করতে এলো না।আমি আকুল হয়ে কাঁদছি।অরূপকে ফোন করলাম।কাছেই ছিলো।এম্বুলেন্স নিয়েই এসেছে।বুঝলাম।সবার সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণে কেউ অনিদাকে পছন্দ করে না।ভয় পায়!
কিন্তু,আমার এত খারাপ লাগছে কেন?
আমি এম্বুলেন্সে বসা।অরূপও আছে।অনিদার মাথা আমার কোলে।সাদা পাঞ্জাবী আমার।অনিদার রক্তে লাল!
উনি আমার হাতের আঙুলগুলো শক্ত করে ধরে আছেন।
আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে জল পড়ছিলো।বললাম,’অনিদা!তোমার কিচ্ছু হবে না।আমি আছি তোমার পাশে।সৃষ্টিকর্তা আমার কথা শুনবেন।
উনি মলিন হাসলেন।
বললেন,’জানি।মরলেও ক্ষতি নেই।তোমার আঙুলগুলো এত ভালো লাগতো!আজ ধরতে পারলাম।কখনো তোমাকে ছুঁইনি ।আজ তোমার কোলে আমার মাথা!
আমি উনার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললাম-চুপ।আর কথা না!
হাসপাতাল পৌঁছলাম।অরূপের কেন যেন মন খারাপ।আমার সাথে ভালো করে কথা বলছে না।অনিদার চিকিৎসা চলছে।আমরা বাইরে।উনার বাসায় খবর দিয়েছিলাম।আসবেন উনার বাবা মা।
অরূপ বললো,’চলো।কিছু খাবে।তুমিতো কিছু খাওনি।’
ও আমাকে তুমি করে বলছে।
আমিও এখন তাই বলি।
বল লাম,’উনার কি হয় দেখে তারপর খাবো।খুব টেনশন হচ্ছে।খেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি খেয়ে নাও।’
ওর চোখে কেমন যেন রাগ দেখলাম।
বললো,’বাহ্।তাহলে তো হলোই।একটা এক্সিডেন্টেই এত চেঞ্জ।এতদিন নাটকের কি দরকার ছিলো?’
-কি বলছো অরূপ!একটা মানুষ এক্সিডেন্ট করেছে!
-বুঝলাম।আমি ওভাবে বলি নি তুমি জানো।কিন্তু,তুমি না খেলে আমি কি করে খাই!আর,মা শুনলে রাগ করবে!
আমি অরূপকে জানি!ওর মন কতটা ভালো জানি।তাই,বুঝলাম আমার জন্য ওর চিন্তা।তাছাড়া আমাকে রেখে খেয়েছে শুনলে আন্টি আস্ত রাখবে না ওকে।আর আমি জানি ও কতটা পেটুক।ক্ষুধা একদম সইতে পারে না।
ওর সাথে খেতে গেলাম।আন্টি ফোন করলেন।সব বললাম।আবার হাসপাতালে আসলাম।অনিদার পরিবারের সবাই এসেছে।
বুঝলাম কতটা আদরের উনি।জ্ঞান ফিরলে সবাই দেখতে গেলাম।সবাই বের হয়ে গেল আস্তে আস্তে।আমিও বের হতে গেলাম।অনিদা বাচ্চাদের মতো আমার আঙুল ধরে রেখেছে হাতে।
আমি তাকালাম।উনি মুচকি হাসলেন।
সমস্ত শরীর আমার শিউরে উঠলো।
এই প্রথম অনিদাকে সেভাবে ভালো লাগলো।
উনি বললেন,’কি দেখছো?’
-কিছু না তো!
-আমি কিন্তু উত্তর পেয়েছি।তুমি যখন রাস্তা ভরা লোকের মাঝে আমার মাথা কোলে নিয়ে কাঁদছিলে,এমবুলেন্সে যখন আমার মুখে তোমার চোখের জল পড়ছিলো,তখন উত্তর পেয়ে গেছি।তুমি আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো।তাইতো,আমার জন্য সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকো।কখন কে আমার ক্ষতি করে!অণু!আমি ভালো হয়ে যাবো।আর রাজনীতি করবো না।তুমি শুধু একটু ভালোবেসো।
ওই অসুস্থ মানুষটাকে আমি কি বলবো?
আমিশুধু একটু হেসে বাইরে এলাম।
অরূপের সাথে ফিরলাম।
আজ আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।অনি দা কে কি ভালোবাসি?যদি বাসি তবে আর নাটক নয়।
এদিকে অরূপ তখন থেকে কথা বলে যাচ্ছে কার সাথে যেন!
আমি জিজ্ঞেস করলাম যে কার সাথে কথা বলছে!
বললে যে অরিত্রিকার সাথে।
কি রোমান্স নিয়ে কথা বলছে!
মেয়েটা অনেক সুন্দর!কিন্তু,আজ আর অরূপকে মারলাম না!বরং,খুব কষ্ট হচ্ছে।অরূপদের বাড়ির কথা মনে হচ্ছে।ও তাহলে অরিত্রিকাকে ভালোবাসে?.
মনে হচ্ছিলো,আন্টি অরিত্রিকাকে ওভাবে ভালোবাসবেন।আঙ্কল অমন করে মজা করবেন!ভাবতেই কান্না পেলো।আর অরূপ!
কখনো আমাকে ছোঁয়নি।সে সম্পূর্নরূপে হবে ওই মেয়ের!
আমার এতো খারাপ লেগেছিলো কেন সেদিন?কারণ,আমি যে অরূপকে ভালোবাসতাম!গাধাটাকে।তাইতো অনিদার কুলভাঙা ভালোবাসাও আমাকে টলাতে পারে নি।
ক্যাম্পাস এলাকায় আসার পর শুনলাম কি যেন সমস্যা হয়েছে।ক্লাস অফ কাল থেকে।পরদিন বাসায় যাবো।অরূপদের বাসা হয়ে।অনিদাকে আর দেখতে যাবো না।কি দরকার উনাকে কষ্ট দিয়ে!উনি তো সত্যি ভালোবাসতেন আমাকে!কিন্তু,অরূপকেই বা কি করে বলি!
অরূপ এর কথা-
অণুকে সাথে নিয়ে বাড়ি এলাম।অণু এবার মা বাবার জন্য কাপড় নিয়ে এসেছে।পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।ওর দেখাদেখি আমিও করলাম।মা বাবা কে এত খুশি খুব কমই দেখেছি।অণু শুধু আজ রাত এখানে থাকবে।
মা আর বাবা মিলে এমন বাচ্চাদের মতো সুরু করলেন যে আমার লজ্জা লাগতে শুরু করলো।অণু যেন সত্যি আমার বউ।
অনেক মজা হলো সারাদিন।বাবা বললেন,’আজ রাতে ওকেে বেশি জাগিয়ে রাখবি না!’
অণু হেসে আমার দিকে তাকালো।
আমার সারা শরীরে যেন আগুন জ্বললো।আজ রাতে ওকে সব বলবো।ওকে যে ভালোবাসি।
রাতে দুজন ঘুমুতে গেলাম!
চুপচাপ আছি।
অণুকে বললাম,’তোমাকে একটা কথা বলবো!’
-বলো।
-কিভাবে যে বলি!
-বলো।অরিত্রিকার কথা বাসায় বলতে হবে!
-আরে ধুর!ওটা তে তোমাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যে আমি তোমার কে?
-তাই না?বুঝেছি আমি।
-কি বুঝেছ?
-অরূপ!আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারি না।
-তাহলে আমার বাবার গাধা ছেলেটার বউ হও!
-এটা যে মজা তুমিও জানো আমিও জানি!
-আমার কাছে মজা নয়!আমি তোমাকে সাতজন্মের মতো গ্রহন করতে চাই।
অণু মনে হয় কাঁদছে।
-এই বোকা!কাঁদছ কেন?
-ভাবছি কত সাধনার ফলে তোমাকে পাওয়া যায়?
-আমার সৌভাগ্য যে তোমাকে পেয়েছি!
-বেশ!তবে আমার একটা কথা রাখতে হবে!
-কি?
-তুমি আমি যে সম্পর্কেই বাঁধা থাকি,কখনো কাউকে ভুল বুঝবো না!আর,তুমি বিয়ের কথা উঠলে,একটা সুন্দরী,ভালো মেয়েকে বিয়ে করবে।যে বাবা মা কে অনেক ভালোবাসবে।আমার মতো করে!বলো রাজি?
-তুমি মানুষ না কি?নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে দুইভাগ করতে চাইছ!
-মানুষ বলেই অর্ধেকের লোভ সামলাতে পারলাম না!না হলে পুরোটাই দিয়ে দিতাম!যাকে এত ভালোবাসি তার জীবনে এতটুকু খুঁত হতে দিতাম না।আর,বাবা মা কে আমি অনেক ভালোবাসি।তুমি বিয়ে না করলে উনারা কষ্ট পাবেন!
এবার আমি জড়িয়ে ধরলাম অণুকে।ওর কাণের কাছো মুখ নিয়ে বললাম,’তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য।তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে!তবে,তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না!’
এরপর ওর কপালে চুমু দিলাম।প্রথমবারের মতো এবং শেষবারের মতো আমাদের মিলন হলো।
সারারাত,আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো অণু।
সকালে দুজনই গোসল করে নাশতার টেবিলে গেলাম।বাবা পত্রিকা থেকে মুখ তুলে বললেন,’আমার ছেলেটার তাহলে বুদ্ধিসুদ্ধি হয়েছে!গোসল করতে শিখেছে!’
অণু বললো,”বাবা!এসব বললে কিন্তু,আজকে মাকে বলে তোমার সারাদিনের চায়ের বরাদ্দ বন্ধ করবো!’
-ওরে বাবা!রক্ষে করো।হ্যা গো!(মাকে) তোমার একলার শাসনে হচ্ছিলো না!এবার আরেকজনকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়েছ?
মা বললে,’একটাকে সামলাতে পারি না।তাই দুজনতে দুজন সামলাবো!
দুপুরের আগে আগে অণুর ট্রেন।ওকে রাখতে গেলাম স্টেশনে।বাবা মায়ের আবার আবেগি সিন।অণুর তাঁদের পায়ে প্রণাম করা।স্টেশনে অনেক ভিঁড়!
এরমাঝেই ট্রেন এলো।জানালা দিয়ে ও তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।ইচ্ছে হলো,ওকে জড়িয়ে ধরে থাকি।যেতে না দিই।ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট দুটো স্পর্শ করে থাকি।কিন্তু,এসব সম্ভব নয়।ট্রেন ছেড়ে দিলো।ও আকুল হয়ে কাঁদছে।ওর পাশের সিটের ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছেন।আমার চোখেও জল এলো।
ট্রেন অদৃশ্য হলো।
ও বাসায় যাওয়ার পর একটা মাত্র এসএম এস করলো।’আমি বাড়ি পোঁছেছি।তোমাকে,বাবা মাকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিলো না।কি যেন ফেলে এসেছি শান্তি পাচ্ছি না!তুমি যেন ক্ষুধা নিয়ে থেকো না আমার কথা শুনে।আমি মিথ্যে বলেছি।তোমার ভুড়ি থাকলেই আমার ভালো লাগবে।তুমি যেমনি হও।তুমি তো আমার!’
এইটুকুই ছিলো এস এম এস।এরপর,রাতেই মা দুঃসংবাদটি দিলো।অণুকে সাপে কেটেছে!মারা গেছে।
আমি তখন এতটুকু কাঁদি নি।অথচ মা বাবা কেঁদেছে অনেক।মা আমাকে নিয়ে চিন্তায় পড়লেন।কেন কাঁদছি না।
পরদিন আমরা গেলাম অণুদের বাড়ি।
বাড়িভর্তি মানুষ সবাই কাঁদছে।মাকে জড়িয়ে অণুর মায়ের কি কান্না!আজও চোখে ভাসে।
অণুকে দামী খাটে রাখা হয়েছে।দামী হালকা গোলাপী কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা!মুখ নীল হয়ে আছে বেদনায়।ফর্সা হাতের যেটুকু বের হয়ে আছে সম্পূর্ণ নীলাভ।না জানি কোন বিষে কত কষ্ট পেয়েছে আমার প্রাণপাখিটা।এবার আমার কান্না পেলো।
ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম!মা বাইরে থেকে আসলেন ওই ঘরে!বাবাও!আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘আমি কি নিয়ে থাকবো!ও মা!তুমি বলো!তোমরা আমাদের নিয়ে মজা করতে!কখন যে সত্যি আপন হয়েছি দুজনের কেউ জানতাম না!যখন জানলাম তখন স্রষ্টা সে সুখ কেড়ে নিলেন!ও মা!বল না।মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য আপন করে দিয়ে কেন চিরতরে কেড়ে নিলেন!উনি এমন কেন!’
আমার মনে আছে বাবা এগিয়ে গিয়ে অণুর কপালে চুমু দিলেন!
মুখটা বেদনায় নীল।কিন্তু,কোথায় যেন প্রশান্তি!যেন হাসছে!বাবা বললেন,’আমরা ভেবেছিলাম তোরা শুধু ভালো বন্ধু!আর তোদের খেপাতাম এজন্য যে আমরা তোদের বন্ধু হয়ে গিয়য়েছিলাম।এর বাইরে কিছু ভেবে নয় বাবু!যদি জানতাম এমন হবে,তবে তোদের কি আর এসব বলতাম।তোরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছিস।তোর মায়ের কথা জানি না।তবে অণু আমাকে গতকাল সকালেই বলেছে।তোর প্রতিজ্ঞার কথাও বলেছে।ও কোনও সত্যি গোপন করে নি।আমি তোর মাকে এসব বলি নি।কিন্তু,আমার কোনও আপত্তি ছিলো না।অণুকে তখনই মন থেকে মেনে নিয়েছিলাম।কিন্তু,আমার তো নাটক করা অভ্যেস!ভাবলাম,এটা গোপন রেখে একটু মজা নেই!কিন্তু,অণুটা এমন নাটক করলো যে আমার নাটকে আর অভিনয় করার জন্যই থাকলো না!’
আমি এরপর বাবাকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছিলাম।
তারপর,ওর লাশ শ্মশানে নেয়া হলো।একটু একটু করে সোনার মত দেহ পুরে যেতে লাগলো।আমি বসে পড়েছিলাম।বাবা আর অণুর বাবা আমার দুই পাশে।অণুর আরো একটা ভাই আছে।ওর বাবা তাই হয়তো সান্তনা পাচ্ছেন!কিন্তু!আমার যে কেউ রইলো না।আবার চোখে জল এলো!
তুমিতো এখন পরপারে।তুমি কি জানো যে তোমার নীল মুখ কতটা সুন্দর দেখাচ্ছিলো।ইচ্ছে হচ্ছিলো,সারাজীবন তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিই!
সাতজন্মের বাঁধন আমাদের।পরজন্মেও আমার হয়ো।শুধু দোহাই!কয়েকঘন্টার জন্য নয়!আজীবনের জন্য।
অনিমেষের কথা-
অণুর মৃত্যুসংবাদ জানতে পারি অরূপের কাছে থেকে।আমি সুস্থ হওয়ার পর সে আমাকে বলে।
যারা বলে সমকামীরা ভালোবাসতে জানে না তারা জানুক আমাদের কাহিনি।আমরা ভালোবাসতে না পারলে কেন ওর সেই সমাধি দেখে আমার বুক ভেঙে যেতে চাইলো!
আর,অণু!
এ কি ছলনা করলে আমার সাথে?
না হয় আমি বাজে,বখাটে ছেলে!
কিন্তু,ভালোবেসেছিলাম তোমাকে অণু!কতটা তা তুমি জানো!আমার পুজা তোমার কাছে বিরক্ত লাগতো!রাগ করে,অবহেলা করে তা ফেলে দিয়েছ।কিন্তু,আমার রক্ত দেখে তো ভালোবেসেছিলে।কেন শেষবেলাতে মধুর হাসি দিয়ে আমার মনে আশা জাগালে।বাঁচার স্বপ্ন দেখাখালে।ওই হাসি যে আমার গলাতে ফাঁসির দড়ির মতো বিঁধছে!তোমার কষ্ট হচ্ছে না?তোমার অনিদার জন্য।কেমন করে আমাকে রেখে গেলে তুমি? আমি কি নিয়ে থাকবো!
পরিশিষ্ট-
কৃষ্ণ ভুলবার পর রাধা কে যেমন কেউ মনে রাখেননি,হতভাগীর কি হয়েছিলো কোথাও তা স্পষ্টভাবে খুঁজে পাই না,তেমনি মৃত্যুর পর্দা অণুকেও ভুলিয়েছে।অরূপের স্নিগ্ধ ভালোবাসা কিংবা অনিমেষের জোয়ার জাগানো প্রেম দুটোই হারিয়ে গেছে।যার অস্তিত্ব নেই তেমন মানুষের প্রতি আর কতবছর ভালোবাসা উৎসর্গ করা যায়।অরূপ কথা রেখেছে।বিয়ে করেছে।ফুটফুটে মেয়ে আচে।শুধু অনুর মাথায় হাত দিয়ে করা কথা ভুলে গিয়েছে।অণুকে ভুলে গিয়েছে আজ।ভয় নেই!ও আগেই মরে গিয়ে জ্বালা জুড়িয়েছে!অনিমেষও বিয়ে করেছে।দুটো ছেলের বাবা!
শুধু অণু ভুলতে পারে না!সে পরজনমের আশায় কেঁদে বেড়ায়!অরূপ যে মনে মনে চেয়েছিলো পরের জনমে যেন আজীবনের জন্য পায়!হায়রে পোড়া মন!সে ভুলেনি আজও অরূপকে!
———–
উৎস: অন্যভুবন