ভুলে যাওয়া

অরন্য রাত্রি

ঘরটি অন্ধকার। খালি টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালানো। পিনপতন নীরবতা।অন্ধকারে একটি ছেলে কে খুব ভালমতো পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে সাদি।আজ ই ছেলেটার সাথে চ্যাট হয়েছে। দু জনই শুধু ১ রাতের জন্য পরিচিত হয়েছে।রাত শেষ হলে যে যার নিজের জগতে চলে যাবে। আর কোন সম্পর্ক থাকবে না।কিন্তু এত চেনা লাগছে ছেলে টা কে………

ক্লাস টেন এ যখন পড়তো তখন সাদি বুঝে গিয়েছিল সে সমকামি। তার বন্ধুবান্ধব রা যখন মেয়ে দের নিয়ে গল্প করতো তখন সে যোগ দিতে পারতো না। তার ভাল লাগতো না।সে ডিপ্রেশনে ভুগতে লাগলো । হটাত করে তার অভিনয় এর শখ জাগলো। ভর্তি হল একটি অভিনয় শেখার স্কুলে।অমিতের সাথে সেখানেই পরিচয়।সাদি সুখ দুঃখের সব কথাই অমিতকে বলতো।অমিতও তার সব কথা বলতো । মাঝে মাঝে সাদির সন্দেহ হতো যে অমিত গে ।সাদি অমিত কে ভালবাসতে শুরু করলো। কিন্তু অমিত তো আর গে নয়। একদিন সাদি একটি গে সাইটে অমিতের ছবি দেখলো । আইডি ছিল লোনলি সিগাল। সাদি প্রথমে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। তারমানে অমিত গে। সাদি খুব খুশি। সে ঠিক করলো অমিত কে সব বলে দিবে।

সেদিন ই সন্ধায় অমিত তার মানি ব্যাগ হারালো । সারা মাসের হাত খরচ ছিলো । ব্যাঙ্কেও টাকা খুব বেশি নেই।কিভাবে যে চালাবে এই মাস।

সেদিন রাতে একটি মেসেজ আসলো অমিতের মোবাইল এ

হাই। আমি কনা । আপনার মানি ব্যাগ আমার কাছে। বাস এ কুড়িয়ে পেয়েছি।একটি প্রশ্ন ভাই।আপনি গে? কালকে সন্ধায় আমি ক্যাপ্টেইন ওয়ার্ল্ড মহাখালি তে থাকবো। দোতালায় একটি লাল সালওয়ার কামিজ পরে থাকবো ।আপনি এসে আপনার মানি ব্যাগ নিয়ে যাবেন।

অমিত ভাবলো এটা কোন চক্রান্ত। সে গে এইটা কিভাবে জানলো ? তখন ওর মনে পড়লো গে কমুনিটির পিকনিক হচ্ছে আগামী শুক্র বার। সেই টিকেট ছিলো মানি ব্যাগে । ওখানে নিশ্চয়ই লিখা ছিলো। একবার ফোন দিলো কনার নাম্বারে কিন্তু ফোন ধরলো না কনা। সাদির সাথে ব্যাপারটা নিয়ে ডিসকাস করা উচিত । কিন্তু ওকে বলা ঠিক হবে না। মেয়ে টা জানে যে সে গে। তার থেকে না জানানই ভাল।

অনেক চিন্তা করলো অমিত। সে যাবে। এত গুলো টাকা । এতো ভয় পাওয়ার তো কিছু নাই। ক্যাপ্টেনস ওয়ার্ল্ড এর ভিতর তো আর কিছু করতে পারবে না।

বুক ভরা সাহস নিয়ে কাপ্টেনস ওয়ার্ল্ডে ঢুকলো অমিত। কিন্তু সালওয়ার কামিজ পরা কোনও মেয়ে কে দেখতে পেলো না।একদম শেষের দিকে লাল শার্ট পরা একটি ছেলে বসে আছে। ভাল করে দেখলো । আররে এটা তো সাদি। হায় হায়। সব জেনে যাবে। পালানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু তার আগেই অমিত কে খপ করে ধরে একদম শেষ প্রান্তে নিয়ে গেলো সাদি।

এই নেন আপনার মানি ব্যাগ। এরপর সাবধানে রাখবেন। সাদি মানি ব্যাগ বের করে অমিত কে দিলো

তোর কাছে গেলো ক্যামনে ।

ক্যামনে আবার চুরি করেছি মিস্টার লোনলি সিগাল।

ভয় পেলো অমিত। তুই তো দেখি আমার আই ডি জানিস।

জানি। এখন বল তুই কত টাকা দিলে আমি কথাটা গোপন রাখবো? সিরিয়াস মুখ করে বললো সাদি

তুই আমার কাছ থেকে টাকা নিবি?

হুম নিবো।আমার টাকার দরকার । বডি ম্যাসাজ করানোর জন্য থাইল্যান্ড যাবো।

আমার কাছে টাকা নাই।

যোগার কর। নাহলে আমার কিছু করার নাই।

কান্না চলে আসলো অমিতের গলায়।আমি ভাবিও নাই তুই এমন।

এইবার সাদি ভয় পেয়ে গেলো। বললো, আরে তুই আমারে এমন ভাবিস? আমি তোর কাছে টাকা নিবো ?আমি তো ফান করসি।

এইবার অমিত হেসে দিলো

আমিও ফান করসি। হি হি । টিট ফর ট্যাট। এখন বল তোর আইডি কি?আমি আগেই সন্দেহ করতাম তুই কতি।এখন তো দেখি কতি না। রাম কতি।

ও নিজেরে পান্থি ভাবিস? লাত্থি খাবি

আমার মানি ব্যাগ তুই চুরি করসিস এর জরিমানা হিসেবে আমারে কি দিবি বল ?

কি চাস?

আমাকে শপিং করায় দিবি। আইস্ক্রিম খাওয়াবি। চাইনিজ খাওয়াবি। লং ড্রাইভে নিয়ে যাবি …আপাতত এগুলো ।

তাহলে আবার তোর মানি ব্যাগ চুরি করতে হবে

সেই দিনের পর থেকে তারা দুজন আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলো।মুভি দেখা থেকে শুরু করে লংড্রাইভ কোনও কিছু বাদ দিলো না। অমিত মুভি দেখতে খুব ভালবাসে। বাংলা মুভি থেকে শুরু করে ইংলিশ মুভি কোনটাই বাদ গেলো না। টাইটানিক দেখতে গিয়ে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো অমিতের। পরে সাদি আইসক্রিম খাওয়ায় কান্না থামালো।আর বই কিনার জন্য অমিত নীলক্ষেত আর নিউমার্কেট চষে ফেলে।আর পিছন পিছন দৌড়াতে হয় সাদির।

আবার সাদি আর্ট ফিল্ম দেখতে পছন্দ করে। আর অমিত বাধ্য হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে এসব মুভি দেখে।সাদি এর বাসায় অমিতের অবাধ বিচরণ । কিন্তু অমিতের বাসায় সাদি কখনই যায় নাই। কথা আছে সামনে যাবে। অমিতের মা নাকি খুব ভাল পিঠা বানায়। সেই পিঠার দাওয়াত ।

তাদের একটি মজার ব্যাপার আছে। ২ জনই আইস্ক্রিমের পাগল । ঢাকা শহরে এমন কোন আইসক্রিম পারলার নাই যেখানে তারা যায় নাই। অমিতের শখ নানা দিবস পালান করা যেমন পহেলা বৈশাখ , পহেলা আষাঢ়, পহেলা ফাল্গুন।এসব দিনগুলো তে নতুন পোশাক কিনে আর সাদি কে সেগুলো পরতে বাধ্য করে। তারপর গাড়ি করে একদম ঢাকা শহরের বাইরে।

সাদি খুব ভালো বেহালা বাজায়। যখন বেহালায় করুন সুর তুলে সাদি,তখন অমিত বিরক্ত হয়।

আমার এই কান্নার সুর ভালো লাগে না। অন্য সুর বাজাও। আমার কথা হল সবসময় খুশি থাকবো । সব পরিস্থিতিতে ।

সেটা কি সম্ভব?আমরা মানুষ কষ্ট তো পাবই।

দূর মুড অফ করে দিবি না। এই সব লেকচারের চেয়ে তোর বাজনাও ভালো ।

বৃষ্টি নামলেই অমিত বেশি রোমান্টিক হয়ে যায়।সাদির বাসার ছাদে বৃষ্টিতে ভিজে। সাদি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে। অমিত টান দিয়ে নিয়ে আসতে চায় সাদি কে। সাদি যায় না

কি জিনিস যে মিস করছিস তুই। একদিন বুঝবি।

তুই ভিজ। আমার ঠাণ্ডা লাগবে।

কতি দের মত কথা বলিস না। কথায় কথায় ঠাণ্ডা

ওকে আসতেসি

না না আসিস না। থাক ওখানে ।

কেন?

তোর ঠাণ্ডা লাগবে।

তখন যে বলছিলি?

আরে এমনি বলেছি।

অমিত যে সাদির কোন কষ্ট দেখতে পারে না। মাঝে মাঝে ভাবে

আমি কি সাদির প্রেমে পরেছি?

আর সাদিও ভাবে একি কথা।

এর নাম যদি ভালোবাসা হয় তাহলে এই পৃথিবীতে ভালবাসার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নাই।

একদিন রাতে অমিত তার বাসায় আসলো । বললো যে এক রাত থাকবে।

তুই এত রাত্রে?

আমার একটু সমস্যা হয়েছে বাসায়। তোর বাসায় আজকে রাত টা থাকবো। তোর সমস্যা হবে না তো ?

আরে কিসের সমস্যা। খাইসিস কিছু?

না খাই নাই।

আয় খাবি।

ক্ষুধা নেই।

এক চড় মারবো ।সমস্যা সবার বাসাতে হয়। এটার জন্য খাওয়া বন্ধ করতে হবে না।

টেবিলে বসে অল্প একটু খেলো অমিত।সাদি বুঝলো এর বেশি খাবে না। আর জোরাজোরি করলো না। সাদির ঘরে এলো ২ জনেই। দরজা আটকানো।

এখন বল কি হয়েছে?

কিছু না।

আমাকেও বলবি না?

বলতে তো হবেই। তার আগে বল তুই আমাকে একটি টিউশনি জোগাড় করে দিতে পারবি?

অমিত বাবা মায়ের প্রিয় সন্তান। এখনো তার বাবা মা তাকে নিয়ে আহ্লাদ করে। কোথাও গেলে একশো বার করে ফোন আসে। কিছু না চাইলেও জোর করে তা দেয়া হয়। যেমন গত মাসেই তাকে একটি স্মার্ট মোবাইলে কিনে দিয়েছে তার বাবা। তার একটি স্মার্ট ফোন থাকা সত্বেও। অবশ্য অমিত কম যায় না।

সে পড়ে খুব ভালো ভার্সিটি তে। সময় মত বাসায় যায় । দেরি করে না কখনো । সিগারেট মদ্যপানের অভ্যাশ নাই। এক কথায় একটা ভালো ছেলের যা যা গুন থাকা দরকার সব আছে। সেই অমিত টিউশনি চাচ্ছে ?

এই তোর মাথা খারাপ হয়েছে ?

তোকে বাসায় টিউশনি করতে দিবে?

হুহ বাসা।

কি হয়েছে খুলে বল তো আমাকে

অনেক কিছু হয়েছে। এখন বলতে ইচ্ছা করছে না। তারপর সে সাদি কে জড়িয়ে ধরলো।

আমার না অনেক ঘুম পাইসে। একটু ঘুমাই।

বাতি বন্ধ করে সাদি বললো

তুই ঘুমা । আমি পাশের ঘরে টিভি দেখছি

না তুই যাবি না । আমার পাশে বসে থাক।

আরে তুই ঘুমালে আমি এখানে বসে থেকে কি করবো?

আমার ভয় লাগে।

ওকে বসছি

না থাক ঘুমাবো না। কথা বলবো ।

বার বার করে অমিত মোবাইল চেক করছে।কেউ ফোন দিল কিনা দেখার জন্য

কেউ একবার ও ফোন দিলো না। আমি এতই খারাপ।

অমিত আর থাকতে পারলো না। কান্নায় ভেঙে পড়লো ।

আমি কোথায় আছি, কেমন আছি সেটা জানারো তাদের দরকার নেই?

সাদিও অবাক হোল যে বাপ মা দিনে দশবার করে ফোন সেই বাপ মা আজ একবারের জন্য ফোন দিলো না।

অমিত কেন জানি অস্থির হয়ে যাচ্ছে । এক জায়গায় বসে থাকতে পারছে না।সমানে পায়চারী করছে।

তুই বসে আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বল।

কি বলবো?

যা ঘটেছে তাই

কি ঘটেছে ?

আমার বাপ আমাকে ত্যাজ্য পুত্র করেছে।যে মা কোন দিন আমার গায়ে হাত তুলাতো দুরের কথা কোন দিন বকা দেয় নাই সে আমাকে চর মারসে। আর আমার সুযোগ্য বড় ভাই যে কিনা ফেল করতে করতে পাশ করে সে আমাকে বেল্ট দিয়ে মারসে। বেল্টের দাগ আমার পিঠে আছে। আমি শুধু বাংলা সিনেমাতেই দেখছি এক ভাই আরেক ভাই কে বেল্ট দিয়ে মারে। আমি বাস্তবে তা দেখিও নাই শুনিও নাই।

সাদি কিছুখন চুপ করে থাকলো । তারপর বললো

কেন এমন হোল ? তুই যদি আমার সাথে শেয়ার করতে চাস তাহলে বলতে পারিস

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অমিত বললো

এই কথাগুলো তুই ছাড়া আর কাকে বলবো ?আমি নিজেই এতক্ষণ বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।আমার এখনো দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।নিজের বাবা মা কে আপন মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সৎ বাবা মা । আর ভাই সে তো মানুষের পর্যায় পরে না। আমাকে বেল্ট দিয়ে মেরে এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে বেড় করে দিয়েছে সে। এত রাতে আমি কই যাব তা একবারো ভাবে নাই।

কিন্তু এমন কেনো হয়েছে ?

কারন আমি সমকামি

কি বলিস? এই ব্যাপারটা উনারা জানলো কিভাবে?

সাগর জানিয়েছে

সাগর অমিতের এক্স বয় ফ্রেন্ড । তার সাথে অমিতের ৩ মাস সম্পর্ক ছিলো ।অমিত তাকে ভালোবাসতো কিন্তু সাগর সুযোগ সন্ধানি ছেলে। তার একমাত্র কাজ মানুষ কে ব্ল্যাক মেইল করা।ব্ল্যাক মেইল না করলে টাকা আসবে কোথা থেকে। বাজে ফ্যামিলির ছেলে। লাথি গুঁতা খেয়ে বড় হয়েছে মামার কাছে। টাকা লাগলে চুরি করতো।সেই ছেলেতো এমন করবেই। টাকা ধার চাইছিলো ।আমি না করে দিলাম। তাতেই সে হুমকি দিলো বাবা মা কে সব জানিয়ে দিবে।আমি ভাবতেও পারি নাই যে সে রিয়েলি বলবে। বলে কিনা তার কাছে একটি ছবি আছে সেটা দিয়ে প্রমান করবে যে আমি গে। সে টাকা চায় ।টাকা দিতে পারলে ভালো আর না দিতে পারলে আমার বাবা মা সব জেনে যাবে। আমি ভাবলাম তার কাছে কোন প্রমান নাই। ছবির ব্যাপার টা পুরোই মিথ্যা। সে বললেই তো আর সবাই বিশ্বাস করবে না যে আমি গে। প্রমান লাগবে। আমি বললাম তোমার যা খুশি করো ।তোমাকে আমি একটা টাকাও দিবো না। কিন্তু আমি ভাবতে পারি নাই যে সে আমাদের চ্যাটের স্ক্রিন শট নিয়ে ভাইয়ার মোবাইলে পাঠাবে । তারপর ভাইয়া বাবা আর মা কে সব জানালো । তিন জন মিলে আমাকে চেপে ধরলো। আমি আর অস্বীকার করতে পারলাম না। তারপর থেকে এই অবস্থা।

মানুষের বাবা আর মা কে সবচেয়ে বেশি দরকার হয় তার দুঃসময়ে। সে অবস্থায় বাবা আর মা যদি মুখ ঘুরিয়ে নেন তখন কেমন লাগবে। আর এখানে তো শুধু মুখ ফিরানো নয় উল্টো অত্যাচার করা। গে হলে বাবা মার সমস্যা কি? সে তো কারো ক্ষতি করছে না। শুধু সমলিঙ্গের একজন মানুষ কে ভালো বাসছে। । যেখানে তার ভাই কয়েকদিন পর পর গার্ল ফ্রেন্ড চেঞ্জ করে তখন সেটা দোষের নয়? একটা মানুষ কে ঠকানো কি গে হওয়ার থেকে কম অপরাধ? বলা হয় মানুষের মন ভাঙ্গা মসজিদ ভাঙ্গার সমান। তার বাবা যখন সুযোগ পেলেই অল্প বয়স্ক মেয়েদের সানিধ্য পেতে চায়, মেয়েদের বিশেষ অঙ্গের দিকে কুরুচি পূর্ণ ভাবে তাকায় তখন দোষ হয় না?

সমাজের বিপরীতে কেউ যেতে পারে না। কিন্তু মা এর কথা ভিন্ন। এতদিন অমিত জানতো ছেলে যতই দোষ করুক মা কখনই ছেলে মেয়ে দের কে ত্যাগ করতে পারেন না। কিন্তু আজ কি হলো ? ভাইয়া তাকে এমন ভাবে মারলো মা একবারো থামালো না। যেই মা কোথাও আঘাত পেলেই ছুটে আসে অস্থির হয়ে সেই মা তাকে ব্যাথা পেতে দেখেও মুখ ঘুরিয়ে রাখলেন।সব কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু মাকে পর হতে দেখলে তা সহ্য করা যায় না। মানুষের কাছে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হলো মায়ের কোল । সেটাও আজ সে হারালো । তার কারন হলো সে গে।

সাদি জানে না মা বাবা জানলে কি হতো । কিন্তু সেও তো বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত ।তার বাবা মা বেঁচে নেই । সে অমিত কে বললো

তুই এখন ঘুমা। কালকে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

কিন্তু অমিত ঘুমাতে পারছে না। পাশে শুয়ে সাদি দেখলো সব ই।কখনো সে কেঁদে উঠছে। কখনো বিছানা থেকে উঠে পায়চারি করছে। সকালে নাস্তা খেতে খেতে সাদি বললো

চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

আমার ভালো লাগছে না।

আরে চল দেখবি ভালো লাগবে।

চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

আমার ভালো লাগছে না।

আরে চল দেখবি ভালো লাগবে।

না না যাবো না। বাসার অবস্থা যে কি। এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ নিলো না।

নিবে। একটা দিন যেতে দে। আঙ্কেল আনটির রাগ পড়তেও তো সময় লাগবে। তখন দেখবি নিজেই ছুটে আসবে খোঁজ নিতে।

তাই যেন হয়।

এখন চল ঘুরে আসি।

কই যাব?

শপিঙে। তোর সবচেয়ে প্রিয় কাজ।

আমার কাছে এক টাকা ও নেই।

আমি দিবো ।

তোর টাকা কেনো আমি নিবো ?

ওকে নিস না। আমি শপিং করবো। তুই পছন্দ করে দিবি।

সেদিন সারাটা দিন তারা যমুনা ফিউচার পার্কে কাটালো । এক গাদা শপিং করলো ।তারপর ব্লক ব্লাস্টার সিনেমায় মুভি দেখলো ।এখন সেই আগের অমিত ফিরে এসেছে । সেই হাসি রশিকতা ফাজলামি। সাদির মনে হলো এই ছেলে কে কোনও দিন দূরে যেতে দিবে না। কষ্ট পেতে দিবে না।বুকে আগলে রাখবে

রাতে এক ই বিছানায় শুলো তারা । বড় বিছানা । ২ জনের সাথে ২ জনের গা ঘষাঘষি হচ্ছে। তাতে ২ জনের কারোরই কোন সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হল না। দু জন দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছে ।২ জনেই জেগে। কারো ঘুম আসছে না। হঠাৎ সাদির আমন্ত্রনে অমিত রেস্পন্স করলো। ঘুরে ফিরে সাদির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো।সাদিও অমিত কে বুকে চেপে ধরে চুমু দিতে লাগলো । তারপর যা ঘটার তাই ঘটলো। সারা রাত চললো খেলা। শরীর নিয়ে খেলা। শেষ রাতে ঘুমাতে গেলো ২ জন ।

সকালে উঠে অমিত দেখলো তার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। ভাইয়া পাঠিয়েছে ।

তুই যেখানেই থাকিস তারাতারি চলে আয়। মা অসুস্থ।

অমিত সেই মেসেজ পেয়ে তক্ষুনি বাড়ি চলে গেলো।

সাদি আজকে অনেক খুশি।সে তার ভালবাসার মানুষ কে খুঁজে পেয়েছে।অমিত তার ভালবাসার মানুষ ।সারা দিন অনেকবার ফোন করলো । কিন্তু ধরলো না। পরের দিন গেলো । কোন খোঁজ নাই। ফোন ও বন্ধ । সাদি কখনো অমিত এর বাসায় যায় নাই।ইন্টারনেট অমিত ব্যাবহার করে না। কোন বন্ধুর নম্বর জানা নাই। কোথায় খোঁজ নিবে। প্রচণ্ড চিন্তা হচ্ছে। হটাত মনে হলো রিয়াদের কথা। ওদের অভিনয় স্কুল এর ম্যানেজার।ওর কাছে সবার ঠিকানা ছিল । বিকেলই রিয়াদের সাথে দেখা করলো। ঠিকানা পেলো। আর দেরি করলো না সাদি

এলিফেন্ট রোডে অমিতের বাসা। অনেক কষ্টে খুজে পেলো। দোতালা বাসা । এক তালায় ভাড়া দেয়া। দোতালায় অমিত রা থাকে। সাদি গিয়ে দেখলো দরজায় একটি বড় তালা ঝোলানো ।নিজে গিয়ে সাদি এক তলার একজন বয়স্ক লোক কে জিজ্ঞেস করলো চাচা আমি অমিত এর বন্ধু। অমিত রা কথায় গেছেন বলতে পারেন?

তুমি ওর বন্ধু অথচ জানো না?

চাচা আমি তো কিছুই জানি না।

অমিত আত্মহত্যা করেছে। বাড়ির সবাই দেশের বাড়ি গিয়েছে তাকে দাফন করতে।কাল সন্ধায় আত্মহত্যা করেছে। বাবা মা এর একমাত্র ছেলে। সারা জীবন কত আদর করে মানুষ করেছে। সারা রাত ছেলেটার কান্না আর চিৎকার শুনলাম। ওর ভাই টা একটা অমানুষ। আমার তো সন্দেহ হয় সেই ছেলেটা অমিতকে মেরে ফেলেছে।

হটাত উপর থেকে কান্নার আওাজ পেলো সাদি। অমিতের বাসার উপর তলা থেকে একজন মানুষের চিৎকার শোনা গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন।

বাবা আমাকে মাফ করে দে। তুই ফিরে আয় বাবা। আর আমি তোকে কিছু বলবো না।বাবা ফিরে আয়। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না বাবা।তুই অনেক ব্যাথা পেয়েছিস?আমি কিভাবে তা সহ্য করলাম। দেখি তোর কোথায় ব্যাথা লেগেছে? আমি তোকে আদর করে দিবো ।তোর আর কোন ব্যাথা থাকবে না। আমি আর তোকে কষ্ট দিবো না। সমাজ উচ্ছন্নে যাক। তোকে নিয়ে আমি দূর দেশে চলে যাবো । যেখানে কেউ তোকে কষ্ট দিবে না। কেউ তোকে মারবে না। তবুও ফিরে আয়।

উনি কে?

অমিতের মা। উনি পাগলের মত হয়ে গেছেন তাই উনাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সাহস হয় নাই।

জানিস আমি ওর জন্য পিঠা বানাবো । চালের গুড়ো , নারিকেল , গুর সব এনেছি।তুই একবার আমার হাতের পিঠা খাবি বল? এক বার কথা বল বাবা। তুই কথা না বললে কিন্তু আমি দরজা বন্ধ করে দিবো । আর খুলবো না। বাবা একবার কথা বল। আমার প্রান টা জুড়াক , দেখ তোর দেয়া কানের ফুল পড়েছি। তাও কথা বলবি না? আমি তোকে মেরে ফেলেছি…………

না না আমার ছেলে মরে নাই। আমি ওর কথা শুনতে পারছি । ও কাঁদছে। কেন তোমরা তাকে অন্ধকার কবরে নিয়ে রেখেছো? আমার এখুনি যেতে হবে। ছেলে টা কাঁদছে। আমাকে বলছে নিয়ে যেতে । এখুনি আমার যেতে হবে……

সন্তান হারা মায়ের কষ্ট সহ্য করা যায় না।

সাদি এসব কথা শুনে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। চোখ থেকে পানি আটকাতে পারছে না। মনে মনে বলছে তোর সব দায়িত্ব আমি নিতে চেয়েছিলাম। কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি।

বাবা এক গ্লাস পানি খাও। ভাল লাগবে। আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা।

গ্লাস হাতে নিয়ে পানি খেল।

কিছুখন বিশ্রাম নিবে?

না চাচা বাড়ি যাব।

কয়েকদিন সাদি কেমন পাগলের মত হয়ে গেলো । উঠতে বসতে শুধু অমিতের কথা মনে পড়ে। আর কখনো তাকে দেখবে না। ছুতে পারবে না। তার কথা আর শুনতে পারবে না ভাবলেই দম বন্ধ লাগে।আস্তে আস্তে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।

কিন্তু যখন শপিং এ যায়। সে শপিং করতে পারে না। যে সবচেয়ে বেশি শপিং করতো সে যে আজ নাই। যখন বৃষ্টি দেখে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। কেউ তো তাকে বৃষ্টি তে ভিজতে বলবে না। আইস্ক্রিম খেতে পারে না। মুভি দেখা বাদ দিলো। বই কিনতে সে যায় না।বিশেষ দিন গুলো তে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।

শেষ পর্যন্ত সাদি নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য শারীরিক সুখ পেতে চাইলো। ফে্স বুকে এই ছেলেটার সাথে পরিচয় । ২ জন ই ডিপ্রেসড। সাদির বাসায় ২ জন বাতি বন্ধ করে বসে আছে । ছেলেটি ন্যুড। কেউ কিছু বলছে না। একসময় নীরবতা ভাঙলো। ছেলেটি কাঁদছে ।

আমি ভালবাসা হীন সেক্স করতে পারবো না। আই এম সরি।

আর সাদি ভাবছে ছেলেটির কান্না ঠিক অমিতের মতো।

মানুষ ভুলে যায়। একটা খেলনা হারালে একটি শিশু যেমন কষ্ট পায়। আরেকটি খেলনা পেলে সেই কষ্ট চলে যায়। তেমন মানুষ অন্য দের মাঝে নিজের মানুষকে খুঁজে ফিরে। আর কাউকে পেয়ে গেলে আগের মানুষটি কে ভুলতে কতক্ষণ ?

*****(সমাপ্ত)*****

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.