মন দুয়ারির মাঝে

চিন্ময়ের ইতিকথা

বাস্তবতা ও কাল্পনিকার মিশ্রনে

আমাদের ভালোলাগা

…………………………………………………..

১.

ইসস। ফেসবুকে চ্যাট করতেও যে

এত্তো বোরিং লাগে তা জানা

ছিল না। ফেসবুক টা যদি বোরিং

হয়ে যায় তাহলে সময় টা কাটাব কি

করে! সবসময় তো আর ঘোরা যায় না।

বিশেষ করে রাত্রে। রাত্রে যদি

বাসা থেকে বেরুই তাহলে মা

ঝাটা দিয়ে কপাল ঝেরে দিবে।

যদিও আমার কপালে কোন ময়লা

নেই।

বকবক করা বেশি স্বভাব কি না। তাই

সারাক্ষণ বকবক করে চলি। আমার কথা

বলিনি। আর শোনেই বা কি হবে।

একটু পর তো আবার বলবেন “ভাইয়া

আপনার নাম টা যেন কি ছিল!”

এমন গোবর ব্রেনের লোক আমার

কাছে ভালো লাগে না। সরি

তাদের মাথায় গোবর ও নেই। গোবর

থাকলেও পচে সার হত। মাথায় কি

থাকতে পারে?

এই মুর্হুর্তে আমার মনে আসছে না।

মনে পড়লে জানাব।

আচ্ছা নামটা বলি। আমি অভি।

কি হল। ভাবছেন চিন্ময়ের ইতিকথা।

সেই ব্যাটাও না। আমি অন্য অভি।

নারায়ন দেবনাথ। ডাকনাম অভি।

আমি না কি বেশি কথা বলি। আমার

তা মনে হয় না। আমার একটা অভ্যাস

আছে। ফেসবুকে সুন্দর চেহারার

থেকে সুন্দর নামকে বেশী প্রাধান্য

দেই। নাম আবুল কিংবা কাশেম হলে

ভুলেও নক করি না। যদি কেউ নক ও

করে তাহলেও এতটা রেসপন্স করি

না। ফেসবুকে বড় মনের একটা মানুষ

খোঁজি। তবে শিউর। পাব না। তা

তো বাদ দিলাম। যদি গুগোলেও

সার্চ দিই তাহলেও আশা করছি

দেখাবে “নো রিসাল্ট”।

ফেসবুকে দুজনের সাথে কথা বলছি।

আই মিন চ্যাট করছি। দুজনকেই খারাপ

মনে হয় নি। বড় মন না হলেও ছোট মন

না। তাদের চ্যাক করতে হবে।

২.

ক্রিং ক্রিং।

কি ভাবছেন সবাই! ফোন এসেছা?

হা এসেছে। রিংটোন এটা সেট

করেছি। বড্ড সেকেলে। তাই না!

সেই দুজনকে ফোন নাম্বার

দিয়েছি। মনে হচ্ছে তাদেরই কেউ

ফোন করেছে। ফোন ধরতেই

রিনরিনে গলার আওয়াজ

-হ্যালো।

-আপাতত দাড়িয়ে আছি। হেলতে

পারব না।

-আমি কে তা কি চিনতে পেরেছ?

-মনে হচ্ছে জামাল?

-হা। কখনো তো বলিনি। চিনলে কি

করে?

-তোমার মাথায় গোবর ঠাসা। ফোন

নাম্বার দিয়েছিলে মনে নেই?

-সরি। মনে ছিল না।

তারপর টুকটাক কথাবার্তা।

কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে

স্পষ্টভাসীর মত জানিয়ে দিলাম

যে

-আমি কোন রিলেশনে যেতে ইচ্ছুক

না। কারন তাতে কষ্ট বেশী।

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই ভালো।

সে কিছুই বলে নি। মুচকি

হেসেছিলো।।

দুদিন পর অসময়ে ফোনটা বেজে উঠল।

একদম সকালে। আমি ৫ টায় জগিং এ

যাই। এমন সময় ফোন!

-সুপ্রভাত।

-সুপ্রভাত। আপনাকে ধৈঞ্চার

শুভেচ্ছা। তা জানতে তে পারি আপনি

কে?

-আমি নাবিল।

-তুমি! ভেবেছিলাম ফোন দিবে

না!

-তুমিও তো নক করতে পারতে!

-কিভাবে করব! ফোন নাম্বার টা

নিয়েই ত ফেসবুক ছেড়ে

ভেগেছিলে।

-ওকে সরি সরি!

কথা হল দুজনাতে। কি কথা! তা বলব

কেন আপনাদের? তবে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা।

কোন প্রেমময়তার প্রকাশ পায়নি।

দুজন দেশের দুপ্রান্তে থাকে। দুজনই

বেশ অবস্থাসম্পন্ন। তবে আমি প্রায়

নিম্নমধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের

মাঝামাঝি অবস্থায় আছি।আসলে

কথা বলতে বলতে সময় যে কিভাবে

কাটে তা বলতে পারব না। তাইতো

দেখতে দেখতে কেটে গেলো

তিনটে মাস। হঠাৎ করে তিনটে

মাসের পর দুজনের প্রস্তাবনা শুনে

তো এই এক আমার মাথা চক্কর দেবার

দশা। দুজনে কি একে অপরকে চেনে?

না হলে তারা দুজনেই এই প্রস্তাব

করবে কেন?

আমি কি যে কোন একজনকে না করব!

নাহলে তো দুজনকে সমানভাবে

কোম্পানি দিতে পরব না। কি করা

যায়?

দুজনকেই বলি আসতে। তারা দুজনেই

একইসাথে শারদীয়া দূর্গোৎসবে

আমাদের শহরে আসছে। তবে তারা

আমাদের বাসায় উঠবে না। কারন

বাসায় কোন বন্ধু এলাউ না। মা তো

রেগে গিয়ে ঝাঁটাপেটা করতে

পারে। তারা কোন হোটেলেই

উঠবে। দূৃৃর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন

আসবে আর দশমীর পরের দিন চলে

যাবে। ভালোই লাগছে। আমার

দুটো বন্ধু আমার জন্য এত্তো ভাবে

বলে।

৩.

আজ পঞ্চমী।

সারা দিক সাজ সাজ রব। মেয়েরা

সাজছে মেকাপ দিয়ে আর জায়গা

সাজছে ছোট ছোট মরিচবাতি

দিয়ে। অপেক্ষা করছি। বাসার

সামনে দাড়িয়ে। কখন আসবে?

তারা দুজন।

হঠাৎ করে একটা ল্যাম্বরগিনি

গাড়ি দেখতে পেলাম।

বাংলাদেশে ল্যাম্বরগিনি! অবাক

ই হলাম। সেখান থেকে নামতে

দেখলাম জামাল কে। আমার দিকে

তাকিয়ে বিজয়ীর হাসি দিল। তার

হাসিটা যথেষ্ট সুন্দর। তার

দাঁতগুলোও সুন্দর। মনে হচ্ছে ক্লোজ

আপে এড পাবে।

আচ্ছা সে সেখানে গিয়ে কি

বলবে?

– মেকাপের মতই দাঁতের মেকাপ ইউজ

করুন। ক্লোজ আপ।।আপনার দাঁত হবে

অায়নার মত ঝকঝকে।

তার ডাক শোনে আমার ঘোর ভাঙল।

কাছে এগুলাম।

-কি! অবাক হচ্ছ!

-না তো।

-তুমি খুশি হওনি!

-আমি কখন বললাম?

আচ্ছা বাদ দাও।

আমি তাকে নিয়ে একটা

হোটেলে রুম বুক করলাম। সে অনোক

বড়লোক।

একটা গিফট কিনেছিলাম। তাকে

যে কি করে দেই? একটা পাঞ্জাবী।

সে হয়তো অনেক দামী দামী কাপড়

পড়ে। তবুও সসংকোচে তার সামনে

ব্যাগটা ধরলাম।

সে পাঞ্জাবী টা পেয়ে এত্তো

খুশি হল যে আনন্দে লাফাতে থাকল।

আমি বুঝতে পারলাম না যে কমদামী

একটা পাঞ্জাবী তে এত খুশি হওয়ার

কি হল!

বাসায় পৌছুতেই দেখি ২ টা মিস

কল। আবার ফোন করল নাবিল। ফোন

ধরলাম।

-বলতো। আমি এখন কোন জায়গায়?

-কোথায়?

-তোমার ডানে তাকাও।

ডান দিকে তাকিয়ে দেখি

হোন্ডার সাথে একটা কালো করে

ছেলে দাড়িয়ে। এবার তাকে

দেখে আমার দাঁতকপাটি সবগুলো

বেরিয়ে পড়ল। তাকে নিয়ে চললাম

একটা হোটেলে। সেও সাতদিনের

জন্য রুম বুক করল। আমি তাকে

নিসংকোচে একটা পাঞ্জাবী

দিলাম। তার চোখের জল বাঁধ

মানছিলো না। আমি কিছু না বলে

চলে আসতে লাগলাম।

কারন

মাঝে মাঝে মানুষকে কাঁদতে

দিতে হয়।

৪.

আজ ষষ্টী।

আমাদের বাসায় পূজো হয়।সকাল

থেকে “কামলা ছেরা” দের মত

খাটছি। সবাই যেন ফুট ফরমাশ

একসাথে দেয়া আরম্ভ করেছে। এমন

সময় ক্রিং ক্রিং।

-হ্যালো অভি।

-বলো জামাল।

-বলছি যে আজ দুপুরে কি বেরুতে

পারবে?

-কয়টায়?

-২ টায়।

-হ্যা পারব। জানো একধরনের

অপরাধবোধ কাজ করছে।

-সময় দিতে পারছো না বলে?

-হা।

-সমস্যা নেই। তোমার অবস্থা টা

বুঝতে পারছি।

-আচ্ছা দুটোয় দেখা হবে।

টুকটাক কাজ করতে করতে দুটো

বেজে গেলো। চুপি চুপি বাসা

থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি

হাটতে লাগলাম। কিছুদূর যেতেই

গাড়িটা চোখে পড়ল। তার দিকে

তাকিয়ে একটু হেসে ড্রাইভিং

সিটে উঠে বসলাম।

-আমরা কোথায় যাচ্ছি?

-তোমায় কিডন্যাপ করছি।

– সেটাই ভালো। মা বাবার কপাল

থেকে আপদ দূর হলো।

গাড়ি থামল শহরের একটা বিশাল

রেস্টুরেন্টে। আমি দেখতে পেলাম

একটা টেবিল অত্যন্ত সুসজ্জিত।

আমাকে সে হাতে ধরে বসাল সেই

টেবিলে। ওয়েটটর খাবার দিয়ে

গেলো। অনেক খাবারের নামই

জানি না। সংকোচ বোধ করছিলাম।

তবে বিলাসীতার মাঝে খেলাম।

ভালো লাগছিলো। বিল এলো। বিল

দেখে তো মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।

১২হাজার৫০০ টাকা!

আমার কাছে মাত্র এক পনের শত

টাকা অাছে। দেখি সে ক্রেডিট

কার্ডে বিল পে করে দিল।

বের হয়ে গাড়িতে বসলাম।

-এত খরচ করার কি দরকার ছিলো?

-যাকে পছন্দ করি তার জন্য না কিছু

করলাম।

আর কথা হল না। নীরবে চললাম পথটুক

***

বাসায় পৌছুতেই মা যেন হাঁফ

ছেরে বাঁচল। হাতের কাছে

যতরকমের কাজ ছিলো সবগুলো একটা

একটা করে ধরিয়ে দিচ্ছে। কাজ

করতে করতে সন্ধ্যা ৭ টা বাজল।

আরো দশ ঘন্টা পর ঢাকে কাঠি

পড়বে। ছাদে উঠে বসলাম। পুরো

শহরটাকে স্বপ্নীল লাগছিলো।

সুসজ্জিত এক শহরের মাঝে যেন বসে

আছি। এমন সময় নাবিলের ফোন

-কি করছো?

-বসে আছি।

-দেখা হবে কি?

-আসো।

সে হোন্ডা নিয়ে আসল। উঠলাম তার

পিছনে।ঘুরলাম শহরের অনান্য

পূজোমন্ডপে। দেখলাম তাদের সাজ

সজ্জা। সে হোন্ডা থামাল একটা

চটপটির দোকানে। দুজনে দু প্লেট

চটপটি নিলাম। হাসতে হাসতে

খেতে লাগলাম। খোলা হাওয়ায়

যেন রাক্ষস হয়ে গেছি। তারপর

নিলাম ফুচকা। নাবিল একটা ফুচকা

আমার মুখের সামনে তুলে ধরল। আমি

না করিনি। বরং চ বড় হা করে তার

হাত কামড়ে দিতে চেয়েছি।

ব্যাটা বড় চালাক। হাতটা সরিয়ে

নিল। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে

বাসায় চললাম। মাথায় ঘুরছিলো

দুটো জিনিস।

ভালোবাসাটা গতানুগতিকতায়

প্রগাঢ় না কি বিলাসীতায়?

৫.

আজ সপ্তমী।

মার মাথায় হাত পড়ল। দূর্গাপূজো!

পানিকচুর ফুল ও শাপলা লাগবে। কিছু

জোগার হয় নি। ওদিকে বাবা

বাইরের কাজে ব্যাস্ত। মা আমাকে

ডাকল।

-বাবা আমার। যা না। গিয়ে বিল

থেকে দুটো শাপলা তাড়াতাড়ি

তুলে আন। আর কিছু কচুর ফুল যে লাগে।

-এক্ষুনি!

-হা। পুরোহিত গজগজ করছে। বল্টুকে

দিয়েই করাতাম কিন্তু তাকে তো

দেখছিস। কি রকম ব্যাস্ত?

-যাচ্ছি।

নাবিল কে ফোন করলাম।

-নাবিল বিলে সাঁতার কাটবে?

-কি!

-যা বলছি তা করবে কি না আমার

সাথে?

-হা কিন্তু…..

নিচে শটস পরে চলে এসো বাসার

সামনে।

দশ মিনিটের মধ্য চলে আসল।

তার হোন্ডার পিছনে বসে ছুটলাম।

প্রবল বাতাস টা এত্তো ভালো

লাগছিলো যে ভাষায় প্রকাশ

করতে পারব না।

কিছুক্ষণ পর বিলের কাছে পৌছুলাম।

-শটস টা রেখে বিলে নেমে

পড়লাম। বেশ কিছু শাপলা তুললাম।

তারপর তাকে বললাম

-বিলের পানি স্নান করার জন্য

ভালো নয়।

-কে বলল? আমার তো ইচ্ছে করছে।

– তো বাস্তবায়ন করবে?

– চিন্তাটা খারাপ না।

এই কথা বলে নেমে পড়লাম আবার

দুজনে। সাঁতারের প্রতিযোগিতা

করছি। নির্মল টলটলে সেই কমল

কাননে দুজনে কেটে যাচ্ছি

সাঁতার। এক অনাবিল সুখে

প্রতিমুর্হূর্তে মন যেন আন্দোলিত

হচ্ছে। অবগাহন করছি জলে নয়,

আনন্দে।

বেশ কিছুক্ষন কাটানোর পর

তাড়াতাড়ি ফুলগুলো নিয়ে

যাওয়ার তাগিদ উপলব্ধি করলাম।

পড়িমড়ি করে জামাকাপড় পড়ে

ছোটলাম। নাবিল হোন্ডা দিয়ে

আমায় তাড়াতাড়ি করে বাসায়

পৌছে দিল।

বাসায় পৌছুতেই মা তেলে জলে

কড়াইয়ে জ্বলে উঠল। কাজ করতে

করতে হাড় ভেঙে যাচ্ছিলো। দুপুরে

হালকা কিছু খেয়ে উপবাস

ভাংলাম।

জামালের ফোন

-একটু স্থানীয় সুইমিং পুলে আসতে

পারবে?

-হা। কিন্তু কেন?

-সারপ্রাইজ!!

আমি তড়িঘড়ি করে গেলাম। সুইমিং

পুলে গিয়ে দেখি কেউ নেই! আর

সমস্ত পুলটাই শাপলায় ভরপুর!

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এক স্বর্গীয়

পরিবেশ!

-গোসল করবে?

-একবার করেছি।

-ও আচ্ছা।তাহলে থাক।

আমি জামাকাপড় খুলে শটস পড়ে

পুলে নামলাম।এত কষ্ট করে করেছে

যদি একটুও না নামি তাহলে খারাপ

দেখা যায়। স্কাইলাইটের

নিলীমাবিধৌত আলো আমার মুখে

পড়ছে আর আমি জলে ভাসছি চিত

হয়ে। আমার পাশে কয়েকটি পদ্ম।

অসম্ভব ভালো লাগছিলো। কেমন

যেন মন বড় করা স্বর্গীয় অনুভূতি। দুজন

একসঙ্গে ভাসছি। আমি ও জামাল।

কেন সে এত কিছু করতে গেলো!

স্নান শেষ হওয়ার পর বাড়ির দিকে

রওনা হলাম। জামাল আমাকে গাড়ি

করে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিচ্ছে।

প্রশ্নটা মনে খোঁচাচ্ছে। কোন

অবগাহনে আমি সবচেয়ে খুশি হলাম?

৬.

অষ্টমী তে ঘুম ভাঙল ঢাকের শব্দে।

সত্যিই! ঢাক ছাড়া দূর্গোপূজোটা

অসম্পূর্ণ থেকে যায়। জানি আজ মা

কিচ্ছু বলবে না। কাল ও না। কারন

যদি পুরো পূজোটা কাজই করি তবে

পূজোর আনন্দ করব কখন?

আজ সকালে স্নান করলাম। জামাল

কে বললাম রেডি থাকতে। সে

গাড়ি নিয়ে এলো। এদিকে আমি

একটা আকাশী কালারের

পাঞ্জাবী পরেছি। নিজের দিকে

তাকিয়ে আমি নিজে অবাক হয়ে

গেলাম। নিজের প্রেমে নিজেই

পরে গেলাম। সে যাই হোক গেলাম

জামালের সামনে।

-জীবনে অনেক কিছু দেখার শখ

ছিলো। আজ তা মিটে গেছে।

-কেন?

-কারন আজ এঞ্জেল দেখছি। আকাশ

থেকে আকাশের চুঁইয়ে পড়া রং

নিয়ে এসেছো আমার সামনে।

-ধূররর। চাপা মেরো না।

-আচ্ছা তাহলে জঘন্য দেখাচ্ছে।

খুশি?

-হুমম।

-চল আজ হেটে হেটে যাই। সারা

পূজো দেখব।

-চল।

পূজোতে ঘুরতে গেলাম। সবগুলো

প্রতিমা দেখছিলাম। কিন্তু

আড়চোখে তাকেও দেখছিলাম।

তাকে যে কি সুন্দর লাগছিলো!

যেন জীবন্ত কার্তিক ঠাঁকুর টি।

অনেক ভালোবাসা আকৃতির বেলুন

দেখলাম। আরো দেখছিলাম পূজোর

মেলা। হঠাৎ করে পিছন দিকে

তাকিয়ে আমার চোখ ত ছানাবড়া।

দেখি সে এত্তোগুলো বেলুন কিনে

এনেছে। আমি তো মহাখুশি! নাচতে

পারছি না শুধু। রাস্তাটা দু ভাগ হয়ে

গেছে। একদিকে ছোট একটা পুল

অপরদিকে কাশবন

-চল জামাল, কাশবনে যাই।

-চল।

কাশবনে দুজনে বসে রইলাম

পাশাপাশি। সূর্যরশ্মি তখন

তেছরাভাবে আমাদের শরীরে

পড়ছিলো। জামাল আমার একটা হাত

ধরল। বাতাসে কাশফুলগুলো

আমাদের মাথার উপর নড়ছিলো।

শ্বেত শুভ্র কাশফুলের মাঝে সবুজ

ডাটার নিচে উপবিষ্ট দুই পুরুষ। অপলক

দৃষ্টিতে তাকানো দুজন দুজনের

দিকে। জামাল আমার হাতটা

জোরে ধরে রাখল। মনে করছে আমি

পালিয়ে যাব।

নিরবতা যে বড়ই বেদনাদায়ক।

অবশেষে অতি কষ্টে জামাল বলল

-আমি তোমাকে ভালোবাসি।

তুমি কি আমাকে পছন্দ কর?

আমি কিছু বলতে পারি নি। বোবা

হয়ে গেছি। ঝিরিঝিরি বাতাস

প্রবাহিত হয়ে কাশফুলগুলো একধরনের

সুর তুলেছে।সে সুর কিসের?

আমি কিছু না বলে উঠে চলে

আসালাম।

বাসায় এসে নাবিলের ফোন

ধরলাম।

-তুমি কি ফ্রি আছো?

-হা।

-বেরুবে?

-চল, একটু ঘুরে আসি

হা চল।

দুজনে বের হলাম। হোন্ডায় চড়ে। তখন

সন্ধ্যা। চারদিকে শাঁখ কাঁসা, ঘন্টা,

মৃদঙ্গ বাজছে। নাবিল কে জড়িয়ে

ধরে বসতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু সাথে

সাথে ইচ্ছেটা বাদ দিয়ে দিলাম।

নাবিল আর আমি দুজনে মিলে

পূজোমন্ডপে ঘুরছি। এখন ভালো

লাগছে। তারপর আমরা অনেক বাজি

কিনলাম। বাজি পোড়াতে

লাগলাম। অসম্ভব ভালো লাগছিলো।

-চল অভি। ঔদিকে পুলটায় যাই।

-চল।

অষ্টমীর চাঁদ। জোছনা না থাকলেও

আলোআধারি নেই। আমার দু কাঁধে

হাত দিল নাবিল। আমার দিকে

তাকিয়ে আছে সে। নিরব

পরিবেশে জোনাকীরা আমাদের

সঙ্গী। থরথর করে কাঁপছে সে।

খুব কষ্ট করে বলল

-ভালোবাস আমায়?

আমি কিছু না বলে তাকে পিছনে

ফেলে চলে আসতে লাগলাম।

দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার গমনপথের

দিকে তাকিয়ে আছে নাবিল।

৭.

নবমী টা কারো সাথে কথা না

বলে কাটিয়ে দিলাম।

দশমী আসল। সবাই সিঁদুর খেলছে।

আমাকে অনেকেই সিঁদুর মেখে

দিল। হাটতে থাকলাম। কেমন যেন

মনমরা। নাবিলের ফোন

-অভি।

-বলো

-তুমি যদি আমায় ভালোবাস তবে

আজ রাত্র ঠিক নয়টায় সেই পুলের

কাছে থেকো।

এই বলে সে কেটে দিলো।

এখন পড়ন্ত বিকেল।

সবাই মূর্তি ট্রাকে তুলছে। সন্ধ্যা

সাতটায় বিসর্জন। ঢাক বাজছে।

ছেলে মেয়ে সবাই নাচছে সেই

মায়াবী সন্ধ্যায়। দূরের আকাশ আজ

লালরং ধারন করেছে। মনে হচ্ছে

সূর্যটা গলে গেছে। ট্রাকে উঠলাম।

ট্রাকে উঠতেই জামালের ফোন

-অভি যদি তুমি আমায় ভালোবাস

তাহলে আজ রাত্র নয়টায় কাশফুলের

ঝোঁপে এসো।

চারদিকে উলুধ্বনি। মূর্তি বিসর্জন

দেয়া হচ্ছে। আমরা আমাদেরটা

ধরলাম। সবগুলো মূর্তি বিসর্জন দিলাম

সেই বিলে।

আসতে থাকলাম। এখন রাত্র নয়টা

বাজে। বিসর্জনে দেরি হয়ে

গেছে। দাড়িয়ে আছি সেই

রাস্তাটাতে। একদিকে কাশবন ও

অন্যদিকে পুল। নিরব রাত্রে দুটো

রাস্তা যেন আহ্বান করছে আমায়।

একদিকে বিত্ততার সাথে

ভালোবাসা

আর অপরদিকে গতানুগতিকতার

সাথে ভালোবাসা। কি করব আমি!

কোথায় যাব!

রাত্র বাড়ছে। আকাশে চাঁদটা বড়

হচ্ছে।

জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত এখন

নিতে হবে। দুটো মনের দুয়ার আমার

জন্য খোলা।

আমি দাড়িয়ে আছি খোলা

আকাশের নিচে

দুজনের ঠিক মন দুয়ারির মাঝে……..

*****(সমাপ্ত)*****

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.