নেশা

মাসুদ ইসলাম

শরীরে প্রচন্ড শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার আলতো ছোয়ায়।

তার তর্জনি খেলা করছে আমার শরীরের বিভিন্ন ভাজে।

আবহাওয়ার তেজময়তার পরও শরীর কামনার আগুনে জেগে উঠছে।

চোখের নিমিষে তার শরীরের সমস্ত পোশাক উধাও হয়ে গেল।

আহ!! কি সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সেই দেহে। আর পারছিনা! ঝাপিয়ে পড়লাম তার উপরে। পূরণ করতে থাকলাম নিজের মনের আর দেহের স্বাদ।

সুখের রাজ্যে প্রেবেশের সময়ই কানে ভেসে আসলো মোবাইলের রিংটোন।

খুব বিশ্রী লাগছিলো। এর তেজ যেন বেড়েই যাচ্ছিল।

হঠাৎ হুশ ফিরে পেলাম। বুঝতে পারলাম স্বপ্নে ছিলাম।

প্রবল অনিচ্ছা সত্বেও ফোনকল রিসিভ করলাম।

ফোনের ওপাশ থেকে বস বললেন, “রাশেদ, আপনি এখুনি চলে আসুন। অদ্ভুত এক খুন হয়েছে। এই কেইসের জট আপনি খুলতে পারবেন।”

“ওকে স্যার। আমি এখনি আসছি।”- বলেই ফোন রেখে দিলাম।

ফোন রাখতেই স্বপ্নের মানুষের কথা মনে আসলো।

গত রাতেই তাকে দেখেছি গুলশানের ফুওয়াং ক্লাবে। ডিজে রাহাতের অনুষ্ঠানে তার সেই নাচ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

তার দেহের গঠন দেখে নিজের দেহকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। হবেই না কেন? এত জিম করি, নিয়ম মেনে চলি, তারপরও সিক্স প্যাক করতে পারছিনা।

ভাবনার সব অবসান ঘটিয়ে দ্রুত অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

অফিসে যেয়েই সোজা এসিপি স্যারের রুমে গেলাম।

গিয়েই কেইস সম্পর্কে জানতে চাইলাম।

রুমে গিয়ে বসতেই স্যার বলতে লাগলেন, “আজ ভোর রাতে নিকেতনে একটা খুন হয়েছে। লাশটি দেখে বুঝা যায় তাকে খুব মর্মান্তিক ভাবে খুন করা হয়েছে। এর আগেও গত দুই মাসে একইভাবে আরো দুইজন খুন হয়েছে।”

“মনে হয় তিনটি খুনের ঘটনায় যোগসূত্র আছে।”-স্যারকে বললাম।

আমার কথায় স্যার সম্মতি জানিয়ে বললেন, “খুনী যেই বা যারা হোক না কেন খুব ঠান্ডা মাথার। খুনের কোন চিহ্ন রেখে যায় না।”

স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা চলে আসলাম লাশ রাখার হিম ঘরে।

প্রচন্ড শক্ত মনের মানুষ হওয়া সত্বেও আমার মাথা যেন ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।

লাশ দেখে মনে হচ্ছিল কোন পশু লোকটিকে খত বিক্ষত করে ফেলছে।

চোখ দুটো উপড়ে ফেলা হয়েছে, ঘাড়ের পাশে ভ্যাম্পায়ারের ন্যায় কামড় দেয়া, লোকটির শিশ্ন প্রায় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

লাশটি দেখে ছুটে গেলাম ঘটনার স্থানে। আলামত সংগ্রহের আশায়।

কয়েক ছোপ রক্তের চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই পেলাম না।

ঘরের কোথাও খুনীর আঙুলের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম না।

বুঝতে বাকি রইলোনা যে, এই খুনের সাথে জড়িতরা খুবই সতর্ক এবং ঠান্ডা মাথার।

খুনের আলামত সংগ্রহ করতে যেয়ে আমার মেজাজ বিগরে যায় এই জন্য যে, যেখানে খুন সংঘটিত হয়েছে, সেই বাড়িটি আলিশান হওয়া সত্বেও সিসি টিভির ব্যবস্থা ছিল না। যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নাই করা হয় তাহলে এত খরচ করে বাড়ি বানানোর কি প্রয়োজন?

খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিভাবে এই রহস্যের জট খুলবো সেই ভাবনা খেলে যাচ্ছিল।

টেনে যাচ্ছিলাম একের পর এক বেনসন সিগারেট।

কোন কুল-কিনারা যখন করতে পারছিলাম না তখন খুব লাল পানির নেশা জাগলো।

অস্থিরতার সময়ে ডিজে এর সাথে নাচা আর লাল পানি আমাকে বেশ টানে।

চাকুরীর সময় যেমন আমাকে অনেক দিতে হয়েছিল, ঠিক তেমনি এখন নিচ্ছি।

গিভ এন্ড টেইক আর কি।

শিক্ষক বাবা কিছুতেই এটা মানতে পারেন না। মা কে বুঝিয়ে অনেক জোর করে বাবাকে দিয়ে জমি বেচে উৎকোচের ১০ লাখ টাকা দেই।

যদিও আমি এর কয়েকগুণ তুলে নিয়েছি।

এত টাকা দিয়ে কি করবো? তাইতো লাল পানি আর ফুর্তিতে খরচ করে ভারসাম্যে আনি।

চলে এলাম রেডিসনে। ডিজে সোনিকার শো।

খুব লাল পানি খাচ্ছি আর গানের তালে তালে নেচে যাচ্ছি।

সেদিনের সেই ছেলেকে দেখতে পেলাম।

তাকে দেখার পর যেন সোনিকার আকর্ষন কোথায় যেন মিইয়ে গেল।

ছুটে গেলাম তার কাছে।

গালে আলতো চুমু দিয়ে বললাম, “তোমাকে খুব ভাল লেগেছে।তোমার নাম কি জানতে পারি?”

ছেলেটি আমার কান্ডে হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল।

তারপর একটা স্মিত হাসি দিয়ে আমার সাথে করমর্দন করে বললো, “আমি মুরাদ হোসেন। জিগাতলা থাকি। ইস্টওয়েস্ট এ এমবিএ করছি। আপনি?”

আমি তার হাতকে চেপে ধরে রাখলাম এমন ভাবে যাতে সে ছুটে যেতে না পারে।

তার প্রশ্নের উত্তরে বললাম, “আমি রাশেদুল হাসান। মহাখালী থাকি। আমি একজন পুলিশ ইনস্পেক্টর।”

পরিচয় পর্বের শেষে দুজনে একসাথে সোনিকার শো উপভোগ করলাম।

রাতে আমি মুরাদকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

বিদায়ের সময় দুজন দুজনের মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান করলাম।

শুরু হল দুজনের মাঝে মোবাইলে কথা বলা।

কথা বলা থেকে শুরু হল দেখা করা, আশে পাশে কোথাও ঘুরতে যাওয়া।

খুব ইচ্ছা করে মুরাদকে নিয়ে কক্সবাজারের বিচে হাতটা ধরে হেটে বেড়াই, তার লাল ঠোঁটের ছোঁয়া নেই।

মুরাদের ক্লাস আর আমার কেইসের ব্যস্ততার কারনে সময় হয়ে উঠেনা।

মুরাদের সাথে পরিচিত হওয়ার প্রায় মাস খানেক হতে চললো।

এর মধ্যে কেইসেরও তেমন কিনারা করতে পারিনি।

বিগত তিনটি খুনের সব লাশই একই ভাবে খত বিক্ষত ছিল।

সবার মোবাইলের ডায়াল লিস্ট থেকেও তেমন কিছু পাইনি। তাদের ল্যাপটপে ফেইসবুকের ম্যাসেজ লিস্ট থেকে কয়েকটা আইডি এর সাথে চ্যাট দেখা গেছে যা সবই এখন ডিএক্টিভ।

এটা বুঝতে বাকি ছিলনা যে তিন খুনের সাথেই একই ব্যক্তি জড়িত।

প্রত্যেক খুনের আগেই খুনী সিকোয়েন্স মেনে চলেছে।

সেটা হল প্রত্যেক খুনের সাথে সময়ের ব্যবধান ৩৩ দিন।

৬৬ দিনের মাথায় খুনী তৃতীয় খুন করে।

প্রথম খুন বনানী, তারপর বারিধারা, তারপর নিকেতন।

৯৯ দিন হতে আর মাত্র ৫ দিন বাকি।

তাহলে কি খুনী ঐ এড়িয়ার আশেপাশে কোথাও খুন করবে? তাহলে কি সেটা মহাখালী? এমন ভাবনা মনের মাঝে চলছে।

এমন সময় মুরাদের ফোন এল।

অভিমানে সুর নিয়ে বললো, “রাশু সাহেবের কি আর আমাদের নিয়ে ভাবার সময় আছে? তিনি শুধু তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত।”

আমিও কিছুটা আহ্লাদের সহিত বললাম, “কেন রাদ সাহেব কি জানেনা আমি খুনি কে ধরায় ব্যস্ত।”

“খুনি তো তোমার পরিচিত। সে সব সময় তোমার আশে পাশেই থাকে।”- মুরাদ সিরিয়াস একটা ভাব নিয়ে বলল।

মুরাদের কথায় যেন একটা লিঙ্ক খুঁজে পেলাম।

ফোনেই চুমা দিয়ে বললাম, “আমার রাদ সাহেব কে কি আর এমনিতেই আমার ভাল লাগে।উম্মাহ।। লাভ ইউ ডিয়ার।”

মুরাদ আবার অভিমানী স্বরে বলতে লাগল, “তুমি এখনি আমার ক্যাম্পাসের সামনে চলে আসো। কতদিন হইছে তোমার বাইকে চড়ে ঘুরি না।”

আমি হেসে বললাম, “পুলিশের সাথে মিথ্যা বলতে নেই। গত পরশু দিনই তো ঘুরলাম।”

মুরাদ কপট রাগ দেখিয়ে, “হইছে!কিপটু মিয়ার আর ঘুরাতে হবেনা। আপনি খুনিকেই ধরেন। আমি রাখছি।”

“ডিয়ার প্লিজ রাগ করেনা। এই কাজটা সেরেই তোমাকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসবো।”- মুরাদকে অনুনয়ের সুরে কথাগুলি বলে ফোন রেখে বের হয়ে গেলাম।

যে সব জায়গায় খুন সংঘটিত হয়েছিল সেখানে ছুটে গেলাম নতুন করে আলামত সংগ্রহে।

খুনী যতই চতুর হোক না কেনো কোথাও না কোথাও সে তার প্রমাণ রেখে যাবেই।

কাকতালীয়ভাবে প্রত্যেক খুনের বাড়ির পাশেই বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ ছিল।

প্রত্যেক বুথের বাইরের সিসি ক্যামেরা থেকে সেইসব বাড়িতে কারা প্রবেশ করছে এবং বাহির হচ্ছে তা দেখতে পাওয়ার কথা।

প্রত্যেক বুথের সিসি ক্যামেরা থেকে ঘটনার দিন ও আগের দিনের ভিডিও ফুটেজ নিলাম।

ভিডিও ফুটেজে আমার আশংকাকে সত্য প্রমাণিত করে সম্ভাব্য খুনীর ফুটেজ পেলাম।

প্রত্যেক ফুটেজেই একজন কমন ব্যক্তির ছবি দেখতে পেলাম।

প্রত্যেক স্থানেই সেই ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চয়ই কাকতালীয় ছিলনা।

তাই দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে দেরী হল না। এখন শুধু তাকে হাতে নাতে ধরা বাকি।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এসিপি স্যারের সাথে কথা বললাম।

স্যার আমাকে খুব সাবধানে এগোতে বললেন, কেননা খুনী খুবই ভয়ানক এবং সিদ্ধ হস্ত।

স্যারের কাছ থেকে বের হয়েই মুরাদকে ফোন দিলাম।

খুশী হয়ে বললাম, “খুনীকে আমি সনাক্ত করতে পেরেছি।”

“তাই নাকি? কে সে? গ্রেফতার করেছ?”

তাকে থামিয়ে বললাম, “এত প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিব কিভাবে? তুমি খুনীকে চিনবেনা। আর খুব শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে।”

মুরাদ আমার সাফল্যে আনন্দিত হয়ে বললো, “কংগ্রেচুলেশন অফ ইউর সাকসেস। আমার খুব আনন্দ লাগছে।”

আমি আহ্লাদের সুরে বললাম, “শুধু আনন্দ পেলেই হবে? আমার এই সফলতায় তোমার সাথে একান্তে থাকতে চাই। তুমি কখনও আমার বাসায় এসে একান্তে আমার সান্নিধ্যে থাকনি। আজ আমার এই খুশীর দিনে আমি তোমাকে পেতে চাই।”

আমার চাওয়া হয়ত মুরাদের মনঃপুত হল না। তাই সে অজুহাত দেখাতে লাগলো না আসার।

মুরাদের অজুহাতে আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বললাম, “আমাকে হয়ত ভালোবাসনি বলে বিশ্বাস করে আমার কাছে আসতে চাওনা। সবই তোমার ইচ্ছা। আমি তারপরও তোমার অপেক্ষাতে থাকবো। যদি আমার ভালোবাসার শক্তি প্রবল হয় তাহলে তুমি ঠিকই আমার কাছে চলে আসবে। আস বা না আস, আমাকে ফোন দিও না। সবই তোমার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলাম।”

কথাগুলো বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম।

অনেকটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েই বাসায় চলে আসলাম।

রাত ঠিক ৯ টা। বাসার কলিং বেইল বেজে উঠল।

বুঝতে বাকি রইলো না যে মুরাদ এসেছে।

দরজা খুলেই মুরাদকে দেখে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের কোণে জল চলে এসেছে। হবেনা কেন? ভালোবাসার প্রাপ্তি মানুষকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। তখন আনন্দে চোখের জল পড়ে।

“হইছে! আর ঢং করতে হবেনা। খুব খিদে পেয়েছে। আগে খেয়ে নেই।”- বলেই মুরাদ হেসে দিল।

মনের প্রবল বিশ্বাস ছিল মুরাদ আসবেই। তাই অনেক বাহারি খাবারের আয়োজন করেছি। দুজনে এতই খুশি ছিলাম যে খাবার ঠিকমত খেতে পারলাম না।

খাবার শেষে মুরাদকে বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম।

সিডিতে সফট মিউজিক ছাড়লাম।

মুরাদকে টেনে তুলে সালসা স্টাইলে নাচতে থাকলাম। মুরাদ খুব ভাল সালসা নাচতে জানে।

একটু পর একজন আরেকজনকে বুকে জড়িয়ে দুলতে থাকলাম। এমন করে কেটে যায় মিনিট দশেক।

ধীরে ধীরে নিজের মাঝে কাম জেগে উঠে। ভালোবাসার মানুষের উষ্ণ সান্নিধ্যে মনের মাঝে কাম ভাব জেগে উঠাই স্বাভাবিক।

মুরাদের অধরে নিজের অধরকে ডুবিয়ে দিলাম। চুম্বকের ন্যায় একজন অন্যজনের ভালোবাসার চুম্বনে আবিষ্ট হলাম। দুজনের স্যালাইভা এক হয়ে গেল। সে সময়ে স্যালাইভাকেই মধুর চেয়ে মিষ্টি মনে হচ্ছিলো।

ঘনিষ্ঠভাবে চুম্বনের ফলে ধীরে ধীরে দুজনেই তীব্র কাম আগুনে পুরে যাচ্ছিলাম।

মুরাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেহের সমস্ত কাপড় খুলে ফেললাম।

আমাকে দেখে মুরাদও তাই করলো।

ঝাপিয়ে পড়লাম মুরাদের উপর। চুমোয় ভরিয়ে দিতে থাকলাম মুরাদের সমস্ত দেহে। অধর, বক্ষবৃন্ত, শিশ্ন সব জায়গাতেই চলছে দুজনের অবাধ বিচরন।

ভালোবাসার মানুষকে কাম আগুনে পুরে যাওয়ার শীৎকারে দেখে নিজের মাঝে যেন আর তীব্র কাম ভাব জেগে গেল।

ফ্রিজ থেকে বরফ আর মধু এনে সেগুলি দিয়ে খেলে যেতে থাকলাম তার দেহের বিভিন্ন ভাঁজে। বরফের শীতলতায় তার দেহের ঝাকুনি আমাকে আরো জাগিয়ে তুললো।

তার সুঢৌল নিতম্বের সুখের দরজায় নিজেকে প্রবেশ করতেই অন্য রকম এক স্বর্গ সুখ উপভোগ করতে লাগলাম।

হঠাৎ উত্তেজনার চরম মুহুর্তে মুরাদের মাঝে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পেলাম।

তখন সে আর আগের মুরাদ এ নেই।

তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক মানুষ রূপী পশুর সাথে।

তখন সে তার হাতের দুই আঙুল দিয়ে আমার বুকে আঘাত করতে চাইলো।

আমি কোনমতে নিজেকে বাঁচিয়ে নিলাম।

তার অসুরের মত শক্তির সাথে পেরে উঠছিলাম না।

অনেক চেষ্টার পর তার ঘাড়ে আঘাত করে তাকে বেহুঁশ করতে সমর্থ হই।

নিজে কাপড় পড়ে মুরাদকেও পড়িয়ে আগে থেকে সেট করে রাখা পুলিশ ফোর্স কে খবর দেই। কেননা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মুরাদের ছবি দেখে আগেই নিশ্চিত ছিলাম খুনী সে ই। তাকে ধরার জন্যই আমার এই আয়োজন।

মুরাদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর তার চেহারা আমার সামনে ভাসতে থাকে।

ভাবতে থাকি, আজ সেই ৯৯ তম দিন। এমন একজন সতর্ক মানুষ কি করে আমার ফাঁদে পা দিল। তবে কি সে সত্যি আমাকে ভালোবাসে? কেন সে এমন হল? আমাকে তা জানতেই হবে। এসব ধরার আয়োজন হলেও আমিও যে তাকে ভালোবাসি। তার সাথে এই মিলনে ছিলনা কোন কপটতা।

ভালোবেসে একজন আরেকজনের যত কাছে আসতে পারে আমিও ঠিক সেভাবেই তার সান্নিধ্যে গিয়েছি।

পরের দিন মুরাদের সাথে দেখা করতে হাজতে যাই। সেখানে তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে দেখি সে ভিন্ন আচরন করছে।

রাগে চিৎকার করে বলছে, “তোদের মত যৌন খামখেয়ালীদের আমি বাঁচতে দিবনা। মেরে ফেলবো।”

কারা কর্তৃপক্ষ একজন সাইকোলজিস্টের ব্যবস্থা করেন। সে দ্বৈত স্বত্বার মুরাদের সাথে কথা বলে তার অতীত ঘটনা জানেন।

আমি সাইকোলজিস্টকে মুরাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করতেই বলেন, “দেখুন! আসামী ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসর্ডারে ভুগছে। যাকে বলা যায় মাল্টি পার্সোনালিটি ডিসর্ডার।আসামী যখন যে অবস্থায় থাকে তখন সে অন্য সব কিছু ভুলে যায়। সে তখন সেই স্বত্বাকেই বেঁছে নেয়। তার মধ্যে এই অভ্যাস একবারে গড়ে উঠেনি। ছোট বয়সে তাকে ধর্ষন করা হয়েছিল। যাকে বলে শিশু নির্যাতন। তারই বড় চাচার ছেলে তার এই সর্বনাশ করে। তখন থেকেই তার মধ্যে ক্ষোভ আর ঘৃণা কাজ করতো, যা তার মধ্যে ধীরে ধীরে অন্য একটি স্বত্বার জন্ম দেয়। জানেন তো, বাঘ নরমাংশের স্বাদ পেলে যেমন লোকালয়ে ছুটে আসে, ঠিক তেমনি অঙ্কুরে যৌন স্বাদ পাওয়া মুরাদ ছুটে যায় কাম চাহিদা পূরণে। যৌন ক্রিয়ার প্রতি তিক্ততাই তার মনে দ্বিতীয় স্বত্বার জন্ম দিত।তখন সে পশুর ন্যায় তার উপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের প্রতিশোধ নেয়। ডাঃ জ্যাকিল যেমন মিঃ হাইডের অস্তিত্ব বুঝতে পারে, ঠিক মুরাদও তার দ্বিতীয় অস্তিত্বের ব্যাপারে জানতে পারে। বুদ্ধিমান যখন জেনে যায় সে বুদ্ধিমান, আর এই জেনে যাওয়ার ফলে যেমন ভাল এর বদলে খারাপ বেশী হয়, ঠিক তেমনি আসামীও। তবে এটা ঠিক মুরাদ আপনাকে সত্যই ভালোবেসে ছিল। তাইতো সে আপনার সান্নিধ্যে আসতে চাইতো না যাতে তার খুনী স্বত্বা আপনার কাছে ধরা না পড়ে।”

সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলে সোজা বাইরে চলে আসলাম।

মুরাদের সামনে দাঁড়ানোর সাহস খুঁজে পেলাম না। আমিও যে তাকে অনেক ভালোবাসি। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষের এমন রূপ দেখি কেমনে?

প্রচলিত আইনে মুরাদের মৃত্যুদন্ড হবে। কিন্তু মুরাদের এই মানসিক সমস্যা, তার এই করুন পরিণতির জন্য যে দায়ী তারা কি এভাবে পার পেয়েই যাবে।

তাদের জন্য হয়ত আরেক মুরাদ সমাজে সৃষ্টি হবে।

সমাজে কি এরকম মুরাদের সৃষ্টি হতেই থাকবে??

*****(সমাপ্ত)*****

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.