সুবর্ণের আমি

রাজ রেহান

আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি। আর কয়েকঘন্টা পরেই ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। যে দিনটা সবার

জন্যই একটা বিশেষ দিন। আমরও তাই। তবে আমার দিনটা একটু অন্যভাবে বিশেষ। কারন ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার জন্মদিন। ভালোবাসা দিবসের দিন জন্ম বলেই হয়ত ভালোবাসা নামের সহিত পরিচয়টা হয়ে ওঠেনি। আসলে শুধু ১৪ ই ফেব্রুয়ারি নয় পুরা ফেব্রুয়ারি মাস আমার কাছে বিশেষ। এই মাসের ১৪ তারিখ আমরা জমজ ২টি ভাই মায়ের কোল জুড়ে আসলাম। ১৬ তারিখ ভাই টা মারা গেল। ২৩ তারিখ মা আমাকে আর আমার পরিবারের

সবাইকে ছেরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এরপরে শুরু হল আমার জীবনের নতুনপর্ব।

আমার বাবা আবার বিয়ে করবেন। ঘরে নতুন কেউ আসবে মা হয়ে এমনতর হতেই

পারতো। তবে তা আর হলনা। আমার জীবনে নতুন মোর নিল। বরং আমি চলে এলাম নতুন ঘরে। নতুন মা-বাবা, নতুন পরিচয়ে। এভাবেই শুরু হল আমার জীবনের সুচনা।

এভাবে চলতে থাকল আমার জীবন। এক পর্যায়ে আমার জীবনে সুবর্ণের আগমন ঘটে। ক্লাস নাইনে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমাদের পরিচয় হয়। একসময় আমাদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সময়ের আবর্তে সেটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছুতে রূপ নেয়। একসময় আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতে শুরু করি।

সুবর্ণ আমায় রাজা বলে ডাকে। ও বলে তুমি আমার কাল রাজা। আর আমি ওকে বলি তুমি আমার পরানপাখি। এভাবে কেটে গেল আমাদের আনন্দঘন ২টি বছর। পরীক্ষা দিয়ে কলেজে উঠলাম। যদিও এতে আমার চেয়ে ওর কৃতিত্বই বেশি। কলেজে যাচ্ছি, এমন সময় পেছন থেকে সুবর্নের ডাক পেলাম,,,

– রাজা..

– (আমি দাড়ালাম) কি ব্যাপার পরান পাখি?

– কই যাচ্ছ??

– কলেজে। কিছু বলবে পরান পাখি?

– এমনি। তারাতারি এসো।

– কেন পরান পাখি?

– তোমায় নিয়ে দিঘীতে যাব, গোছল করব।

– (আমি হেসে বললাম) কেন তোমার আবার দিঘীতে,,,, কি ব্যাপার? হুম যেতে পারি যদি আমার কপালে একটা চুমু দাও।

– ইস! শখ কত।

– (আমি কপট রাগ দেখিয়ে) কেন? তবে কি অন্যকাউকে বলব?

– (সুবর্ণ আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল)

রাজা আমার দুস্ট রাজা,,,

কাল রাজা,,ভাল রাজা,,,

আমার ঘরের আলো রাজা।

বিদায় নিলাম ওর কাছ থেক।

আজ কলেজে আসতে বেস দেরি হয়ে গেল। এসে দেখি স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাসে ঢুকতেই স্যার বললেন,,,

– কি ব্যাপার রোহান তুমি গতকাল কলেজে আসনি? আজো দেরি করে এসেছ। কেন? তুমি জান আজকের ক্লাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।

স্যার পুনুরায় বললেন,,,

– এখন আর ক্লাস বাদ দিয়োনা। সামনেই পরীক্ষা। ফর্ম ফিলাপের তারিখ দেয়া হয়েছে। ফিস ৩০০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।

আজকের মত ক্লাস এ পর্যন্তই বলেই স্যার বিদায় নিলেন।

পিছন থেকে তৃনা খোচা দিয়ে,,,

– কিরে আজকাল দেখি পাঙ্খা হইয়া গেছস। ক্লাসে আহছ

না কেন? প্রেমে পরলি নাকি?

আমি কিছু বলব এই মুহুর্তেই হিসাব বিজ্ঞান স্যার চলে এলেন।

স্যার অংক করাচ্ছেন। আজ ডেবিট-ক্রেডিট, আনাদায়, নগদান কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। চোখের সামনে বাবার রাগি মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। আর বাবার

কিছু কথা কানে বাজছে। কথাগুলো ছিল,,,

– তোমাকে যেহেতু এনেছি সেহেতু খাওয়াব, রাখব। কিন্তু এর বাইরে আমি আর কিছু করতে পারব না।

অথচ এই বাবার কোল জুরেছিল আমার বসবাস। আমার বাবার কোলই আমার একমাত্র অবলম্বন ছিল। বাবা আমায় নিয়ে কেন এমন ছেলেমানুসি করল কখখনও সেটা বুঝতে পারিনাই। বাবা আমায় সাজিয়ে গুছিয়ে চুল আচরে পোশাক পড়িয়ে স্কুলে পাঠাতেন। সেই বাবাই আমার পড়াশুনা বন্ধ করে দিলেন। এজন্য কোনদিন তাকে দোষী করতে পারিনি।

বাবাকে ফর্ম ফিলাপের কথা বললে টাকা দিবেননা আগে থেকেই জানি। ভাবতে থাকি কই পাব এত্তগুলো টাকা। চমকে উঠলাম স্যারের ধমকে।

– রোহান তুমি কি অন্যমনস্ক। ক্লাস করতে ভাললাগবেনা করবানা। এভাবে বসে আছ

কেন?

স্যারের রাগী ঝংকারে আমার জ্বিদ টাও বেরে গেল। আমি ক্লাস থেকে বের

হয়ে গেলাম। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। বারবার মনে হচ্ছে সুবর্ন ছারা আমাকে কেউই বোঝেনা। সৃষ্টকার্তার উপর খুব রাগ হচ্ছে এই ভেবে যে আমার জীবনকে এমন করে কি লাভ হল তাঁর।

মানুষ পাপ করে পাপের শাস্তি পায়।কিন্তু আমি জন্ম থেকেইতো কোন পাপ করিনি।

তবেকি আমার জন্মটাই পাপ–?

বারাবার ঘুরেফিরে একটা কথাই ভাবছি কোথায় পাব এত্তগুলো টাকা। সুবর্নকেও বলা যাবে না। কিছু দিন আগেও ওর জমানো টাকা দিয়ে আমাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। আমি জানি এই মুহুর্তে ওর কাছে টাকা নেই। তাছাড়া ভালোবাসায় প্রতিদান কেন যেন মেনে নিতে পারছিলামনা।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম পরীক্ষাই দেব না। তৃনাকেও বলে আসলাম যে আমি পরীক্ষাটা দিচ্ছি না।

মানুষিক চাপে ভুলেই গেছি সুবর্নের সাথে দুপুরে দেখা করার কথা।

বিকেলে হন্তদন্তহয়ে ছুটে এল সুবর্ন। বলল,,

– দুপুরে আসলে না যে?

– মনে ছিল না।

– ফোন দিলাম কতবার ধরলিও না। কেন?

– ইচ্ছা হয়নি।

– এইটা কোন কথা হইল। আমি কত চিন্তা করছি তুই সেটা জানিস। (রেগে গেল সুবর্ন।) – আমি কি করব? আর এত চিন্তার কি আছে?

– তাতো বলবেই। কলেজে গেলেইত তৃণা কে নিয়ে মেতে থাক।

[বলে রাখছি তৃণা আমার কলেজের বান্ধবী। ও আমায় পড়াশুনায় খুব সাহায্য করত। আমার কাছের বন্ধুদের মধ্যে ও একজন। তবে ভালোবাসা বলতে যা বুঝায় এমন কোন সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিল না। আমরা ছিলাম ভাল বন্ধু।]

আমি সুবর্নের কাছে তৃনার গল্প বহুবার করেছি। ও প্রায়ই আমাকে কটাক্ষ বা রশিকতা কিংবা রাগানোর জন্য তৃনাকে নিয়ে খোঁচা দিত। এটাকে আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিতাম।

কিন্তু আজ ক্ষেপে গেলাম। আমি বললাম,,,

– তৃনার সাথে পিরিতের সম্পর্ক থাকলেই বা তোর কি? ছেলেমানুস ছেলেদের মত

কথা বলবি। মেয়েদের মত কথা বলিস কেন?

সুবর্ন আমার কথায় খুব রেগে গেল। হঠৎ খেয়াল করলাম ওর চোখে পানি ছলছল

করছে। বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ধাক্কা খেলাম। বুঝলাম রাগের মাথায় এমন কথা বলে খুব কস্ট দিয়ে ফেলেছি।

ও শুধু আমায় একটা কথাই বলল,,,

– তুমি এতবড় কথা বলতে পারলা? ঠিক আছে তুমি আমাকে আর

দেখবে না। আমি আর তোমার সামনেই দাড়াবনা কোনদিন। (ও ঝরঝরা করে কেঁদে দিল।)

শত চেষ্টা করেও ওকে আটকাতে পারলাম না। দুদিন হয়ে গেল ওর সাথে কোন ভাবেই দেখা করতে পারিনি। দিঘীর পাড়েও আসেনি যেখানে আমরা প্রতিদিন দেখা করি। আমি যেমন অনুতপ্ত ছিলাম, ঠিক তেমনি আমার কষ্টের কমতি ছিলনা। বুকটায় কেমন জানি ব্যাথা অনুভব করছি। আমিও সুবর্ণকে বড্ড ভালোবাসি।

আমি দুদিন কলেজেও যাইনি। আজ সকালে ওদের বড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করেও

দেখা মেলেনি ওর। তাই ভাবলাম ওদের বাড়িতেই যাব। গেলামও। তবে যা শুনলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

আমি ওদের বাড়িতে যেয়ে ওদের ঘড়ের সামনে দাড়িয়ে কাকিমা (সুবর্নের মা কে আমি কাকিম বলে ডাকি) ডাকতেই ভিতর থেকে ওর ছোটবোন স্বর্ণা র আওয়াজ পেলাম। মা বড়িতে নেই বলে ও বাইরে আসল,আমাকে দেখতেই,,,

– আরে রোহান দাদা, তুমিতো আমাদের বাড়িতে আসই না। আজ বুঝি সুবর্ন দাদার খোঁজে এসেছ?

– কাকিমা কোথায়?

– মা গতকাল নানু বাড়ি গেছে।

– সুবর্ন কোথায়?

– দাদা তিন দিন ধরে বাড়িই ফেরেনি।

– কি বলিস? আমিতো কিছুই জানিনা। কোথায় গেছে?

– তোমার সাথে দেখা করে আসার পরে দাদার খুব মন খারাপ ছিল। এরপর কোথায় যেন

বেড়ুল। ঘন্টাদুয়েক পরে আবার আসল। তারপরে সেইযে বেড়ুল এখনও ফেরেনি। জান

রোহান দা আমাদের আলমারি থেকে মায়ের আঙটি পাওয়া যাচ্ছে না। মা বলছেন দাদাই

একাজ করেছে। তোমার কি মনে হয় দাদা এমন কাজ করতে পারে?

(একটু থেমে) ও দাদা সুবর্ন দা তোমার জন্য একটি চিঠি রেখে গেছে।

আমি স্বর্ণার কাছ থেকে চিঠিটা নিয়েই পড়তে শুরু করলাম। লেখা ছিল-

কাল রাজা,,,,

আমি বলেছি তোমার সামনে যাব না। তাই দুরে সরে গেলাম তোমার কাছ থেকে। ভয়

পেয়োনা মরে যায়নি দুরে গেছি। আমি জানি তুমি আমায় খুঁজতে বাড়িতে আসবেই। তাই

স্বর্নার কাছে চিঠিটা দিয়ে গেলাম। তোমাকে যে আসতেই হবে কারন তুমি আমায় বড্ড ভালবাস যে।

তোমার মনে আছে সেই রাতের কথা, যে রাতে তোমার বুকে মাথা রেখে বলেছিলাম

তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি চুপ ছিলে। তবে তোমার অশ্রু রাতের আধারকে লুকাতে পারলেও আমার কাছ থেকে লুকাতে পারনি। সেরাতেই বুঝেছি তুমি আমায় কত্ত ভালোবাস।

তুমি যখন তোমার বুকের মাঝে আমাকে আকরে ধরে বলেছিলে আমাকে ফেলে যাবেনাত? আমি বলেছিলাম- কোন দিনওনা। সেইরাতে তুমি আমায় চুমু দিলে, আমিও দিলাম। একসময় দুজনেই দুজনকে আবিষ্কার করলাম নতুন ভাবে। একপর্যায় আদিমতায় দুজনে মত্তদিঘীর জলে কখনো তুমি কখনো আমি উন্মাদের মত সাঁতার কাটলাম।

কিন্তু সেই তুমি কেমন করে আমায় একটি কথায় পর করে দিলে?আঘাত দিলে? তোমাকে ছেরে থাকতে অনেক কষ্ট হবে যেনেও দুরে সরে গেলাম যাতে তুমি বুঝতে পার আমায় কত্ত ভালোবাস। আমি তোমাকে বুঝাতে চাই সত্যিই তুমি আমায় অনেক ভালোবাস।

আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন আচরন করতে পারোনা। নিশ্চয়ই তুমি বিপদের মধ্যে আছ। আমি তোমার কিছু হলে বুঝতে পারি। তাই তোমার কাছ থেকে চলে আসার পরে আমি তোমার বন্ধু সাহেদ আর তোমার প্রানেশ্বরি তৃনার সাথে দেখা করে সব

জানতে পারি। তৃনার কাছেই জানতে পারলাম তোমার বোকার মত নেয়া সিদ্ধান্তের কথা। খুব রাগ করেছি আমি, খুব অভিমানও। তুমি আমায় অপমান করেছ সেজন্য নয় রাগ করেছি আমার কাছে তুমি লুকিয়েছ তাই। কেন বলনি আমায়? যাকে ভালোবাস তাকে যদি সব বলতেই না পার তবে কেমন ভালবাস?

আমি তৃনার কাছে টাকা দিয়ে এসেছি। তুমি কলেজে যাবে ফর্ম ফিলাপ করবে আর

পরীক্ষাও দেবে। তোমার পরীক্ষার পরে আমাদের দেখা হবে আর এটাই তোমার শাস্তি।

তুমি পড়াশুনা থেকে পিছপা হবে না এটা আমার দাবি।

আমার দ্বারা পড়াশুনা হবেনা রাজা। বাবা মা মিছামিছি আমায় নিয়ে জোরাজুরি করেন। তাই পালালাম। তাছারা আমার পড়াশুনারর দরকারটা কি? আমার রাজা পরলেই হল। পরান পাখির কি দরকার পড়াশুনার? আমি চাই আমার কাল রাজা খুব ভাল রেজাল্ট করুক। ধরে নাওনা এটা তোমার ভালবাসার পরীক্ষা।

ভাল থাক কাল রাজা

তুমি আমার কাল রাজা

ভালো রাজা

আমার ঘড়ের আলো রাজা।

ইতি

তোমার পরান পাখি

আমি চিঠিটা প্রায় একনিঃশাসে পরে ফেললাম। ভাবতে লাগলাম যে সুবর্ন আমায় এত ভালবাসে তাকে এতটা কস্ট কিভাবে দিলাম? এসময় মরে যেতে ইচ্ছা করছিল।

কিছুদিন পরে জানতে পারলাম সুবর্নই কাকিমার আঙটি চুরি করেছে। আমার

বুঝতে বাকি রইলনা সুবর্ণ কেন একাজ করেছে।

পরীক্ষা খুব সন্নিকটে চলে আসলো। আমি মনপ্রান দিয়ে পড়াশুনা করতে থাকলাম। ও মাঝে মাঝে বাহির থেকে কল করত আমায়। চিঠি আদান প্রদান ও চলত মাঝে মাঝে।

অবশেষে পরীক্ষা শুরু হল। পরীক্ষা শেষও হল। আর আমার সুবর্নের আমার বুকে ফেরার সময়ও হয়ে আসল।

আজ আসবে আমার সুবর্ন। ওর কাল রাজার কাছে। বিকেলে আসছে আমার সুবর্ন। সকালে কল করেছে। আমায় বলেছে বিকেল পাঁচটায় দিঘীর কাছে থাকতে। সবার আগে আমার সাথেই দেখা হবে আমার পরান পাখির। আমিতো যাবই আমার ভালবাসার কাছে।

ও আসবে বিকাল পাঁচটায়। কিছুতেই যেন আজ সময়টা যাচ্ছেনা। খুব অস্থির লাগছিল তাই দুপুরেই বেরিয়ে পরলাম।

দিঘীর কাছে একা দাঁড়িয়ে আছি। অনেক রঙিন স্বপ্ন ভাসছে চোখে। আমার একমাত্র ভালোবাসার কাছের মানুষটি এতদিন পর আমার কাছে আসছে ভাবতেই কেমন যেন শিহরিত হয়ে যাচ্ছিলাম।

পাঁচটা বেজে গেছে আমার সুবর্নের আসর সময়ও হয়ে আসছে। ৫.৩০ এখনও

আসছেনা কেন? আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮ টা বেজে গেছে আমার সুবর্ন তখনও আসেনি। টেনশনে খুব অস্থির লাগছিল।

আমাদের ভালবাসার কথা তৃনাকে বলেছি। ও জানে আমাদের ভালবাসার কথা। তৃনা আমাদের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করে। ওকে এই দিখল দিঘীর কথা বলেছি। এখানেই পার

করেছি আমাদের জীবনের অনেক মধুর সময়।

পিছন থেকে আমার কাঁধে কে যেন হাত রাখল। চকমকিয়ে উঠলাম এই ভেবে হয়ত আমার সুবর্ন এসেছে। আমার কাছের মানুষ এসেছে। আমি যাপটে ধরব,,,,,,,,,,,,,,, একি তৃনা এখানে কেন???

– তুই কেন? সুবর্ন আসবেতো।

– সুবর্ন বাড়িতে এসেছে।

– কেন? ওর এখানে আসার কথা। তুই কাভাবে জানলি ও বাড়িতে এসেছে?

– চল। সুবর্ণদের বাড়ি চল।

একি সুবর্নের বাড়িতে এত লোক কেন? ভাবতে লাগলাম তবে কি সুবর্নের বাবার কিছু!! না তা কি করে হয়,কাকার সাথে দুপুরেও কথা বললাম। ওই ত কাকা। তবে কি কাকিমা???? এজন্যই কি সুবর্ন দীঘির পারে যায়নি। এত্তবড় সবর্নাস হল সুবর্ণের!!

কিছুদুর যেতেই একটা এম্বুলেন্স দেখতে পাই। নিজেকেই প্রশ্ন করি এম্বুলেন্স কেন? তখনি কাকিমার গগন বিদারী আর্তনাদ শুনতে পাই। তবে কি আমার ই সবর্নাশ হল????

সাথে সাথে জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম আমার সুবর্ণ সাদা রঙের শুভ্র পোশাকে খাটিয়ায়

শুয়ে আছে।

সেদিন পাগলের মত কেঁদেছিলাম। জন্মের পরপরই অনেক কাছের আপন মানুষদের

হারিয়েছি, তবে তাদের কখনও উপলব্ধি করিনি। তবে সুবর্ণকে উপলব্ধি করতে হয়, না চাইলেও করতে হয়। ভেবছিলাম মরেই যাব কিন্তু আজো বেঁচে আছি। ভেবেছিলাম ওকে ছেরে কিভাবে থাকব তাও আছি,,,,তবে ওকে ভুলতে পারিনি। ভোলার চেস্টাও করিনা কখনো। ওকে আমি বড্ড ভালোবাসি। আমার সুবর্ন আজও বেঁচে আছে আমার অস্তিত্বে।

*****সমাপ্ত*****

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.