
রাফিন
কেমন যেন একটা নতুন এবং মজাদার শব্দ লাগছে না? আসলেই একটা মজাদার শব্দ।প্রেমে পড়লে প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের শরীরের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।যাকে ভালোবেসে ফেলেছেন তাকে দেখলে পেটে এবং বুকের ভেতর অদ্ভুত চাপ সৃষ্টি হয়।তার সাথে কথা বলার সময় প্রচন্ড আবেগের একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয়।এই অনুভূতির একটা নাম আছে।ইংরেজিতে এই অনুভূতিকে বলে “বাটারফ্লাইস ইন স্টোমাক”।বাংলায় লিখলে দাঁড়ায় “পাকস্থলিতে প্রজাপতি”।
আপনি যদি সত্যিই সত্যিই কাউকে ভালোবেসে ফেলেছেন তবে আপনার এই অনুভূতি সৃষ্টি হতে বাধ্য।আপনি “পাকস্থলিতে প্রজাপতি” অনুভূতিতে আক্রান্ত।মানুষের প্রত্যেকটা অনুভূতি সৃষ্টির পেছনে কারন থাকে।এই অনুভূতি সৃষ্টির পেছনেও একটা কারন আছে।প্রেমে পড়লে মানুষ ঘাবড়ে যায়।ঘাবড়ে যাওয়ার ফলে পেটে একধরনের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে।এই হরমোনের নিঃসরণের কারনেই আপনি বুকে এবং পেটে অদ্ভুত এক অনুভূতি উপলব্ধি করেন।
প্রেম সুখ? অনেক আনন্দের।প্রেমে দুঃখ? এটাও আনন্দের।প্রেমের সাথে জড়িত সবকিছুই অদ্ভুত আনন্দের।প্রেমে পড়লে যেই হরমোনের নিঃসরণ ঘটে তার ফলে সৃষ্ট অনুভূতিও আনন্দের।প্রেম-আনন্দ।আনন্দ-প্রেম।জুটি হয়ে থাকে চিরকাল।।।
আমার এই হরমোন মনে হয় একটু বেশি নিঃসরণ হয়। নইলে আমি এতো প্রেমে পরতাম না। জীবনে প্রতিটি ভালোবাসাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে আমার। এখন তো মনে হতে শুরু করেছে ভালোবাসা বলে কিছুই নেই।
সম্পর্কের শুরুতে যে মানুষ টা আমায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারত না, এখন আমাকে সেই মানুষের আর ভাল লাগে না। এখন তার নতুন কাউকে আমার জায়গায় চাই। তাই আমারও উচিৎ তাকে রিপ্লেস করা। জাফর ইকবালের নিঃসঙ্গ গ্রহচারীর মতো যদি অন্য কোন গ্রহে চলে যেতে পারতাম ভাল হত। কিংবা হিমুর মতো চলে যেতাম বনে। এখন এই সমাজ টা আর ভাল লাগে না। সবাই যেন মুখোশ পড়া সো কল্ড ভদ্র লোক……।।
কথা গুলো আমায় রহস্য বলে ছিল। অনেক দিন ছেলে টাকে দেখি নি। কোথায় আছে কি করছে কে জানে। রহস্যের এই সব উদ্ভত কথা শুনে প্রথমে অরে আধা পাগল মনে করেছিলাম। কিন্তু ছেলেটা পুরাই পাগল। সাল ২০২৫, যখন আমার সাথে ওর পরিচয় হয় । সে কি দীপ্তি ছিল ওর। সাউথ লস অ্যাঞ্জেলেস এর ওয়েস্টার্ন এভিনিউ তে পাশাপাশি রুমে থাকতাম আমরা। ছেলে টা আমায় দাদা বলে ডাকতো।
ওই তল্যাটে আমি আর রহস্য ছাড়া আর কোন বাঙালী ছিল না, তাই আমাদের বেশ ভাল খাতির জমেছিল। দুজন দুজনের পেটের খবর পর্যন্ত সেয়ার করতাম।
রহস্য বাংলাদেশি এক ছেলে ভালোবাসতো, ছেলে টাকে নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্যে কাগজ পত্র ঠিক করতেছিল। সেটা দেখেই বুঝেছিলাম রহস্য ছেলেটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। অনেক কষ্টে শিষ্টে অবশেষে ছেলে টা লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে পৌছাল। ওদের ভালোবাসা দেখে আমার অনেক কষ্ট লাগতো, আমার ফেলে আসা দিন গুলিকে মনে পড়তো। সেই সাথে ওদের জন্য দোয়া করতাম যাতে রহস্যের জীবনে কষ্ট না আসে।
আমি যেন রহস্যের মাঝে নিজেকে খুজে পেলাম, আমার মতই সে পাগলের মতো ভালবাসতে জানে। তাই আমার ভয় হতে লাগলো, রহস্যের জীবনে না আবার আমার জীবনের প্রতিফলন ঘটে। মাঝে অনেক সময় কেটে গেলো। বিএফ আসার করণে এখন আর রহস্যের সাথে আড্ডা হয় না সেই ভাবে। এক দিন আমি পার্কে হাঁটছিলাম দেখি রহস্য বসে আছে, চোখে জ্বল।
আমায় দেখে ভ্যা… করে কেদে দিলো। বলছে দাদা আমার সব শেষ। এই কথা বলাতেই আমার আর বুঝতে বাকি রইল না বেপার টা। আমি বললাম কাঁদিস না, এই রকম আমার জীবনেও হয়েছে। তুই বাংলাদেশ থেকে তুলে এখানে এনেছিলি। আর আমি একটা ছোট শহর থেকে তুলে ঢাকায় এনেছিলাম। যাকে নিয়ে সারা জীবনের সব স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। কিন্তু ট্রু লাভ বলে কিছু নেই, সব মোহ আর মায়া। ওর মায়া কেটে গেছে তোর প্রতি। তুই সেটা যত জলদি বুঝবি ততই ভাল হবে তোর জন্য। এই কথা গুলো ওকে বলতে গিয়ে নিজের চোখও ভরে আসছিলো। বুঝলাম আমি অভিনয় করছি, বুঝলাম যে আমিও এখন রহস্যের মতই পাগলের মতো ভালোবাসি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে। এখনও তার জন্যে আমার “পাকস্থলিতে প্রজাপতি” হয়। থাক না আর এক দিন বলব আমার ভালোবাসার সেই মানুষটির কথা, যার জন্য আমায় ফিরে যেতে হবে সাল ২০১৫ তে…।।
*****(সমাপ্ত)*****
উৎস: অন্যভুবন