
শাহরিয়ার সুমন
১.
দীর্ঘ সাতবছর পর আমি গ্রামে ফিরলাম, সবকিছুই যেন আমূলে বদলে গেছে, হারিয়ে গেছে আমার সেই চেনা গ্রাম, শহরের হাওয়া লেগেছে গ্রামেও, এখন গ্রামের ভেতরে পাকা রাস্তা, ঘরে ঘরে টিভি, ফ্রিজ, ডিশের লাইন, হয়তো বদলে গেছি আমি নিজেও, সেদিনের সেই হ্যাংলা পাতলা ছেলেটি আজ পচিশ বছরের টগবগে তরুণ, গ্রামের অনেকেই এখন আমাকে দেখে চিনতে পারছে না, সাত বছরে মানুষ হয়তো অনেকটাই বদলে যায়। আজ এতদিন পর গ্রামে ফিরে আমি যেন পথ ঘাটই সব ভুলে গেছি, কিন্তু মানুষ কি কখনো তার শিকড়কে ভুলে যেতে পারে? এখানেই তো আমার জন্ম, আমার বড় হওয়া, শৈশব, কৈশোর, যৌবনের প্রথম অনুভুতি, জীবনে প্রথম কাউকে ভাল লাগা, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, এই গ্রামের প্রতিটি ধুলিকণার সাথে মিশে আছে আমার জীবনের হাজারও স্মৃতি, পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন এই গ্রামে যে আমাকে ফিরে আসতেই হবে, এখানেই আছে আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটি, তাকে নিয়ে রাতের পর রাত হাজারও স্বপ্ন বুনেছি, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি, তবে এইবার গ্রামে আসার পেছনে আমার আরেকটা উদ্দেশ্য আছে, সেটা হলো প্রতিশোধ, বহু বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি একটা মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। কঠিন শাস্তি যা দেখে শিউরে উঠে মানুষ, তবে কি শাস্তি দেব সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি, আগে মানুষটাকে খুজে বের করি। যদিও ওই শয়তানটাকে আমার খুন করা উচিত, তবে না, আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যেন সে আমৃত্যু তা মনে রাখে, সে নিজেই প্রতিদিন তার মৃত্যু কামনা করে।
২।
আমার নাম হাসান, ঐ সময় আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি, সাজিদ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে ছিল সাজিদ। হয়তো এখনো আছে। আমি আজও তাকে ভুলতে পারিনি। সাজিদ ছিল একটু মেয়েলী প্রকৃতির, এই জন্য স্কুলে তাকে কম অপমান সহ্য করতে হয়নি। স্কুলে ছেলেরা তাকে হাফ লেডিস বলে ডাকতো। সবাই মিলে ওর নাম দিয়ে ছিল সাজিদা বেগম। স্কুলের বদ ছেলেগুলো ইচ্ছে করেই ওকে সবার সামনে অপদস্থ করতো। পেছন থেকে হাফ লেডিস বলে চিৎকার করতো, ইচ্ছে করে পেছন থেকে ধাক্কা দিত। কখনো আবার ওর বিশেষ অঙ্গে হাত দিয়ে মজা করতো, ছেলেটা এত সহজ সরল ছিল যে খুব একটা বেশী প্রতিবাদও করতে পারতো না, ওর গলার স্বর একটু মেয়েলী বলে কেউ কেউ ওকে জিজ্ঞাসা করতো, ‘ঐ, তুই ছেলে না মেয়ে? তোর গলার আওয়াজ তো পুরা মেয়েদের মত” পেছন থেকে কেউ আবার বলে উঠতো, ওই প্যান্ট খুলে দেখ, তাহলেই বুঝা যাইব ছেলে না মেয়ে। আমি যদি কখনো ওর হয়ে প্রতিবাদ করতে যেতাম তাহলে উল্টো আমাকে কথা শুনতে হতো। বলতো, “ঐ, তুই কি ওই হিজড়াটার জামাই নাকি যে ওর হয়ে ওকালতি করছিস? আমার সাথে ওর ভাল বন্ধুত্ব ছিল বলে অনেকেই আমাদের দুজনকে ফাজলামি করে জামাই বৌ বলে ডাকতো। এর জন্য পরে স্কুলের ভেতরে সাজিদ আর আমার সাথে তেমন একটা মিশতে চাইতো না, আমার থেকে দূরে দূরে থাকতো। সে কখনো চাইতো না, তার জন্য আমাকে কারও কাছে অপমানিত হতে হোক। আমি যদি কখনো ওকে বলতাম, তুই স্যারদের কাছে নালিশ করতে পারিস না? সে বলতো, নালিশ করে কি হবে বল? আল্লাহই তো আমাকে এমন করে বানাইছে, আল্লাহ আমাকে মানুষের খেলার পুতুল কইরা বানাইছে, তাই ওরা আমারে নিয়ে খেলতাছে, ওদের দোষ দিয়া কি হইবো? বেশিরভাগ সময়ই সাজিদ কিছু বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো, ওর চোখে ছিলে চাপা কান্না যা শুধু আমিই দেখতে পেতাম, আর কেউ না। ওর জন্য কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যেত, কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারতাম না, নীরব দর্শক হয়ে শুধু চেয়ে থাকতাম। কে জানে হয়তো সবার মুখে হাফ লেডিস ডাকটা শুনতে শুনতে সাজিদ নিজেও নিজেকে হিজড়া বলে ভাবতে শুরু করেছিল। ঐ সময়ে আমি নিজেও ঠিক বুঝতাম না হিজড়া কি? বড় ভাইদের জিজ্ঞাসা করলে বলতো হিজড়া হলো যারা অর্ধেক নারী অর্ধেক পুরুষ, কিন্তু একটা মানুষ কিভাবে একই সাথে নারী পুরুষ দুটোই হতে পারে সেটা আমার মাথাতেও আসতো না। কিন্তু এখন আমি জানি সাজিদ হিজড়া ছিল না, সে ছিল আমার মতই একজন সমপ্রেমী, হয়তো কিছু হরমোনের আধিক্যের কারণে সাজিদের ভেতরে কিছুটা মেয়েলীপনা ছিল। কিন্তু বিধাতা প্রদত্ত এই সামান্য দোষের জন্য আমাদের সমাজ একটা পরিপূর্ণ ছেলেকে মানসিকভাবে হিজড়া বানিয়ে দিয়েছিল। অন্যের দুর্বলতা নিয়ে তামাশা করার মাঝে আমরা নিজেদের পুরুষত্ব জাহির করি, হায়রে মানুষ!
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কেন আমরা একজন মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে সম্মান করতে পারি না? কি লাভ আমাদের এই শিক্ষা দীক্ষার? জ্ঞান বিজ্ঞানে এত আধুনিক হয়েও আমাদের মন মানসিকতা পড়ে রয়েছে এখনো সেই আদিম যুগে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন ব্যক্তি আজও বিশ্বাস করে হিজড়ারা হলো জ্বীনদের সন্তান, সেই সমাজে সমপ্রেমীদের জায়গা কোথায়? সেই সময়ে আমি নিজেও জানতাম না সমকামিতা আসলে কি? আমি শুধু বুঝতাম সাজিদের মত আমিও অন্য সবার থেকে আলাদা। সৃষ্টিকর্তার কোন অভিশাপের দরুন মেয়েদের প্রতি কোন আকর্ষন অনুভব করি না আমি, নিজে একজন ছেলে হয়েও ছেলেদেরকেই আমার ভালো লাগে, নগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকি নিজের শরীরের দিকে, প্রচন্ড আকর্ষন অনুভব করি তখন। আবার নিজের পাপে নিজেই অপরাধবোধে ভুগি, নিজেই তখন নিজেকে শাস্তি দেই। নিজেকে একজন মানসিক রোগী বলে মনে হতো আমার, যৌনবিকৃতি সম্পন্ন মানুষ। এইসব কথা কাউকে বলতেও পারতাম না, এমন কি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সাজিদকেও না। ভেতরে ভেতরে কি যে কষ্ট, একটা কথাই শুধু ভাবতাম কেন আল্লাহ আমাকে এমন অভিশাপ দিয়ে দুনিয়াতে পাঠালো, কি দোষ ছিল আমার?
৩।
দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একদিন বৃষ্টির দিনে টিফিন আওয়ারে বেপরোয়া স্বভাবের কিছু ছেলে স্কুলের সবার সামনে সাজিদকে চ্যাংদোলা করে মাঠের কাদার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল, সেই প্রথম সাজিদ বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে সারা শরীরে কাদা নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। এই খবরটা সেবার স্যারদের কানেও গিয়েছিল। পরদিন সকালে স্কুলের এসেম্বলিতে সেই চারটা ছেলেকে আমাদের প্রধান শিক্ষক কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। জোড়া বেত দিয়ে প্রত্যেককে ত্রিশ বেত করে মারা হয়েছিল, এরপর থেকে কখনোই কেউ আর সাজিদকে অপমান করার সাহস পায়নি, তারপরও কেন জানি সাজিদ আর স্কুলে যেতে চাইতো না, স্কুলে না গিয়ে সে ঘুরে বেড়াত বনে জঙ্গলে, নদীর পাড়ে, তার একমাত্র সঙ্গী ছিলাম আমি। সাজিদ মাছ ধরতে খুব পছন্দ করতো, ছিপ দিয়ে মাছ ধরা তার কাছে নেশার মত ছিল। নদীতে ছিপ ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা চুপচাপ বসে থাকতো, আমিও তার পাশে বসে থাকতাম। সাজিদ স্কুলে যেত না বলে আমারও স্কুলে যেতে মন চাইতো না, সাজিদের পাশে থাকতে পারাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার।
হ্যাঁ, আমি সাজিদকে ভালবাসতাম, কিন্তু কখনোই তা বলা হয়নি, আর সাজিদকেই বা কি বলব, আমি নিজেও কি জানতাম যে সাজিদের প্রতি আমার যে টান, যে মায়া এর আরেক নাম ভালোবাসা? ভালোবাসা কি সেটাই তো তখন ভালভাবে বুঝতাম না। জানতাম ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রেম হয়, কিন্তু ছেলের সাথে ছেলের যে কোন শারীরিক বা মানসিক কোন সম্পর্ক হতে পারে সেটা তো ঐসময় আমার কল্পনাতেও ছিল না। আমি শুধু বুঝতাম সাজিদ আমার অনেক আপন, যেন আমার নিজের শরীরের একটা অংশ। সে কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পাই, ওকে একটু খুশী দেখলে আমারও খুব আনন্দ হয়। ভালোই চলছিল আমাদের নিষ্পাপ বন্ধুত্ব, ধীরে ধীরে বয়ে চলছিল আমাদের জীবন নদী। সময়ের সাথে স্কুল শেষ করে আমরা কলেজে উঠলাম, দুজনে একসাথে কলেজে যাওয়া, স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া আর সারাদিন টই টই করে ঘুড়ে বেড়ানো এই ছিল আমাদের জীবন। এর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলো, দুজনেই কোনরকম পাশ করে গেলাম। সামনেই এইচএসসি পরীক্ষা। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যেভাবেই হোক আমাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে, তাই পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, ঘর থেকেও তেমন বের হতাম না, শুধু বিকালে মাঝে মধ্যে বের হলে সাজিদের সাথে দেখা হতো। দুজনে মিলে নদীর পাড়ে হাটতে যেতাম, ঐসময়ে সাজিদের মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করলাম। আগের সেই গোমড়ামুখো সাজিদ এখন প্রচুর কথা বলে, কথায় কথায় হাসে, উচ্ছল, প্রাণবন্ত কিন্তু আমার বড় অচেনা। সাজিদকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছিল আবার কিছুটা হিংসেও হচ্ছিল। কারণ সাজিদের সব কথাই শুধু একজনকে ঘিরে, তিনি সাজিদের চাচাতো ভাই, আবিদ।
আবিদ ভাই ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করেন, মাঝে মধ্যে ছুটি পেলে বাড়ি আসেন। এখন উনার পরীক্ষা শেষ, আবার ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে, তাই এবার নাকি মাসখানেক থাকবেন। সাজিদ এখন তার সেই চাচাতো ভাইকে নিয়েই ব্যস্ত। সারাক্ষণ শুধু তার মুখে একটাই কথা আবিদ ভাই। সাজিদের মুখে আবিদ ভাইয়ের প্রসংশা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে যেতা। কেন জানি আমি আবিদ ভাইকে একদম সহ্য করতে পারতাম না, তাই তখন ইচ্ছে করেই বাসা থেকে কম বের হতাম। সাজিদ এলে বলতাম অনেক পড়া বাকি, সামনে পরীক্ষা, তাই এখন আর বাসা থেকে বের হব না, তাছাড়া আমার জন্য সাজিদেরই বা সময় ছিল কোথায়? সে তো তার আবিদ ভাইকে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।
সাজিদের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম সাত বছর আগে অতীতের সেই দিনগুলোতে। গ্রামে আসার পর থেকে আমার শুধু সাজিদের কথাই মনে পড়ছে, সেই দিনগুলো আজও আমার চোখের সামনে ভাসে। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর তাড়াতাড়ি ঘুমুতে গেলাম, অনেক পথ জার্নি করে এসেছি, শরীর খুব ক্লান্ত, তাছাড়া কাল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই একজনকে খুজে বের করতে হবে, সেজন্যইতো এতদিন পর আমার গ্রামে ফেরা। ঘুমানোর আগে প্যান্ট চেঞ্জ করতে হবে, ব্যাগ থেকে লুঙ্গি বের করতে গিয়ে বেরিয়ে পড়লো বহু পুরনো সাজিদের সেই ডায়রি। এটাই আমার কাছে সাজিদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন, বহু যতনে আগ্লে রেখেছি এই ডায়রিকে। আমি যেখানেই যাই না কেন, এই ডায়রিটা সবসময় আমার সাথে থাকে। যখন আমি এটা স্পর্শ করি, আমার মনে হয় সাজিদ যেন আমার সামনেই বসে আছে, যখন তার লেখাগুলো পড়ি মনে হয় সাজিদ যেন আমার সাথেই কথা বলছে। পুরনো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ডায়রির উপরের মলাট, পাতাগুলো কিছুটা হলদেটে হয়ে গেছে, তারপরও এই ডায়রির মুল্য আমার কাছে অনেক বেশী, কত হাজার বার পড়েছি আমি এই ডায়রি। এই ডায়রিটা না থাকলে তো আমার কখনো জানাই হত না সেই মুখোশধারী জানোয়ারটার কথা, যার জন্য সাজিদের জীবনটা এভাবে শেষ হয়ে গেল। আজ অনেকদিন পর ডায়রির কিছু পাতা আবার পড়তে শুরু করলাম।
২৪/০৩/২০০৭
আবিদ ভাইকে আমার এত ভালো লাগে কেন? কি আছে উনার মধ্যে? লোহা যেমন চুম্বককে আকর্ষন করে, আবিদ ভাইও ঠিক তেমনি তীব্রভাবে আমাকে আকর্ষন করে। আমার সারাক্ষণ উনার পাশে থাকতে ইচ্ছা করে, কি সব ভয়ঙ্কর আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরে, আর আমার সব চিন্তাই আবিদ ভাইকে নিয়ে। ভাগ্যিস মানুষের চোখ দেখে তার মনের কথা টের পাওয়া যায় না, না হলে নির্ঘাত আমার আত্মহত্যা করা লাগতো। যদি কোনদিন আবিদ ভাই আমার মনের কথা টের পেয়ে যায়, তাহলে আমি কিভাবে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো? আবিদ ভাই অনেক সুন্দর, এত সুন্দর পুরুষ আমি আমার জীবনে কখনো দেখিনি। আল্লাহ উনাকে এত সুন্দর করে কেন বানাইছে? আরেকটু কম সুন্দর হলে কি ক্ষতি হতো? আমি এখন রাতে আবিদ ভাইয়ের সাথে ঘুমাই। আবিদ ভাই ঘুমায় আর আমি সারা রাত উনার পাশে জেগে বসে থাকি, আমার ঘুম আসে না, অপলক তাকিয়ে থাকি আবিদ ভাইয়ের ঘুমন্ত মুখটির দিকে, এত মায়া কেন ঐ মুখে? আমার মনে হয় আমি সারাজীবন শুধু ঐ মুখটির দিকে তাকিয়েই আমার জীবন পার করে দিতে পারব!
এখন গরমকাল, মাথার উপর ফুলস্পীডে ফ্যান ঘুরছে, তারপরও আবিদ ভাইয়ের শরীর ঘামে ভিজে যায়, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। যখন কারেন্ট চলে যায়, প্রচন্ড গরমে আবিদ ভাইয়ের খুব কষ্ট হয়, আমি হাত পাখা দিয়ে তাকে বাতাস করি, বড় ভাল লাগে আমার। এখন গভীর রাত, শুধু খোলা জানালা দিয়ে চাদের আবছা রুপালী আলো এসে পড়ছে আবিদ ভাইয়ের শরীরে। গরমে শার্ট খুলে ফেলেছেন তিনি, খালি গায়ে শুধু একটা লুঙ্গি পড়ে ঘুমাচ্ছেন, তার বুকে ঘন লোম, খুব ইচ্ছে করে সেই বুকে মাথা রাখতে, শুধু একবার আবিদ ভাইকে জড়িয়ে ধরতে। মাঝে মাঝে ভাবি যদি একবার ঘুমের ঘোরে আবিদ ভাইকে জড়িয়ে ধরি তাহলে এমন কি আর মহাভারত অশুদ্ধ হবে? হয়তো তিনি কিছুই মনে করবেন না, তারপরও খুব ভয় লাগে আমার, বুকটা ধুপধুপ করে, জোর করে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখি, হাত দিয়ে স্পর্শ করতে গিয়েও সরিয়ে নেই হাত। আমি এত ভীরু কেন? সবকিছুতেই বড় ভয় হয় আমার। চাঁদের আলোতে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আবিদ ভাইয়ের লুঙ্গিটা হাটুর অনেকটাই উপরে উঠে গেছে, আমার সারা শরীরে যেন বিদ্যুত বয়ে যায়, শরীরের সব পশম খাড়া হয়ে যায়, তলপেটের নীচে অদ্ভুত শিরশিরে ভাব, খুব ইচ্ছে করে একবার ছুয়ে দেখি, মনে হয় ইস! লুঙ্গিটা আরেকটু উপরে উঠলে কি এমন ক্ষতি হতো?
সতের বছরের আমার জীবনে এই প্রথম কোন পুরুষের এতটা কাছে আসা, জীবনে প্রথম কারও প্রতি এমন আকর্ষন অনুভব করা, সবকিছুই খুব অদ্ভুত লাগছে আমার, আবিদ ভাইয়ের শরীরের অতি সামান্য আবৃত অংশটুকু ভয়ঙ্করভাবে আকর্ষন করছে আমাকে, মাথায় শুধু খারাপ চিন্তা আসে, নির্ঘুম আমি সারারাত জেগে থাকি।
২৬/৩/২০০৭
আমি এখন সারাক্ষণ আবিদ ভাইয়ের সাথেই ঘুরি, সামনে পরীক্ষা, জানি পড়াশোনা করা দরকার। কিন্তু এখন আমার পড়তে একটুও ভালো লাগে না। বই খুলে বসে থাকি আর শুধু একজনের কথা ভাবি, আমার যে শুধু তার কথা ভাবতেই ভালো লাগে। আমি জানি এবার আমি নির্ঘাত পরীক্ষায় ফেল করব, অবশ্য এতে আমার তেমন কিছু যায় আসে না, এই যে সারাক্ষণ আবিদ ভাইয়ের সাথে থাকতে পারছি এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আমার জীবনে আর কি হতে পারে? আবিদ ভাই যখন পুকুরে গোসল করে, আমি তখন তার লুঙ্গি আর গামছা নিয়ে পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে থাকি, অসম্ভব ভালো লাগে আমার। আবিদ ভাইয়ের ভেজা শরীরে ঘন কালো লোমগুলো গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে, ভেজা লুঙ্গিতে তার মেদহীন শরীর আমার চোখে যেন নেশা ধরিয়ে দেয়। আমি মাতালের মত চেয়ে থাকি তার নগ্ন উরুর দিকে।
– কি দেখিস অমন করে? আবিদ ভাই ভেজা লুঙ্গি খুলে শুকনো লুঙ্গি পরতে পরতে বললেন।
-কই না, কিছু না, আমি লজ্জায় মাটির দিকে তাকাই।
– আচ্ছা সাজিদ, একটা কথা বলতো, আমি দেখতে কেমন?
-কেমন আবার, তুমি তো অনেক সুন্দর, মেয়েরা নিশ্চয় তোমাকে অনেক পছন্দ করে?
– হ্যাঁ, তা করে, আমাকে তোর ভাল লাগে?
– তোমাকে খারাপ লাগার কি আছে, হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
– না এম্নি জিজ্ঞেস করলাম, চল ঘরে যাই।
সেদিন রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ আবিদ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
– আবিদ ভাই কি করেন?
– সাজিদ, তোকে একটা কথা অনেকদিন ধরে বলতে চাচ্ছি কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছি না, তোকে না আমার ভীষণ ভালো লাগে, আমি মনে হয় তোর প্রেমে পড়ে গেছি।
– কি বলেন এইসব পাগলের মত, ছেলের সাথে ছেলের আবার প্রেম হয় নাকি?
– হয় না তোকে কে বললো? ছেলে-মেয়ে যেমন প্রেম হয়, ছেলে-ছেলেও ঠিক তেমনি প্রেম হয়।
– কি সব আজেবাজে কথা বলেন আপনি?
– আমি কোন বাজে কথা বলছি না, আমি জানি তুইও আমাকে অনেক পছন্দ করিস।
– আপনি আমার ভাই, তাই আপনাকে পছন্দ করি।
– তুই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল, তুই আমাকে ভালোবাসিস না।
আমি আর মিথ্যে বলতে পারলাম না, শুধু চুপ করে রইলাম। আবিদ ভাই আমার মুখ তুলে চোখে চোখ রাখলেন, তার চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল যা অগ্রাহ্য করার শক্তি আমার ছিল না। আমি তার বুকের মধ্যে মুখ লুকালাম, কি যে ভাল লাগছিল তখন। আবিদ ভাইও আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলেন, আমার ঠোঁট জোড়া কামড়ে ধরলেন, জীবনে এই প্রথম আমি কোনও পুরুষের ঠোঁটের স্বাদ পেলাম, নেশা ধরানো একটু লোনা ঝাঁঝালো সেই স্বাদ। তিনি চুমো খেতে লাগলেন আমার ঘাড়ে, গলায়, বুকে, নাভিতে, তার আদরগুলো পাগল করে তুলছিল আমাকে। তার শরীর থেকে ভেসে আসছিল কামার্ত পুরুষের বুনো গন্ধ। নিজের লুঙ্গির গিঁটটা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমার শরীরে, জীবনে প্রথম এমন অনুভুতি, মনে হচ্ছিল আমি যেন সুখের সাগরে ভাসছি। সেদিনের সেই রাত, সেই অনুভুতি আমি কখনো ভুলতে পারব না, সেই রাতের কথা ভাবলে আমার এখনো শরীরে সমস্ত ইন্দ্রিয় জেগে উঠে।
২/০৪/২০০৭
আবিদ ভাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হয়। আমি কি কখনো ভেবেছি যে আবিদ ভাইয়ের মত মানুষ আমার জীবনে আসবে? এত সুখও লেখা ছিল আমার কপালে? জীবন এত আনন্দের কেন? আবিদ ভাই যখন আমাকে আদর করেন, মনে হয় আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ, এখন তিনি সারারাত আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমান। আমি কি পারব সারাজীবন আবিদ ভাইকে এভাবেই ধরে রাখতে? আমি যে তাকে অনেক ভালোবাসি, আমৃত্যু তার হাত ধরেই পথ চলতে চাই। এই কথাগুলো কাউকে খুব বলতে ইচ্ছে করে। হাসান আমার এত ভালো বন্ধু, অথচ তাকেও কিছু বলতে পারিনা। খুব ইচ্ছে হাসানকে সবকিছু খুলে বলি, কেন নিজের এত কাছের বন্ধুটাকেও বলতে পারি না জীবনে প্রথম ভালো লাগার কথা, ভালোবাসার অনুভুতিগুলো? জীবনে এমন কিছু কথা থাকে যা কাউকেই বলা যায় না।
২/০৫/২০০৭
আজ একুশ দিন হল আবিদ ভাই ঢাকা চলে গেছেন, এরমধ্যে একবারের জন্য কোন যোগাযোগ হয়নি, বাবার মোবাইল থেকে অনেকবার ফোন করেছি, কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমার কোনকিছুই ভাল লাগছে না, এক সপ্তাহ পরেই আমার পরীক্ষা শুরু হবে, অথচ আমি কিছুই পড়তে পারছি না, এবার আর আমার পক্ষে পাশ করা সম্ভব হবে না। এই মানুষটার জন্য এত কষ্ট হচ্ছে কেন? খেতে ইচ্ছে করে না, রাতে ঘুম আসে না, সারাক্ষণ শুধু অস্থির লাগে, মনে হয় শুধু একবার যদি মানুষটাকে দেখতে পারতাম।
৬/০৩/২০০৭
আমার জীবনটা এমন হল কেন? আজ ভোরে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আবিদ ভাইয়ের কাছে, জীবনে প্রথম ঢাকায় এলাম। কেন যে ঢাকায় গিয়েছিলাম আমি নিজেও জানি না, না গেলেই হয়তো ভালো ছিল, তাহলে অন্তত পৃথিবীর এই কদর্য রুপটা আমাকে দেখতে হত না। ঢাকার পথঘাট আমি কিছুই চিনি না, তবুও অনেক কষ্টে আবিদ ভাইয়ের বাসা খুজে বের করলাম। তখন প্রায় দুপুর হয়ে গেছে, সকাল থেকে কিছু খাওয়াও হয়নি আমার। আমি তার দরজায় অনেকক্ষণ ধাক্কা দিলাম কিন্তু কেউ দরোজা খুললো না, প্রায় বিশ মিনিট পর আমি যখন নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাব ভাবছি, আবিদ ভাই তখন দরজা খুললো। আমাকে দেখে তিনি অবাক, সেই সাথে বিরক্ত, তার খালি গা, পরনে একটা অগোছালো লুঙ্গি। দরজার ফাক দিয়ে আমি দেখতে পেলাম বিছানায় একটি অল্পবয়সী মেয়ে শুয়ে আছে, এতক্ষণ ভেতরে কি চলছিল তা বুঝতে আমার আর বাকী রইলো না। আবিদ ভাই তার মানিব্যাগ থেকে আমার হাতে একটি পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, তুই ঘন্টাখানেক বাইরে ঘোরাঘুরি কর, বিকেলের দিকে বাসায় ফিরিস, আমি এখন একটু বাইরে যাব। আমাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি দরজা লাগিয়ে দিলেন। একবার ঠিক করলাম সেখান থেকেই গ্রামে ফিরে যাব, কিন্তু তারপর মনে হলো, না, আবিদ ভাইয়ের সাথে আমার একটা শেষ বোঝাপড়া করা দরকার। আমি বিকেলে বাসায় যেতেই তিনি আমার সাথে অনেক রাগারাগি করলেন, আমি কেন না জানিয়ে ঢাকায় চলে এসেছি, আমি নাকি খারাপ হয়ে গেছি, সামনে পরীক্ষা, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আজেবাজে চিন্তা করি, আরও কত কি? আমি মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সে নাকি তার বন্ধু, তারা একসাথেই পড়ে। তারপর আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি তোমার সব বান্ধবীদের সাথেই এরকম বিছানায় যাও?” আবিদ ভাই তখন সজোড়ে আমার গালে চড় বসালেন। তারপর অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি শুরু করলেন, শেষে বললেন, “ তুই কি ভেবেছিস, আমি তোকে ভালোবাসি? আমার কি মাথা পাগল হয়ে গেছে? এখানে আমার বান্ধবীর অভাব আছে নাকি যে তোর মত একটা হাফ লেডিসকে ভালোবাসতে হবে, নাকি দেশে মেয়ের আকাল পড়েছে? মনে রাখিস, তোর মত একটা হিজড়াকে দিয়ে শুধু শরীরের জ্বালা মেটানো যায়, কখনো ভালোবাসা যায় না। আর একটা কথা, গ্রামে তোর সাথে আমার যা কিছু হয়েছে, তাতে তুই আমি দুজনেই সমান আনন্দ পেয়েছি। তাই আমি যদি তোকে ব্যাবহার করে থাকি, তুইও আমাকে ব্যবহার করেছিস, হিসাব বরাবর।
আমি চুপচাপ গ্রামে ফিরে এলাম, আমার মুখে কোন ভাষা ছিল না, সত্যিই তো আবিদ ভাই কোন দুঃখে আমার মত একটা হাফ লেডিসকে ভালোবাসতে যাবেন? এখন রাত ১টা, সবাই ঘুমিয়ে গেছে, শুধু আমি একাই জেগে আছি, আর একটু পরে আমিও ঘুমিয়ে যাব চিরনিদ্রার দেশে। একজন পুরুষ হয়েও হিজড়া হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
ঘাসফুল আমার খুব ভালো লাগে, এত সুন্দর ফুলগুলো অথচ অনাদর অবহেলায় মানুষের পায়ের তলায় পড়ে থাকে, আমরা এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হই ঠিকই, কিন্তু গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধার মতো ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখি না, কখনো ভালোবেসে কাউকে উপহার দেই না বা মেয়েরা সখ করে কখনো খোপায় পড়ে না। মানুষ ইচ্ছে করে ঘাসফুলকে ছিঁড়ে তাচ্ছিল্যের সাথে অবহেলায় আবর্জনায় ছুড়ে ফেলে। আমার সাথে ঘাসফুলগুলোর কি অদ্ভুত মিল! আমার শরীরটাকে ভোগ করা যায় কিন্তু ভালোবেসে জীবনে ঠাই দেওয়া যায় না। আমি কি নিজ থেকে হাফ লেডিস হয়েছিলাম? কাউকেই কোন দোষ দিবো না। শুধু আল্লাহর কাছে একটাই প্রশ্ন, পুরুষই যদি বানাও, তাহলে কেন এমন হাফ লেডিস করে আমাকে সৃষ্টি করলে? জন্মের আগে আমি কি এমন পাপ করে ছিলাম যার জন্য আমাকে এভাবে শাস্তি পেতে হল? আল্লাহর কাছেই তো যাচ্ছি, এখন নিশ্চয় তিনি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
ডায়রির শেষ পাতাগুলো এখনো খালি, এই সাদা পাতাগুলো আজীবন ফাঁকাই থাকবে, আর কেউ লিখবে না, সবার উপর অভিমান করে আমার প্রিয়তম বন্ধুটি কখন যেন মেঘ হয়ে হারিয়ে গেছে অসীম শূন্যতার মাঝে। সাজিদ যে রাতে গলায় ফাঁস দেয়, তার পরদিন সকালে আমি ওর রুমে পড়ার টেবিলের উপর ডায়রিটা পাই। এটাই আমার কাছে সাজিদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন।
৪।
পরদিন সকালে আমি আবিদ ভাইকে খুঁজতে বের হলাম, তাকে শাস্তি না দিতে পারলে যে আমার বন্ধুর আত্মা কখনো শান্তি পাবে না। সবাই জানে সাজিদ গলায় ফাস দিয়ে মরেছে, কিন্তু এটা মিথ্যা। আসল সত্যিটা হলো সাজিদকে খুন করা হয়েছে, আবিদ ভাই হল সাজিদের প্রকৃত খুনী। শুনেছি সাজিদের চাচারা নাকি নতুন বাড়ি করেছেন, আবিদ ভাইও এখন গ্রামে থাকেন, বিয়ে করেছেন, একটা ছেলেও নাকি হয়েছে, অনেকদিন পর গ্রামে ফেরায় আমি তাদের ঘরটা খুজে পাচ্ছিনা, পথে আমার একটা ছো্ট ভাইকে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, সাইফুল, আবিদ ভাইয়ের ঘরটা কোনদিকে?
– হাসান ভাই, তুমি তো দেখি গ্রামের পথ ঘাট সব ভুলে গেছ।
– হ্যাঁ, সাত বছর হয়তো অনেক লম্বা সময়।
-তা আবিদ ভাইকে তোমার কি দরকার?
-তোর এত কথার কি প্রয়োজন? আবিদ ভাই তো এখন গ্রামেই আছেন, তাই না?
-গ্রামে না থাইকা কই যাইব? উনারে দেখলে বড় কষ্ট লাগে।
-কেন, কি হইছে উনার?
-ও আল্লাহ, তুমি তাহলে কিছু জানো না, আবিদ ভাইয়ের কোমর থেকে পা পর্যন্ত পুরা শরীর প্যারালাইজ হয়ে গেছে, তিনি এখন কিছুই করতে পারেন না, সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকেন। আগে তো ঢাকায় ভাল চাকরী করতেন, এখন সবকিছু গেছে, টাকা পয়সার বড় টানাটানি, ভাইদের দয়ায় কোনরকম সংসার চলে, উনার বৌটা যে কি সুন্দর, অথচ এই বয়সেই স্বামী থেকেও না থাকার মত, বাচ্চাটাকে দেখলে এত মায়া লাগে।
– কতদিন ধরে এই অবস্থা?
– এই তো বছর দুয়েক হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে, আমি যাইরে, পরে কথা হবে।
সাইফুল আমাকে আবিদ ভাইয়ের বাড়িটা দেখিয়ে দিল কিন্তু আমি আর সেখানে গেলাম না। আমার যাওয়ার প্রয়োজন অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। সত্যি সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন যিনি সব কিছু দেখছেন, সবাইকেই তার কৃতকর্মের ফল একদিন ভোগ করতে হয় হয়তো কিছুটা সময়ের ব্যাবধানে। আল্লাহই তাকে অনেক বড় শাস্তি দিয়েছেন, একটা মৃত শরীর নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু হতে পারে না।
আমি নদীর পাড়ে চলে এলাম, এই তো সেই পাড়, আমি আর সাজিদ মিলে কত এখানে মাছ ধরেছি, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পাড় করেছি দুজনে একসাথে। আমার জীবন নদীর মত এই নদীর পানিও শুকিয়ে গেছে, শুধু থেমে না থাকে না সময়, বয়ে চলে নিরবধি একদম ঠিক নদীর স্রোতের মত। তবুও ছোট্ট জীবনটা এত দীর্ঘ মনে হচ্ছে কেন? পৃথিবী এগিয়ে চলছে, শুধু আমিই দাড়িয়ে আছি স্থির, নিঃসঙ্গ। বড়ও একা আমি।
*****( সমাপ্ত )*****
উৎস: অন্যভুবন