
রুদ্রনীল
ঘড়িতে রাত ১২ টা বেজে ১।
নাহ! আর সহ্য হচ্ছে না।বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে, ফেসবুক এ লগইন করে বসে আছে নিখিল। অনেক চেনা অচেনা , পরিচিতজন ফোন, মেসেজ, ফেবুর ইনবক্সে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিচ্ছে।অনেকে ফোন করছে, কিন্তু কারো ফোন ই ধরতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।
আজ সারাটাদিন ছটফট করে কেটেছে। একটু আগেই ১২ টায় জুনের ২৩ তারিখ হল…… আজ নিখিলের জন্মদিন। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে নিখিলের কোনকালেই ঘটা করে জন্মদিন পালনের আয়োজন হয়নি । মাঝে সাঝে ইচ্ছে হয় করতে, পরিচিতজন, বন্ধু-বান্ধব , আত্মীয়দের ডেকে খাওয়াতে। কিন্তু না মন থেকে বলে , তুই বড় হয়েছিস নিখিল। এসব কি এখন আর তোকে মানায়? নিখিল মেনে নেয় । মনের এই গাথা কথাটা হয়তো কোনএকদিন কোন আপনজনই বলেছিল নিখিল কে।
ঘটা করে জন্মদিন পালন না করলেও লোকে উইশ করলে খুব ভালো লাগে। এক এক করে প্রত্যেকের জবাব দেয় যত্ন করে।
এতটা বছর এভাবেই কেটেছে, ২ বছর ধরে সব উলটপালট।
অতনু ফোন বা মেসেজ দেয়নি…… এই ভয়টাই পাচ্ছিল নিখিল। গাধাটার কিচ্ছু মনে থাকেনা। এত মন ভোলা হলে চলবে? রাগে ক্ষোভে ফেটে পরে সে। ভেবেছিল অতনুকে ফোন দেবেনা, মনে করিয়ে দেবেনা। ধুর, কাল থেকে আর কথাই বলবনা…… নিখিল ভাবে……। ৩ দিন শাস্তি… বুঝবা মজাটা।
ভাবে……… পারেনা…! তীব্র চাপা কষ্ট হয় তার। সবার প্রথমে তো অতনু’র ই ফোন দেবার কথা ছিল! অনেক ভালোলাগার কিছু কথা বলা উচিৎ ছিল!কালকের প্ল্যান নিয়া অনেক কথা বলার ছিল…।
এক দুই তিন করে ১২ টা বেজে ৫… নাহ আর পারা যায় না… মোবাইল টা বালিশের উপর থেকে তুলে হাতে নিল নিখিল। অতনু কে পিচ্চি বলে ডাকে সে, মোবাইলের ডায়াল প্যাড এর শুরুতেই অতনু, সবসময় থাকে…আজকেও ৪ বার কথা হইসে। তবুও একটু করে হলেও জন্মদিন কথাটা তোলেনি নিখিল।ভেবেছিল অতনু অন্তত এবার ভুলটা করবেনা…গত বছর কান ধরেছিল এই একই ভুলের জন্য!
বেশিক্ষণ রিং বাজলনা… ২/৩ টোন হতেই ও প্রান্তে অতনু……
-হ্যালো…… হেল্লও………
নিখিল চুপ করে থাকে, কিছু বলেনা…তার মনে যে ক্ষোভের পাহাড় জমেছে! তা গলতে সময় লাগবে। রাগে মাথা জ্বলছে, চোখ লাল হয়ে আছে …।
– আজ কত তারিখ?
– কি?
আর কিছু বলেনা নিখিল। এই একটা লাইন ই যথেষ্ট। অতনু বুঝে যাবে।
নিখিল মনে মনে খুশি হয়… তার ভালোবাসার মানুষটা এবার অস্থির হয়ে উঠবে। ফোন করবে, মেসেজ দেবে…
হোলও তাই… সাথে সাথে মেসেজ। অনেক মিষ্টি কথায় ভরপুর শুভেচ্ছা বার্তা। কথাগুলো অতনুর মনের নয়, সে লেখেনি। হয়তো কোন এক কথাশিল্পী সুন্দর করে কথাগুলো লিখেছিল একদিন।আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে ।
তবু নিখিল খুশি হয়। অতনুটা কিচ্ছু পারেনা… ও লিখতে পারেনা।।মনের কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা… পাগল একটা, খেয়ালী… আর এই পাগলকেই নিখিল জান দিয়ে ভালোবাসে… এই খেয়ালী টাকে সে ভুলতে পারবেনা কোনদিন। সে যে জীবনের সঙ্গী, মরনেই এর সমাপ্তি…
ফোন বেজে উঠে। পিচ্চি ভাসছে মোবাইল স্ক্রীনে । হাসিমাখা মিষ্টি সে মুখ। যে মুখ সরলতায় ভরা, যে চোখে অনেক কথা…
না ফোন ধরেনা নিখিল। যে কষ্ট অতনু দিয়েছে তার তিনগুন দিমু… ভাবে সে… ফোন বেজেই চলেছে।।পরপর ৭ বার!
নিখিল ফেসবুকে ঢোকে, জানে এখানে অতনু এবার আসবে।। ওর কথাগুলো যে শোনার জন্যে অস্থির হয়ে আছে সে। রাগ ভাঙ্গাবে, অভিমান গলাবে অতনু…
– শুভ জন্মদিন…
– তুই মর, শুয়োর!
– বিলিভ করো , আমার এমনিতেই তারিখ ,বার এইসব মনে থাকে না। কিন্তু এইমাসে আমি যতবার ক্যালেন্ডার দেখসি ততবার ২৩ এর কথা মনে পড়ছে। আর আজকে ফেবুতে ছিলাম না তাই এই দশা… সরি!!!!!!!
উত্তর দেয় না নিখিল… সে মজা পাচ্ছে! একজন তাকে কৈফিয়ত দিচ্ছে, তার মান ভাঙ্গাচ্ছে! তাকে সে বোঝে! নিখিল হাসে…।।
অতনু লিখে চলে…
– সামান্য তারিখ, বারে কি আসে যায়? জীবনে মরনে পাশে আছি ,থাকব। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্মদিনের ওয়াদা।।
-দরকার নাই। তুমি ফোন দিবানা আমারে… আমার গা জ্বলে!
– সারারাইত ফোন দিমু, যতক্ষণ না ধরবা… প্লিজ জান, ধরনা!
– আমি এইবার মোবাইল অফফ কইররা দিমু! তোমারে আমার অসহ্য লাগে………………
– তোমার ভাগ্য ভালো আমার কাছে নাই এখন তুমি।। তোমার অসহ্য ছুটাইয়া দিতাম। কি এমন করেছি আমি?
-ফাযিল পোলাপাইন…
-সত্যি বলছি, ২৩ তারিখ আমার সবসময় মনে থাকে,কিন্তু আজকেই যে ২৩ তারিখ জানব কেমনে! ক্যালেন্ডার যে দেখিনাই!Sorry for mistake, please forgive me. এই যে আমি গতবছরের মত কান ধরে উঠবস করছি! প্লিজ!
নিখিল এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।তার চোখে পানি। যে ছেলেটা তাকে এত ভালোবাসে তাকে কিভাবে সে না ক্ষমা করে পারবে!
নিখিলের ল্যাপটপে একটা গান বাজছে………।
“………………………………………………
তোমায় পেয়ে, পৃথিবী পেয়েছি,
আমি পেয়েছি আলো,
গড়েছি প্রদ্বীপ, সেই আলো জ্বেলে
……………………………………”
এখন আর নিখিলের অভিমানী পাহাড়টা নেই…।গলে স্রোতস্বিনী ভালোবাসার নদী হয়ে গেছে…সে নদীতে স্রোত অনেক। নদী উছলে ভরা টলটলে পানি………
উৎস: অন্যভুবন