
নীলান্ত হাসান
-দোস্ত আজ যা পচান পচাইছি ওই হিজড়া পলাশ টকে কি বলব। শেষ পর্যন্ত ক্লাস না করেই কালস রুম থেকে বের হয়ে গেল।
-রাজিব তুই পারিসও বটে। আর তোর মত মেয়ে খোররের প্রেমে কিনা পরে ওর মত একটা হিজরা???
রাজিবঃ হা হা হা ও হয়তো ভাবছিল আমিও ওর মত সমকামি। শালার হিজরা। নেক্সট বার ওরে এত বেশি পেইন দিব যে ও এই কলেজ ছারতে বাধ্য হবে।শাকিল তুই দেখে নিস।
শাকিলঃআসলেই হিজড়া। প্রথম দিন ক্লাসে এসে যে ঢং করছিল আমি তো তখনি তোকে বলছি যে ওই শালা একটা সমকামি। তুইই তো বলেছিলি যে ও তা নাও হতে পারে কিন্তু পরে যখন তোরে প্রেম পত্র দিল তখন তো আমার কথাই ঠিক ছিল তা প্রমান হইছে।
রাজিবঃআসলেই দোস্ত,তুই চিন্তা কর আমি ওর সাথে প্রথম থেকে একটু ভাল আচরন করছি দেখে ও কিনা আমারেই ওর মত সমকামি ভেবে নিছে।
শাকিলঃভাব্বে না কেন?সবাই যেখানে ওর পাশেও বসতে চায় না সেই খানে তুই কি না ওর পাশে বসতিস আবার কথাও বলতি।আর তোর এই ভালমানুষিটাকে ও ওর প্রতি তোর ভালবাসা ভেবেছিল এবং আরো ভেবেছিল তুইও ওর মত একই পথের পথিক।
রাজিবঃ আরে আমি ওর সাথে কথা বলে ছিলাম যে আল্লাহ্ তো মানুষরে কত ভাবেই সৃষ্টি করে এবং সব মানুষ তো আর সমান হয় না এই ভেবে। কিন্তু ওই হাফ লেডিসটা যে আমার সম্পর্কে এই ধারনা নিবে যে আমি সমকামি তা জানলে আমি ওর সাথে জীবনেও কথা বলতাম না।
শাকিলঃ হুম। বাদ দে তো ওর কথা। দোস্ত, এখন তুই বল আজ স্যার ক্লাসে কংকাল নিয়ে যা বুঝিয়েছেন তুই কি তার কিছু বুঝেছিস?আমার মাথায় তো তার কিছুই ঢুকল না।
রাজিবঃ ধুর, ও নিয়ে চিন্তা করিস না।আমাদের কাছে তো গতকাল একটা কংকাল এসেই গেছে। ওই কংকালের দেহের প্রতিটা পার্ট বই দেখে দেখে মিলিয়ে বুঝে নিব।তবে আমাদের কাছে যে কংকাল টা এসেছে তা একটা ছেলের কংকাল। দেখ কি কপাল খারাপ।
শাকিলঃ কপাল খারাপ তা আবার কেমন?
রাজিবঃ কপাল খারাপ নয়তো কি? ইস যদি কোন মেয়ের কংকাল পাইতাম তা হলে……….. বুঝে নে।
শাকিলঃ হা হা হা দোস্ত তুই শুধরাবি না সেই স্কুল থেকেই মেয়েদের জন্য পাগল থাকলি।
রাজিবঃ কি আর করব বল মেয়ে মানেই তো মজা। দুটি শব্দেই “ম”আছে
শাকিলঃ কিন্তু দোস্ত আমার তো আজ বাড়ি যাওয়া লাগবে।তুই একলা থাকতে পারবি তো?
রাজিবঃ একলা থাকতে পারব না কেন?
শাকিলঃ না মানে ওই কংকাল টা আছে তো তাই ভাবলাম যদি তুই ভয় পাস।
রাজিবঃ ভয় তা আবার কি রকম?
শাকিলঃমানে ভুতের ভয়।
রাজিবঃ হা হা হা দোস্ত তুই ভুতের কথা ভাবছিস।শোন ভুত যদি আমার কাছে আসে সেও পালাবে
আমার হাতের ঘুসি খেয়ে।এখন তুই এ সব নিয়ে না ভেবে বাড়ি যা। তারাতারি না গেলে কাকি আবার চিন্তা করবে তোর জন্য।
শাকিলঃ ঠিক আছে দোস্ত আমি যাই কিন্তু তুই সাবধানে থাকিস।
২
রাত ১২ টা
“ধুর , শাকিল যে কি বলে গেল কংকাল নিয়ে এখন সেই চিন্তায় ঘুম আসছে না।শালায় নিজে ভুতে ভয় পায় আবার যাওয়ার সময় আমার মধ্যেও সেই ভয়টা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে।উফ ঘুম যে কেন আসছে না বুঝি না” রাজিব খাটের উপর শুয়ে বিড়বিড় করে বলছিল “ আয় ঘুম আয়।ধুর ঘরটাও এত গূমোট লাগছে কেন?যাই জানালাটা খুলে দেই ঘরের ভিতর বাইরের বাতাস আসুক” রাজিব জানালা খোলার সাথে সাথে বলে উঠলঃ ওয়াও কি সুন্দর হাস্নাহেনার ঘ্রান।আরে আকাশে তো বড় দেখে একটা চাঁদ উঠেছে। আজ জানলা খোলা রেখেই ঘুমাবো যাতে চাদের আলো এবং হাস্নাহেনার সুভাসে ঘরটা ভরে যায়।যাই এখন বিছানায় যেয়ে শুই আজ রাতে ঘুমটা ভালই হবে মনে হচ্ছে।
রাজিব লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।সারা ঘরে চাদের আলোয় আলোকিত হয়ে অন্ধকারকে সাদা আলোর দ্বারা বিদায় করে দিল এবং ঘরের বাতাস হাস্নাহেনার সুভাসে সুরভিত।রাজিব চাদের আলোয় হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধে বিভোর হয়ে যখন ধীরে ধীরে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ছে সেই সময় ও অনুভব করল ঘরে কে যেন ঢুকেছে। আর সারা ঘরে এক অন্য রকম ঠান্ডা হাওয়া বইছে।দূর থেকে ভেসে আসা রাত পোকাদের ডাকও বন্ধ হয়ে যেন কোন অজানা ভয়ংকর কিছু ঘটার ভয়ে চুপ করে আছে। রাজিব ভয়ে ঢোক গিলছে আর শুনছে খাঠের নিচের কংকালটা থেকে কি রকম ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ আসছে। রাজিব কান সজাগ করে ফিসফিস আওয়াজটা শুনার চেষ্টা করছে।মনে হচ্ছে যেন কারো গলা চেপে ধরছে শ্বাস নিতে পারছে না এবং সেই অবস্থাতেই কেউ কথা বলছে। রাজিব ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকেই নিজে মনে মনে বলে “এসব আমার মনের ভুল” সেই সময় হটাত আওয়াজটা থেমে যায় রাজিব আস্তে করে চোখ মেলে এবং ভাবে আসলেই এই সব ফিসফিস করে কথা শোনাটা আমার মনেরেই ভুল ছিল।কিন্তু রাজিবের চোখ যেই নিজেরে মশারির বাইরে যায় দেখে একটা কালো ছায়া মশারির চারপাশে ঘুরছে এবং ছায়াটা কখনো রাজিবের পড়ার টেবিলের দিকে আবার কখনো ঘরের এক কোনে আবার কোন সময় মশারির চারপাশে ছুটোছুটি করছে মনে হয় যেন ছায়াটা কিছু খুজছে।রাজিব ভয় পেয়ে আস্তে গলায় ডাকলোঃ কে,কে ওখানে?
ছায়াটা মশারির চারপাশে ঘুরা বন্ধ করে রাজিবের মাথার কাছে এসে বল্লঃ তুমি আমায় দেখতে পাচ্ছ?
রাজিব ভয় পেয়ে বলে উঠলঃ হ্যা শুধু দেখতে না আপনার কথাও শুনতে পাচ্ছি।কে আপনি।
কংকালঃআমি কে?আমার তো এখনকার পরিচয় তুমি খুব ভাল ভাবেই জান।
-কি বলছেন?আমি তো আপনাকে এর আগে কোন সময় দেখিনি তাহলে আপনাকে ভাল ভাবে জানব কি ভাবে??
“ আমি তোমার খাঠের নিচে থাকা কংকাল”
রাজিব চিৎকার করে বলে উঠলঃ আল্লা গো আমারে বাচাও ভুত!!!আল্লাহ বাচাও আমারে।আমারে মেরে ফেলল।
কংকালটা নাকি সুরে হেসে উঠে বলে “তোমরা মানুষরা এতো মিথ্যা বল কেন?আমি তো তোমারে কিছুই করলাম না তারপরও কি না বলছ আমি তোমাকে মেরে ফেলছি?”
রাজিব ভয়ের চোটে তখন বার বার বলছিল “আল্লা গো বাচাও আমারে,আমাকে মেরে ফেল্ল”
কংকালটা ধমক দিয়ে রাজিব কে বলেঃ চুপ।আরেক বার যদি বল মেরে ফেলল তাহলে কিন্তু আমি সত্যি তোমার ঘাড়টা মটকে দিব।
রাজিব তাই শুনে পুরো বেহুসের মত অবস্থায় যখন চোখ উল্টে পরে যাচ্ছিল তখন কংকালটা আবার বলেঃ তুমি ভয় পেও না।আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।আর ক্ষতি করবই বা কেন? আমার তো নিজেরেই কোন অস্তিত নেই এই পৃথিবিতে।না আছে কোন পরিচয় না আছে নিজের কোন স্থায়ি আবাস। অবশ্য নিজের অস্তিত্ব নিজের পরিচয় আমি বেচে থাকতেই খোজা শুরু করেছিলাম এবং মৃত্যুর পরও খুজে চলছি।
রাজিবঃ মানে?
কংকালঃ মানে বুঝাতে গেলে সে তো অনেক কথাই বলতে হবে। অব্যশ তোমার যদি শুনতে ইচ্ছে করে।আজ আকাশে কত বড় একটা চাঁদ উঠেছে বাতাসে হাস্নাহেনার মাতাল করা ঘ্রান এই রকম সময়ে আমার কিন্তু আজ বলতে ইচ্ছে করছে আমার বেচে থাকার সময়কার ঘঠনাগুলো।তুমি কি শুনবে?
রাজিব ভয়ে ভয়ে বলেঃ শুনব যদি আপনি আমাকে না মারেন।
কংকাল হেসে উঠে বল্লঃ হা হা হা আমি তোমায় কেন মারব?? বরং আজ মৃত্যর এত বছরের পর কারো সাথে আমি কথা বলতে পারছি এবং সে আমার কথা শুনতে পারছে ।আর আমি কিনা তাকে মেরে ফেলব তা কি কোন সময় হয়?আচ্ছা আমি তোমার সামনে থাকা ওই চেয়ার টায় বসলাম যাতে তুমি ভাল করে আমার জিবনের ঘঠনা শুনতে পার।
রাজিবঃ আচ্ছা আপনি বসেন আর আমিও খাঠের উপর উঠে বসছি যাতে ভালভাবে আপনার কাহিনী শুনতে পারি।
কংকালঃ আচ্ছা ঠিক আছে বস। বসেছ? তা হলে আমি শুরু করি আমার ঘটনা।আমার নাম হল সমর কান্তি।নাম শুনেই বুঝতে পারছ আমি হিন্দু।আমার বাড়ি ওপার বাংলার হুগলি জেলায়।আমার পরিবার অনেক বেশি সম্ভ্রান্ত ও জমিদার পরিবার ছিল।আমি সেই পরিবারের ছোট ছেলে অবশ্য আমরা ছিলামই মাত্র ২ ভাই।কোন এক পূর্ণিমা রাতে আমার জন্ম।তখন এই রকম করেই হয়তো হাওয়া বইছিল।হয়তো এই ভাবেই হাস্নাহেনার ঘ্রানে চারিপাশ মৌ মৌ করছিল। আবার ছেলে হওয়ার জন্য বাড়ির সবাই অনেক অনেক খুশি হয়েছিল।আমার মা তো পরপর ২বার ছেলে জন্ম দিতে পারায় অহংকারে মাটিতে পা পর্যন্ত পরেনি অনেক দিন। অবশ্য পরে তার সেই অহংকারের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
রাজিবঃ কেন?
কংকালঃ তুমি এত উচ্চশিক্ষিত হয়েও বলছ কেন?তুমি কি তোমার বইতে কোন সময় পড়নি যে অহংকার মানুষের পতন ঘটায়?কি যেন বলছিলাম তোমাকে?দেখ ভুত হওয়ার পর থেকে কথা বেশিক্ষন মনে রাখতে পারি না বার বার ভুলে যাই ?ও মনে পরছে আমার জন্ম আর আমার মায়ের অহংকার।আমার মায়ের যখন অহংকারে মাটিতে পা পরছিল না তখন তার সেই অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় যখন আমি শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের পা দেই। আমি সংসারের সাধারন নিয়ম মেনে যখন কৈশোরে পরলাম তখন সবাই আড়ালে আবডালে বলত যে এই ছেলের আচরন এই রকম মেয়েদের মত কেন?বুঝলে তুমি মেয়েদের মত ছিল আমার আচরন যাকে এখন তোমরা গারলিস বা হিজরা বল।
“আপনি এসব কি ভাবে জানেন?” অবাক হয়ে রাজিব জিজ্ঞাসা করে।
কংকালঃ জানব না কেন।তোমরা মানুষরা যা বলছ বা যা করছ তা সবই আমাদের মত ভুতেরা জানি কারন আমাদের জানা যে এখন শুধু মাত্র বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না।মৃত্য মানুষকে তার জীবনের নির্দিষ্ট গন্ডি থেকে মুক্ত করে এক অসীমতার মাঝে নিয়ে যায়। যেই জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই এবং সেই জীবনের মধ্যে যারা থাকে তারা সবাই অনেক কিছুই জানে যা তোমাদের বই পুস্তকে নেই। আচ্ছা এখন এই সব কথা বাদ দিয়ে
আমার বেচে থাকার জীবনের কথায় আসি।যা বলছিলাম তোমাকে আমার আচরন দেখে তো সবাই আগে পিছে আমাকে নিয়ে কানাকানি করত অনেকে অনেক কটু কথা বলত।আর আমার এই মেয়েলি আচরন নিয়ে লজ্জায় বাবা মা আমাকে কোথাও যেতে দিত না এবং তারা শুধু ভগবান কে বলত যাতে আমাকে যম দেবতা এসে নিয়ে যায়। কিন্তু কি কপাল দেখ যমদূত এসেছিল ঠিকিই কিন্তু আমাকে নিতে নয় বরং আমার বাবা মাকে নিতে।বাবা মা গত হবার পর বাড়ি ঘর জমী জমার যত দায়িত্ব সব বড় দাদার উপর পরল।বড় দাদার হাতে ক্ষমতা আসার সাথে সাথেই আমার বাইরে যাওয়া পুরো নিষেদ করল । এমন কি দিনের বেলাও আমাকে আমার ঘরের ভীতর বন্ধি থাকা লাগত।
“কি নিষ্ঠুর ছিল আপনার দাদা” রাজিব বলে উঠে।
কংকাল হা হা হা করে হেসে উঠে বলেঃ নিষ্ঠুর কথাটা তোমার মুখে মানায় না।তুমিও তো তোমার ক্লাসের একটা ছেলে কে নিয়ে হাসাহাসি কর কিন্তু ওই ছেলেটার তো কোন দোষ ছিল না তার সমকামি বা গারলিস হওয়ার।আর সে তো তোমাকে ভালবেসেছিল কিন্তু তুমি তা বুঝনি। উল্টো তার ভালবাসাকে নিয়ে তোমরা সবার সামনে তাকে ছোট করলে,তাকে অনবরত অপমান করলে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশী অপমান করবে বলে এক জন আরেক জন কে বলছ। তোমরা এই শিক্ষিত যুগের ছেলে ছেলে হয়েও যদি বিনা অপরাধে অন্যকে দোষি বানাতে পার তাহলে বুঝ আমাদের অশিক্ষিত যুগের সময়ে অবস্থা কি রকম ছিল।
রাজিব আস্তে করে বলেঃআমাকে আর লজ্জা দিবেন না।আসলে আমি এই ভাবে ভেবে দেখিনি কোন সময়।
কংকালঃ এইটা তোমারও কোন দোষ নেই আসলে দোষটা হচ্ছে আমাদের মত মেয়েলি সমকামিদের, যারা জন্ম নেয় মেয়েলি হয়ে এবং হয় সমকামি।কিন্তু সমকামিরা কি করবে বল? তারাও তো নিজে থেকে জন্ম নেয় না,তারা তো নিজ থেকে সমকামিও হয় না। তারা তো অন্য ১০টা সাধারন মানুষের মত জন্ম নেয় এই পৃথিবীতে। কিন্তু সমকামি হওয়াটাকেই তাদের অপরাধ হিসেবে ধরে যেই অপরাধটা নিজেরা করে না তারপরও তোমরা তাদের অপরাধিদের কাঠগড়ায় দাড় করাও এবং বিচার কর।
রাজিবঃ তারপর কি ঘঠেছিল আপনার জীবনে?
কংকালঃ সেত অনেক কিছুই ঘঠে ছিল আমার জীবনে কিন্তু আমি দেখতে কেমন ছিলাম সেইটাই তো তোমাকে বলা হয়নি। আমি দেখতে কিন্তু তেমন সুন্দর ছিলাম না।কালো ছিলাম ঠিক কৃস্নের মত দেখতে আর আমার চোখ দূটিও ছিল তার মত টানা টানা।কালো হওয়ার পরেও আমার চেহারার মধ্যে ছিল অন্য রকম মায়া। সবাই বলত আমার টানা টানা চোখ দুটি থেকে নাকি মায়া ঝরে পরত এবং সবাইকে আমার কাছে টানত।বাসার কাজের মাসিরা তো প্রায়ই বলত যে আমি যদি মেয়ে হতাম তাহলেও আমার কালো রঙ আমার বিয়ের জন্য কোন বাধা হত না।
আমার চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে সব সময় আমি মেয়ে মেয়ে শুনতে শুনতে নিজের ভিতরের মনটাও মেয়েদের মত হয়ে যায়।বাবা মা মারা যাবার পর আমি যখনি সুযোগ পেতাম তখনি মায়ের ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে মায়ের বিয়ের লাল শারি,তার গহনা এবং তার সিঁদুরের কৌটা থেকে সিঁদুর নিয়ে মাথার সিঁথিতে দিয়ে নিজেকেই নিজে বৌ বানাতাম আর ভাবতাম যে আমি তো মেয়েই কিন্তু ঈশ্বর আমাকে ভুল করে ছেলে বানিয়েছেন আর এই জন্য আজ আমি বাইরে ছেলে আর ভিতরে মেয়ের রুপ পেয়েছি।এ তো গেল আমার দুই রুপ কথন এখন শুনো আমার বন্দিদশার কথা।আমার দাদা তো আমাকে পুরো বন্ধি করে রেখিছিল অন্তপুরে যেখানে দিনের বেলায় আমি আমার ঘর ছারা অন্য কোথাও যাওয়া আমার জন্য ছিল নিষিদ্ধ।তাই শুধু রাতের বেলা বের হতাম আমি।আর এই ভাবে আমি হয়ে গেলাম রাত প্রহরি।দিনের আলোয় বাস করা কেউ আমার বন্ধু ছিল না কিন্তু রাতের চাদ,তারা,অন্ধকার,রাতের পাখিরা ছিল আমার এই নিঃসঙ্গ জীবনের বন্ধু।চাঁদনি রাতে রাতের বেলা ছাদে উঠে চাদের সাথে কথা বলতাম।চাদের আলোয় ভিজতাম।চাদকে তোমরা মামা ডাক আর আমি বানিয়েছিলাম আমার বন্ধু।আবার যখন অমাবস্যা হয়ে চাঁদ বন্ধুকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিত তখন সেই অমাবস্যার অন্ধকার হয়ে যেত আমার আরেক বন্ধু। রাতের বেলা যখন বৃষ্টি হত তখন আমি সেই বৃষ্টিতে নিজের মনের কষ্টগুলো কে ঝরিয়ে দিতাম ।এই রকম করেই চলছিল আমার জিবন। দিনের বেলায় আমি ছিলাম বন্দি আর রাতে ছিলাম মুক্ত এক রাত জাগা পাখি।এই ভাবেই আমার জিবনের ২৪ টা বসন্ত আসল এবং বিদায় নিল কিন্তু ২৫ তম বসন্তে এসে ঘটল আমার জীবনের সেই ঘটনা যা আজ আমাকে এই কংকালে পরিনত করছে।
রাজিবঃ কি ঘটনা?
কংকালঃ তখন শরৎকাল দুর্গা পূজার সময় আমার প্রচন্ড জ্বর উঠল। সে কি জ্বর মনে হচ্ছিল যেন পৃথিবীর বদলে সূর্য আমার গায়ে তার সকল তাপ বিলিয়ে দিচ্ছে। আমার এই অবস্থা দেখে দাদার মনেও দয়া হয়েছিল তাই সে তার এক ডাক্তার বন্ধু কে দিয়ে আমার চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে এলেন।আমার দাদা এক সুর্যাস্ত সময় তার সেই ডাক্তার বন্ধু কে নিয়ে আমার ঘরে এলেন।যখন দাদা তার বন্ধুকে নিয়ে আমার ঘরে ঢুকল তখন আমি দুর্বল চোখ ২ টি মেলে আমার ঘরে আসা নতুন মানুষ টাকে দেখার চেষ্টা করছিলাম।খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ভীতর অস্তগামি সূর্যের সোনালি আলোয় এসে ঘরটাকে পুরো ভরে দিয়েছিল আর সেই সোনালি আলোয় আমি দেখালাম উজ্জল এক দেবতার মত সুশ্রী মানুষকে।তাকে দেখার সাথে সাথে আমার মনে হল বৈকুণ্ঠলোক থেকে থেকে কোন দেবতা আমার ঘরে এসেছেন।
দাদা তখন তাকে বলছেনঃ অপূর্ব তুই ওরে দেখ আমার একটু কাজ আছে আমি তা সেরে আসছি।দাদা চলে যাবার পর আমার ঘরে শুধু সে এবং আমি।উনি যখন আমার হাত ধরে নাড়ির গতি মাপছিলেন তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার নাড়ি ১০০০ মাইল বেগে ছূটছিল।আবার যখন সে তার দুধে আলতা মেশানো মাখন রঙা আংগুল দিয়ে আমার চোখ টেনে দেখছিলেন তখন আমার শরীরের রক্ত ৩গুন বেগে বইছিল।জ্বর অবস্থায় থাকার পরেও মনে হল অপূর্ব দাদা আমার হাত চোখ সব কিছুই যেন বেশী সময় করে ধরে রেখেছিল কিন্তু পরে ভেবেছিলাম যে এইটা আমার জ্বরের ঘোরে প্রলাপ দেখা বা বুঝার মত ছিল হয়তো। অপূর্ব দাদা আমাকে দেখে ঔষধ পত্রের ব্যাবস্থা দাদার হাতে দিয়ে চলে গেলেন।তারপর আমি ব্যাবস্থাপত্র মত ঔষধ খেয়ে ভাল তো হলাম কিন্তু মনের মধ্যে অন্য একটা কঠিন রোগ বাধিয়ে বসলাম আর তা হল ভালবাসার রোগ।এই রোগের ঔষদ এক মাত্র ভালবাসাই।তবে এই ভালবাসাকেও আমি ভুলে যেতে পারতাম যদি মাঝে আর একটা ঘটনা না ঘটত।
রাজিবঃ কি ঘটনা?
কংকালঃ তখন শরৎকাল দুর্গা পূজার সময় আমার প্রচন্ড জ্বর উঠল। সে কি জ্বর মনে হচ্ছিল যেন পৃথিবীর বদলে সূর্য আমার গায়ে তার সকল তাপ বিলিয়ে দিচ্ছে। আমার এই অবস্থা দেখে দাদার মনেও দয়া হয়েছিল তাই সে তার এক ডাক্তার বন্ধু কে দিয়ে আমার চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে এলেন।আমার দাদা এক সুর্যাস্ত সময় তার সেই ডাক্তার বন্ধু কে নিয়ে আমার ঘরে এলেন।যখন দাদা তার বন্ধুকে নিয়ে আমার ঘরে ঢুকল তখন আমি দুর্বল চোখ ২ টি মেলে আমার ঘরে আসা নতুন মানুষ টাকে দেখার চেষ্টা করছিলাম।খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ভীতর অস্তগামি সূর্যের সোনালি আলোয় এসে ঘরটাকে পুরো ভরে দিয়েছিল আর সেই সোনালি আলোয় আমি দেখালাম উজ্জল এক দেবতার মত সুশ্রী মানুষকে।তাকে দেখার সাথে সাথে আমার মনে হল বৈকুণ্ঠলোক থেকে থেকে কোন দেবতা আমার ঘরে এসেছেন।
দাদা তখন তাকে বলছেনঃ অপূর্ব তুই ওরে দেখ আমার একটু কাজ আছে আমি তা সেরে আসছি।দাদা চলে যাবার পর আমার ঘরে শুধু সে এবং আমি।উনি যখন আমার হাত ধরে নাড়ির গতি মাপছিলেন তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার নাড়ি ১০০০ মাইল বেগে ছূটছিল।আবার যখন সে তার দুধে আলতা মেশানো মাখন রঙা আংগুল দিয়ে আমার চোখ টেনে দেখছিলেন তখন আমার শরীরের রক্ত ৩গুন বেগে বইছিল।জ্বর অবস্থায় থাকার পরেও মনে হল অপূর্ব দাদা আমার হাত চোখ সব কিছুই যেন বেশী সময় করে ধরে রেখেছিল কিন্তু পরে ভেবেছিলাম যে এইটা আমার জ্বরের ঘোরে প্রলাপ দেখা বা বুঝার মত ছিল হয়তো। অপূর্ব দাদা আমাকে দেখে ঔষধ পত্রের ব্যাবস্থা দাদার হাতে দিয়ে চলে গেলেন।তারপর আমি ব্যাবস্থাপত্র মত ঔষধ খেয়ে ভাল তো হলাম কিন্তু মনের মধ্যে অন্য একটা কঠিন রোগ বাধিয়ে বসলাম আর তা হল ভালবাসার রোগ।এই রোগের ঔষদ এক মাত্র ভালবাসাই।তবে এই ভালবাসাকেও আমি ভুলে যেতে পারতাম যদি মাঝে আর একটা ঘটনা না ঘটত।
রাজিবঃকি ঘটনা?
কংকালঃ আমাদের সম্ভ্রান্ত বংশের নিয়ম ছিল প্রতি সন্ধ্যায় বাড়ির পুরুষরা বৈঠকখানায় বসে বন্ধুদের সাথে মদ পান করে তাদের পুরুষ হওয়ার প্রমান দিতে হত।যে তখন মদ পান করত না তার পুরুষ হওয়া নিয়ে সবাই সন্দেহ করত।তাই সবাই বেশী করে মদ পান করে নিজেকে বেশি করে পুরুষ প্রমান করার জন্য উঠেপরে লাগত।একদিন সন্ধ্যার পর বাড়ির বৈঠকখানায় বসে দাদা ও দাদার সব বন্ধুরা যখন মদ পান করছিল আর আমি তখন রাতের আধারে নিজেকে লুকিয়ে ছাদে উঠে অপূর্বদার কল্পনায় নির্মিত মানুষটার সাথে একলা একলা কথা বলছিলাম।আমি তো এক মনে নিজের সাথে কথা বলছি সেই সময় হঠাত পিছনে আওয়াজ হতেই দেখি আমার পিছনে অপূর্বদা দাড়ানো ।আমি তো তাকে দেখে চমকে গেলাম যে এইটা কি ভাবে সম্ভব তার তো এখন বৈঠকখানায় থাকার কথা। সে কোন সময় থেকে আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে কে জানে আর আমার সব কথা শুনে ফেলেছে ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে যখন তার সামনে থেকে দৌড় দিব ভাবছি সেই সময় অপূর্বদা আমার সামনে এসে আমার হাত দুটি ধরে আমায় বলে “সমর আমি জানতাম না যে তুমিও আমাকে ভালবেসে ফেলছ?”আমি তো তার কথা শুনে অবাক হয়ে বল্লাম “মানে?” সে তখন আমার হাত দুটি তার বুকের নিয়ে বল্ল “তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তখন থেকে কি যেন হয়েছে আমার এই হৃদয়ে।আমি সব জায়গায় শুধু তোমাকেই দেখছি এবং তোমাকেই ভালবেসে ফেলেছি। এখন দেখলাম যে তুমিও আমাকে ভালবেসে ফেলছ” এই বলে সে আমাকে তার বুকের মধ্য জড়িয়ে ধরল।আমি তার এই বুকের আশ্রয়ে যাওয়ার পর থেকে গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল বুকের মধ্য হৃৎপিণ্ড টাকে মনে হচ্ছিল কোন জ্যান্ত পাখি যা আমার বুকের খাচায় ছটফট করছিল ছারা পাওয়ার জন্য।তারপর সেই ছাদেই আমরা মিলিত হলাম কারন ভালবাসা নাকি পূর্ণতা পায় দেহমিলনের দারা।সেই অন্ধকারে ছাদের উপর থেকে আমাদের মধ্য যে ভালবাসার মিলন শুরু হল তা মাঝেমাঝে চলতে থাকে দাদার অনুপস্থিতে। কি খারাপ লাগছে এই সব শুনতে?
রাজিবঃ না,না খারাপ লাগছে না।বরং ভাবছি যে আসলেই সমকামিদের ভালবাসার সাথে নরমাল ভালবাসার তো কোন অমিল নেই।একটা ছেলে যেমন একটা মেয়েকে ভালবাসে আপনারাও তেমন ছেলে হয়ে একটা ছেলেকে ভালবাসেন। আবার একটা ছেলে যেমন মেয়ের সাথে দেহের মিলন করে তেমন আপনারাও ছেলে হয়ে ছেলের সাথে দেহের মিলন করেন।আর এই ভালবাসা তো ভালবাসাই হয়।
কংকালঃবাহা তোমার ভীতর তো অনেক পরিবর্তন এসে গেছে।যাই হোক আমি কাহিনিতে আসি।কোথায় যেন ছিলাম?
রাজিবঃমানে আপনাদের দেহ মিলনের মধ্য।
কংকালঃহা হা হা হা ভাল বলছ।আচ্ছা ঘটনায় আসা যাক।আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম যেই ভালবাসায় দেহ পাওয়াটাই মুখ্য সেই খানে অন্তর দিয়ে নয় শুধু দেহ দিয়েই ভালবাসা হয় এবং দেহভোগিরা শুধু দেহ নিয়ে খেলা করাটাকেই ভালবাসা বুঝে এবং আমার সেই মনের মানুষটার ভালবাসাটা ছিল শুধু দেহকে নিয়ে আমার অন্তর কে নিয়ে নয়।তার প্রমান আমি পেয়েছিলাম কিছুদিন পর যখন দাদা এসে বল্ল তিনি ৩/৪দিন বাসায় থাকবে না কারন আমার মনের মানুষ আমার অপূর্ব দার বিয়ে।এই কথা শুনার সাথে সাথে আমার মনে হচ্ছিল আমার নিচের জমিন দুভাগ হয়ে যাচ্ছে আর আমি নিচে ঢুবে যাচ্ছি।আমার চীৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু কাদতে পারছিলাম না কারন দাদাকে,সমাজের মানুষগুলো কে আমি কি বলব তাই ভেবে কান্নাটাকে গলা ভেধ করে বাইরে আসতে দিলাম না। কিন্তু চোখ দুটুকে বাধা দিতে পারলাম না।চোখ দুটি থেকে অনবরত পানি পরছিল এবং ভাবছিলাম যে আমার মনের দেবতা আজ অন্য কারো হবে, যাকে এত দিন ধরে পূজো করলাম ভক্তি ভরে, আমার দেহকে যার ইচ্ছার দাস বানালাম, যে আমাকে ভালবেসে ভিবিন্ন সুখ সপ্ন দেখালো সে কি না আজ আমার সব সপ্ন ভেঙে দিয়ে আমার সপ্নগুলোকে চিতায় জ্বালিয়ে দিয়ে অন্য কারো হবে?অন্য কারো প্রসাদ গ্রহন করবে?? আমি চাইছিলাম দাদা যেন আমার কান্নাটা না দেখে কিন্তু তারপরও দাদা আমার চোখের পানি দেখে আমায় জিজ্ঞাসা করল “কি রে কি হয়েছে তোর?” আমি চোখের পানি মুছে দাদাকে বল্লাম “কিছু না দাদা আসলে আমার বাবা মার কথা মনে পড়ছে। তোরও তো বিয়ের বয়স হয়েছে তারা থাকলে আজ তোর জন্য কত আনন্দ নিয়ে মেয়ে দেখত এবং সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দিত”। দাদা মুচকি হেসে বল্ল “কি যে বলিস না তুই?”আমি দাদাকে তখন বলি “না দাদা আমি ঠিকিই বলছি কিন্তু যখন বাবা মা নেই দাদা তুই আমার একটা ইচ্ছে পুরুন করবি?”দাদা তখন বল্ল “ কি ইচ্ছে তোর”।আমি দাদা কে বল্লাম “দাদা, অপূর্বদার বর যাত্রা আমাদের বাড়ি থেকেই হোক অন্তত পক্ষে তাতে তোর বিয়ে না দেখতে পারলেও অপূর্বদার বিয়েটা দেখে সেই আনন্দটা পেতে চাই।” “তুই এমন ভাবে কথাটা বলছিস মনে হয় তুই মারা যাবি খুব দ্রুত?” দাদা হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল। আমিও হেসে বল্লাম “দাদা জীবন মৃত্য তো সবই বিধাতার হাতে তারপরও জীবন যখন আছে তখন প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত কখন কোন সময় মৃত্য এসে জীবনের দরজায় কড়া নারে তা কি কেউ বলতে পারে?তাই দাদা তুই না করিস না এত বড় বাড়িটা না হয় কিছু দিনের জন্য লোক সমাগমে পূর্ণ হোক।”দাদা তখন বলে “আচ্ছা ঠিক আছে তুই যেমনটা চাস তেমন হবে কিন্তু শর্ত একটাই যে তুই তোর ঘর থেকে বের হবি না এমন কি রাতের বেলায়ও না।ঠিক আছে?” আমিও বল্লাম “ঠিক আছে দাদা আমি বের হব না।”তারপর আসল সেই দিন যেই দিন বর যাত্রি আমাদের বাড়ি থেকে বউ আনার জন্য রওনা দিবে। কিন্তু এর মধ্য আমি আমার ভালবাসার মানুষটাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি কারন জানি তো যে তার ইচ্ছা না থাকলে কেউ তাকে বিয়ে করাতে পারত না।সে শুধু বিয়ের আগে আমার দেহটাকে নিয়ে তার যৌনতা উপভোগ করছিল।বিয়ের লগ্ন পরেছে রাত ১২ টার পর তাই রাত ৯ টার পর বর নিয়ে বর যাত্রি যাত্রা করবে।বাড়ির পুরুষরা যথারীতি সন্ধ্যার পর মদের গেলাসে তাদের পুরুষত্ব প্রমান করার জন্য যখন ব্যাস্ত ছিল সেই সময় আমি এক কাজের
কে অনেক টাকা দিয়ে বিয়ের আগের দিন সাপুড়ে পল্লি থেকে আনা রাজ গোখরার বিষ অপূর্বদার মদের গেলাসে মিশিয়ে দিতে পাঠালাম। ওই মাসী যখন তার কাজ সফল ভাবে সম্পূর্ণ করল এবং অপূর্বদা মদের গেলাস মুখে দিয়ে বিষপূর্ণ মদ গলার ভিতরে চালান করছিল তা আমি পর্দার আড়ালে দেখে সাথে সাথে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে আগে থেকে মায়ের সব গহনা এনে রেখেছিলাম। আমি ছাদে আসার পর আমি আমার সব কাপড় খুলে ফেলে দিয়ে একে একে সব গহনা পরলাম আর সিঁথিতে দিলাম লাল রঙের সিঁদুর।আমার সেই গহনা পরা উলঙ্গ দেহটাকে চাদের সাদা আলো ভিজিয়ে দিচ্ছিল আর আমি চাদের নির্লজ্জ আলোয় নিজেকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কোন পাপের শাস্তিতে আমি আজ মাঝামাঝি এই রুপ পেলাম?না পূর্ণ ভাবে ছেলে হলাম না পূর্ণ ভাবে মেয়ে হলাম?কেন আজ আমার এই দু রুপ?আমি মাথা তুলে চাদের দিকে তাকালাম কিন্তু আজ আর চাদ নয় বিধাতার সাথে কথা বল্লাম।আমি উপরে তাকিয়ে চীৎকার করে বল্লাম “হে সৃষ্টিকর্তা দেখ আজ আমি মেয়ে সেজেছি!!খুব খুশী হয়েছ নিশ্চয়?এত দিন সবাই আমাকে কত রকম কথা বলছে আমার এই মেয়লি আচরন দেখে কিন্তু আমি কোনদিন তোমাকে কোন অভিযোগ জানাইনি কিন্তু আজ আমার কয়েকটা প্রশ্নের উওর দেও বল কেন আমাকে তুমি এই দু রুপ দিলে? কেন আমাকে মেয়ের মন দিয়ে শরীর ছেলের মত দিলে?আবার শরীর ছেলের মত দিয়ে কেন আমাকে মেয়ের মন দিলে? আজ দেখ আমি আমার ছেলে মেয়ে দু রুপকেই ধারন করেছি।আজ আমার মৃত্যর পর সবাই দেখবে আমার উলঙ্গ দেহ এবং যারা আমার পুরুষ অঙ্গ আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ করেছিল আজ তাদের সেই সন্দেহ দূর হবে।কিন্তু আমার গায়ে পরা প্রতিটা গহনা মাথার সিঁদুর সাক্ষি হয়ে থাকল আমার সেই রূপটার এবং সেই ভালবাসাটার যার জন্য আমাকে এই পৃথিবী ছেরে চলে যেতে হল। তুমি আমাকে মেয়েলি আচরন দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছ এতে দোষ কি আমার ছিল না তোমার ছিল?তোমার সৃষ্টি আমি কিন্তু সবাই তোমাকে কোন ব্যাঙ্গ না করে আমাকে নিয়েই কেন ব্যাঙ্গ করত বল?আজ আমার ভালবাসার মানুষ অন্যর হতে চেয়েছিল সে যখন অন্যরই হবে তাহলে আমাকে কেন তার শয্যা সঙ্গী বানিয়েছিল?কেন আমাকে এত মিথ্যা সপ্ন দেখিয়েছিল?আমার কি মন নেই?তুমি আমাকে মেয়েদের মত করে বানিয়েছ বলে কি আমার কোন কষ্ট পেতে নেই? তাই সবাই যে যার মত আমাকে ব্যাবহার করে কষ্ট দেয়ার অধিকার কি তাদের আছে? আমি আজ আমার ভালবাসার মানুষ যে বিষ দিয়ে মারলাম সেই বিষ খেয়েই আমিও এই পৃথিবী ছেরে চলে যাচ্ছি।কিন্তু তুমি যদি আমায় পুনরায় জীবন দেও তাহলে তুমি আমায় এমন সময় জন্ম দিও যখন এই পৃথিবীতে একটি ছেলের সাথে ছেলের ভালবাসাকে সবাই মেনে নেয়।সবাই যেন আমার মত মেয়েলি আচরনের ছেলেকে কোন ব্যাঙ্গ না করে এবং সবাই যেন তখন বুঝতে পারে এই আচরন আমি নিজে ইচ্ছাকৃত ভাবে করি না।সেই সময় আমাকে পুনর্জন্ম দিও। এই বলে আমি আমার হাতে রাখা বিষের বোতল থেকে সকল সব বিষ নিজের উদরে ঢেলে দিলাম।উফ সে কি কষ্ট বিষের জ্বালার।বুক জ্বলে যাচ্ছে চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু তারপরও আমি আকাশের দিকে চেয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বল্লাম নিষ্ঠুর এই পৃথিবী আজ আমি বিদায় নিলাম ভাল থেক তুমি।আমার দৃষ্টি ঝাপাসা হয়ে আসছে চারিদিকে শুধু অন্ধকার এবং কানের ভীতর ভয়ংকর ঝরের গর্জন।তারপর—– তারপর বহুদিন বহুযুগ পর আমার চেতনা আসল। আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি আর সেই আমি নেই।আমার রক্ত মাংসের শরীরের জায়গায় আছে কিছু হাড় এবং তা নিয়ে ২ টি ছেলে ডাক্তারি বিদ্যা শিখছে।কিন্তু কি কপাল দেখ আমি ভাবছিলাম যখন আমি জেগেছি তখন মনে হয় সেই যুগ এসে গেছে যেই যুগে ভালবাসা কে শুধু ছেলেমেয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সবার মধ্যে ছরিয়ে গেছে এবং ছেলে ছেলের সাথে ভালবাসা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।আমার ভাবনা ভুল ছিল, দেখি ২ টা ছেলে হাসাহাসি করছে অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে যে কিনা তাকে ভালবাসি বলে চিঠি দিয়েছে সেই জন্য।তারপর আবার যেই চাঁদনি রাত সেই হাস্নাহেনার ঘ্রান আর নিজেরে এই কংকাল দেহের টানে আজ এই ঘরে আসা।
তো বল এখন কেমন লাগলো আমার ঘঠনা?
রাজিবঃ অনেক ভাল এবং কিছুই বলার নেই।আসলেই আমরা কতটা জ্ঞানহীন কারন যে মানুষ সৃষ্টি করে তার সৃষ্টির বৈচিত্র কে না বুঝে সেই সৃষ্টিকে নিয়েই ব্যাঙ্গ করা অজ্ঞতা ছারা আর কিছুই না। ধন্যবাদ আপনাকে যে আপনি আমার এই অজ্ঞনতার হাত থেকে মুক্তি দিলেন।
কংকাল খুশি হয়ে বল্লঃ যাক খুশি হলাম শুনে তোমার কথা এবং ভাবছি সেই দিন মনে হয় আর বেশি দেরি নেই যখন ভালবাসা কোন লিংগ ভেধে বিবেচনা করা হবে না তা বিবেচনা করা হবে মানুষে সাথে মানুষের। তখন যদি আমার পুনর্জন্ম নাও হয় তারপরও যারা আমার মত হয়ে জন্মাবে তারা যেন মানুষ হয়ে বেচে থাকার অধিকারটুকু পায় এবং তাদের সেই ভালবাসার মানুষটাকেও যেন জীবন সঙ্গী হিসেবে পায় ।আমার অতৃপ্ত বাসনা তাদের হাসি তাদের তৃপ্তির মধ্যে দিয়েই পুরুন হবে।
*****(সমাপ্ত)*****
উৎস: অন্যভুবন