রূপান্তর

রিয়েল ফ্রেন্ড

(এই গল্পের কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই।)

মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। খুব কম সংখ্যকই পারেন নিজের মনকে বুঝতে। অনেকের মন তো ইংল্যান্ডের ৩ ডাব্লিউ (3 W) এর মত। মানে ওয়াইফ, উইক এন্ড ওয়েদার। এই তিনটার যেমন সেখানে ঠিক থাকেনা, ক্ষণে ক্ষণে বদল হয়, তেমনি কিছু মানুষের মনও সেরকম বদলায়। তবে সবার ক্ষেত্রে যে এমন বদল চলে আসে তেমন নয়। অনেক সময় কারো নির্ভেজাল ভালোবাসা, পরিবেশ ও পরিস্থিতিও মন বদলের সহায়ক হতে পারে। মন পরিমাপের যন্ত্র আবিষ্কার হলে সত্যি মানব জাতির সবচেয়ে বড় কল্যাণ সাধিত হবে।

…………………

আজ খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠেছি, কেননা আজ সকাল ১০ টায় আমার চাকুরীর ইন্টার্ভিউ আছে। সেটা যেন সফল হয় তাই প্রথমেই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি। চাকুরীটা আমার একান্ত দরকার হয়ে গেছে। বয়স প্রায় ৩০ ছুঁই ছুঁই। মনের মধ্যে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে সকাল ৮:৩০ টায় বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। নির্ধারিত সময়ের আধ ঘন্টা আগেই চলে আসলাম। এসেই সেখানে ২৭-২৮ বছরে একজনকে দেখতে পেলাম। যদিও দেখতে সে মডেলদের চেয়ে কম যায় না, তারপরও তার উপস্থিতি কেন জানি নিজের মনে বিরক্তের সৃষ্টি করছিলো। হবেনা কেন, সে যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। এভাবে একে একে ১৭ জন উপস্থিত।

…………………

আমি সবার শেষে ইন্টার্ভিউ দিতে গেলাম। ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে সমর্থ হলাম। তারপরও তারা আমাকে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বললেন। সেখানে গিয়ে সেই মডেল মার্কা প্রার্থীকে দেখতে পাই। সেও হয়তো আমার উপস্থিতি তেমন সহ্য করতে পারছিলনা। করবেই বা কেমনে, প্রতিযোগি বলে কথা। দুজনেই এমন ভাব ধরলাম যে আগে থেকে না আসলে কোন কথা নিজ থেকে বলতে যাবনা। দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা অবসানের পর আমদের দুজনকেই সিলেক্ট করলো। সেই খুশীতেও কেউ কারো সাথে কথা বললাম না। হয়তো আমার মত সেও আমাকে অহংকারী বা অসামাজিক ভেবেছিল।

…………………

নতুন মাসের ৫ তারিখে আমি কাজে যোগ দেই। মতিঝিলে অফিস হওয়াতে বাসা থেকে যেতে তেমন সময় লাগত না। নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে চলে আসি। সেখানেও সেই বিরক্তিকর প্রানির উপস্থিতি দেখে সকাল সকাল মেজাজ বিগরে গেল। আমার আবার মেজাজ বিগরে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কষ্ট হয়। মেজাজ এই জন্য আরো বেশী খারাপ হচ্ছিল যে দুজনকেই এরিয়া ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং সেটা একি ব্রাঞ্চে। কথায় আছেনা, ঠেলায় পড়লে বিড়াল মান্দার গাছে উঠে, তেমনি আমিও সব কিছু হজম করে গেলাম।

…………………

একসাথে একি ব্রাঞ্চে কাজ করবো অথচ তার নাম জানবো না সেটা কেমনে হয়। তাই নিজ থেকেই-

– হ্যালো। আমি মিজানুর রহমান। আপনি?

– হ্যালো। আমি জহিরুল ভুঁইয়া।

– আশা করি আমরা দুজনে এই ব্রাঞ্চের সেলকে ত্বরান্বিত করতে একযোগে কাজ করবো।

– আমারও তেমনি আশা থাকবে।

এর বেশী আমরা কেউ বাক্য বিনিময় না করেই নিজ কাজে মনোনিবেশ করি।

…………………

সেদিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময় শাপলা চত্বরের সামনে হকারের কাছে টিশার্ট দেখতে থাকি। কয়েকটা বেছেও রাখি। এমন সময় দেখি জহির নামক বিরক্তিকর প্রাণীটা সেখানে হাজির। আমি যেটা বেশী পছন্দ করেছি দেখি ঠিক সেটাই সে দেখছে। নির্লজ্জের মত রাস্তায় সে খালিগায়ে সেটা পড়ে দেখতে লাগলো। যদিও তাকে বেশ মানিয়েছিল, তাতে কি? আমার অপছন্দের মানুষ কেন আমার পছন্দ করা জিনিস কিনবে? সে ট্রায়াল দিচ্ছিল আর আড়চোখে আমাকে দেখছিল। যখন সে ট্রায়াল হিসাবে পড়েছে তখন আমি মাথা নেড়ে না সূচক হিসাবে ঝাকুনি দিলাম। দেখলাম সে এতে সম্মতি জ্ঞাপন করে সেই পোলো শার্ট রেখে দিল।

…………………

শনিবার দিন অফিসে পোশাক পড়ার ক্ষেত্রে তেমন বিধি নিষেধ থাকেনা। তাই আমি সেদিন হকার থেকে কেনা পোলো শার্ট গায়ে দিয়ে এসেছি। আমাকে দেখেই বিশেষ করে গায়ে দেওয়া পোলো শার্ট দেখেই জহির সাহেবের গাত্র দাহ হতে থাকলো এই জন্য যে এইটাই তিনি ট্রায়াল দিয়েছিলেন। তার অভিব্যক্তি এমন ছিল যে সে আমাকে বিশ্বাস করে ঠকেছে। এর জন্য পারলে এখন আমাকে মাইর দেয়। আমি তার এমন অভিব্যক্তি দেখে মৃদুভাবে হাসতে থাকলে-

– আবার মজা নিচ্ছেন।

– চলেন, নিচে চা খেয়ে আসি।

আমার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব শুনে সে অবাক। যে আমি তার সাথে প্রয়োজন ব্যতিত কথাই বলিনা আর সেই আমি কিনা তাকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ করছি। সে আমার সাথে চা খেতে নিচে গেল। চা খাওয়ার সময়ে দুজন দুজনের সাথে নতুন করে পরিচিত হলাম।

……………………

ধীরে ধীরে জহিরের সাথে আমার দূরত্ব একদম শূন্যে নেমে আসে। আমরা এখন দুজন কলিগের চেয়ে ভালো বন্ধু বেশী। দুজনের মধ্যেই এখন তুমি করে কথা চলে। অফিসের কাজে একদিন দুজনকে সিলেটে যেতে হয়। সেখানে যাওয়ার পর আমি জহির সম্পর্কে ২টা বিষয় জানতে পারি। সেটা হলঃ ১। সে জাকিয়া নামে এক মেয়েকে কয়েক বছর ধরে ভালোবাসে, যাকে তার পরিবার কখনোই মেনে নিবেনা। ২। জহির অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে। তার মনের অস্থিরতায় হতাশ হয়ে সে ফেনসিডিলের মত নেশায় বুদ হয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে যেতাম কেমনে এই ছেলেটা নিজের কষ্টকে সুন্দর করে ধরে রাখতে জানে। এর চেয়েও বেশী অবাক হয়েছি যখন দেখেছি সে যতই নেশা করুক, অফিসে ঠিক সময়েই এসেছে। কখনোই দেরী করে নাই।

……………………

সিলেট ব্রাঞ্চের মিটিং শেষে আমাদের হাতে তেমন কাজ না থাকায় দুজনে সিলেট পর্যটনে ঘুরতে যাই। এমন সময় জহিরের মোবাইলে তার প্রেমীকার ফোন আসে। আমি পাশে বসে থাকায় বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ওপাশ থেকে সে কি বলছে। তার প্রশ্নের উত্তরে জহির বলে যাচ্ছে সে তখন আমার সাথে কোথায় যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে এমনকি কি খাচ্ছে। আমি সেই মুহূর্তে আমার হাসিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। সে ফোন রেখেই-

– তুমি হাসলে কেন?

– না হেসেই বা কি করার আছে?

– সেটইতো বলবে।

– তোমাদের প্রেম দেখে হাসি পাচ্ছে। এমন প্রেম দেখে সবাই হাসবে।

– কেমন প্রেম আমাদের?

– এটা কেমন ভালোবাসা যেখানে একটু পরে পরে তোমাকে তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের কাছে খতিয়ান দিতে হয়। তুমিতো রীতিমত জবাবদিহিতা করছিলে। ভাগ্যিস আমার কপালে এমন জুটেনি। তাকে সোজা করে ফেলতাম।

– প্রেমতো করোনাই তাই এমন করে বলতে পারছো।

– তার পরেও আমার কাছে মনে হয় প্রেম মানে জবাবদিহিতা নয়। প্রেম মানে বিশ্বাস, পরস্পরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। কিছু মনে করোনা, আমি জাকিয়ার ভালোবাসায় এমন কিছু দেখতে পাচ্ছিনা।

– প্লিজ, তার সম্পর্কে কথা না বললেই ভালো হবে।

আমি বুঝতে পারলাম জাকিয়া সম্পর্কে কথা বলায় জহির সেটাতে খুশী হতে পারেনি। হবে বা কিভাবে, আমার সামনে আমার ভালোবাসা সম্পর্কে কেউ খারাপ কিছু বললে আমারও নিশ্চিত খারাপ লাগবে।

……………………

জহিরের একটা অন্যতম বাজে স্বভাব হচ্ছে যাই কিছু হোকনা কেন তার সবকিছুই সে জাকিয়া কে বলবেই। তেমনি সেদিন আমি যা যা বলেছিলাম সবি সে তার কাছে বলে দেয়। আজ শুক্রবার কোথায় একটু ভাল করে ঘুমাবো তার উপায় নেই। ছুটির দিনগুলিতে যেন সকাল বেলাতেই মোবাইলে বেশী ফোন আসে। তেমনি আজও এসেছে। নাম্বারটা অপরিচিত। রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম নারী কন্ঠ।

– আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?

– ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভালো আছি। আপনাকে আমি ঠিক চিনতে পারলাম না।

– আমি জাকিয়া বলছি।

– ওহ। কেমন আছেন?

– ভালো থাকি কি করে?

– কেন?

– এমনিতেই জহিরের পরিবার আমাকে মেনে নিতে চাইছেনা, আবার আপনি এখন জহিরকে আমার বিরুদ্ধে বলছেন।

– আপনি যা বলছেন তা ঠিক নয়। আমি কেন ওকে আপনার বিরুদ্ধে বলবো।

– আমিতো আপনার কোন ক্ষতি করিনি, তাহলে কেন আমার পিছনে লেগেছেন?

– দেখুন সকাল সকাল আমার মেজাজটা খারাপ করবেন না। আপনাদের ব্যাপারে মাথা ঘামানোর কোন ইচ্ছা আমার নাই।

জাকিয়ার সাথে কথা বলা শেষ হতেই আমার মেজাজ চরম বিগড়ে যায়। ইচ্ছা করছিলো জহিরকে কিছু কথা শুনাই।

…………………………

পরের দিন অফিসে গিয়ে আমি জহিরের সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথাই বললাম না। আমার এমন আচরণে সে অবাক। আমি কথা বলছিনা দেখে-

– কথা বলছনা কেন? একদম মাইরা ফালামু কইলাম। আমারে মায়ার তাবিজ কইরা এখন নিজে মুখে তালা দিছ এটা হবেনা। আমারে বলবাতো কি হয়েছে?

জহিরের কাছ থেকে এমন শুনে মনে মনে হাসলাম। কথার ছলে জানতে পারলাম জাকিয়া আমার সাথে যে কথা বলেছে তা জহিরকে জানায়নি। বুঝতে বাকি থাকলানা তাদের মাঝে কোথাও গ্যাপ আছে। তাই আমি জহিরের কাছ থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির মোবাইল নাম্বার নেই আর জহিরকে বলি আমার কথা যেন জাকিয়া কে আর না বলে আর আমার কোন ছবি যেন জাকিয়াকে না দেখায়। এই ব্যাপারে সে আমাকে কথা দিল।

আমি জহিরের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির কাছে ফোন দিতেই জানতে পারলাম আমি এখন জহিরের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এবং সে আমাকে অন্যরকম ভাবে মানে, শ্রদ্ধা করে। এসব জেনে ভালোই লাগছিল। তবে এর চেয়েও বেশী অবাক হলাম তার কাছ থেকে জাকিয়া সম্পর্কে জেনে। সেই মেয়েটি নাকি তাকেও ভালোবেসেছিল। সে এর প্রমান জহিরকে দেখিয়েছিল। কিন্তু জহির জাকিয়ার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসে এসব কিছুই আমলে নেয়নি।

…………………

জহিরের প্রতি আমার খুব মায়া হতে লাগলো। এত দিনে সেও আমার অন্যতম বন্ধুতে পরিনত হয়েছে। তাকে যে আমাকে জাকিয়া নামক মায়ার জাল থেকে সরিয়ে আনতে হবেই। আমি সেই ভাবনা মতে জহিরের সাথে ওদের গ্রামের বাড়িতে যাই। জহিরের মা-বাবা আর পরিবারের সবার কাছেই আমি আগেই পরিচিত হয়ে আছি। সবি সে পাগলটার কল্যানে। আসার সময় জহিরের মা নিজ থেকেই আমার কাছে জাকিয়ার বিষয়টা বললে আমি আরো পরিষ্কার হই। জহিরের মায়ের বিশ্বাস আমি পারব তাকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। আমি তার চাপা কষ্ট দেখে বললাম আপনাদের ছেলে আপনাদের কথাই রাখবে। এই মায়ার জাল থেকে তাকে আমি ফিরিয়ে আনবোই। আপনারা ওর জন্য ভালো পাত্রী দেখতে থাকেন।

……………………

জহিরকে আমি বেশ সময় দিতে শুরু করলাম। প্রথমেই ওকে ফেনসিডিলের জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে অফিস শেষেও ওর সাথে সময় দিতে লাগলাম। কাউন্সিলিং করতে থাকলাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম, সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতাম। এসবের সময় আমি জহিরের মোবাইলকে সাইলেন্ট করে নিতাম। সেও আমার ভয়ে কারো কল রিসিভ করতোনা। আমার সময় দেওয়া আর কাউন্সিলিং এর ফলে সে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ফেনসিডিলের মরন ছোবল থেকে ফিরে আসতে পারলো। এসময় সেও আমার সঙ্গ ছাড়া কিছু ভাবতে পারতোনা।

তারপর শুরু হল আমার আসল মিশন। জাকিয়াকে আমার অন্য নাম্বার থেকে ফোন করলাম। কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে। সে খুব দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। বশে আনতে বেশ সময় লেগেই গেল। আমি তার সাথে সমস্ত কথপোকথন রেকর্ড করতে থাকলাম। এক সময় সে আমার বশে আসে। নিজ থেকেই আমাকে মিস কল দেয়। আমি তাকে ফোন ব্যাক করে রোম্যান্টিক কথা বলতে থাকি। এভাবে কয়েকদিন গেলে সে আমার সাথে দেখা করতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। আমিও এই সুযোগটার অপেক্ষাতে ছিলাম।

……………………

– আজ অফিস শেষে হোটেল অর্কিডে ৪০২ নাম্বার রুমে আমার সাথে একটু যেও। (আমি জহিরকে বললাম)

– আমি সেখানে গিয়ে কি করবো?

– আমি এক মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলতাম। সে আমার সাথে দেখা করার জন্য এবং আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য আসছে।

– শালা। ডুবে ডুবে জল খাওয়া। আমি সেখানে গিয়ে কি করবো?

– আমি তাকে আজকেই দেখবো। তুমি আমার একজন ভালো বন্ধু, আর তুমি তাকে দেখবেনা, তা কি হয়?

– কাবাবে হাড্ডি হয়ে কি লাভ? অন্য সময় দেখবো।

– আমি বলছি আজকে দেখবে এবং আজকেই। সে রুমে অপেক্ষা করবে। বেশী কথা না বলে আমার সাথে চল।

– ঠিক আছে স্যার।

………………………

অফিস শেষ করে আমি আর জহির হোটেল অর্কিডে গেলাম। গিয়েই সরাসরি ৪০২ নাম্বার রুমে গেলাম।

– তুমি রুমে গিয়ে একটু সময় পাস করে নাও। তারপর না হয় আমি আসলাম, পরিচিত হলাম। (জহির হাসতে হাসতে)

– এখনি চল। পরিচিত হয়ে চলে যেও।

৪০২ নাম্বার রুমে ২ বার নক হতেই দরজা খোলা হয়। দরজা খোলার পর এমন কিছু জহির দেখতে পারবে তা সে কল্পনাও করতে পারে নাই। জাকিয়াকে দেখেই জহির-

– আমাকে অনেকে বলেছে তোমার ব্যাপারে, আমি সেগুলি কখনো আমলে নেইনি। আজ নিজ চোখে যা দেখলাম তা কি করে অবিশ্বাস করবো? এমন একজন আমাকে চাক্ষুষ প্রমাণ দিয়েছে যাকে আমি তোমার থেকেও বেশী বিশ্বাস করি। মিজান তুমি সময় কাটালে থাকতে পারো। আর আমার ভুল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো। বিশ্বাস করো, আমার এতটুকুও খারাপ লাগছেনা। বরং কষ্ট হচ্ছে ওর মত একজন মেয়ের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করছিলাম, কাছের মানুষদের দূরে ঠেলে দিচ্ছিলাম। আমাকে অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচালে। (বলেই জহির চলে গেল)

আমিও জাকিয়ার সাথে বিন্দুমাত্র কথা বলার প্রয়োজন অনুভব না করে জহিরের সাথে চলে আসি।

…………………………

আমার দেওয়া সঙ্গ, ডাক্তারের কাউন্সিলিং এ জহির কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে। এখন সে আমাকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।

জহিরকে জাকিয়ার জীবন থেকে ফিরিয়ে আনায় ওর পরিবারের কাছে আমি একজন অন্যতম সদস্যে পরিণত হই। আমার সাথে আলোচনা করেই জহিরের বিয়ে ঠিক করা হয়। জহিরের বিয়ে হবে এটা অনেক খুশীর ব্যাপার হওয়ার কথা আমার কাছে। কারন আমি ওর অন্যতম বন্ধু। কিন্তু আমার কাছে খুশীর বদলে কেমন যেন কষ্টের মনে হচ্ছে। হৃদপিন্ডে কিসের যেন টান অনুভব করছি।

আজ জহিরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। ওর অনেক জোরাজুরিতে নিজের অনিচ্ছা স্বত্বেও এসেছি। সবাই অনেক আনন্দ করছে। কেবল আমার মনেই কেমন যেন বিষাদের সুর বেজে চলেছে। কখন যে আমি জহিরকে ভালোবেসে ফেলেছি তা বুঝে উঠতে পারিনি। এই ভালোবাসায় নেই কোন চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। তারপরেও কেন যেন ভাবতে কষ্ট হচ্ছিলো এই ভেবে যে আজ রাতের পরই সে অন্যের হয়ে যাবে।

আমার এই অন্যমনস্কতা জহিরের দৃষ্টি এড়ায়নি। সবাই যখন আনন্দে মগ্ন তখন জহির আমাকে হাত ধরে পুকুর পারে নিয়ে যায়।

– আমাকে খুব ভালোবাস, তাইনা?

– (আমি অপ্রস্তুত হয়ে) বন্ধুকে বন্ধু ভালোবাসতেই পারে।

– তাই? (আমাকে টেনে বুকে জড়িয়ে) আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসার যে তাবিজে বেঁধেছ সেখান থেকে বের হওয়ার সাধ্য আমার নেই। (কপালে চুমু দিয়ে)

– (জহিরের কথা শুনে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়া অবস্থায়) আমি এমন ছিলাম না। কেমন করে এই তোমাকে আমি এতটা ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেও জানিনা। আর নিজের ভালোবাসাকে অন্যের কাছে তুলে দিতে কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক।

……………………

এই আমি কখনোই এমন ভাবে কোন ছেলের প্রেমে পড়িনি। কল্পনাতেও কখনো কোন পুরুষকে ভালোবাসব সে কথা চিন্তা করিনি। সেই আমি আজ কিনা জহিরের প্রেমে মত্ত। জীবন সত্যি বড় অদ্ভুত। আসলেই প্রকৃতি মানুষকে বাধ্য করে কোন কিছু করতে। তাইতো এং লীর মত বলতেই হচ্ছে- Love is a force of nature.

*****(সমাপ্ত)*****

উৎস: অন্যভুবন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.