প্রতিদান

মেঘ রাজ সাইমুন

১|
“স্বপ্ন, আমি স্বপ্ন দেখি,স্বপ্ন দেখতে আমি ভীষণ ভালোবাসি| স্বপ্ন দেখি বলেই আজ আমি বেঁচে আছি| আমাদের মাঝে কেউ কেউ আছে যারা স্বপ্ন দেখে না| তারা ভাবে স্বপ্ন তো স্বপ্নই! আমি তাদের বলি, হয়তো তোমার সুন্দর একটা মন আছে,আর সেই মনের সম্পূর্ণ অধিকার আছে স্বপ্ন দেখার| ধরো, তুমি একটা গোলাপি পাখি,সারাদিন উড়ছো এডাল থেকে ওডালে, সুন্দর-সবুজ অরণ্যে,ফুলের বুক চিরে অমৃতের স্বাদ নিতে – এই স্বপ্নের বিশ্বাস নিয়ে আমার জীবনে ভালোবাসা এসেছিল|

ভালোবাসা এসেছিল এক চিলতে শরতের মেঘ হয়ে আমার শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটাপূর্ণ জীবনে, চৈত্রের খর ফাটল জমিনে এক পশলা বৃষ্টির মতন, মরুভূমির তপ্ত বালুর বুকে এক টুকরো মেঘের ছায়ার বেশে| হ্যাঁ, আমি ভালোবেসেছিলাম অনিক কে|

জীবনকে নিয়ে খুব দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম আমি| দিনকে দিন জলপূর্ণ দিঘীতে শুকনো কলমিলতার মত হয়ে যাচ্ছিলাম আমি| শত প্রিয় মানুষগুলোর মাঝে আমি যেন একাকিত্বের দুর্বোধ্য ব্যাধিতে ভুগছিলাম|

জলপাইগুড়ির বলিষ্ঠ সনাতন হিন্দু পরিবারের ছেলে, আমি শ্রাবণ| আমাদের ছিল যৌথ পরিবার| মা,বাবাই,কাকাই,জেঠু,জেঠিমা,আশ্রিত নীল দাদাভাই সহ আমরা তিন ভাইবোন|
মেঘ দাদাভাই আর বর্ষা দিভাই ছিলো জেঠুর যমজ সন্তান| আর আমি ছিলাম মা,বাবাইয়ের একমাত্র সাধনার ফল| পরিবারের ছোট ছেলে হওয়ার সুবাদে ভালোবাসার অত্যাচারে জর্জরিত ছিলাম| ছোট কাকাই অবিবাহিত ছিলো,তার যত স্বপ্ন ছিলো আমাকে ঘিরে| কাকাইয়ের বিশ্বাস আর ভরসায় আমি শিলিগুড়ি মেডিকেলে পড়তে যাই| সেখানেই অনিকের সাথে আমার পরিচয়|
বন্ধুত্ব,ভালোলাগা থেকে ধীরে ধীরে সম্পর্ক পরিণতি পায় ভালোবাসায়| লেখাপড়ার পাশাপাশি দুজন নীল প্রজাপতির মত সারাদিন একে অন্যের আকাশে উড়তাম| স্বপ্নের রঙিন ভেলায় বিশ্বাসকে বৈঠা করে ভালোবাসার নদীতে ভরসার পাল তুলে চলতাম আমরা| অনিক আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো| ঠিক যেন আমার স্বপ্নের গোলাপি পাখির মতো করে|

অনিক দিল্লির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে ছিলো,তাতে আমার পরিবারের কোন আপত্তি ছিলো না| মা ওকে তার আরেক সন্তান ভাবতো| অনিক আমার মাকে মা বলে ডাকতো| বাবাইও আমার বন্ধু হিসাবে ওকে প্রচুর ভালোবাসতো| কাকাই তো অনিককে আমার জীবনের আলোপ্রদীপ ভাবতো|

সেবার শরতের দূর্গোৎসবের আয়োজনে ফাজিলটাকে মায়ের কাঁন্নাকাটিতে জলপাইগুড়ি নিয়ে আসি| নীল দাভাই আমাদের স্টেশনে আনতে গিয়েছিল| নীল দা আমার পছন্দের একজন| ছোটবেলায় বাবাই এই বাবামা হীন নীলদাকে আমাদের পরিবারে আশ্রয় দেয়|
সেই থেকে নীল দা এখানে আছে আমাদেরই আপনজন হয়ে| ট্রেন থেকে আমার সাথে অনিককে নামতে দেখে নীল দা এর মুখে অমবস্যার চাঁদ ভর করলো| আমি বুঝতাম, নীল দা আমাকে আপন করে চাইতো,কিন্তু আমি চাইনি আমাকে ভালোবেসে নীল দা তার অন্য ভালোবাসার মানুষগুলোকে হারাক|

মানুষের জীবনটা বড়ই অদ্ভূত| সেদিন যে প্রতিমা বিসর্জনের সাথে আমার উনিশ শরতের শুভ্র কাশফুলের মত ভালোবাসার বাঁধনগুলো বিসর্জিত হবে আমি ভাবেতেই পারিনি| বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলাতে অনিক আমাকে টেনে ঘরের ভিতর নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেতে শুরু করে| দরজা ভেজানো ছিলো না, হঠাৎ বড় দিভাই চলে আসে| আমাদের এই অবস্থায় দেখে ফেলে| তারপর সব শেষ|

আমি চাপে পরে অনিকের সাথে আমার সম্পর্কের কথা বলে দেই| তারপর বাবাই আমাকে প্রচুর মারধর করে| কাকাই আমাকে ছাড়িয়ে আনে| অনিককে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়| যাকে ভালবাসি তাকে কি করে ছেড়ে থাকতাম আমি! প্রচুর কান্নাকাটি করে কাকাইকে ম্যানেজ করি| সেই রাতেই কাকাই মেঘ দাভাই আর নীলদা কে দিয়ে আমাকে স্টেশনে পাঠায়| গিয়ে দেখি অনিক বসে আছে বেঞ্চে| প্রচুর কেঁদেছে বোঝা যাচ্ছে| আমি মেঘ আর নীল দাকে বিদায় দিয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে শুনি,আজ রাতের শিলিগুড়ির শেষ ট্রেন চলে গেছে|

বাধ্য হয়ে অনিককে নিয়ে বাসে চেপে বসলাম,যেটা ছিলো শেষ বাস| সিট না থাকার কারনে আমরা ড্রাইভারের পাশ্ববর্তী সিটে বসলাম| দুজন দুজনার দিকে ভালোবাসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম|
আজ আমি ভালোবাসার জন্য ঘর ছাড়লাম| ভালোবাসা! যা হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ ভাষা| যে ভাষার কোন অভিধান থাকে না,থাকে না কোন নিয়মনীতি| যে সম্পর্কে থাকে প্রেম| প্রেম! যা থাকে সুন্দর ফুলে,স্রোতস্বিনী নদীর দুকূলে| যা নীল আকাশের শুভ্র মেঘকে সঙ্গী করে মাটির পৃথিবীতে নামে| সেই প্রেমের জন্য ঘর ছাড়া| হোক না সেটা সমপ্রেম! ভালোবাসা তো ভালোবাসাই- এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি একটা বিপরীতগামী বাস আমাদের বাসের দিকে আসছে| বিপদ দেখে আমি অনিক কে আমার পিছনে টেনে ফেলি| তারপর একটু ঝাকুনি! সব শেষ! সামনে থাকায় বাসের কাঁচ সমস্ত আমার দেহকে ক্ষতবিক্ষত করে| কিন্তু এই ভেবে ভালোলাগে,যাকে ভালোবাসি তার ক্ষতি না হলেই হয়! আমি জ্ঞান হারাই|

হাসপাতালে আমার শয্যার কাছে অনিক বসে আছে| আমার চোখ বাঁধা| ড্রাইভারের দক্ষতার কারনে দুর্ঘটনাটা এড়ানো গেছে| তবে সবাই ই একটু আধটু আহত হয়েছে। |তার ভিতরে আমার আঘাতই সব থেকে বেশি|

চোখে কাঁচের টুকরো ঢোকায় আমি অন্ধ হয়ে গেলাম জানার পরে, অনিক পরের দিন আমাকে ফেলে রেখে চলে গেল|

কাঁদলাম না|

কেন জানি কান্না এলো না| যাকে ভালোবেসে,ভরসা করে আপনজন ছেড়ে অন্ধ বিশ্বাসে ডুবে গেলাম, তার বিষাক্ত নিঃশ্বাসের আশ্বাসে আমার অন্ধ নয়ন কিভাবে কাঁদবে! শুধু আফসোস হলো নীলদার জন্য,কি হতো আমি তাকে ভালোবাসলে?অনিককে ভালোবেসে কি প্রতিদান পেলাম আমি!

এই পর্যন্ত বলে ছেলেটি থেমে গেলো|
আর আমি অভিক,উনিশ বছরের একটা খ্রিষ্টান ছেলে;খুব গভীর হয়ে শুনছিলাম ছেলেটির কথা| কালো চশমা আর সাদা ছড়িতে ছেলেটিকে খারাপ লাগছিলো না| খুব সুন্দর,নিষ্পাপ একটা মুখ| দেখলে কে বলবে ছেলেটি অন্ধ? সকালে পার্কে দৌড়াতে এসে আলাপচারিতায় তার জীবনের গল্প শোনা| অন্ধ ছেলেটির চোখ থেকে হয়তো জল ঝরছে না,কিন্তু হৃদয়ের সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আমি টের পাচ্ছি|
হঠাৎ জিজুর ফোন এলো| দুজনেই একটু আঁতকে উঠলাম| সেই ভোরে বেরিয়েছি,এখনো বাসায় ফেরার নাম নেই| সিস নিশ্চয় চিন্তা করছে|
সেদিনের মত আমি শ্রাবণের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এলাম|

২|

পৃথিবীতে সকল ধর্মই মানুষকে বিশ্বাসী, বিবেকবান আর মানবিক হতে শেখায়- এই কথাটি আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসার অত্যাচারিনী আমার প্রিয় সিস অলকা ডি’কষ্টা| মাম্মি,ড্যাড মারা যাওয়ার পর অতি আদরে আজ এতোটুকু করেছে আমায়| এমনকি আমার সমপ্রেমী সত্ত্বাকেও মেনে নিয়েছে সিস আর জিজু দুজনে|

হেমন্তের প্রতি হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়া ভোরে শ্রাবণের সাথে আমার পার্কে দেখা হতে লাগলো| তেমনই এক ভোরে_

:কি ব্যাপার? শ্রাবণবাবু| কেমন আছেন?
:ওহ,আপনি! এই তো আছি কোন রকম! তারপর আপনার কি খবর?
:চলছে আর কি! আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন? এখনো জানা হলো না কিন্তু!
শ্রাবণের একটু মুচকি হাসির আড়ালে তার অসহায়ত্বের নিঃশ্বাস বের হলো| তারপর বললেন,
:পৃথিবীতে স্রোতে ভাসা শ্যাওলার মতো যার জীবন, তার আবার আশ্রয়! এই তো পার্কের সামনের গির্জায় থাকি এক ফাদারের কাছে|
:এমনভাবে বলছেন কেন?
:জানেন! ফাদার আমাকে খুব ভালোবাসে| ওনার স্নেহে কখনো আমি করুণা দেখতে পাই না| তিনি আমাকে তার সান ভাবেন| এখন পৃথিবীতে তিনিই আমার অসহায়ত্বের একমাত্র আশ্রয়স্থল|
:হুম| যার কেউ নেই| তার ঈশ্বর আছেন|

এভাবে শ্রাবণের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে| সারাদিন আমার চোখের সামনে শ্রাবণের সুন্দর মুখখানা ভাসতে থাকে| শ্রাবণের সাদা ছড়ি ধরে আমি আর শ্রাবণ হারিয়ে যেতাম দার্জিলিং এর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায়| শ্রাবণ তার জীবনের গল্প বলতো আর আমি মুগ্ধ নয়নে ওর মুখের পানে তাকিয়ে থাকতাম| মাঝে মাঝে ও টের পেয়ে গিয়ে বলতো,ওমন করে কি দেখো! আমি অবাক হতাম| ও কি করে বুঝলো আমি ওর মুখপানে চেয়ে ছিলাম!

ধীরে ধীরে আমি শ্রাবণের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম| অন্ধ ছেলেটিকে আমার এতো ভালো লেগেছিলো কি বলবো! ও আমার থেকে বছর দুয়েক বড় ছিলো| যেখানে অভিব্যক্তিটা দেখার মত| কিন্তু ও সব সময় দৃষ্টিহীনতার দোহায় দিয়ে আমার থেকে দুরে থাকতে চাইতো| আমি কখনো ওকে ঝরাফুলের সাথে তুলনা করিনি, করেছি নীলাকাশের ধ্রুব তারার সাথে| চাঁদের নিজস্ব আলো নেই,তাই বলে কি চাঁদ জোছনা ছড়ায় না? তেমনি শ্রাবণের অন্ধত্ব কখনো আমাকে হতাশ করেনি| শ্রাবণের ব্যাপারটা সিস, জিজু সবাই জানতো| সিস ঠিকই লক্ষ্য করেছিলো আমাকে| একদিন সন্ধ্যায় আমি ঘরে বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছিলাম| সিস এলো-

:কিরে অভিক? আজকাল যে তোর দেখা নেই! সিসকে ভুলে গেলি?
:তুমি যে কি বলো? তোমাকে ভুলবো! ও গড|
:অভিক! শ্রাবণের কি খবর রে?
:এই তো আছে ভালো| কেন সিস?
:তুই কি ওর প্রেমে পড়েছিস?
:কি যে বলো!
:আরে বল না? কি রে!
:হুম সিস| ওকে আমার ভীষণ ভালো লাগে|
:ওকে বলেছিস তুই ওকে ভালোবাসিস?
:না|
:আরে কেন? যত দ্রুত পারিস বলে দে না ব্রো|
:হুম|

হয়তো সিস ঠিক বলেছে| কিন্তু আমি কিভাবে শ্রাবণকে বলবো যে,আমি ওকে ভালোবাসি! আমি ওকে ভালোবাসি জানলে, আপন করে চাই বুঝলে ভাববে, আমি ওকে করুণা করছি|

শ্রাবণ ছিলো আমার দ্বিতীয় ভালোবাসা| ফারহান আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তিন মাস আমি মানসিক হাসপাতালে ছিলাম| আমি ফারহানকে খুব ভালোবাসতাম| জীবনের সব সুখ খুঁজে পেয়েছিলাম ওর মাঝে| নীলপাখির মত দুজনে নীড় খুঁজে বেড়িয়েছি এডাল থেকে ওডালে| আকাশের নিশিতে জ্বলা কোটি তারার মাঝে আমি চাঁদ পেয়েছিলাম ফারহানকে পেয়ে|
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে ফারহান বিয়ে করে পরিবারের চাপে| তারপর আমার পাগলামি শুরু হয়।
এখন শ্রাবণের মাঝে আমি এখন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে চাই|

আজ দুই মাসের জন্য জিজু,সিস আমেরিকাতে যাচ্ছে ব্যবসার কাজে| সিসকে ছাড়া আমি একটি দিনও থাকি নি| কিভাবে থাকবো!

:কিরে অভিক?কাঁদছিস কেন বোকা?
:আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া? আমার পৃথিবী ওলোটপালোট হয়ে যাবে|
সিস একটু মুচকি হাসলেন| তারপর টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
:কেন শ্রাবণ আছে তো! মন খারাপ হলে ওকে বাসা নিয়ে আসিস|
:তুমি যে কি না!

সিস আমাকে জড়িয়ে ধরলো| এই আমার সিস| জগতের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার খনি| কলকাতা
থেকে যখন জিজু সিসকে বিয়ে করে দার্জিলিং এনেছিলো,তখন থেকেই আমি আমার খনির সাথে আছি|
জিজুদের এয়ারপোর্টে ছেড়ে আমি গির্জায় গেলাম শ্রাবণের কাছে| গিয়ে দেখি গির্জায় প্রচুর ভিড়|
শুনলাম,রাতে ফাদার হার্ট অ্যাটাক করে মরে গেছে|
আমি শ্রাবণকে সামলাতে লাগলাম| সন্ধ্যায় ফাদারের কফিন সমাধি স্থলে গেলো| আমি শ্রাবণকে নিয়ে বাসায় এলাম|

আজকাল শ্রাবণের মুখের দিকে তাকানো যায় না| ফাদারের মৃত্যুর পর ও কেমন নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে| ভালো করে কথা বলে না আমার সাথে| সিস চলে যাওয়ার পর সংসারের ছোট ছোট কাজগুলো আমি নিজ হাতেই করি| আর জিজুর অফিস দেখে রাখে রিক ব্রো| জিজুর একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু|
শ্রাবণকে সময় একটু কম দেই| কিন্তু শ্রাবণের শাওয়ার নেওয়া থেকে শুরু করে ওকে খাওয়ানো,রাতে বিছানা করে দেওয়া, শেভ করানো সবই আমি করতাম| যাকে ভালোবাসি তার জন্য এইটুকু আমার কাছে কিছুই না|
এইতো একটু আগে শ্রাবণকে ছাদে বসিয়ে রেখে আমি কফি নিতে এসেছি|
ছাদে গিয়ে দেখি শ্রাবণ দোলনায় বসে আছে| আমি টি টেবিলে কফি রেখে ওর পাশে বসতেই বললো,
:কে অভিক!
:হ্যাঁ! তুমি বুঝলে কিভাবে?
শ্রাবণ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
:তোমার গায়ের গন্ধে আর স্পর্শে|

আমি অবাক হলাম| শুনেছি যাদের পঞ্চইন্দ্রিয় এর একটা নষ্ট হয়,বাকিগুলো নাকি যথেষ্ট ম্যাচিউরড হয়| শ্রাবণের ক্ষেত্রে কি এটার প্রভাব? নাকি আমার ভালোবাসার?

:অভিক কিছু বলছো না যে?
শ্রাবণের ধাক্কায় আমার সম্মতি এলো|
:দেখছো শ্রাবণ আজ কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে ,যেন নীল জোছনায় সারা পৃথিবী নীলিমান্দ্রময়ী রমণী রুপে অনাবৃত তনু অবগাহন করেছে!
বলেই আমি একটা ধাক্কা খেলাম| আমার খেয়ালই ছিলো না যে শ্রাবণ অন্ধ| অকারনে ও কষ্ট পাবে এখন| হঠাৎ শ্রাবণ বলে উঠল,

:জানো অভিক! খুব ইচ্ছা ছিলো মনের মানুষকে নিয়ে রুপালি চাঁদের নীল জোছনা দেখবো| সারারাত দুজন শুভ্র মেঘের শীতল শিশির ছুঁয়ে স্বপ্নের গোলাপি পাখি হয়ে উড়বো| ভালোবাসাকে পাখনা করে বিশ্বাসী মানুষটার ভরসায় দুর দিগন্তে পাড়ি দিবো| কিন্তু অনিক কেন জানি চাঁদকে ঘৃণা করতো| আমার মতো ফুল,পাখি,চাঁদের স্বপ্ন ও দেখতো না| এসব নিয়ে আমাকে কতো স্টুপিড বলেছে| অথচ তুমি কতো সুন্দর প্রকৃতি বিভোর| আজ যদি আমি দৃষ্টিহীন না হতাম তাহলে অন্তত বন্ধু হিসেবে তোমার সাথে জোছনাবিলাস করতাম| কিন্তু কি ভাগ্য আমার দেখো,আজ একই ছাদে তুমি চাঁদের জোছনা দেখছো আর আমি দুচোখে শূন্যতা আর অন্ধকার দেখছি|

শ্রাবণের কথাগুলো আমাকে ভীষনভাবে আঘাত করল| আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম| যাকে এতো ভালোবাসি তার কষ্টগুলো কিভাবে নেই! আমি শ্রাবণকে স্পর্শ করলাম,বললাম-

:আমি তোমার স্বপ্নকে পূরণ করবো| তুমি দুচোখ ভরে মুক্ত আকাশ দেখবে,নীলাকাশের ধ্রুবতারা দেখবে,স্বপ্নের গোলাপি পাখি হয়ে মনের অরণ্যে উড়বে এডাল হতে ওডালে|
:পোড়ামনে মিথ্যা স্বপ্ন না দেখানো ভালো|
:বিশ্বাস থাকলে ভরসা করতে পারো আমায় শ্রাবণ| আগামী ২২শে শ্রাবণ আমার ২০তম জন্মদিনে আমি তোমার চোখের দৃষ্টি ফিরাবো| আমি সিসের সাথে কথা বলে নেবো| তোমায় আমি ভালো থাকতে দেখতে চাই দুচোখ ভরে| তোমার সুন্দর নয়নে নয়ন রেখে জোছনাবিলাস দেখবো আমি|
:পারবে অভিক তুমি?
আমি শ্রাবণের হাত দুটি ধরে আমার কোলে টেনে নিলাম|বললাম,
:এই যে আমি তোমায় কথা দিলাম| আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তোমায় সুখী দেখতে চাই| আমার শ্রাবণের জীবন আকাশে শরৎ এর শুভ্র মেঘ ভাসাতে চাই, শ্রাবণ মেঘকে তাড়িয়ে| আমি চাই তুমি স্বপ্ন দেখো দুচোখ ভরে| রঙিন প্রজাপতির ডানায় তোমার স্বপ্নের সাতরং সাজাক রংধনু|

বলতে বলতে আমার দুচোখ জলে ভরে গেলো| শ্রাবণ আমাকে জড়িয়ে ধরে সেরাতে অনেক কেঁদেছিল| যেখানে রুপালি চাঁদ তার নীল জোছনায় দুই যুবকের অন্তরালের আর্তনাদ খুঁজছিলো|
কিন্তু সেই জোছনা ঝরা রাতেও শ্রাবণকে আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারি নি|

৩|
আজ ২২শে শ্রাবণ|আমার পৃথিবীতে আগমনের ২০তম শ্রাবণ| আর আমার ভালোবাসার শ্রাবণের নতুন জীবনের পূর্ণতার দিন| ওর চোখ অপারেশনের শুভদিন|

সকালে হাইওয়েতে আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেল|
শ্রাবণকে ডাক্তাররা ওটিতে নিয়ে গেছে| আমি একই হাসপাতালে জরুরী বিভাগে শুয়ে আছি|
সারাটা সকাল শ্রাবণের অপারেশনের জন্য আই ডোনার খুঁজতে খুঁজতে হতাশ হয়ে পরি| যে লোকটির চোখ দেবার কথা ছিলো তিনি এখন দিতে রাজি নন| তার টাকার প্রয়োজন শেষ| এদিকে ডাক্তার বলেছে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষের কর্ণিয়া সংযোজনে শ্রাবণ আবার দেখতে পাবে| আমেরিকা থেকে সিস বার বার বলছে টাকার কোন সমস্যা নেই, তুই যেভাবে হোক আই ডোনার খুঁজে বের কর| সকল মিডিয়াতে প্রচার করার ব্যবস্থা করলাম রিক ব্রো কে দিয়ে| যে করেই হোক আজ শ্রাবণের অপারেশন হওয়া চাই ই চাই|

কিন্তু কোথাও কোন সন্ধান হলো না| পৃথিবীর সকল ভাষা যেন আমি ভুলে গেলাম|যাকে ভালোবেসে কথা দিলাম আমি তার নতুন জীবনের আলো ফেরাবো, তাকে কি বলবো আমি? এসব ভাবতে ভাবতে হাইওয়েতে একটা প্রাইভেট কারের ধাক্কা অনুভব করলাম আমি, সেখানেই জ্ঞান হারালাম| তারপর, নিজেকে এই জরুরী বিভাগে আবিষ্কার করলাম|

আমি কেবিনে শুয়ে ছিলাম| বিকেলে রিক ব্রো এসে খবর দিল শ্রাবণের অপারেশন সাকসেসফুল| আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম| রিক বললো,
:আজ শ্রাবণের চোখের আলোর সন্ধান দিলে,কিন্তু এক্সিডেন্টে নিজের চোখ দুটো হারালে| জন (জিজু) ফিরে এলে আমি তাকে কি জবাব দিবো বলতে পারো?
:ব্রো আপনার কিছু বলতে হবে না| আমি সব ম্যানেজ করে নিবো|
:হুম|
রিক বেরিয়ে গেলো|

তার যাওয়াটা আমি দেখতে পেলাম না| আজ আমি নিজে শূণ্য তাতে কি! শ্রাবণ তার সকল পূর্ণতা পাক| পৃথিবীর বুকে ভালোবাসা এমনই হয়,যাকে ভালোবাসা যায় তার জন্য সব সব করা যায়|

সাতদিন পর শ্রাবণের চোখের বাঁধন খোলা হলো| প্রথমে শ্রাবণ আমাকেই খুঁজেছিলো |কিন্তু আমি সেদিন সেখানে যায় নি ভয়ে| যদি শ্রাবণ আমাকে এরুপে দেখে নতুন নয়নে অশ্রু ঝরায়!
|
আজ আমরা বাসায় এলাম| শ্রাবণ আমাকে এই দৃশ্যে দেখে খুব হতাশ হয়েছিলো| এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা রিক ওকে বলেছিলো| আমি শ্রাবণের সেই চশমা আর সাদা ছড়িতে সেজেছিলাম| এভাবে কেটে গেলো একটা মাস| সিস,জিজু এখনো ফেরেনি|

আজকাল শ্রাবণ অনেকটা বদলে গেছে, আমাকে তেমন একটা দেখে না| ঠিক মত বাসায় ফেরে না| মাঝে মাঝে রিক ব্রো আমাকে এসে দেখে যায়| সেদিন সন্ধ্যায় শ্রাবণ তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে| শ্রাবণকে ডেকে কাছে আনলাম| বললাম,
:আজ পূর্ণিমা তাই না শ্রাবণ?
:হুম| পূর্ণিমা! তো?
:তুমি আমাকে একটু ছাদে নিয়ে যাবে?
:তুমি ছাদে গিয়ে কি করবে?
:তোমার সাথে একটু কথা ছিলো|
:ওকে|
শ্রাবণ আমাকে ছাদে নিয়ে গেলো| বলল,
:তুমি একটু বসো| আমি আসছি|
:হুম| যাও|
মিনিট সাতেকপর শ্রাবণ ফিরে এসে আমার পাশে বসলো| আমি ওর হাতটা আমার কাছে টেনে নিলাম| বললাম,
:আজকাল তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো!
:কেমন হয়ে গেছি?
:এই যে তুমি আমার সাথে ভালো করে কথা বলো না| আমাকে এইটুকু সময় পর্যন্ত দাও না|
:আসলে অভিক আমি একটু ব্যস্ত আছি| আচ্ছা তোমার কি কথা ছিলো বলো তো| আমাকে একটু বেরোতে হবে|
:আজ ছাদে জোছনা পরেছে,তাই না?
:দেখছো ভাগ্যের কি পরিহাস! সেইরাতের কথা তোমার মনে আছে শ্রাবণ? যে রাতে নীল জোছনার কথা শুনে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেচ? সেই ভরা চাঁদের আলো শুধু আমি একলা দেখেছিলাম,আজ তুমি দেখছো একলা। আমি দৃষ্টিহীন| তাতে আমার কোন দুঃখ নেই,তুমি তো আছো আমার পাশে| পারবে না আমাকে নিয়ে পথ চলতে?

শ্রাবণের হাতদুটো আমার কাছ থেকে সরে গেলো| আমি টের পেলাম শ্রাবণের হতাশা|

:সরি অভিক| আমি পারবো না| অন্ধত্বের যে কি জ্বালা,তা আমি জানি|
:শ্রাবণ, আমি তোমায় ভালোবাসি| সারাজীবন তোমার বিশ্বাসের কাঁধে ভরসা করে পথ চলতে চাই|
:অভিক, আমিও তোমাকে ভালোবাসি| কিন্তু সেটা নেহাৎ বন্ধু হিসাবে| তুমি আমার জীবনের আলো খুঁজে দিয়েছো,তোমাকে ভালোবাসা আমার কর্তব্য,দায়িত্ব নয়| আজ তোমাকে ভালোবাসলে,কাল তোমার মনে হবে আমি তোমাকে দয়া করছি,করুণা করছি| আর আমি সেটা চাই না|
:শ্রাবণ…আমি তোমাকে আমার আলো করে চাই,স্বপ্নের গোলাপি পাখি করে চাই,হৃদয়ের নূরে রওশন করে চাই| তোমাকে দেখে আমি দ্বিতীয় বার ভালোবাসতে শিখেছি| ফারহান আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি নিঃসঙ্গ ছিলাম| তোমাকে ভালোবেসে আমি আজ তার ক্ষত ভুলতে বসেছি|
:অভিক! তা হয় না|আমি তোমার অন্ধত্বকে বরণ করতে পারি না| আমি চাই মুক্তপাখির মত বাঁচতে,আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে ভালোবাসার স্রোতস্বিনীতে ভাসতে,আমার স্বপ্নকে সঙ্গী করে সাত রংয়ে রাঙ্গাতে চাই জীবন|
:কিন্তু শ্রাবণ! আমি তো তোমাকে ভালোবাসি|
:জানো আমি অনিককে খুঁজে পেয়েছি|
:কী?
:হ্যাঁ| সেদিন রিকের সাথে অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ড দাড়িয়ে ছিলাম| দেখি অনিক এদিকে দৌড়ে আসছে| আমি তো অবাক! তারপর অনেক কথা হলো|[ সেদিন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারন বলতেই সে কি কাঁন্না !বলল,
:আমি ভুল করেছিলাম শ্রাবণ| আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি|
আমি বললাম,
:কিন্তু তুমি তো আমার ছিলে তাই না? আমার অসহায়ত্বের কোন মুল্য তোমার কাছে ছিলো না|
ও বলল,
:প্লিজ! শ্রাবণ! আমি সব বলবো তোমাকে|
তারপর আমরা একটা কফিশপে বসলাম। আজ ২মাস হলো আমাদের যোগাযোগ|
:এতো কিছু হলো তুমি আমাকে কিছুই বললে না!
:সরি অভিক! আসলে আমি তোমাকে টেনশনে ফেলতে চাইনি|
:অনিক এখন কোথায়?
:ও এয়ারপোর্টে আছে| আজরাতে আমাদের কানাডা ফ্লাইট,আমরা সেখানেই ভালো থাকবো|
:কি বলো তুমি?
:তোমাকে আমি সব বলতাম|
:না| ঠিক আছে|
:সরি অভিক! আমাকে এখন যেতে হবে| ১০টায় ফ্লাইট| পারলে আমাকে ক্ষমা করো|
:একটা কথা রাখবে?
:হুম বলো|
:শেষবারের মত আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে|
শ্রাবণ আমাকে জড়িয়ে ধরলো| সেই রাত,সেই চাঁদ আজও আছে, শুধু ভালোবাসা নেই| আমি শ্রাবণের গালে একটা চুমু দিলাম| যেটা আমি সারা জীবন সঙ্গী করে বাঁচবো| দায় সারতে শ্রাবণও একটা দিলো| আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
:আসি অভিক! তুমি ভালো থেকো|
:তুমিও ভালো থেকো শ্রাবণ| অনিককে আমার সহবাত দিও| ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক|

হয়তো শ্রাবণ চলে যাচ্ছে| আর কোনদিন ফিরবে না| আমার শুভ্র মেঘের নীল আকাশকে শ্রাবণের কালো মেঘ দ্বারা পূর্ণ করে|
ওকে আমি বলতে পারিনি যে,সেদিন আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেটা সামান্য| তোমার জীবনের আলো ফিরাতে আমি মিথ্যা বলেছিলাম তোমাকে|য দি তুমি করুণা ভেবে আমার দেওয়া চোখ দুটো না নাও! আই ডোনার খুঁজে না পেয়ে সেদিন আমিই তোমাকে চোখ দিয়েছিলাম| ভেবেছিলাম আমার চোখেই তুমি আমাকে দেখবে! ভালোবাসার জন্য এইটুকু তো করতেই পারি| হঠাৎ ছাদের দরজায় গিয়ে হয়তো পিছন ফিরে শ্রাবণ ডাক দিলো বললো,
:সত্যি ভালো থেকো অভিক|
:হুহ|
শ্রাবণ চলে গেলো|

গির্জার সামনের পার্কটায় আমি বসে আছি| সেই হেমন্তের হিমেল হাওয়ার ভোর|
শ্রাবণ অনিকের সাথে কানাডা চলে গেছে এই এক সপ্তাহ হলো| আমার দেখাশুনা আজকাল রিক ব্রো করছে| সত্যি আমি আজ করুণার পাত্র হয়ে গেছি| যার দ্বারস্ত হই, তার করুণা আমায় ভিক্ষা করতে হয়| রিকের ছোঁয়ায় আমার ভাবনার ছেদ পরলো|রিক ব্রো কখন এসে আমার পাশে বসেছে আমি টেরই পায়নি| আমি বললাম,
:কি ব্যাপার?আজ এতো সকালে পার্কে যে?
:এমনিতেই| কাল তোমার সিস আর জিজু ফিরছে| জানো তো!
:হুহ|
:জানো! আজ আমার বিয়ের তিন মাস পূর্ণ হলো| আজ আমার বউ আমাকে বলছে,আমি নাকি ওকে একটুও ভালোবাসি না! বললাম,বাসি তো ভালোবাসি| কিন্তু আমি ওকে সত্য ভালোবাসি| কি জানি!আমি বলতে পারবো না| আমার মন বলতে পারবে| তবে মনকে জিজ্ঞাসা করার মতো ক্ষমতা বা সাহস আমার নেই|
:আপনি আপনার ওয়াইফকে ভালোবাসেন না কেন?
:বলতে পারবো না| সেদিন তুমি যখন বলেছিলে,তুমি শ্রাবণকে ভালোবাসো| ওর জন্য সব করতে পারো| তখন খুব কেঁদেছিলাম| কারন আমি তোমায় ভালোবাসতাম| আজও ভালোবাসি| বাবার চাপে পরে হয়তো হিন্দু শাস্ত্র মতে রচনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে| কিন্তু…
:থাক না এসব| আপনার ওয়াইফকে ভালোবাসা আপনার দায়িত্ব|
:হুম| কিন্তু অভিক আমি তো….
:আমি খুঁজে পাওয়ার মতো কিছু হারাই নি| যা হারিয়েছি তা স্বপ্ন| প্রেমী হারালে দ্বিতীয় প্রেমীতে হয়তো ভালোবাসা দিয়ে তা পূরণ করে| কিন্তু একবার স্বপ্ন হারালে তা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব| শ্রাবণ আমার স্বপ্ন ছিলো|
:ও তোমার ভালোবাসার কি মূল্য দিলো আজ! এমনকি ওর জন্য তুমি চোখ দুটো হারালে|
:স্বপ্নের জন্য মানুষ সব করে| শ্রাবণ আমার ভালোবাসা ছিলো| প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমি ওকে ভালোবাসি নি|
রিকের দুফোঁটা চোখের অশ্রু আমার সাদা ছড়িতে রাখা হাতে পড়লো|হ য়তো আমি দেখছি না,কিন্তু অনুভবে বুঝলাম|

রিক উঠে চলে গেলো| আমি আটকালাম না| হয়তো ফিরে ফিরে আমায় দেখছে| ওর ভালোবাসার প্রতিদান দেবার মত আজ আর আমার কিছু নেই| শ্রাবণকে ভালোবেসে যে বিষাক্ত প্রতিদান পেলাম,তার মূল্য শুধরাতে আমার সারাজীবন লেগে যাবে| শুধু বলি,যিশু যেন আমার শ্রাবণকে ভালো রাখে| আমার দেওয়া চোখ দুটো যত্নে রেখো শ্রাবণ| আকাশের বিশালতার মাঝে আমার খোঁজার কিছু নেই| শুধু নীলাকাশে শ্রাবণ এলে তোমায় মনে পরবে বর্ষার রিনিছিনি শব্দে| হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় মন কেঁদে উঠবে তোমার জন্য|

আমি উঠে হাটা শুরু করলাম| সঙ্গে আছে শ্রাবণের চোখের চশমা আর হাতের সাদা ছড়ি| যা আমার মতো নিঃসঙ্গ গোলাপি পাখির আগামীর স্বপ্ন,বিষন্নতার ভরসা,পথ চলার বিশ্বাস| হঠাৎ মনে পড়লো কাল আমার ভালোবাসার খনি সিস আসছে| দুরে কোথাও হেমন্তের পাখি ডেকে গেলো|

¤সমাপ্ত¤

উৎস: অন্যভুবন

উৎসর্গঃ ‘বন্ধুমহল’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.