
ফুর্তিবাজ বালক
(গল্পটি কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে কিংবা অন্য কোন কিছুর সাথে গল্পের কোন অংশ মিলে গেলে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।)
১
আচ্ছা, থাই গ্লাস কি?
– শহুরে জানালায়, এপার্টমেন্ট, ফ্লাট এ যেসব স্বচ্ছ কাচ ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই থাই গ্লাস।
-ও এইগুলো! আমি ভেবেছিলাম, জল কিংবা জুস পানের গ্লাস হবে হয়তো। তাহলে শাওয়ার জেল দিয়ে কি করে?
– গায়ে মাখা সাবানের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ধনী মানুষেররা ব্যবহার করে থাকে।
কিন্তু জেলতো চুলে দেয় । আর শাওয়ার কি?
– কিরে, হঠাৎ এসব নিয়ে পরলি কেন? কি হয়েছে বলতো?
আরে বলনা, শাওয়ার কি? সত্যি আমি জানি না ।
– গোসল করাকে বুঝায়।
ও আচ্ছা।
ইদানীং ওর এসব প্রশ্নে অবাক হই। কিসব প্রশ্ন করে!! কোথায় পায় এসব!! আমার পাশের বাসায় সপরিবারে ভাড়া থাকে ছেলেটা। ওর বাবার বেসরকারি চাকরীর দায়ে বছর বছর জায়গা পরিবর্তন করতে হয়।
বাসার পাশে একটা খোলা জায়গা আছে। জলপাই আর কাঠাঁল গাছের ছায়ায় প্রায়ই দেখেছি খুব চুপচাপ বসে থাকতো। কেন জানি একটা নিঃসঙ্গ ভাব। মাস চারেক আগে একদিন তাহসানের গান শুনছিলাম, হালকা একটু সাউন্ড দিয়েই। বারান্দার গ্রিলে এসে কড়া নাড়ল।
ভাইয়া, আমি কি আপনার সাথে কিছুক্ষণ বসতে পারি ? আমি ঐ বাসায় থাকি।
– অবশ্যই, কেন নয় ! এসো।
আসলে তাহসানের এই গানটা আমার খুব ভালো লাগে। আমিও হেডফোনে এই গানটাই শুনছিলাম।
– ওয়াও ! ভালোইতো। তাহলে বসো দুজনেই শুনি। আমারো ভালই লাগে।
ভাইয়া কি স্মোক করেন?
– নাহ। মুখের তুলনায় ঠোঁট হালকা কালো। যেকেউ দেখলেই এটাই ভাবে। স্মোকিং করার ইচ্ছে নাই, তবে মদ্যপানের ইচ্ছে আছে।
হাহ হাহ হা ! কি বলেন ! মদ খাবেন কেন !! ওটাতো ভালো না।
-সেটা আমিও জানি। কিন্তু ইচ্ছে করে।
মানুষ নাকি কষ্টে মদ খায় !
– তোমার কি মনে হয় !! আমেরিকানরা কষ্টে মদ খায় !!
এই রুমে একাই থাকেন?
– একাই। ও… আরেকটা কথা, তোমাকে দেখি, বিকেলে একা একা চুপচাপ বসে থাকো। ব্যাপার কি !!
আসলে ভাইয়া, আমরাতো এখানে নতুন এসেছি। তাই এখনও কারো সাথে ঠিকমতো পরিচিত হতে পারিনি।
দু-এক কথায় এভাবেই ঘনিষ্টতা। চার বছরের জুনিয়র, তুমি থেকে তুই ডাকি। সবদিকেই মেধাবী বলা যায়, শুধু একা থাকার ব্যাপারটা আলাদা।
আমি ভার্সিটি আর টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরতেই রুমে চলে আসে। আড্ডা, মুভি দেখা, গান শুনা সব মিলিয়ে ওর সাথে আামারো সময় ভালোই যাচ্ছিলো। এমনিতে নিরব দেখালেও যথেষ্ট প্রাণ চঞ্চল। নিজের বিষয়ে শেয়ার করার কৃপণতা থাকলেও বিভিন্ন বিষয়ে তার কৌতুহল দেখে ভালোই লাগে। ছোটবেলা থেকেই পড়া নিয়ে ব্যস্ততা আর মায়ের পাশে থাকা সবমিলিয়ে ভার্র্চুয়াল জগৎ ছাড়া বাইরের জগৎটা তার প্রায় অজানা।
ওর সাথে ভালো ঘনিষ্টতার কারণে ওর মায়ের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। মহিলা যথেষ্ট বিনয়ী আর নিজের সন্তানের মতই দেখেন আমাকে। বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগে। খালার কাছেই ওর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি।
২
সারা সপ্তাহে কাজকর্ম আর পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে শুক্রবারের সকালটা ঘুমিয়েই পার করি। অনেক সময় নাস্তাও করি না। শুক্রবারে আশেপাশের পরিবেশটা একটু নিরব থাকে, তাই ঘুমের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ।
মোবাইল এর ভাইব্রেশন এ ঘুমকাতুর চোখে কল রিসিভ করলাম।
-এ্যালো (হ্যালো)
ভাইয়া আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
-ও, তুই ! আমিতো ঘুমে। ভিতরে আসবি ?
হুম।
– কিছুক্ষণ পরে আসিস। একটু ঘুমাই ।
ফোনটা কেটে গেল। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠলাম, দরজা খুলে দেখি, চলে যাচ্ছে।
ডাক দিলাম….
-ভিতরে আয়……।
না তুমি ঘুমাও। আসবো না। পারে আসবো।
-আরে আয়না,,, ঘুমের ঘোরে কি বলছি ! হাতে ঐটা কি!
রসমলাই। তোমার জন্য।
– ওয়াও, খালা জানলো কিভাবে রসমলাই আমার এত্ত প্রিয়! তুই বস, আমি এখুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ফ্রেশ হয়ে এসে রসমলাই খেলাম। খুব ভালো লাগলো।
– কিরে তুই খাইছিস!
না, তুমিতো দিলেই না। একা একাই খেয়ে ফেললা।
-ধুর, এসব কি শেয়ার করা যায় নাকি!! যা, তোকে কিনে খাওয়াবো। দৈবকের দোকান থেকে। সেইরকম টেস্ট।
এটাতো দৈবকের দোকান থেকেই আনা।
-ওওওওও, এজন্যইতো এত্ত মজা লাগলো।
আর বলো না, জিবে জল এসে যাচ্ছে।
– হাহ হাহ হা।
হাহ হাহ হা। আচ্ছা ভাইয়া, তুমি এত্ত ঘুমাও কেন শুক্রবারে? আমিতো ভাবছিলাম তোমার সাথে বসে মুভি দেখবো।
– তো তুই মুভি দেখ, আমি আরেকটু ঘুমাই।
তুমি এত্ত ঘুম পাগল কেন? এত ঘুমাও তবু তৃপ্তি মেটে না?
– বিয়ে করার পর ঠিক মতো ঘুমাতে পারলেতো! তাই আগেই ঘুমিয়ে নিচ্ছি।
তুমি করবা বিয়ে? আমারতো মনে হয় না। তুমি যেই বাউন্ডুলে। বিয়ে করলে বউকে সময় দিতে হবে। তুমি পারবা না।
-তাহলে যেখানেই যাবো বউ নিয়ে যাবো। হাতঘড়ির মত।
হাহ হাহ হা। মেয়ে মানুষ নিয়ে যা ইচ্ছে খুশি তাই করতে পারবা না। বাসায় ফিরে আসতেই হবে।
– তো, তাহলে কি করবো, ছেলে বিয়ে করবো নাকি!!
হাহ হাহ হা। সেটাই করো।
-কি সর্বনাশ! কি বলিস!! ও…,! তোকে একটা মেয়ে পছন্দ করতো, ওর খবর কিছু জানিস?
শুনেছি, ও নাকি ঢাবিতে চান্স পেয়েছে।
ভালোইতো!
ভালো মানে ! ও চান্স পাইছে তাতে আমার কি ! আমি কি ওকে পছন্দ করি নাকি !
-পছন্দ করলে সমস্যা কই।
আমি কখনও ওকে নিয়ে ভাবিনি।
-তাই, তাহলে দেবদাস হয়েই থাক।
এহহে, আমি দেবদাস হবো কেন? আমি কি প্রেম করেছি নাকি ! দেবদাসতো তুমি ! পেটুক দেবদাস।
-তুই কি আবার রসমলাইয়ের খোটা দিলি ! দাঁড়া, খালাকে বলে আসছি।
আম্মা বাসায় নাই, সকালেই কই জানি বের হয়ে গেছে। যাও, গিয়ে বলে আসো।
-এইবারের পাল্লায় বেঁচে গেলি!
৩
টিউশনি শেষ করে কম্পিউটারে ফেসবুক নিয়ে বসলাম। চ্যাটিং করছিলাম। ফেইক আইডিতে। ও এসে ডাক দিল। দরজা থেকে গ্রিলের তালা চাবি দিতে চাইলাম।
-এই নে খুলে আয়।
অলস একটা। আমি পারবো না। তুমি খোল।
-দেখ্ এখন, অলস কে !
তুমি, অলসের দেড়মণ।
-তু্ই তিন মণ।
তুমি নয় মণ।
-তুই ৮১ মণ।
আর তুমি ৬৫৬২ দশমিক ৫ মণ।
-কিরে, বর্গটা ঠিক আছে?
হিসেব করে দেখ।
-দেড় মণ বেশি হয়। হাহ হাহ হা, তার মানে তুই ৬৫৬১ মণ অলস। আর আমি মাত্র দেড়মণ। হাহ হাহ হা
এত দাঁত কেলায়ো না। ভালো দেখায় না। তুমি হিসাবের কিছু বুঝ !!
-হাহ হাহ হা, এত চেতিস কেন?
আমি ঘুরতে যাবো।
-তো, যা। আর এত রাতে!
যাবো মানে !
-আমিতো ফেসবুক চালাই।
এই বালিশ আর কম্পিউটার–মডেম সব তোমার কবরে দিয়ে দিবো।
-মরার আগে বলিস, তোকে চল্লিশা খাওয়ানোর পর মরবো।
এখুনি, চলো , চল্লিশা খাবো।
-তার মানে, আমি আর চল্লিশ দিন………………..
ওফ, এত পেঁচাও কেন ! সব কথার জবাব না দিলে চলে না?
-ঠিক আছে চল্।
যতই দিন যায় আমি বুঝতে পারি ও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকে নিয়ে এত ভাবি না। ভাবার এত সময়ও নেই। আগে বেঁচে থাকা, তারপর সূখের চিন্তা করতে হয়। কিন্তু কি আর করবো, ওর কথা ভাবতে হলো। সম্পর্কের ঘনিষ্টতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। হয়তো আমার পোপজের অপেক্ষায় আছে। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। ব্যাপারটা আমি বুঝি। কিন্তু কি করবো ! আমাদের সমাজটাই এমন যে চাইলেই সব কিছু পারা যায় না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! কারণ আমিও তার প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম। কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। একসময় মনে হচ্ছে, ওকে ছাড়া আমার জীবন একদমই শূন্য হয়ে থাকবে। আমি কি পারবো ওকে নিয়ে সারাজীবন পাশে থাকতে? যদি নাই পারি, তাহলে ওকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে লাভ কি। অসম্ভব, আমি এটা পারবো না। কিন্তু আমরা সবাইতো সমাজের হাতে বন্দী।
৪
মাঝে মাঝে অনেক কাজের ভীড়ে নিজেও হয়তো একা কিছুটা সময় পার করতাম। কিন্তু ওর সাথে পরিচিত হওয়ার সেই একাকীত্বটা এখন আর নেই। সময় অসময় যে কোন সময় ওর আবদারে ছুটে যাই, নদীর পাড়ে, কিংবা কোন জংশনের ওভারব্রীজে।
রাত দুইটা। মোবাইলের আওয়াজে কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। মহাবিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। তাকিয়েও দেখিনি কে ফোন দিলো।
-কে !!
আমি।
-আরে আমিটা কে !
আমি।
-তুই !! এতরাতে কি !!
উঠো।
-পাগল নাকি !! মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে বলে উঠ। সমস্যা কি তোর!!
উঠতে বলছি।
-উফ্, তুইও না !
বারান্দার গ্রিল খুলে দেখি, বাইরে দাঁড়িয়ে। আকাশে চাঁদের আলো। ঘুম ঘুম চোখে ওকে দেখলাম, চোখ সরাতে পারছিলাম না। এত সুন্দর লাগছে কেন !! মুহুর্তেই ঘুম হারিয়ে গেল। মনে হচ্ছে, মাত্র গোসল করি পরিপাটি হয়েছে। জিন্সের সাথে ফিটিং শার্ট। বিশেষ কোন ফাংশনে গেলে যেরকমভাবে পরিপাটি হয়। চুল আচড়ানোর ধরনটাও দেখি বদলেছে। অনেক সুন্দর লাগছে ওকে। যেন সদ্য যৌবন প্রাপ্ত এক তরুন। এককথায় ক্রাশ খেয়ে ফেললাম।
আমি আর কোন কথা বললাম না। বুঝতে পারলাম, বাহিরে যেতে হবে কোথাও। তাড়াতাড়ি চোখে মুখে পানি দিয়ে জিন্স আর শার্টটা পরে বের হলাম।
-কার বার্থডেতে যাবি ?
কোন বার্থডেতে না।
-তাহলে এত রাতে , এত্ত স্টাইল-ফাইল করে কই যাস।
সব সময় এত বাঁকাভাবে কথা বলতে ভালো লাগে তোমার?
-কি জানি। ভালো কথা জিজ্ঞেস করলেও দোষ !
চুপ থাকো।
-ঠিক আছে।
বললাম না, চুপ থাকো !
-আরেএএ ঠিক আছে।
আবার !
আমি চুপ। এত্ত রাতে ওর সাথে কথা প্যাচাতে বিরক্ত লাগছে না। বার বার ওকে দেখছি। হঠাৎ ও আমার দিকে তাকালো।
“সামনের দিকে তাকিয়ে পথ চলো।”
আমিতো পুরাই থ। ধরা খেয়ে গেলাম নাকি ! হাটতে হাটতে পুরাতন ব্রীজটার উপরে আসলাম। নদীটাতে হালকা পানি। আছে শুধু কচুরিপানা। ছোটবেলায় কচুরিপানা ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি করতাম। মনে পড়ে গেল। অবশ্য যন্ত্রনাও ছিল, কচুরিপানা শরীরে লাগলে শরীর চুলকাতো। ব্রীজের রেলিংটাতে বসলাম।
-কিরে কি মনে করে, এত রাতে ব্রীজে !! ঘুমটাতো নষ্ট করে দিলি !!
ধাক্কা মেরে নদীতে ফেলে দিবো। চুপ থাকো।
-পানি নেই মরবো না।
যে পরিমাণ চুকানো বাঁশ ……….!!
-নাউযুবিল্লাহ ।
ও একটু হাসি দিয়ে, হালকা একটু নিরব হয়ে বলল,
“আজ পূর্ণিমা। এত আলো ! এত নিরবতা ! চাঁদটা আজ অনেক সুন্দর।”
ওকে এত সুন্দর লাগতেছিল, সত্যটা আর লুকিয়ে রাখতে পারছি না। আমি বললাম,
-“বলছে তোরে ! এর চেয়ে গুণ সুন্দর কিছু আমি দেখতেছি। আমার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে!”
ও একটু আবার একটু ঠোঁটের কিনারে হাসলো। আর বললো,
তোমার ঘুম এখনো কাটেনি ।
মনে মনে ভাবি, কি করে তোকে বুঝাই, আমার ঘুম অনেক আগেই কেটে গেছে। আমি তোকে নিয়ে সারাটা রাত এই চাঁদনীর নিচে পার করে দিতে রাজি। আর মুখে বললাম,
-“কাচাঁ ঘুম এত তাড়াতাড়ি কাটে?”
জানো, আমার খুব ইচ্ছে, এমন একটা চাঁদনী রাতে যেন আমি শেষ ঘুম ঘুমাতে পারি।
-হুমায়ুন আহমেদ হওয়ার শখ !
এই লোকটা একটা চোর। আমার স্বপ্নটা আগেই চুরি করেছে।
-মৃত ব্যাক্তির নামে বদনাম করা ভালো না!
হাহ হাহ হা, তোমার এই প্যাচানোর স্বভাব আর যাবে না।
ও চাঁদের দিক তাকিয়ে আছে। আমি ওকে প্রাণ ভরে দেখছি। মনের অজান্তে স্বপ্ন বুনে যাচ্ছি, ইশ ওকে নিয়ে যদি সারাটা জীবন কাটাতে পারতাম! ওর অভিমান গুলো দেখে দেখে আমার ক্লান্তিগুলো তলিয়ে যেত মহাকালের ভীড়ে। ওর নির্মল হাসি আর চোখ ভরা নিরবতটাকে যদি নিজের করে নিতে পারতাম। কিন্তু কিভাবে সম্ভব, এই সমাজ সংসার পরিবার তা কি আমায় হতে দিবে ! উত্তরতো একটাই , “না”। আমিতো জানি ও আমাকে ভালোবাসে, অনেক ভালোবাসে। আমি যদি ওকে স্বপ্ন দেখাই তাহলে সে স্বপ্নের পরিণতি কি! কিন্তু জলজ্যান্ত এক পবিত্র ভালোবাসাটাকেই কিভাবে কবর দিবো? ভাবতে হবে। ভালোবাসি না বললেও, ভালোবাসা হয়ে যায়, কিন্তু সেটাকে জয় করে জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে টিকিয়ে রাখার মাঝেই ভালোবাসার স্বার্থকতা। আর আজ ও আমার প্রতি এতটা দুর্বল, সেটা সারাজীবন থাকবেতো! আমার মত মানুষকে ভেবে চিন্তে স্বপ্ন দেখতে হয়।
কিছুক্ষণ চাঁদ নিয়ে নিয়ে ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে আড্ডা দিলাম। আযানের সাথে সাথে বাসায় ফিরলাম। ও ওর বাসায় চলে গেল। রুমে ঢুকেই ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আর ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আর কি! সকালবেলা, রক্তলাল চোখ নিয়ে, টিউশনি করলাম।
৫
বন্ধু দিবসের দিন আমি প্রচুর ব্যস্ত। হাতে অনেক কাজ জমে আছে। কোন সময় নেই। বন্ধু দিবস নাকি কি দিবস সেই দিকে আমার কোন খেয়াল ছিল না। আমি চাইছিলাম হাতের কাজ গুলো শেষ করে ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবো। প্রপোজটাও করবো কিনা ভাবছি। আমি একটু সময় নিচ্ছি। কারণ এত বড় একটা সিদ্ধান্ত সময় নিয়ে নেওয়াই দরকার। জীবনের স্রোতে শেষে যদি ভাঙ্গন আসে সেই ভয় আছে। অবশ্য আমাকে নিয়ে না, ওকে নিয়ে বেশি। ও এখনো যথেষ্ট ছোট। কেবল মাত্র অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ারে ভর্তি হলো। সম্মান শ্রেনীতে উঠেই কেউ সম্মান শব্দটার পুরো মর্মার্থ বুঝতে পারে না। প্রয়োজন হয় একটি বছর সময়ের। যখন জুনিয়ররা আসে। আমিও ওকে আরোও সময় দিতে চাই। আমি চাই ও আমার জন্য অপেক্ষা করুক।
বিকালে এক স্টুডেন্ট এর মুখে শুনলাম আজ বন্ধু দিবস। মোবাইলের প্রতি কোন খেয়াল ছিল না। সন্ধা নাগাদ, মোবাইলটা হাতে নিয়ে , দেখি অনেক গুলো মেসেজ। না ওর কোন মেসেজ নেই। সবগুলোই ক্লাসমেট আর ফেসবুক বন্ধুদের মেসেজ। মেসেজগুলোর ভীড়ে, ওর একটা মেসেজও খুঁজতে ইচ্ছে হলো। খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না।
ওর কথা স্মরণ করতেই বান্দা হাজির !
-“বাঁচবি অনেক দিন, তোর কথাই ভাবলাম কেবল মাত্র।”
“চাঁপাবাজি”
-বুঝছি, তোরে বলাই ভুল।
হুহ, কিছু আর বলারও দরকার নেই। মুভি দেখতে যাবো।
-যা-
তুমিও যাবা। তাড়াতাড়ি করো, ওরা এসে যাবে ।
-ওরা কারা?
আমার ফ্রেন্ডস, একই সাথে পড়ি।
-ঠিক আছে, তুই দাঁড়া। আমি তৈরী হই।
দাঁড়াতে পাড়বো না, বসলাম।
-তুইও শিখে গেছিস।
সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখি ওর ফ্রেন্ডরা দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তিনজন। ওর বন্ধুদের সাথে পারিচিত হলাম। ওদের মধ্যে একটা ছেলে একটু বেশি কথা বলে, কিন্তু অনেক হাসায়। ওর সাথে কথা বলে অন্যরকম মজা পেলাম। হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে যাবার অবস্থা। একটা সিএনজি পুরোটা আমাদের দখলেই। পৌঁছাতে চল্লিশ মিনিটের মত সময় লাগলো।
নয়টা থেকে মুভি দেখবো। ততক্ষণ ফাঁকে ঘোরাফেরা আর আড্ডাটা খুব জমলো। জুনিয়র হলেও সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলাম। খাওয়া-দাওয়া করলাম। গরম গরম পেয়াজু গুলো, উফ অনেক টেস্ট। যেন এখনো মুখে স্বাদ লেগে আছে। শহরজুড়ে ঘোরাফেরা আর হৈহুল্লোর করার পর মুভি দেখতে সিনেমা হলের সামনে এলাম। মুভিটা বোধহয় ওর পছন্দের। আমিও ভাবছি, কেমন জানি হয়।
মুভি শুরু হলো। খারাপ না। শান্ত মেজাজের একশন মুভি মনে হলো। একশন আছে, কিন্তু চিল্লাচিল্লি নেই। আমি আর ও একদম পেছনে বসেছি। আমি ওয়াল ঘেঁষে বসলাম। আর অন্যরা মাঝের দিকের সারিতে। ওকে দেখলাম মুভির দিকে অনেক মনোযোগ। এই ফাঁকে ওয়াল ঘেঁষে হেলান দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পরলাম কে জানে! বিরতির চল্লিশ মিনিটের মত, ঘুমানোর পর সজাগ হয়ে বুঝলাম, এখুনি হয়তো বিরতি হবে। কিন্তু পাশের সিটে ওকে দেখলাম না। ভাবলাম, ওদের সাথে আছে বোধহয়। মুভির মাঝখান থেকে আবার দেখলে কেমন জানি লাগে। ইচ্ছে হলো, বাহির থেকে একটু আলো দেখে আসি। তাই বাহিরে গেলাম। গিয়ে দেখি, এই তিনতলার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ও। ওকে খুব বিষন্ন মনে হলো। কাছে গিয়ে দেখি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো আকাশ দেখছে।
-কিরে বিদ্যুৎ অফিসে যোগ দিলি কবে?
কি’হ !!
-তো, এত্ত মনোযোগ দিয়ে বিদ্যুতের তার আর খুটি দেখতেছিস।
আমি বিদ্যুতের তার কিংবা খুটি দেখতেছি না।
-তাহলে কি দেখিস?
তোমাকে বলতে হবে!
এই মুহুর্তেই বিরতি দিল। ওর বন্ধুরা বেরিয়ে এল। আর তেমন কোন কথা হলো না। মুভি নিয়ে বলছিল। আমি চিন্তা করি, কিসের কি, আমিতো মুভিই দেখিনি।
মুভি দেখে বাসায় ফিরলাম রাত ১টার দিকে। সিএনজি স্টেশন থেকে ফেরার পথে ও তেমন কোন কথা বলেনি। যদিও আমিও অনেক কথা বলতে চাইলাম।
কোন কথা না বলে ও ওর বাসায় চলে গেল। আমিতো পুরাই স্তম্ভিত। কি হলো! বুঝলাম মুভি দেখতে গিয়ে ঘুমের জন্যই হয়তো। আমিতো আবার ঘুমিয়ে গেলাম। তিনটার দিকে মোবাইলের রিংটোনের শব্দে সজাগ হয়ে দেখি ওর ফোন। বুঝতে বাকি রইলো না। ও বাইরে দাঁড়িয়ে। ভেতরে এসে বলল,
“ঘুম বন্ধ। কোন ঘুম নেই।”
-“ক্যামনে কি, ! কি হইসে তোর !”
কিছু হয়নি। যা বলছি তাই কর।
-এত চেতিস কেন।
আনন্দে!
সারারাত সজাগ থাকলাম, চুপচাপ। ওকে পাশে রেখেও সময় যেন পার হয় না। উফ সময় যে এত্ত দীর্ঘ হয়, আগে জানা ছিল না।
আযানের সাথে সাথে ও একটা হাসি দিলো। হাসি দিয়ে চলে গেল। কি অদ্ভুত, কি হলো ওর। আমার সাথে এমন করছে কেন ও? এত জেদ! বাপরে! ভয় লাগে। যাক ধপাক করে বিছানায় পরে গেলাম।
৬
টিউশনি থেকে আসলাম। তালা খুলবো, ওকে দেখি পাশেই দাঁড়িয়ে। অপেক্ষায় ছিল, সেটাতো আমি জানি। কিন্তু ওকে খুব চঞ্চল দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আলাদীনের প্রদীপ পেয়েছে।
-কিরে, এত হাসির রহস্য কি!
ক্লোজআপ।
-হাহ হাহ হা। হয়েছে কি বল।
আব্বু আমাকে একটা জিনিস গিফট করেছে।
-কি সেটা।
জমি।
জমি !! জমি পেয়ে এত খুশি। এমনিতেও তুইই সব পাবি। তাহলে?
-আরে, আমাদের সব জমি আমাদের এলাকায়। আব্বুকে বলছিলাম, কোথাও সেটল হওয়া দরকার। কিন্তু আব্বু বলছিলো, চাকরী শেষ হলেই, এলাকায় চলে যাবেন। কিন্তু আমার কোন ইচ্ছে নেই। তাই আব্বুকে বলেছিলাম, এইখানেই স্থানীয় হবো। আব্বু কথা রেখেছে।
আমিতো চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম। বুঝতে আর বাকি রইলো না, ও কি স্বপ্ন দেখছে। বললাম,
-বলিস কি ! কোথায় জমি কিনলি?
তোমাদের জায়গাটার পাশের জায়গাটা।
-কি ! ওটাতো আমাদের কেনার কথা ছিলো।
আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনেছি।
-হুহ। বড়লোক হয়ে গেছিস।
তুমি খুশি হওনি?
-আমাদেরকে পিছনে ফেলে জমিটা কিনে ফেললি, খুশি হবো?
আমি শুধু ওর সাথে মজা করতে চাইলাম। জমিটা আমাদের জন্য কেনা জরুরি না। জমির পাশে জমি বলেই আব্বার আগ্রহ ছিল। দামের সাথে মিল পরে নাই, তাই কেনাও হয়নি। কিন্তু ও আমাকে ভুল বুঝলো। অভিমানে চলে গেল।
কি আর করবো। ওর বাসায় গিয়ে ডাক দিলাম। খালাম্মা ওকে ডাকতে গেল। একমত বাধ্য হয়েই বেরিয়ে এল। ওকে নিয়ে দৈবকের দোকানে গেলাম। রসমলাই খাওয়ালাম। বললাম,
আমাদের নতুন প্রতিবেশী হইলি, মিষ্ট মুখ কর।
চুপ।
-তুই এত বোকা !
আমি বোকা হলে, তুমি বোকা স্কয়ার।
-তুই যে কেন পীথাগোরাস হইলি না !
তাহলে তোমার মাথার চুল ছিড়েখুঁড়ে হিসেব করতাম।
-ভাগ্য ভালো অন্য কিছুর কথা বলিসনি।
হাহ হাহ হা। ভালো হও।
৭
অনেক দিন নিজের প্রতি যত্ন নেয়া হয়না। সেলুন থেকে শেভ হয়ে এসে নখ কেটেকুটে সব মিলিয়ে অল-ক্লিয়ার হলাম। চুলে শ্যাম্পু করে অনেকক্ষণ শরীর মেজে গোসল করলাম। গোসলের সময় মাথায় অন্য ভূত ভর করতে চেয়েছিল। একজন ডাক্তারের স্ট্যাটাসে দেখলাম, বিশেষ কাজে সাবান ব্যবহার করা ক্ষতিকর। এতে নাকি অনুভূতি কমে যায়। ভয় পেয়েছি। তাই আর ইচ্ছে হলো না।
প্রসাধনী মেখে আমিতো হিরো হয়ে গেলাম। হাহ হাহ হা। আচ্ছা, হিরোরা কি কালো হয়! হোক বা না হোক, আজ আমি হিরো। ইশ্ আমার যদি একটা হিরো থাকতো! আচ্ছা, আমার বন্ধুরাতো হিরোইন খুজে, আমি কেন হিরো খুজি! ও, আমিতো রংধনু।
সারাদিন অনেক সাউন্ড দিয়ে গান শুনলাম, মনটা খুব ফুরফুরে। রাতেও নাটক দেখা শুরু করলাম। প্রায় দশটা বাজে, হঠাৎ ও আসলো।
“আচ্ছা, প্রেসকিপশন ছাড়া কি ঘুমের ঔষধ দেয় না!”
-তুই ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে কি করবি।
তোমার পিছন দিক দিয়ে দিবো ।
-কি জঘন্য কথা বার্তা।
চুপ, একদম চুপ। কোন কথা বলবা না তুমি। আমি এখানেই ঘুমাতে গেলাম। সাউন্ড কমাও। আর রাতে ডাক দিবা না কোন কারণে।
বলেই বিছানায় শুয়ে পরলো। আমি ভাবছি, ওর আবার কি হলো! ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে কি করবে! ওর এত ঘুম জরুরি কেন? এত রাগই কেন দেখাচ্ছে! আমি ভেবে কোন কুল পাচ্ছি না। সাউন্ড কমিয়ে দিলাম, কিন্তু নাটক দেখায় আর মনযোগ নেই। বাসায় কি ওকে খালাম্মা কিংবা আংকেল কিছু বলেছে? আরে না, তারাতো কখনও এমন কিছু বলে না। তাহলে! তাহলে কি আমার কারণেই ও এমন করছে। কিন্তু কেন! আমিতো আছিই। আমিতো ওকেই ভালোবাসি। মুখে নাহয় না বললাম। তো কি হয়েছে!
ওর দিকে তাকালাম। বিছানায় শুয়ে আছে। ওপাশ হয়ে। মনে হলো এক বুক অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। ওর সৌন্দর্য দেখে আমি বিমুগ্ধ হয়েছি অনেকবার। কিন্তু তাতে ভালোবাসা ছিল। অন্য কোন লালসা ছিল না। আজও ওকে দেখছি। আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি, জীবন সঙ্গী হিসেবে ওকেই আপন করে নেবো। ছোট বেলা থেকেই আমি একটু অন্যরকম। আমি হতাশ হই খুব কম। তাই এখনো কোন হতাশা নেই। আমি বিছানা সাজিয়ে নিয়েছি। মশাগুলো ওখে খুব বিরক্ত করছে। তাড়াতাড়ি মশারি টানিয়ে দিলাম।
গান, সিনেমা আর নাটক দেখে আর ফেসবুকে যাওয়া হয়নি। তাই একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি ওর দুটো স্ট্যাটাস।
সকালের স্ট্যাটাসটা হলো
“আমি আর কতভাবে বুঝাবো, তোমাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি ।”
ঘন্টা চারেক আগের স্ট্যাটাসটা হলো,
“শালারা প্রেসকিপশন ছাড়া ঘুমের ট্যাবলেট দিলে কি, তোমাদের জা** লাগে”।
একটু নজর দিতেই দেখলাম, আপকামিং বার্থডেতে ওর নাম দেখাচ্ছে। মানে আর কিছুক্ষণ পরই ওর বার্থ ডে !! বুঝতে আর বাকি রইলো না, এত রাগের কারণ কি। ফেসবুক অফ করেই ওর পাশে গিয়ে বসলাম। শূন্য’টা বাজতে আর মাত্র 4 মিনিট বাকি। আমি ওকে দেখছি, বারবার দেখছি। যতই দেখছি বিমোহিত হচ্ছি। আামর বিশ্বাস, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলেটা আমার পাশে শুয়ে আছে।
আমি ওকে ভালোবেসেছি অনেক আগেই। কিন্তু বলিনি। কারণ আমি জীবনে কখনও প্রেমে পরে যাই, তাহলে ওটাই হবে আমার অন্তিম প্রেম। আমি আমার প্রেমের সার্থকতা চাই। আর আমার প্রেমের সকল রাস্তা এখন ধুয়াশাযুক্ত।
আজ আমি ওকে বুঝাবো, আমি ওকে কতটুকু ভালোবাসি।
বারোটা বাজতে আর কয়েক সেকেন্ড বাকি। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কত্ত সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে ও। ওর বামহাতে আমার ডান হাতটা মিলিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।
সাথে সাথেই ও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম
“শুভ হোক পয়দা দিবস”
ও বলে, “ফাজিল….ল, এতদিন লাগে। তুমি বুঝেও কেন বুঝতে চাইলে না, তুমি আমার অসীম অন্ধকারে অ’এর আলো।”
বলেই আমার বুকে মাথা রেখে ঝাপটে ধরে জড়িয়ে কান্না শুরু করলো। আমি কোন ভাবেই ওর কান্না থামাতে পারিনা। আমিতো বড়। বড়দের কাঁদতে নেই। কিন্তু ভিতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো, একফোটা অশ্রু জড়াবে বলে। কিন্তু আমার চোখ থেকে ঝড়লো না।
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে ভালোভাবে বুকে জড়িয়ে নিলাম। তখনও ও ফুপিয়ে কাঁদছে। আর আমি জড়িয়ে ধরে জীবনের সব কষ্টগুলো একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাসের মাধ্যমে বের করে দিলাম। নিজেকে এত হালকা মনে হলো বলে বুঝাতে পারবো না।
তারপর ওকে আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু ওর কান্না তখনও থামেনি। শরীর কম্পিত হচ্ছিলো। আমার কোলে ওর মাথা রেখে আমি ওর ঠোঁটে প্রথম চুমু খেলাম। কিছুক্ষণ ঠোঁটে চুমু খাওয়ার পর, আমি ওর শার্ট এর বোতাম খুললাম, ওর বুকে অনেক্ষণ চুমু দিলাম। ওর সারা ঠোঁট, মুখেও অনেক্ষণ চুমু দিলাম। আস্তে আাস্তে যখন পেটের দিকে চুমু খেতে যাচ্ছি, দেখলাম, আমার কাম সত্তাটা একটু বেশিই জেগে গেছে। আর, ও ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে। আমি ওকে আতংকিত করতে চাচ্ছি না। বুঝলাম ,ও এইরকমটা কখনও করেনি। আমি পিছে হটলাম। ওর সাথে অন্য কিছু করার ইচ্ছেটা পাকাপুক্ত হয়নি। তাই সমস্যাও নেই।
ওকে এত্ত খুশি দেখলাম, বলে বুঝাতে পারবো না। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হলো, কারণ আমি জীবনে কাউকে এত্ত খুশি করতে পারবো, কখনও ভাবিনি।
৮
সব মিলিয়ে একটু সময় করে নিলাম। নিবোই বা না কেন! ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবো মেঘনার পারে। ওকে নিয়ে মেঘনায় গোসল করবো। জন্মদিন আর ভালোবাসার প্রথম দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই দুজনই। সারারাত পার হলো আলাপ আর আড্ডা দিয়ে, মাঝে অবশ্য আমার ঘুম এসেছিল, ওকে দেখলাম, অভিমানে মুখটা মলিন হয়ে গেল। আর চোখে ঘুম রইলো না।
সকালবেলা ব্যাগ গুছিয়েই তৈরী হয়ে গেলাম। ট্রেনে করেই যাবো। ট্রেনের ভ্রমণটা অনেক নিরাপদ। তাছাড়া, ওর মা সেটাই পছন্দ করেন। উনার একমাত্র সন্তান। সবসময় একটু চিন্তিত থাকেন। তবে আমার উপর যথেষ্ট ভরসা করতে পারেন, এটা আমি বুঝতে পারি।
মেঘনার পাড়ে পৌঁছালাম দুপুর দুইটার দিকে। অনেক গরম। গোসল করলে খুব ভালো লাগবে। মেঘনার পাড়ে অনেক মানুষের ভীড়। কবুতরের জুঁটিও আছে অনেক। মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। মেঘনার পানি অপরিষ্কার না। যথেষ্ট পরিষ্কার। নেমে গেলাম দুজনই পানিতে। ওর মাঝে আনন্দবোধ দেখলাম। খুব ভালো লাগছে। ভয়ও হচ্ছে, সারাটা জীবন এই আনন্দ দেখতে পারবোতো! নিজের প্রতি আমার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস আছে, আমি ওকে কখনই পর করতে পারবো না।
যাহোক, এসব নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না। গোসল করছি, এতেই অনেক ভালো লাগতেছে। আমি খুব সাধারণ, যদি আমাকে অসাধারণ ভেবে আবার যখন বুঝবে আমি খুব সাধারণ তখন ওর অনুভুতি কেমন হবে? এইবার আমি আমার উত্তর পেয়ে গেলাম, ও আমার হয়েছে, আমারই থাকবে। কারণ ওর মাঝে আমি কোন দ্বিসত্তা লক্ষ্য করিনি।
হালকা সাতার কেটে একটু মাঝের দিকে যাচ্ছি। ও তখনও পাড়ের দিকেই। ও চিৎকার দিল
এত মাঝে যাচ্ছো কেন ?
-তোর কি? মরব না। তোকে চল্লিশা খাওয়ানোর পরই মরবো।
দাঁড়াও, তোমাকে আমার চল্লিশা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেছি।
বলেই ডুব দিল পানিতে। দিলোতো দিলই, কিন্তু ভাসছে না। চারপাশ খুঁজে অস্তির, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না। খুব ভয় লাগা শুরু করলো। বুকটা ধুক ধুক করা শুরু করলো। ছুটে এলাম, সেই জায়গাটায়, কিন্তু ওতো সেখানে নেই। ভয়টা আরো বেড়ে গেল।
হঠাৎ দেখি কচুরিপানার আড়ালে লুকিয়ে থেকে হাসছে। ফাজলামো ভালোই শিখেছে। উফ, হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! এক ডুব দিয়ে আমিও তার কাছে গেলাম।
-“খুব মজা পাইলি।”
হাহ হাহ হা। তুমি কত্ত ভয় পাইছো !
-আর দাঁত কেলাইস না। চল্ , আর গোসল করবো না।
একথা বলতেই ও আমার গলায় লাফ দিয়ে ধরেই ডুব দিলো। পানির মধ্যে জড়িয়ে ধরলো। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু দিতে শুরু করলো।
মনে হচ্ছিলো, ইশ যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে পানির নিচেই থাকতাম এভাবে অনেক্ষণ। দম যখন ফুড়িঁয়ে যাচ্ছে, দুজনই একসাথে দ্রুত গতিতে পানির উপরে আসলাম।
উৎস: অন্যভুবন
উৎসর্গঃ টেম্পু পাগলকে