
রূদ্রনীল
রুদ্রনীল’র চিঠি
প্রিয় হিমি,
না না বকিসনা প্লিজ! জানি হিমি ডাক তোর পছন্দ হবেনা, তবু আমার যে ডাকতে খুব ভাল লাগে।।কি করব বল! যদিও তোর সামনে কখনোই কোনদিনও এ নামে ডাকার সাহস হয়নি, তবু প্রত্যেকবার তোকে ডাকা ওই হিমেল নামের আড়ালে যে এই নামটাই ডেকে গেছি অবিরাম!
আজ কত বছর হবে বলত!পরিচয়ের! ১২/১৩ বছর ত হবেই! না!বাপ্রে! একযুগ! হয়ে গেল! সময় কত্ত দ্রুত বয়ে যায়! অবাক লাগে মাঝে মাঝে সময় হিসেব কসতে গেলে…
আজ কত বছর হয়ে গেল অথচ ঠিক প্রত্যেকটা ক্ষণ, প্রত্যেকটা মুহূর্ত মনে আছে তোকে ঘিরে…
সেদিন আমার বইয়ের আলমারি হাতড়াচ্ছিলাম… আবার সেই খাতাটায় চোখ পড়ল… সেই ক্লাস ৭ এর তোর ক্লাস টেস্ট এর বিজ্ঞান পরিক্ষার খাতাটা!গাধারাম!কি হাতের লেখার ছিরি! ম্যাম যে কি করে তোর হাতের কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং লেখা বোঝে কে জানে! ম্যাম বলেই বোধয় ১০ এ ৬ পাইছিলি!ওই খাতা আমার হাতে পড়লে ২ ো দিতাম না! রামছাগল!সেদিন তুই আসিসনাই।। আমার উপর দায়িত্ব ছিল খাতা বিতরন করার… তুই ও আর কোনদিন খোঁজ নেস নাই! আর আমিও তোকে দেইনাই খাতাটা! ইচ্ছে করেই! আরও অনেকেরটাই ছিল তখন কিন্তু আজ নেই।।কেবল ওই একটা খাতাই আছে… অনেক যত্ন করে রেখে দিয়েছি…থাকবে হয়ত আরও অনেক বছর আমার কাছে।।কখন হয়ত পুরোনো হবে।হয়ত কখন আবর্জনার স্তুপে পরে রইবে,তবে জেনে রাখিস সেটা কেবল হবে হয়ত আমার মৃত্যুর পরেই…
জানিস এখনো তোকে দেখার জন্য চুপিচুপি চোরের মত তোর ফেসবুক আইডিতে তোর ছবি দেখি আমি…ঠিক যেমনটা করে সেই কলেজ এর বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে তোকে লক্ষ করতাম।কি ছিল তোর মধ্যে?কত সাধারণ তোকে এত্ত অসাধারণ কেন লাগতো আমার! কি ই ভাবতাম তোকে আমি।।সে বয়সে একটা ছেলে তার ক্লাসের’ই এক বন্ধুর প্রতি কি ই আকর্ষণ অনুভব করত! কি! কখনো সেভাবে তোর কাছে আসিনাই।একটা দূরত্ব চিরকালই বজায় ছিল…ভয় ছিল কাছে গেলে তোর বন্ধুত্ব হারাবো…কিন্তু দেখ আজ ও কি তোকে ধরে রাখতে পেরেছি! সেই তো কত দূরে আজ তুই!
আমি তোর কথা জিজ্ঞেস করি অনেকের কাছেই।।কেমন আছিস এখন, কোথায় কি করছিস!তবে এমনভাবে কথারছলে জিজ্ঞেস করি অনেকের নামের মাঝে যে কেউ আলাদা করে কিচ্ছুটি ভাবেনা…তবে আমি তো জানি অতগুলো নাম বলার মাঝে কি কারণ!তোর খোঁজ নেব বলেইত বলা!
আমার কথা কি মনে আছে! এতটুকু!
তোর সাথে তোলা নন্দনের সেই ছবিগুলা এখনও আমার কাছে আছে! এখনও! ওই কপিটা থাকলেও থাকতে পার তোর কাছে। ও হা মাধ্যমিকে এ+ পাওয়ার পর আমাদের ২০ জন কে নিয়ে একটা গ্রুপ পিক আছে।।আমি সেদিন লক্ষ করলাম তুই ঠিক আমার পাশেই দাঁড়ানো! কি ভালই লাগছিল!
তুই কেমন যেন সবার থেকেই একটু দূরে দূরে থাকতি…মনে কি এত চিন্তা কাজ করত তোর! জিজ্ঞেস করলেও কাউকে বলতিনা! কেমন একটা নিরব!কিন্তু তোর ওই নীরবতাই যে আমার সব থেকে প্রিয় ছিল! ওই যে বাকা বাকা পা ছড়িয়ে হাটা যে আমি আড়ালে দেখে মজা পেতাম খুব! তোর ওই কথা আমি শোনার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম!
একদিন এক বই এ পড়েছিলাম কারও মায়ায় বাঁধতে হলে তার নাম,বাবা মায়ের নাম লিখে আর একটা দোয়া লিখে গাছে ঝুলাতে হবে..।যতবার ওই তাবিজটা দুলবে ততবার নাকি তাহলে মনে পড়বে..ওজু করে কত পাক পবিত্র হয়ে একটা সুন্দর কাগজে অনেক সময় নিয়ে বশীকরণ দোয়া টা লিখেছিলাম!! কিন্তু তোর নাম তো আমি জানি, তোর বাবা-মায়ের নাম কেমন করে জানব! তাও পুরো নাম! সেই যে কত কি করে Result এর সময় তোর Result Card থেকে তাদের নাম নিয়েছিলাম।সেদিন যে কি খুশি ই না হইছিলাম কি বলব।আর আমার ঘরের বনসাই এর ডালে বেঁধে দিছিলাম ওই তাবিজখানা…!ফ্যান এর বাতাসে সারাদিনই ওই তাবিজখানা দুলতো।।কিন্তু কই তুই কি আমাকে একবারও মনে করতি! মনে পড়ত! হা হা !কি বোকাই না ছিলাম আমি!
কতদিন তোর সাথে টিফিন খেলাম,কতদিন একসাথে বসলাম… কতদিন কত গল্প করলাম,তবু তোকে বলতে পারলামনা আমার ভালোলাগার কথা…বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম হয়ত…তুই বুঝিস নাই…এখনও সেই তাবিজ কাহিনি মনে পড়লে হাসি পায়… পরে অবশ্য রাগে একদিন ছিরে ফেলেছিলাম…ওটা! ধুর! কিছুতেই কিচ্ছু হয়না!
আমি যে তোর রবি নাম্বার এ ফোন দিতাম বুঝতি! কিচ্ছু বলতাম না।।কেবল চুপ করে থাকতাম তোর মুখের কথা শোনার জন্য… তুই কি ক্ষ্যাপাটাই না ক্ষেপতি!!একদিন তো ক্লাস এ এসে বোর্ড এ আমার নাম্বার লিখে দিলি কেউ চেনে কিনা! হা হা ।।কেউ চিনবে কি করে গাধা,অটা তো কারো জানা নয়! ওটা কেবল তোর জন্যই রেখেছিলাম.. একসময় তুই বিরক্তির মাত্রায় পৌঁছে গেলি।।আমিও আমার মন কে বাধ সাধলাম…তার পর থেকে কত কাহিনি।। কতো কিছু।।সময় বয়ে গেছে ।।ক্ষণ গুল আজ মনে আছে…।অমলিন… চির স্মরণীয়…জানি এসবের কোন মূল্য নাই তোর কাছে।।এ চিঠিও কোনদিন পৌঁছাবেনা তোর হাতে তবু না কি এক শান্তি আছে জানিস এই ভালোবাসায়।এই অপেক্ষায়…।কি যেন একটা আছে…না পাওয়া আছে ঠিক তবুও তো একটা প্রত্যাশা আছে।।আর এ ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে গাঢ় হচ্ছে, খাঁটি…জীবন তো ছোটো…হয়ত আবার ঘুরতে ঘুরতে এক হবো…।এক পথেই চলব।।কে জানে…!আমি একটা কথা জানি,কাউকে বা কোনকিছুকে মন দিয়ে চাইলে সেটা আজ না কাল ঠিকই পাওয়া যায়।।আমি অপেক্ষা করব…।।প্রতীক্ষায় থাকব…
সেদিন পিয়াস কথায় কথায় বলছিল তুই নাকি আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিস! আমি অবাক হয়ে রইলাম।।সত্যি ! সত্যি বলছিস! কি জিজ্ঞেশ করছিল! তুই কি বললি।।ইত্যাদি নানারকম কথায় ওকে পাগল করে তুলেছিলাম…ও যেন কেমন করে সেদিন তাকাল!…একটু হাসলো মিটিমিটি।কি সন্দেহ করেছে কে জানে।জানে জানুক।।তোর সাথে ত আম্রার কথা হয়না আজ ৫/৬ বছর সে সবাই জানে…! কে কি ভাববে~ আর কতদূর ই বা ভাববে!
সেদিন কেমন এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছিল।।যাক আমাকে এতটুকু হলেও তো মনে আছে…।আবার সেই পুরনো কষ্টগুলো নাড়া দিয়ে উঠল…এ ব্যথা যে ব্যাখ্যার অতীত…!কেবল নিজের একলার…কাউকে বলাবার মত নয়।।কেবল ডুকরে কেঁদে উঠে মন…কিচ্ছু ভালো লাগেনা।।আনমনা সব কিছু..
আবার সেই তুই।।আবার সেই আবেশ তোকে ঘিরে।এত্ত বছর পর।কেন তুই আমার কথা জিজ্ঞেস করলি!কেন! আমাকে কেন মনে রাখলি!
১২/১৩ বছরের সেই কৈশোরের প্রেম যে আজ এক পরিপূর্ণ যুবক…এই যুবক মন আজও অপেক্ষায় আছে তার হিমির জন্য…।একদিন দেখা হবে হয়তো আবার চলার পথে।।হয়তো কোন একদিন আবার কথা হবে।।হয়তো নিজ থেকেই নাম্বার টা দিবি।।আবার হয়ত একসাথে গল্প করা হবে…।একসাথে হাটা হবে..কমার্স এর সামনের সেই ফুছকাওয়ালা মামা না এখনো আছে তোর প্রিয় আমি জানি! একসাথে একদিন যাবো ওখানে কেমন!
বিদায় আজ ।।ভাল থাকিস…
ইতি…
“আমি”
উৎস: অন্যভুবন