
নীনা গাঙ
আমি জানি না, সবার ক্ষেত্রে গল্প একই কিনা। আমার কাজিন এবং আমার শৈশব-কৈশোরের একমাত্র বন্ধু কুসুম আপুর (ছদ্মনাম) ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেটিই বলি। প্রথমে বলব সবচেয়ে অসহনীয় দিক অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্কের সময়টা কেমন চ্যালেঞ্জের।
আপুর ভাষ্য মতে, শরীরের লোয়ার পার্টে একজন পুরুষের যেভাবে শিশ্ন জাগ্রত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, নারীদের সেটা প্রয়োজন নেই। তারা অনায়াসে ঐ অংশটা যেমন চলছে তেমন চলতে দিতে পারে। পার্থক্য বোঝা যাবে না যে তারা আদৌ লেসবিয়ান নাকি বিষমকামী, অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে কি হচ্ছে না। সুতরাং এই অংশের অভিনয় সহজ, খুব একটা বিরক্তিকরও নয়। (এখানে ‘কনসেন্ট’-এর প্রশ্ন আসছে না, যেহেতু শারীরিক মিলনের অংশটুকু বাদে সংসার এবং স্বামীত্বের বাকি অংশ তার কাছে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, এবং ঐ অপ্রীতিকর অংশেরও অস্বস্তি সে সয়ে আর মানিয়ে চলছে চৌদ্দ বছর ধরে)।
কিন্তু আমি চেপে ধরলাম, বললাম, নিচের অংশের রহস্য বুঝে পেলাম, কিন্তু একটা নারী আমার মুখের উপর এসে কিস, সাক এসব শুরু করলে আমার তো ঘেন্না লাগবে, তুই কীভাবে এই অংশে একটা পুরুষের এক্সেস সহ্য করিস? মুখ আর নাকের জায়গায় লেহন, চুম্বন এসব তো রীতিমত অসহ্য হওয়ার কথা। এই প্রশ্নের সে উত্তর দিল, “ঐ সময়টা আমি কোনমতে আল্লা আল্লা করে পার করে দিই।”
আমি: এই ১৪ বছর এভাবেই চলে এসেছে, হাজবেন্ড কিছুই বুঝতে পারেনি?
সে: না, তবে শুরুর দিকে মুখে চুমু দেয়ার সময়গুলোতে, আমার ফিল নেই বলে অভিযোগ করতো। এখন আর করে না।
উল্লেখ্য, আপু একটি আরব রাষ্ট্র প্রবাসী, দুই সন্তান। তার বিয়ের পর থেকে আমি এই উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করা বা আমার কৌতূহল প্রশমিত করার সুযোগ একবারও পাইনি। আমার সাথে তৈরি হওয়া মানসিক দূরত্ব আর কিছু প্রাইভেসি সংক্রান্ত জটিলতা ছিল তার। আবার আমাদের মেসেঞ্জারের কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণেও ব্যাপারটা জানতে কলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না, পাশাপাশি তেমন উদগ্রীবও ছিলাম না, ধরেই নিয়েছিলাম সে হয়ত বাইসেক্সুয়াল হয়ে গেছে।
কিন্তু সম্প্রতি সৌভাগ্যবশত বেশ ক্ষাণিক্ষণ একান্তে নিজেদের কথাগুলো বলার সুযোগ হল, এবং যে সব ঘটনা নতুন করে জানা গেল-
☼ তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন অপরিবর্তিত আছে। ফ্লুইড নয়। সে শতভাগ লেসবিয়ান।
☼ সঙ্গমস্থলে পুরুষের লিঙ্গের অনুপ্রবেশ ততটা বিরক্তিকর নয় তার কাছে। হয়ত আনন্দেরও নয়।
☼ নিজের ওরাল স্যাক্রিফাইস করা বেশ বিরক্তিকর। তবু দীর্ঘদিন এই ঘটনা সে সহ্য করে যাচ্ছে, এটা তার সহ্য করার ক্ষমতা বৈ আর কিছু নয়।
☼ একজন টিপিক্যাল বাংলাদেশের মেয়ে হিসেবে শারীরিক সম্পর্কের কথা বাদ দিলে সংসার, সন্তান, স্বামী নিয়ে তার দিন চলে যাচ্ছে মোটামুটি।
একটি কথা বলা রাখি, তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের প্রজন্মটি কিন্তু ফেসবুক প্রজন্ম নয়, আজকের আমি আর তখনের আমির মধ্যে পার্থক্য আছে। আজকের আমি তৈরি হওয়ার আগেই আমার ছোটবেলার সাথীর স্বপ্ন কোরবান হয়ে গেছে (অবশ্য তাও ভুল, তেমন কোনও স্বপ্ন যে দেখা যায় তা-ই তো জানা ছিল না)। আমার মত মুক্ত রাজ্যে প্রবেশ করে বিদ্রোহ করার সময়, সুযোগ বা মোটিভেশন কোনওটাই সে কখনও পায়নি।
আর হ্যাঁ, সে লেসবিয়ান, আমি গে- এই পুরো ব্যাপারটাই সম্পূর্ণ কাকতালীয়। এমনকি ঠিক কোন বয়সে এসে এই গোপন কথাটি পরস্পরকে আমরা জানিয়েছি সেটাও ঠিক মনে নেই।
প্রথম প্রকাশ
ঠাহর (দ্বিতীয় সংখ্যা)
মন্দ্র থেকে প্রকাশিত জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি এবং কুইয়্যার বিষয়ক ম্যাগাজিন

Leave a comment