LGBTQ থেকে LGBTQIA+: পরিচিতির বিবর্তন ও স্বীকৃতি

অনুবাদ
নরএপিনেফ্রিন

প্রতিনিয়ত সমাজ যেমন ব্যক্তির যৌন পরিচয় ও লিঙ্গ অভিব্যক্তিগুলোকে বোধগম্য করেছে, ঠিক তেমনি এসব পরিচয় ও অভিব্যক্তি প্রকাশে নতুন নতুন শব্দের প্রচলন হয়েছে। 

October হলো “LGBT History Month”; অথবা কেউ কেউ এভাবেও বলতে পারে “LGBTQ History Month” কিংবা “LGBTQIA+ History Month”।

যতটা বিস্তৃত এই কমিউনিটি ততটাই বৈচিত্র্যময় সেই নামগুলো বা শব্দগুলো যা lesbian, gay, bisexual, transgender, queer, intersex এবং asexual মানুষদের আক্ষরিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে চলছে। ক্রমান্বয়ে সমাজ ব্যক্তির যৌন পরিচয় ও লিঙ্গ অভিব্যক্তিকে বুঝেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে, একটা অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে – এই প্রক্রিয়ায় বহুল পরিচিত সংক্ষিপ্ত রূপের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই বিবর্তন ঘটে এবং কেন সব শব্দ নয় কিন্তু কিছু শব্দ আবার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবে। 

যেভাবে “lesbianism” একটা আলাদা নাম পেয়েছিল: 

“LGBT” সংক্ষিপ্ত রূপটির অন্য সব অক্ষরের মাঝে প্রথম যে অক্ষর আসে সেটা “L”। শতাব্দী ধরে “Lesbian” শব্দটি Sappho নামক একজন প্রাচীন গ্রিক নারীর সাথে সম্পর্কযুক্ত যিনি Lesbos নামের একটি দ্বীপে বসবাস করতেন ও সমপ্রেমের কবিতা রচনা করেছেন। এই শব্দটির প্রাচীনতম ব্যবহার হয়েছিল ১৭ শতকে। ১৮৯০ শতকের দিকে, “English Language Medical Dictionary” এবং কতক “psychology and sexuality” বিষয়ক বইয়ে এই শব্দটির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর আধুনিক ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে “Lesbian” শব্দটি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় এবং যেসব নারী প্রথমে লুকিয়ে ও পরে জনসমক্ষে অন্য নারীদের ভালোবাসতেন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া শুরু করে।

হোমোসেক্সুয়ালিটি” এবং “বাইসেক্সুয়ালিটি” শব্দ দুটির উত্থান: 

কার্ল হেনরিক উলরিক, উনিশ শতকের একজন জার্মান উকিল, লেখক, এবং সমকামী ছিলেন – তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার কমিউনিটিকে কোনো “এক শব্দে” ব্যাখ্যা করতে ও পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন। ১৮৬২ সালের প্রথম দিকে, কার্ল হেনরিক যেসব পুরুষ অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন তাদের “urning” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “আমরা আর্নিংরা মানব লিঙ্গের এক বিশেষ শ্রেণি গঠন করি। আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য একটা লিঙ্গ পরিচয় বহন করি, এবং সেটা হলো থার্ড সেক্স”। কিন্তু এই টার্ম খুব দ্রুত অস্ট্রো-হাংগেরিয়ান সাংবাদিক ক্যারোলি মারিয়া কার্টবেনি দ্বারা প্রস্তাবিত অন্য আরেক শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। ১৮৬৯ সালে প্রুসিয়ান সরকার তাদের নিজস্ব সংবিধানে সমকামী পুরুষদের আকর্ষণকে নিষিদ্ধ বুঝায় এরুপ শব্দের সংযোজন করার চিন্তা-ভাবনা করছিলো। এর প্রত্যুত্তরে, কার্টবেনী প্রুসিয়ান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে ছদ্মনামে অনুরাগ পূর্ণ খোলা চিঠি লিখেন; পূর্বে উলরিক-দের প্রেরণ করা কার্টবেনীর গোপন চিঠিতে সম্বোধন করা “homosexuality” শব্দটি চিঠিতে উল্লেখ করেন, এবং এই চিঠির মাধ্যমে তখনকার সময় প্রস্তাব করা সমকামীবিরোধী আইনকে “shocking nonsense” বলে অভিহিত করেন। 

কার্টবেনী “heterosexual” ও “bisexual” নামক আরও দুটি শব্দের পরিচয় করান; যেসব পুরুষ বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি আকর্ষিত হতেন তাদের উনি “heterosexual” এবং যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন তাদের “bisexual” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। 

সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ জন্মগত – কার্টবেনী তার চিঠিতে এর জোরালো দাবি জানিয়েছিলেন। এবং এরূপ আকর্ষণকে লজ্জাজনক কিংবা ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা প্রচলিত ধ্যানধারণাকেও উনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সেসময় বিভিন্ন সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ও মনোবিজ্ঞান নিয়ে প্র‍্যাক্টিস করা মানুষজন দ্বারা এসকল শব্দ গৃহীত হয়েছিল। 

গে: নিন্দনীয় শব্দ হতে নিত্যদিনের পরিচয়ে রূপান্তর 

১৯৬০ সালের শেষের দিকে অধিকারকর্মীগণ বহুল পুরাতন “গে/gay” শব্দটিকে নতুনভাবে প্রকাশ করেন। সম্পূর্ণ বিংশ শতাব্দীতে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ ও যৌনকর্ম বেআইনি ছিল। এছাড়া, “গে” শব্দটিসহ আরও কিছু শব্দ “LGBT” কমিউনিটির মানুষজনকে অপমান করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছিলো। যদিওবা এই শব্দটি মূলত কোথা থেকে এসেছে তা অস্পষ্ট, কিন্তু “গে” শব্দটি সেসব পুরুষদের দ্বারা ব্যবহৃত হতো যারা সমপ্রেমের অনুভূতিকে অস্বীকার করেছিলেন। Social variant, deviant আর “homophile” যার অর্থ সমপ্রেম – শব্দগুলো তৎকালীন বিভিন্ন অধিকারকর্মীগণ ব্যবহার করে থাকতেন; এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল কুরুচিপূর্ণ শব্দের প্রচলন কমিয়ে আনা কিংবা বিদ্রুপাত্মক শব্দ পরিহার করে সেসব শব্দ নিয়ে আসা যা সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের অযৌন দিকটার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং বৈষম্যমূলক আইনের প্রতিবাদ করে। এসকল শব্দ ব্যবহৃত হওয়া সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী জে. টড অর্মসবি লিখেছিলেন, “As the means whereby individuals could make sense of their own experiences, their active-undergoing of being homosexual in a homophobic environment.”

১৯৮০ সালের মধ্যে প্রাবন্ধিক এডমান্ড হোয়াইট বলেন যে “গে” শব্দটি একজন পুরুষ অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট এটি প্রকাশের দিক থেকে অন্য যেকোনো শব্দকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। হোয়াইট এটা আরোপ করেন যে এই শব্দটির জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো “এই শব্দ ঐ অল্প কিছু শব্দের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর বহিঃপ্রকাশ শুধু যৌনকর্মের দিকে ঈঙ্গিত করেনা।” পুরুষ পুরুষকে ভালোবাসে এবং অন্য যে কেউ তার সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে অথবা যেকোনো আদর্শের বিপরীতমুখী লৈঙ্গিক ক্রিয়া – এসকল ক্ষেত্রে “গে” শব্দটির ব্যবহার একইরকম তাৎপর্যমণ্ডিত ছিল। 

“ট্রান্সজেন্ডার” কমিউনিটির “LGBT” এর অংশ হয়ে ওঠার ইতিহাস: 

১৯৯০ সাল ব্যক্তিগত জীবনের লড়াই ও “liberation activism”, লেসবিয়ান, গে ও বাইসেক্সুয়াল মানুষদের অনেক দিন ধরে চলে আসা আন্তরিকতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ প্রদান করে – “LGB” সংক্ষিপ্ত রূপটি সেটিরই বহিঃপ্রকাশ। 

কিন্তু আরেকটা শব্দ এরকম ছিল যার আধুনিক সংক্ষিপ্ত রূপের অংশ হয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগেছিলো – এবং সেটি “ট্রান্সজেন্ডার”। ট্রান্সজেন্ডার অথবা “ট্রান্স” মানুষজন ইতিহাসে সবসময়ই ছিলেন, তবে এই শব্দটি সকলের সামনে আসে ১৯৬০ সালের দিকে। ইতিহাসবিদরা ১৯৬৫ সালের এক মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ে প্রথম “ট্রান্সজেন্ডার” শব্দটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন এবং ভার্জিনিয়া প্রিন্সের মতো ট্রান্সফেমিনিন এক্টিভিস্টদের দ্বারা এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ভার্জিনিয়া প্রিন্স বিশ্বাস করতেন মানুষের লিঙ্গ ও যৌন পরিচয় – দুটো একদমই আলাদা বিষয়। LGBT rights movement চলাকালীন সময় ট্রান্সজেন্ডার শব্দটির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই যাচ্ছিলো, কেননা ট্রান্স কমিউনিটির মানুষের প্রতি বিদ্রুপাত্মক শোনায় অথবা ট্রান্স কমিউনিটির মানুষজনকে ছোট করে দেখায় এরকম বহু শব্দকে এটি প্রতিস্থাপিত করে দিচ্ছিলো, এবং ২০০০ সালের দিকে “ট্রান্সজেন্ডার” শব্দটির গ্রহণযোগ্যতা আরও বিস্তার লাভ করে। 

“কুইয়্যার” শব্দটি যেভাবে মূলধারায় স্থান পেয়েছিল:

সম্প্রতি, “Q” আদ্যক্ষর LGBT সংক্ষিপ্ত রূপে সংযোজন করা হয়েছে। ১৯১০ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসা এই শব্দটিও একসময় অন্যের প্রতি বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করতে এবং বিষমকামী সমাজ থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে৷ তবে ১৯৯০ সালে সমকামী অধিকার নিয়ে চলমান আন্দোলনে “কুইয়্যার” শব্দটির ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ভাষাবিজ্ঞানী গ্রেগরি কোলস লিখেন, “এই শব্দটি একই সাথে নিন্দাসূচক ও সম্মানসূচক মনোভাবে ব্যবহার করা যায়, বক্তার পরিচয় ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।” “কুইয়্যার” শব্দ প্রচলিত হওয়ার এই ঘটনাকে অনেক বিশ্লেষক এই শব্দটির পুনরুদ্ধার হিসেবে বিবেচনা করেন৷ “Q” আদ্যক্ষর দিয়ে “questioning”-ও বুঝানো যায়; মূলত সেসব মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে যাদের ব্যক্তিগত লিঙ্গ ও যৌন অভিব্যক্তি পরিচয়ের অন্বেষণ চলমান রয়েছে৷ 

একই আদ্যক্ষরের দুই ধরনের সংজ্ঞা একটা বিশাল ও অব্যাহত আলোচনার দিকে ইশারা করে যার বিষয় হলো ব্যক্তি পরিচয়ের মূল অর্থ এবং মানুষের জীবিত অভিজ্ঞতার প্রতিনিধি হিসেবে LGBTQ এর মত “umbrella terms” ব্যবহার করা উপযুক্ত কিনা। 

এক অসমাপ্ত বিবর্তন:

LGBT সংক্ষিপ্ত রূপের নতুন সংযোজনা এই কমিউনিটির আরও বৃহত্তর ক্ষেত্র প্রকাশ করে। একটা “প্লাস” চিহ্ন, লিঙ্গ নির্ধারণ ও যৌন পরিচয়ের বিস্তর প্রকরণের দিকে ইঙ্গিত করে, এছাড়া কখনো কখনো “I” এবং “A” আদ্যাক্ষর দুটো LGBT সংক্ষিপ্ত রূপের শেষে বসানো হয়। LGBT সংক্ষিপ্ত রূপের সমালোচকও আছেন, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা বিতর্ক করে থাকেন যে লিঙ্গ ও যৌন অভিব্যক্তির সম্পূর্ণ স্পেক্ট্রামকে কখনো কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ সর্বসাকুল্যে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান, জানা-অজানা সকল লিঙ্গ ও যৌন অভিব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নানান একাডেমিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা, যেমন, “the National Institutes of Health” বর্তমানে “gender and sexual minority” নামক টার্ম গ্রহণ করেছে। এবং এতসব কিছুর পরও মানুষের দ্বারা গ্রহণীয় এসকল শব্দের বিবর্তন হতে থাকবে। 

২০২০ সালে, National Academies of Sciences, Engineering and Medicine committee একটা রিপোর্টে প্রকাশ করে যে, “No term is perfect or perfectly inclusive. The beauty of individuality is that self-expression, as well as personal and romantic choices, can manifest in a multitude of ways

মূল লেখা: https://www.nationalgeographic.com/history/article/from-lgbt-to-lgbtqia-the-evolving-recognition-of-identity

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.